Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৩১st মে ২০২৫

কৃষিকে লাভজনক করতে পারিবারিক শ্রমের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে: কৃষি সচিব


প্রকাশন তারিখ : 2025-05-29

কৃষিকে লাভজনক করতে হলে কৃষিকাজে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পারিবারিক শ্রমের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। তিনি বলেন, আমরা কৃষিকে লাভজনক করতে না পারলে, বাণিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তর করতে না পারলে এখাতে উন্নয়ন করা সম্ভব না। কেননা আমরা একটি বিষয় ধরেই নেই আমাদের পরিবারের লোকদের কাজ নেই তাই তারা কৃষিতে সহযোগিতা করছে। এ চিন্তা থেকে বেরিয়ে বাণিজ্যিক ও সময়ভিত্তিক চিন্তা করতে হবে। কৃষক ও তার পরিবারের সদস্যরা অন্য কাজে যুক্ত থাকলে নিশ্চয় আয় করতো, তাহলে কৃষি কাজে যুক্ত থাকায় তার শ্রমের মূল্য কেন ধরা হবে বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি। প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল এন্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ এন্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) শীর্ষক প্রকল্পের আঞ্চলিক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (২৯মে) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে দিনব্যাপী কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার করিম, মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন  প্রকল্পটির পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ। কৃষিখাতে কমিশন হওয়া দরকার ছিল হয়নি উল্লেখ করে ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকগুলো কমিশন করেছেন কিন্তু কৃষিখাতে একটি কমিশন হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু করা হয়নি। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি কৃষির বিষয়ে নিয়ে শুনতে আমাদেরকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে ২০ মিনিট সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু আলোচনার গুরুত্ব এটা বেড়ে যায় যা দেড় ঘণ্টা অতিবাহিত হয়। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার কথা মতো আমরা ২০৫০ সাল পর্যন্ত ২৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি। তিনি পার্টনার প্রকল্পের কথা তুলে ধরে বলেন, এটি কৃষির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। আমরা এ প্রকল্পের জন্য প্রত্যেকেই নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানে পরামর্শ তুলে ধরবো। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিকে আধুনিক ও সর্বশেষ সেক্টরে নিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা করি। আরনএটি করতে পারলে কৃষিকে ভিন্ন মাত্রায় নেওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন সচিব। তিনি বলেন, একজন বিজ্ঞানীর পেছনে প্রকল্পটি থেকে এক কোটি ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার বেতন সবমিলিয়ে ১লাখ ২০ হাজার টাকা। আমরা ৯ম গ্রেডের বিজ্ঞানীর পেছনে ব্যয় করছি। এতে তার অর্জন কতটুকু সেটি চিন্তা করে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, অন্যের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প করা হয়েছে, এক সময় তো বাজারদর অনুযায়ী সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে। এসব বাস্তবতা বুঝে কাজ করতে হবে। এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, এই প্রকল্প থেকে কেমন আয় হবে সে চিন্তা সামনে রেখে মূল্যায়ন করতে হবে। কৃষি কর্মকর্তাদের কাজে হিসেব রাখার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বছরে ৪ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ দিয়ে থাকি। গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। আমাদের সারে ভর্তুকি কত সেটি কৃষি অফিসার তার জবাব দিতে পারে না। সারের ডিলারও জানে না প্রতি কেজি সারের দাম কত? এদিকে এক কেজি সারে সপ্তাহে ১২ টাকা দাম বাড়ছে। অথচ কেজিতে ২ টাকা বাড়লে হৈচৈ শুরু হয়। তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেটের ৭০ শতাংশই চলে যাচ্ছে সারের ভর্তুকিতে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি টিমের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, আমাদের ১৭টি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে, সেখানে প্রত্যেকের নিজ নিজ কাজ সঠিকভাবে করতে হবে। তা ছাড়া আমরা নিজের কাজ শেষ করে অন্যের কাজে সহায়তা করবো। কৃষির সবগুলো ডিপার্টমেন্টের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পুরো বাজেটের চেয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের এমন অনেক প্রকল্পের ব্যয় বেশি। আমি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে থাকাবস্থায় একটি প্রকল্পে ৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার ব্যয় কমিয়ে ছিলাম। সেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন, কৃষিতে বাণিজ্যিকভাবে না নিলে পারলে লাভ হবে না। আমাদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের সময় ও কাজের মূল্য দিতে না পারবো ততক্ষণ লাভ হবে না। সচিব বলেন, নিজের উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ না জানলে বাজারব্যবস্থা ঠিক রাখা যাবে না। চাহিদা ও উৎপাদন জানতে না পারলে বাজার ঠিক রাখা যাবে না। আমাদের কার্যক্রম কৃষকবান্ধব হতে হবে। এ সময় তিনি দুজন কৃষকের বক্তব্য শুনেন। সেখানে মানিকগঞ্জের কৃষক মনির হোসেন বলেন, আমি গ্লোবার গ্যাপের সার্টিফিকেট পেয়েছি, সে অনুযায়ী যেসব সবজি চাষ করছি তা রপ্তানি করতে না পারায় ফেলে দিতে হয়েছে। আমরা খরচের ২০ শতাংশ খরচও তুলতে পারছি না। বাজারব্যবস্থা ভালো করতে না পারলে এটা টিকিয়ে রাখা যাবে না। নরসিংদীর বেলাবোর সেলিম মিয়া বলেন, আমরা যে নিয়মে সবজি উৎপাদন করে রপ্তানি করি তার ৬০ শতাংশ নরসিংদী ও ৫০ শতাংশ বেলাবো থেকে রপ্তানি হয়। আমার ফ্রিজিং ভ্যানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মূলপ্রবন্ধে আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকল্পটি জুলাই ২০২৩ সালে শুরু হয়েছে, শেষ হবে ২০২৮ সালের জুনে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৩ দশমিক ১১ কোটি টাকা। তারমধ্যে সরকারি অংশ ১ লাখ ১৫ হাজার ১১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা, যা মোট অর্থের ১৭ শতাংশ এবং ঋণ ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯৭৯ দশমিক ৯০ কোটি টাকা, যা মোট ৮৩ শতাংশ। এটি ৮ বিভাগের ১৪টি কৃষি সম্প্রসারণ অঞ্চলের ৪৯৫টি উপজেলায়। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে- খাদ্য শস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা; খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করা; উদোক্তা তৈরি ও উন্নয়ন; জলবায়ু সহিষ্ণু এগ্রিফুড ভ্যালু চেইনের সম্প্রসারণ। তিনি বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে ১৫ টি ফসলের গ্যাপের পরিকল্পনার মধ্যে ৮টিতে করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে ৭টি ফসলের গ্যাপের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ৩ লাখ হেক্টর গ্যাপ অনুসরণ করে ফল উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও জনবল ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া ৪ লাখ হেক্টর নতুন জমি প্রকল্পের আওতায়  আনার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে জমি কমে যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে এটি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিমা  বলেন, কল-কারখানার বর্জ্য ও পানি দূষণের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানি পানি ব্যবহারে সমস্যা হচ্ছে। এতে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক আলাপচারিতায় বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো সাড়াও পড়ছে। আমরা মূলত নতুন জাতগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এতে ফলনও আশানুরূপ বেশি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, প্রকল্পের প্রথম বছরে ২৯৬ ও চলতি বছর ৩০০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। এসব বীজ কৃষকদের মধ্যে সরাসরি বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এটি ব্রির ইতিহাসে বিরল। ১ বছরে ৮টি বীজ মাঠে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ফলন ভালো হয়েছে। ব্রি১০২ জাতের ধান সবচেয়ে বেশি ফলন দিচ্ছে। আর ব্রি১০৩ জাতের ধান জড়েও হেলে পড়ে না। এতে কৃষকরা ক্ষতির হাত থেকে অনেকাংশে রক্ষা পায়।