Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রশ্নোত্তর ১৪৩২

প্রশ্নোত্তর

ড.আকলিমা খাতুন

নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
জনাব মো. তুহিন, উপজেলা : বেলাবো, জেলা : নরসিংদী
প্রশ্ন : আমার কলাগাছের পাতার কিনারা হলুদ হয়, পরবর্তীতে গাছ লম্বালম্বিভাবে ফেটে যায় এবং হলদে রং দেখা যায়।
উত্তর : এ রোগটি Fusarium oxysporum   ছত্রাকজনিত কলার পানামা রোগ। এ রোগে প্রথমে বয়স্ক পাতার কিনারা হলুদ হয় এবং পরে কচি পাতাও হলুদ রং ধারণ করে। পরবর্তীতে পাতা বোটার কাছে ভেঙে নিচের দিকে ঝুলে পড়ে এবং গাছ মারা যায়। কোন কোন সময় গাছ লম্বালম্বিভাবে ফেটেও যায়। ভেতরের লক্ষণ ভাস্কুলার বান্ডেল হলদে বাদামি রং হয়। প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত গাছগোড়াসহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে, রোগমুক্ত গাছ থেকে চারা সংগ্রহ করা যাবে না। শস্যপর্যায় ক্রম অনুসরণ করতে হবে, চারা লাগানোর পূর্বে গর্তে ১% ফরমালিন ও ৫০ ভাগ পানি দ্বারা ভিজিয়ে দিতে হবে এবং ১০-১২ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে। গাছের গোড়ায় ও সমস্ত গাছে কার্বেন্ডিজম গ্রুপের অটোস্টিন ৫০ ডব্লিউডিজি ২ গ্রাম/লি. বা নোইন ৫০ ডব্লিউপি ১-২ গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার।
জনাব মো. জাহিদ, উপজেলা : তালতলী, জেলা : বরগুনা
প্রশ্ন : আমার পান গাছের পাতায় বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন আকারের দাগ দেখা যায়, এর প্রতিকার কী?
উত্তর : এটি পানের পাতার দাগ রোগ। এটি Colletotrichum piperis নামক ছত্রাকের কারণে হয়। এ রোগের আক্রমণে পাতায় বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন দাগ দেখা যায় এবং দাগের মাঝখানে ঝলসানোর মতো মনে হয় ও কিছুটা শুষক দেখায়। প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে। রোগমুক্ত লতা ব্যবহার করতে হবে, রোগ প্রতিরোধী জাত বারি পান ২/৩ চাষ করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ম্যানকোজেব গ্রুপের ডায়থেন এম-৪৫ ২ গ্রাম বা প্রোপিকোনাজল গ্রুপের টিল্ট ২৫০ ইসি ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে ২-৩ বার।
জনাব মো. আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা : সাঁথিয়া, জেলা : পাবনা
প্রশ্ন : মরিচ গাছে এক ধরনের পোকা পাতা ও কচি ডগার রস চুষে গাছের ক্ষতি করে। এই সমস্যার সমাধান জানতে চাই।
উত্তর : সাধারণত জাবপোকার আক্রমণে এই সমস্যা হয়ে থাকে। এই পোকার আক্রমণ দেখা দিলে এসিফেট গ্রুপের এসাটাফ ১ গ্রাম অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের এডমায়ার ০.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
জনাব মোহাম্মদ আশরাফুল, উপজেলা : সাঘাটা, জেলা : গাইবান্ধা
প্রশ্ন : লালশাক গাছের পাতার নিচে সাদা বা হলুদ দাগ দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারণ করে এবং পাতাটি মরে যায়। এই সমস্যার সমাধান কী?
উত্তর : এটি লালশাকের মরিচা রোগ। টৎড়সুপবং ংঢ় নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগের বিস্তার ঘটে। এ রোগ দেখা দিলে ছত্রাকনাশক হিসেবে প্রোপিকোনাজল গ্রুপের টিল্ট ০.৫ মিলি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।  ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে নষ্ট করতে হবে। এ ছাড়া সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।
জনাব মো. সাঈদুর রহমান, উপজেলা : ফরিদপুর সদর, জেলা : ফরিদপুর
প্রশ্ন : পাট গাছে কা-ের দিকে কালো কালো দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত স্থানে হাত দিয়ে ঘষলে হাতে কালো দাগ লেগে যায়। করণীয় কি?
উত্তর : এটি পাটের কালোপট্টি রোগ। Botryodiplodia theobromae নামক ছত্রাকের কারনে এ রোগ হয়। এ ছত্রাকের আক্রমণে পাটের কা-ে কালো রঙের বেষ্টনীর সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত স্থানে হাত দ্বারা ঘষলে হাতে কালো দাগ লেগে যায়। মৌসুমের শেষের দিকে রোগের প্রকোপ বেশি হয়। এ রোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত গাছে দেখামাত্র তা তুলে পুড়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ বপনের পূর্বে বীজ শোধন করতে হবে। কার্বক্সিন+থিরাম গ্রুপের প্রোভ্যাক্স, ভিটাভেক্স বা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের অটোস্টিন অথবা নোইন ২ গ্রাম/ কেজি দিয়ে জমিতে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করা। আক্রমণ বেশি হলে মেনকোজেব (ডাইথেন এম-৪৫) ২.৫ গ্রাম/প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার।
জনাব মো. মাহবুব ইসলাম, উপজেলা : বেলকুচি, জেলা : সিরাজগঞ্জ
প্রশ্ন : ভুট্টা গাছের নিচের দিকের পাতা লম্বা হলুদ বর্ণের দাগ হয়ে সব পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। করণীয় কী?
উত্তর : এটি ভুট্টার একটি ছত্রাকজনিত রোগ। Helminthosporium turcicum নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়। এ রোগের আক্রমণে গাছের নিচের পাতায় লম্বা বা ডিম্বাকার ধূসর বর্ণের দাগ হয়। এটি ক্রমেই উপরের দিকের পাতায় বিস্তার লাভ করে পরে ঐ দাগগুলো মিশে সব পাতা নষ্ট করে দেয়। এ রোগ প্রতিরোধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত গাছ ঝরা পাতা সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত ক্ষেতে প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি) -১ মিলি/লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে এবং বীজ শোধন করতে হবে।
জনাব মো. আরিফ, উপজেলা : পরশুরাম, জেলা : ফেনী
প্রশ্ন : পটোল গাছের পাতায় সাদা বাদামি দাগ দেখা যায়। কী করণীয়?
উত্তর : এটি পটোলের ডাউনি মিলডিউ রোগের লক্ষণ। বয়স্ক পাতায় এ রোগ প্রথম দেখা যায়। আক্রান্ত পাতার গায়ে সাদা বা হলদে থেকে বাদামি রঙের তালির মতো দাগ দেখা যায়। ধীরে ধীরে তা অন্যান্য পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমবার লক্ষণ দেখা যেতেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আগাম বীজ বপন করে এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। সাথে সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ম্যানকোজেব+ মেটালেক্সিল) গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম/লি. পানি অথবা (ম্যনেকোজেব+ ফেনামিডন) গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: সিকিউর ২ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাওয়া বা বিক্রি করা যাবে না।
জনাব মো. আব্দুস সালাম, উপজেলা : আড়াইহাজার, জেলা : নারায়ণগঞ্জ
প্রশ্ন : ঢেঁড়স চারার গোড়া পচে যাচ্ছে। করণীয় কী?
উত্তর : ঢেঁড়সের গোড়া পচা আক্রান্ত গাছের গোড়ার চারদিকে দাগ দেখা যায়। শিকড় পচে যায়, চারা নেতিয়ে পড়ে গাছ মারা যায়। স্যাঁতস্যেতে মাটি ও মাটির উপরিভাগ শক্ত হলে রোগের প্রকোপ বাড়ে। এ রোগ মাটি বাহিত বিধায় মাটি আক্রান্ত চারা ও পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। প্রাথমিকভাবে আক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্ত গাছ অপসারণ করতে হবে। বীজ বপনের আগে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। রোগের প্রকোপ বেশি হলে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন অটোস্টিন ২ গ্রাম/লি. পানিতে মিশিয়ে গোড়ার মাটিসহ ভিজিয়ে দিতে হবে ৭ দিন পর পর ৩ বার। 
জনাব মো: শহীদুল, উপজেলা : বিরল, জেলা : দিনাজপুর
প্রশ্ন : বরবটি গাছের পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলছে। প্রতিকার কী?
উত্তর : এটি বরবটির বিছা পোকার কারণে হয়ে থাকে। এই পোকা গাছের পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এই পোকার আক্রমণ দেখা দিলে পোকার ডিম ও বাচ্চা হাত দিয়ে বাছাই করে ধ্বংস করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। যেমন : সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের রিপকর্ড অথবা ডায়াজিনন গ্রুপের কীটনাশক ১ মিলি/ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার।
জনাব মো. হুমায়ূন মিয়া, উপজেলা : কেশবপুর, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : তুলার জ্যাসিড দমনে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাই?
উত্তর : তুলা গাছের বয়স ১৪-২১ দিন তখন থেকে জ্যাসিড পোকার আক্রমণ দেখা যায়। পূর্ণ বয়স্ক পোকা এবং নিষ্ফ উভয়ই তুলার পাতা থেকে রস চুষে খায়। চারা অবস্থায় আক্রান্ত হলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে আক্রমণ হলে পাতার প্রান্ত ভাগ নিচের দিকে কুঁচকে যায়। পরবর্তীতে পাতা আগুনে পোড়ার মতো ঝলসে যায়। ফলে পাতা শুকিয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে। জ্যাসিড পোকা দমন করতে হলে প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত ব্যবহার করতে হবে। হাতজাল দিয়ে যতদূর সম্ভব জ্যাসিড সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে এসিফেট গ্রুপের এসাটাফ ১.৫ গ্রাম/লিটার অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের ইমিটাফ ১ মিলি/লিটার অথবা কারটাফ গ্রুপের কীটনাশক ২.৪ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। এছাড়া তুলা ক্ষেতের পাশে বেগুন ; ঢেঁড়স বা মেস্তা চাষ থেকে বিরত থাকতে হবে।
জনাব মো. হাবিবুর রহমান, উপজেলা : কলমাকান্দা, জেলা : নেত্রকোনা
প্রশ্ন : পোকা করলার নরম অংশ খেয়ে ফেলছে এবং ফল হলুদ হয়ে পচে ঝরে যাচ্ছে, কী করণীয়?
উত্তর : স্ত্রী মাছি করলার কচি ফলের নিচের দিকে ওভিপজিটর ঢুকিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার স্থান থেকে পানির মতো তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে যা শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের শাস খেতে শুরু করে এবং হলুদ হয়ে পচে ঝরে যায়। আক্রান্ত ফল বা ফুল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। প্রথম ফুল আসামাত্র ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। প্রতি শতাংশের জন্য ৩টি হারে। সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক রিপকর্ড বা কট ১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
জনাব মো. শরিফুল হোসেন, উপজেলা : পাটগ্রাম, জেলা : লালমনিরহাট
প্রশ্ন : পানিকচুর পাতা হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে, কি করতে হবে?
উত্তর :phytophthora sp. নামক ছত্রাক দ্বারা পানিকচুর পাতায় এ রোগ দেখা দেয়। প্রথমে পাতার কোন এক অংশে বাদামি দাগ দেখা যায়। সব দাগ একত্রে মিশে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতা মারা যায়। আক্রান্ত পাতা পুড়ে ফেলতে হবে। রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। রোগ  দমনের জন্য ম্যানকোজেব গ্রুপের ডাইথেন এম-৪৫ ২.৫ গ্রাম বা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার  (স্প্রে করার সময় স্টিকার বা ২-৩ গ্রাম সাবানের গুঁড়া বা ১টি ছোট শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।)

লেখক : উপপরিচালক (কৃষক প্রশিক্ষণ), প্রশিক্ষণ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও সাবেক তথ্য অফিসার (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। মোবাইল : ০১৯১৬৫৬৬২৬২;