Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দেশীয় পদ্ধতিতে ছাগল মোটাতাজাকরণ

 দেশীয় পদ্ধতিতে ছাগল মোটাতাজাকরণ
ডা: মনোজিৎ কুমার সরকার
ছাগল মোটাতাজাকরণ একটি লাভজনক ব্যবসা। আগে গ্রামে কুরবানি ঈদকে লক্ষ্য করে পারিবারিকভাবে ছাগল মোটাতাজাকরণ করা হতো, কিন্তু বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবেও ছাগল মোটাতাজাকরণের খামার গড়ে উঠেছে। ছাগল গরীব মানুষের আপদ-বিপদের বন্ধু। বাংলাদেশে ছাগল মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়ে থাকে।
ছাগল মোটাতাজাকরণের সুবিধা
অল্প সময়ে ছাগল মোটাতাজা করে অনেক মুনাফা করা যায়।
 ছাগল ক্রয়-বিক্রয় করা খুবই সহজ।
 ছাগলের রোগব্যাধি কম। তাই ঝুঁকিও কম।
 কম মূলধন লাগে, খাদ্য খরচও কম।
মোটাতাজাকরণের জন্য ছাগল নির্বাচন :
 ব্ল্যাক বেঙ্গল অথবা যমুনাপাড়ি জাতের খাসি ছাগল সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশে সংকর জাতের ছাগলও মোটাতাজাকরণের জন্য ভালো হবে।
 ৫-৬ মাস বয়সের ছাগলের বাচ্চা ক্রয়/সংগ্রহ করতে হবে।
 অবশ্যই সুস্থ সবল ছাগল নির্বাচন করতে হবে।
 পা সুঠাম ও শক্তিশালী হতে হবে।
 দেহের গঠন আটসাট এবং লোম মসৃণ হতে হবে।
 চামড়া নরম ও ঢিলেঢালা হতে হবে।
 পাঁজরের হাড়গুলো স্পষ্ট, মজবুত ও দৃঢ় হতে হবে।
ছাগলের বাসস্থান
ছাগলকে রোদ, বৃষ্টি, ঠা-া ও বন্যপ্রাণি থেকে রক্ষা করার জন্য একটি নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করে দিতে হবে। ছাগলের ঘরে প্রচুর আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ছাগলের ঘর দুই রকমের হতে পারে-
ভূমির উপর স্থাপিত ঘর : এ ধরণের ঘরের মেঝে কাঁচা, আধা-পাকা বা পাকা হতে পারে। ঘরের মেঝেতে নিচু মাচার উপরে ছাগল বসবাস করে।
খুঁটির উপর স্থাপিত মাচা : মাটি থেকে প্রায় ৩-৫ ফুট উঁচুতে মাচা তৈরি করা হয়। বাঁশ বা কাঠ দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। মাচা তৈরির সময় একটু ফাঁকা রাখা হয়, যাতে করে বর্জ্য সহজেই নিচে পড়ে যায়।
ছাগলের সুষম খাদ্য তালিকা 
একটি ছাগল তার ওজনের ৪-৫% হারে খাদ্য খেয়ে থাকে। এর মধ্যে ৬০-৮০% আঁশজাতীয় খাদ্য যেমন- ঘাস, লতা-পাতা, খড় ইত্যাদি এবং ২০-৪০% দানাদার খাদ্য যেমন-কুড়া, ভুট্টাভাঙ্গা, খৈল, ডাল, ছোলা ইত্যাদি। একটি বাড়ন্ত খাসীকে দৈনিক  ২০০-২৫০ গ্রাম মিশ্র দানাদার খাদ্য দিতে হবে এবং বাচ্চাওয়ালা ছাগীকে           ৩৫০-৪৫০ গ্রাম মিশ্র দানাদার খাদ্য দিতে হবে। সুষম খাদ্য তৈরির পরিমাণ সারণি দ্রষ্টব্য।
ছাগলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
 ছাগল ঠা-ায় খুব সংবেদনশীল তাই বৃষ্টিতে ভেজা থেকে রক্ষা করতে হবে।
 বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে।
 বাসি-পচা খাবার পরিহার করতে হবে।
 ডোবা ও জলাশয়ের ঘাস খাওয়া থেকে ছাগলকে বিরত রাখতে হবে। অন্যথায় কলিজা কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
 ছাগলের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ হচ্ছে পি.পি.আর। সুস্থ্য অবস্থায় নিয়মিত এ রোগের টিকা প্রদান করতে হবে।
 ছাগলকে ৩-৪ মাস পরপর কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে।
 এ ছাড়া ছাগল চর্মরোগ, একথাইমা, টিটেনাস, সর্দি-কাশি, ক্ষুরা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
 উঁকুন, আঠালী দ্বারা আক্রান্ত হলে দ্রুত নিধন করতে হবে।
ছাগলের যে কোন রোগ দেখা মাত্র নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
পরিশেষে ছাগলকে দেশীয় ঘাস, লতাপাতাজাতীয় খাদ্য খাইয়ে মোটাতাজা করলে কৃষক ভাইয়েরা অনেক লাভবান হতে পারবেন। পাশাপাশি ভোক্তাদের নিরাপদ মাংস প্রাপ্যতার সুযোগ সৃষ্টি হবে। (তথ্য সূত্র : ‘দারিদ্র্য বিমোচনে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালন’ - প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর)।
 
লেখক : সাবেক ভেটেরিনারী অফিসার, জেলা ভেটেরিনারী হাসপাতাল, কুড়িগ্রাম। মোবাইল : ০১৭১৫২৭১০২৬, ই-মেইল : drmonojit66@gmail.com