Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ফল উৎপাদন পরিস্থিতি এবং আবাদ বৃদ্ধিতে করণীয়

মানব দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, মেধার বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। কথায় বলে ‘ফলই বল’, ফলে ভেজাল নেই, রান্নার ঝামেলা নেই। তাই পুষ্টিতে বিশেষ করে ভিটামিন ও খনিজ ভরপুর খাদ্য হিসেবে ফলের বিকল্প নেই। অন্য খাদ্যের মতো আহারে রান্নার প্রয়োজন না হওয়ায় ফলের সব খাদ্য উপাদান পুরোটাই দেহের প্রয়োজনে আসে, কোনো রকমেই অপচয় হয় না। পুষ্টিবিদদের মতে, পূর্ণ বয়স্কদের মাথাপিছু দৈনিক ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। তবে বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় তা বড় জোর ৫০%। অধিকন্তু, এ দেশে যে ফলগুলো উৎপাদন হয় তার প্রায় ৬০% পাওয়া যায় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, মাত্র চার মাসে। শীত মৌসুমে ফল প্রাপ্তির সুবিধা তুলনামূলকভাবে কম। কাজেই পুষ্টি ঘাটতির পরিমাণ শীত মৌসুমে বেশি হয়, বিশেষ করে গ্রামীণ মা ও শিশুদের অপুষ্টিজনিত রোগ এ সময় বেশি দেখা যায়। বিকল্প খাদ্য হিসেবে ও সুষম খাবার গ্রহণে ফলের অবদান অতুলনীয়। ফলের এসব গুরুত্বপূর্ণ দিকসহ বাড়তি খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি জনগণের টেকটসই পুষ্টি নিরাপত্তার লক্ষ্যে ফলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রকল্পের আওতায় প্রচলিত অপ্রচলিত এবং অন্যান্য দেশি-বিদেশি সম্ভাবনাময় সব ধরনের ফলের চাষাবাদ বাড়িয়ে সারা বছর সমানভাবে চাহিদামাফিক ফলের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া অত্যাবশ্যক।


বিভিন্ন ফসল ও ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনেক সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ধান উৎপাদনে এ দেশ বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয় ও পেয়ারা, আখ, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং আম উৎপাদনে অষ্টম স্থান অর্জন করেছে। এ দেশে উপকূলীয় ও হাওর এলাকায় ভাসমান সবজি উৎপাদন প্রযুক্তি জনপ্রিয় করার এ দেশের উদ্যোগটা বিশ্বে বিশেষ প্রশংসা অর্জন করেছে। বর্তমানে চর এলাকায়  যেভাবে বাঙি/চিনাইল, লালিমা এবং দক্ষিণাঞ্চলের এলাকা, বিশেষে করে পতিত জমিতে যে হারে উন্নত জাতের তরমুজ আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এ দেশে মৌসুমি ফল উৎপাদনে সফলতার নতুন গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা যোগ হবে।


একদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ, অন্যদিকে রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ ও নগরায়নের প্রভাবে আবাদি জমি প্রতিনিয়তই কমে  যাচ্ছে। তথাপি নতুন ভাবে ফল চাষ সম্প্রসারণের সুবিধা এখনও প্রচুর রয়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় ফল চাষ লাভজনক। এমনকি অভিজ্ঞ ফল চাষির কাছে এটি অতি লাভজনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের জেলা বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর  ও রংপুরের তিস্তা বেল্টে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে এসব এলাকায় শস্য বিন্যাস যথেষ্ট পরিবর্তন আসছে। এসব এলাকায় বোরো আবাদের পরিবর্তে আউশ ধান, ভুট্টা, তিল, ডাল, তেলবীজ জাতীয় ফসলের পাশাপাশি প্রচুর নতুন ফল বাগান  সৃষ্টির দিকে কৃষকের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ফল চাষে কিছুসংখ্যক সফল অভিজ্ঞ ফলচাষি দীর্ঘমেয়াদি (৫-১০ বছর) জমি লিজ নিয়ে ফল উৎপাদনে সফলতার অনন্য নজির স্থাপন করে চলেছে। যেসব ফল সম্প্রসারণ তাদের কাছে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার পাচ্ছে তার মধ্যে বারোমাসি থাই পেয়ারা, আপেল কুল-থাইকুল, বারোমাসি কাগজিলেবু, মাল্টা, কমলা, ড্রাগন ফল, লিচু এবং আ¤্রপালি জাতের আম অন্যতম।


ফল চাষ সম্ভাবনাময় অঞ্চল
দেশের কিছু এলাকা ব্যাপক হারে ফল চাষ সম্প্রসারণ সম্ভাবনা খুব বেশি বিরাজ করছে। এগুলোর মধ্যে পার্বত্য জেলাগুলোসহ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত নিচু ও কম খাঁড়া পাহাড়ি (মধুপুর, হালুয়াঘাট, ঝিনাইগাতী, গাজীপুর, নরসিংদী, সিলেট, হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, সীতাকু-ু ইত্যাদি) ভাবাপন্ন অংশ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পার্বত্য তিনটি জেলায় ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা বিরাজ করছে। ফল চাষে গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকার বড় জোর ১০% জমি এ পর্যন্ত ফল চাষ আওতায় এসেছে। অবশিষ্ট প্রায় ৯০% ফল চাষ সম্ভাবনার ‘সোনার খনি’ এখনও অব্যবহৃত (টহ-ঃড়ঁপযবফ) রয়ে গেছে। পাহাড় অঞ্চলের সম্ভাবনাময় এ অংশকে পরিকল্পিতভাবে ফল চাষের আওতায় আনা হলে দেশের ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর চাহিদা জোগানের সহায়ক হবে। পরিতাপের বিষয় কিছুসংখ্যক ভূমি লোভী/দখলকারী ব্যক্তি রাবার, পাম অয়েল, চা বাগান ও ফল বাগান সৃষ্টির নামে এ পার্বত্য জেলার যথেষ্ট পরিমাণ জমি সংগ্রহ/দখলে রেখেছে। তাদের সংগৃহীত গুরুত্বপূর্ণ জমির সুনির্দিষ্ট বাগান সৃষ্টিতে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।  


পাহাড়ি এলাকায় ফল চাষে প্রধান অন্তরায় পানি সেচ সংকট। একই কারণে পানি সংরক্ষণের বিভিন্ন উপায়ে (ক্রিক ড্যাম, বিভিন্ন প্রকার রিজারভার সৃষ্টি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ) কৌশল অবলম্বনে ন্যূনতম সেচের উৎস সৃষ্টি করা অতীব জরুরি। এছাড়া এ পানি  সংকট এলাকা ব্যবহারে মিতব্যয়ী বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা অত্যাবশ্যক।


পাহাড়ি এলাকায় চাষ উপযোগী ফল  
পানি সংকটের কারণে এসব এলাকায় কেবল মাত্র যেসব ফলের কিছুটা খরা সহিষ্ণুতা গুণাগুণ আছে তা আবাদে  প্রধান্য দেয়া দরকার। মাটিতে রস কম থাকলেও প্রতিকূল অবস্থায় কিছু ফলগাছ ন্যূনতম ফল দানে সক্ষম। এ ধরনের উপযোগী ফল  গাছের মধ্যে পেঁপে, কলা (চম্পা, বাংলা, তরকারি কলা, বিচি কলা) আনারস, লেবু, কমলা, মাল্টা, বাতাবি, কাজু বাদাম, কুল,  লিচু, আম, কাঁঠাল অন্যতম। এসব ফল গাছ বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়।
প্রযুক্তি অবলম্বন : এলাকায় ফল গাছ রোপণে যেসব প্রযুক্তি অনুসরণ করা দরকার তা হলো-


ক. ঢালে বা স্লোপে ফল গাছের চারা-কলম লাগাতে হলে কন্টুর পদ্ধতি অবলম্বন করে নির্দিষ্ট সারিতে গাছ রোপণ করতে হবে। নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত তৈরি করে তাতে প্রচুর জৈবসার ও পরিমাণমতো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা প্রয়োজন হবে। জৈবসারের অভাব থাকলে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ কেবল মাত্র উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) দিয়ে গর্ত ভরাট করে তাতে গাছ রোপণ করতে হবে। সেচ সুবিধা না থাকলে জুন মাসে কিছুটা বড় আকারের ফলগাছ রোপণ করা উচিত হবে।
খ. গাছ রোপণকালে স্বাভাবিকের চেয়ে গাছের চারা/কলম ২০ থেকে ৩০ সে.মিটার গভীরে নিচু করে গাছ রোপণ করতে হবে। তাতে শিকড় মাটির  যেতে সহজ হবে। প্রতি গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত  জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে। তাতে প্রতিকূল অবস্থায় মাটিতে রসের অভাব থাকলেও গাছ বৃদ্ধিতে তা সহায়ক হবে।
-  রোপিত গাছের ঢালের নিচু অংশে ‘হাফমুন টেরাস’ পদ্ধতি অবলম্বনে গোড়া থেকে ৫০ থেকে ৬০ সেমি. দূরত্বে হালকা উঁচু করে বাঁধ দিয়ে পানি সংরক্ষণ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।  
- গাছ রোপণের সঙ্গে সঙ্গে শক্ত বাঁশের কাঠি দিয়ে গাছকে বেঁধে সোজা রাখার ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে।
- রোপিত গাছের পাতায় ও গোড়ায় সকাল-বিকেল দুই-তিনবার কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত হালকা পানি সেচ দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
গ. মালচিং : খড়কুটো, কচুরিপানা, তুষ, নারিকেলের ছোবড়া, লতা-পাতা এসব দিয়ে রোপিত গাছের চারধারে ৫০ থেকে ৭০ সে.মিটার দূর পর্যন্ত মালচিং দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। শুকনা মৌসুমে এ মালচিং ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তা ৫ থেকে ১০ সে.মিটার গাছের গোড়া ছেড়ে তা দেয়া হয়। বর্ষাকালে মালচিং দেয়া না হলেও চলবে। মালচিং ব্যবস্থায় গাছের গোড়ার চারধারের মাটি ঠা-া থাকে, মাটিতে রস সংরক্ষিত থাকে। বেশি সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। পরে এগুলো পচে জৈবসার হিসেবে কাজ করে। মাটির ক্ষয়রোধ হয়।
ঘ. ফলগাছের ট্রেনিং প্রুনিং : প্রথম অবস্থায় (২-৩ বছর পর্যন্ত ) গাছের পার্শ্বে  অতিরিক্ত গজানো ডাল ১.০০ থেকে ১.৫০ মিটার পর্যন্ত কা- রেখে অতিরিক্ত গজানো ডাল ছাঁটাই করে গোড়ার কাঠামো বা কা- গঠন করে নেয়া প্রয়োজন। এছাড়াও মরা, রোগাক্রান্ত দুর্বল গজানো ডাল নিয়মিত ছেঁটে দিতে হবে। পরবর্তীতে গাছ বড় হয়ে ফল ধরা আরম্ভ করলে ভেতরের অফলন্ত ডালপালা ছেঁটে আলো বাতাস প্রবেশের সুবিধা করে দিতে হবে। এ ব্যবস্থায় রোগপোকার হাত থেকে গাছকে অনেকটা নিরাপদ রাখা যাবে। প্রথম দুইবছর গাছে কোনো প্রকার ফুল/ফল রাখা যাবে না। ফুল আসার শুরুতেই তা  ভেঙে দিয়ে গাছকে বাড়তে দিতে হবে।
দক্ষিণাঞ্চলে ফল চাষ সম্প্রসারণ
পার্বত্য জেলাগুলোর মতো উপকূলীয় জেলাগুলো বিশেষ ধরনের ফল চাষ সম্প্রসারণ উপযোগী বিস্তর এলাকা রয়েছে। তবে দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোর পরিস্থিতি ভিন্নতর। ঘূর্ণিঝড়, জোয়ারের তীব্রতা, মাটির লবণাক্ততা, সেচের কাজে মাটির নিচের পানি ব্যবহার অন্তরায়, মিঠা পানি প্রাপ্তির সীমাবদ্ধতার কারণে এসব এলাকায় ব্যাপক হারে ফল বাগান সম্প্রসারণে যথেষ্ট অন্তরায়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব এলাকায় যেসব ফল গাছের কিছুটা হলেও লবণাক্তসহিষ্ণু গুণ আছে কেবল সেসব ফল এ বিশাল এলাকায় ব্যাপক হারে সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে উৎপাদিত ফল বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
ফল চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এখানের উঁচু/মাঝারি উঁচু জমি চিহ্নিত করে উপজেলাওয়ারি সেগুলোর লবণাক্ততা মাত্রা নির্ণয় করে, কোনো ধরনের জমি, কোন ফল চাষ সম্প্রসারণ গুরুত্ব দেয়া যাবে তার একটা সুপরিকল্পিত তালিকা তৈরি করে নিয়ে পরবর্তীতে তা অনুসরণে ফল চাষ সম্প্রসারণ পদক্ষেপ নিতে হবে।
সম্প্রতি দক্ষিণ এলাকায় বসতবাড়ি ও তদসংলগ্ন পতিত জমিতে (আধা বিঘা) আম বাগান স্থাপন করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে দলগতভাবে সার্বজনীন স্থানে বাগান কারার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।


বিশেষ নারিকেল চাষ কর্মসূচি  
নারিকেল গাছের লবণাক্তসহিষ্ণু গুণ অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি। তবে বর্তমানে যেসব লম্বা জাতের নারিকেল চাষের প্রচলন আছে সেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ও উপকূলীয় ঝড়ো হাওয়া সহনশীলতা কম। কাজেই তা নিরসনে ও উপযুক্ততা বিবেচনায় এনে উপকূলীয় এলাকায় উন্নতমানের বিদেশি খাটো (ওপি) জাতের নারিকেল চারা  সংগ্রহ ও বিতরণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি নারিকেল চারা  রোপণের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশে ৭১০ কিলোমিটার লম্বা উপকূলীয় অঞ্চল রয়েছে, যা ১৯টা জেলার ১৫৩টা উপজেলায় বিরাজিত। এর মধ্যে ৫১টা উপজেলা সমুদ্রের সন্নিকটে উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। এ অংশে চলতি বছরে ৬০ হাজার এবং আগামী বছরে ১ লাখ বিদেশ থেকে আমদানিকৃত (ভারত-ভিয়েতনাম) খাটো উন্নত জাতের নারিকেল চারা রোপণ ও সম্প্রসারণ ব্যবস্থা নিয়ে চাষিদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ও পরিবেশের প্রতিকূলতা এড়ানোর অন্যতম উদ্যোগ গ্রহণ করা অব্যাহত রয়েছে। এ কর্মসূচিকে বেগবান করে ৪ থেকে ৫ কোটি নারিকেল চারা রোপণের  মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার জনপদের সচ্ছলতা আনা সহজতর হবে।  


বসতবাড়িতে ফল উৎপাদন
এ দেশে বসতবাড়ির সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এ সব বসতবাড়ি সব শ্রেণির কৃষকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছুসংখ্যক ফল গাছ সুশৃংখলভাবে লাগানো হলেও অধিকাংশ আপনা থেকে গজানো ফলের চারা ও বনজ গাছের সমারোহ বেশি দেখা যায়। পরিকল্পিতভাবে এ বসতবাড়িগুলোতে কম দরকারি কিছু গাছ নির্বাচন করে অন্যত্র সরিয়ে সেখানে নির্বাচিত উন্নত জাতের ৫ থেকে ৭টা করে ফল গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নেয়া হলে সেক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ কোটি বাড়তি ফলগাছ সম্প্রসারণ খুবই সহজ। এ ব্যবস্থায় গ্রাম পর্যায়ে পুষ্টি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে অনুকূল প্রভাব পড়বে। বসতবাড়িতে রোপণের জন্য যেসব ফলগাছ বেশি উপযোগী সেগুলো হলো-
কলা (আনাজিসহ খাটো জাত) পেঁপে, আনারস (ছায়া অংশে) শরিফা, আতা, ড্রাগন ফল, আমড়া (বারোমাসি), বেল, কদবেল, জলপাই, লটকন, আম (খাটো জাত), কাঁঠাল (বারোমাসি), পেয়ারা, কুল, কাগজি লেবু (বারোমাসি), বাতাবি (বারোমাসি), মাল্টা, কমলা, ডালিম, নারিকেল, সুপারি, সফেদা, কামরাঙা, আমলকী, অরবরই, বিলিম্বি, ডুমুর, থাই জামরুল, করমচা, ফলসা, জাবাটিকা অন্যতম।


বসতবাড়ি এলাকায় ফলচাষ সম্প্রসারণে যেসব দিকগুলো বিশেষভাবে লক্ষণীয় তা হলো-
বসতবাড়ির আকার বিবেচনায় এনে সেখানে কত সংখ্যক, কি ধরনের গাছ (বড়, মাঝারি, ছোট আকার বিশিষ্ট মিলে) রোপণ করা যাবে তা নির্ণয় করা।
পরিবারে সদস্যদের যেসব ফল গাছ লাগাতে আগ্রহী তা বিবেচনায় নির্বাচান উদ্যোগ নেয়া।
পুষ্টিতে সমৃদ্ধ ও অসময়ে (বছরব্যাপী) ফল প্রাপ্তি বিবেচনায় নেয়া। সর্বোপরি এলাকা ও অবস্থান বিবেচনায় এনে চূড়ান্ত সংখ্যা চারা/কলম রোপণ প্লানিং নির্ধারণ। রোপণযোগ্য নির্বাচিত ফলগাছ কখন, কোন জাতের, কোথা থেকে সংগ্রহীত হবে তার পরিকল্পনা প্রণয়ন (নির্ভরযোগ্য উৎসের কাক্সিক্ষত জাতের হতে হবে) করে নিতে হবে।
সর্বোপরি শুধু গাছ লাগিয়েই দায়িত্ব সম্পূর্ণ করা ঠিক হবে না। রোপিত গাছগুলো থেকে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল পাওয়া যায় এজন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিং প্রুনিং, পানি সেচ নিষ্কাশন, সার প্রয়োগ ও রোগবালাই দমনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

এম এনামুল হক*
*মহাপরিচালক (অব.), ডিএই