Wellcome to National Portal
  • 2025-03-12-16-25-15c95fd3ae0d740427f19c779208b30b
  • 2025-03-12-16-16-b41688fcb8ac3df55c13eb5c82b62083
  • 2025-01-05-17-19-232bbb16275acb0da535d705c9b6f6d8
  • 2024-12-15-10-13-de23faa6fead7deef93b5973ae193323
  • 2023-12-28-06-44-fad1b3dffb04c90c1f14863ef06978d5
  • ICT Ebook
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি

2023-03-16-03-51-11e1c99f87be65f11ada4b1721b059d7

বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি
ড. মোঃ আশিকুল ইসলাম
আদা বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। বাংলাদেশে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ২.৮৮ লক্ষ মেট্রিক টন আদা উৎপাদিত হয়। যা দেশের চাহিদার ৪.৮১ লক্ষ মেট্রিক টন  এর তুলনায় খুবই নগন্য। আদার গড় ফলন ১১.২৮ টন/হেক্টর। এই ঘাটতি পুরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীগণ বারি আদা-১, বারি আদা-২, ও বারি আদা-৩ নামে তিনটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার ফলন ৩০-৩৯ টন/হেক্টর। উৎপাদন কম হওয়ার কারন আদা চাষের উপযোগী জমির অভাব এবং কন্দ পঁচা রোগের ব্যাপক আক্রমণ হওয়া। কন্দ পঁচা রোগের কারণে আদার ফলন শতকরা ৫০-৮০ ভাগ পর্যন্ত কম হয়ে যায়। প্রতি বছর এদেশের জনসংখ্যা, আবাসনের জন্য ঘরবাড়ি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা এবং কলকারখানা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে  প্রেক্ষিত কারণে কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। বাংলাদেশে এই বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করলে হবেনা। এ পরিস্থিতিতে চাষ অযোগ্য পতিত জমি বা বসতবাড়ির চারদিকে অব্যবহৃত স্থান, লবনাক্ত এলাকা, খারকীয় এলাকা, নতুন ফল বাগানের মধ্যে বিল্ডিং এর ছাদে, বস্তায় আদা চাষ করে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। বস্তায় আদা চাষ করে বাংলাদেশে যে আদার ঘাটতি রয়েছে তা সহজেই পূরণ করা সম্ভব।
বস্তায় আদা চাষের সুবিধা : যে কোন পরিত্যাক্ত জায়গা, বসত বাড়ির চারদিকে ফাঁকা জায়গা, লবনাক্ত এলাকা, বাড়ির ছাদে সহজেই চাষ করা যায়; একই জায়গায় বারবার চাষ করা যায়;  এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ অনেক কম। প্রতি বস্তায় ২০-২৫ টাকা খরচ করে বস্তা প্রতি ১-২ কেজি আদা উৎপাদন করা যায়; এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে কন্দ পঁচা রোগ হয় না। যদিও কখনো রোগ দেখা যায় তখন গাছসহ বস্তা সরিয়ে ফেলা যায়, ফলে কন্দপঁচা রোগ ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে না; বস্তায় আদা চাষ করলে নিড়ানীসহ অন্যান্য পরিচর্যার তেমন দরকার হয় না ফলে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়।
মাটি ও আবহাওয়া  : জৈব পদার্থ সম্পৃক্ত দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও উচু জায়গা বস্তায় আদা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
বস্তায় মিশ্রন তৈরীর পদ্ধতি : সিমেন্টে খালি বস্তা মিশিয়ে বা অন্য বস্তায় আদা চাষের জন্য নিম্মলিখিত উপাদানগুলো একত্রে মিশিয়ে করে আদা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে একত্রে পালা/ডিবি করে, পলিথিন দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে। যাতে বাতাস প্রবেশ না করে। প্রতি বস্তায় পরিমিত পরিমাণ মাটি, জৈবসার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
মিশ্রন তৈরির সময় মাটি, গোবর, কম্পোস্ট, ছাই, টিএসপি, জিংক, বোরন সব একত্রে মিশিয়ে দিতে হবে। বালাইনাশক অর্ধেক এমওপি মিশ্রন তৈরির সময় দিতে হবে। চাহিদার অর্ধেক ইউরিয়া আদা রোপনের ৫০ দিন পর এবং বাকী অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি সমানভাবে দুই কিস্তিতে রোপনের যথাক্রমে ৮০ দিন ও ১১০ দিন পর বস্তায় প্রয়োগ করতে হবে।
আদা রোপনের সময় : এপ্রিল-মে (চৈত্র- বৈশাখ) মাসে আদা লাগাতে হয়। তবে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ আদা লাগানোর উপযুক্ত সময়।
­বস্তায় মিশ্রন ভরাট করা : বস্তায় আদা লাগানোর পূর্বে প্রতি বস্তায় তৈরিকৃত মিশ্রন এমনভাবে ভরাতে হবে যাতে বস্তার উপরের দিকে ১-২ ইঞ্চি ফাঁকা থাকে।
বস্তা সাজানোর/স্থাপন পদ্ধতি : ৩ মিটার চওড়া ও সুবিধা মত দৈর্ঘ্যর বেড তৈরি করতে হবে। একটি বেড থেকে অন্য বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি: ড্রেন রাখতে হবে। ড্রেনের মাটি বেডের উপর দিয়ে বেডকে উচু করে নিতে হবে, যাতে বেডে বৃষ্টির পানি জমাট বেধে না থাকে। এরপর প্রতি বেডে ২ টি সারি এমন ভাবে করতে হবে, যেন এক সারি থেকে অন্য সারির মাঝে ১ মিটার দুরত্ব বজায় থাকে। প্রতি সারিতে ৮-১০ ইঞ্চি পর পর পাশাপাশি ২ টি বস্তা স্থাপন করতে হবে।
বীজের আকার ও রোপন পদ্ধতি : প্রতি বস্তায় ৪৫-৫০ গ্রামের একটি বীজ মাটির ভিতরে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি গভীরে লাগাতে হবে। বীজ লাগানোর পর মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে।
বীজ শোধন : বস্তায় আদা রোপনের পূর্বে ২ গ্রাম থ্রিরাম (৩৭.৫%)+ কার্বোক্সিন (৩৭.৫%) গ্রুপের প্রোভেক্স প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে, এক কেজি আদা বীজ এক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর ভেজা আদা পানি থেকে উঠিয়ে ছায়ায় রেখে শুকিয়ে বস্তায় রোপণ করতে হবে।
আন্ত:পরিচর্যা : বস্তায় আদা চাষ করলে আগাছা তেমন হয় না। যদি আগাছা দেখা যায়, নিড়ানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। এছাড়া পরবর্তীতে সার প্রয়োগের সময় মাটি আলগা করে গাছের গোড়া থেকে দুরে সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ : বৃষ্টি না হলে বস্তায় প্রথম দিকে হালকা ভাবে ঝাঝরি দ্বারা অল্প পরিমাণে সেচ দিতে হবে। তবে বৃষ্টি স্বাভাবিক মাত্রায় হলে সেচের প্রয়োজন হয় না।
রোগ বালাই
কন্দ পঁচা রোগ : বর্ষাকালে গাছে এই রোগের লক্ষন দেখা যায়। গাছের নিচের দিকের পাতার প্রান্তভাগে প্রথমে হলুদাভ দেখায় এবং পর্যায়ক্রমে তা পাতার কিনারা ও পত্র ফলকের দিকে বিস্তার লাভ করে। গাছের পাতা হলুদ হয়ে গাছ ঝিমিয়ে পড়ে। পঁচনের ফলে কন্দ নরম হয়ে অভ্যন্তরীন টিস্যু সম্পূর্ণরুপে নষ্ট হয়ে যায়। আক্রান্ত রাইজম থেকে একধরনের গন্ধ বের হয়।
দমন পদ্ধতি : বীজ আদার জন্য শুধু সুস্থ ও রোগজীবাণু মুক্ত গাছ নিবার্চন করতে হবে; বীজ আদা রিডোমিল গোল্ড/প্রোভেক্স ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজ কন্দ শোধন করে রোপণ করতে হবে; যদি কোন কারণে গাছ আক্রান্ত হয় তবে অন্য গাছকে মুক্ত রাখার নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
পোকামাকড় : বাড়ন্ত গাছে পাতাখেকো পোকা অনেক সময় পাতার ব্যাপক ক্ষতি করে ফলে এবং গাছের সালোকসংশ্লেষন হ্রাস পায়। এতে ফলন কমে যায়।
দমন পদ্ধতি : এ পোকা দমনের জন্য ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার বিকাল বেলায় ০.৫% হারে মার্শাল প্রতি লিটার হারে ডাস্টবার্ন বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের ঔষধ স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ : সাধারনত জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে বস্তা থেকে আদা উঠানো হয়। আদা পরিপক্বতা লাভ করলে গাছের পাতা ক্রমশ হলুদে হয়ে কা- শুকাতে শুরু করে। এ সময় তুলে মাটি ঝেড়ে ও শিকড় পরিস্কার করে সংরক্ষণ করা হয়।
ফলন : সাধারণত প্রতি বস্তায় জাত ভেদে ১-৩ কেজি পর্যন্ত আদার ফলন পাওয়া যায়।
বীজ আদা সংরক্ষণ : বীজ আদা ছায়াযুক্ত স্থানে মাটির নিচে গর্ত বা পিট তৈরি করে সংরক্ষণ করা হয়। গর্তের নীচে ১ ইঞ্চি পরিমাণে বালু দিয়ে তার উপর বীজ আদা রেখে মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। এতে করে বীজ আদা শুকিয়ে ওজন কমার কোন সম্ভাবনা থাকে না।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া, মোবাইল : ০১৭১১-১১৯২৮৭, ই-মেইল : nirusre@yahoo.com