Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া সবজি চাষ

রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া সবজি চাষ
কৃষিবিদ সুলতানা রাজিয়া
আবদুল জব্বার ছোট বেলা থেকেই চাষের কাজে সহযোগিতা করতেন বাবাকে। তিনি তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। সেই থেকে কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজে বর্গা জমিতে সবজি চাষাবাদ শুরু করেন। বর্তমানে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে এলাকায় সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত হয়েছেন তিনি। সবজি বিক্রি করে বছরে তাঁর আয় হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা।
আবদুল জব্বারের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের উত্তর শ্রীমাই গ্রামে। বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে শ্রীমাই ফরেস্ট অফিসের পাশে ৪৬০ শতক বর্গা জমিতে তাঁর সবজিক্ষেত। কিছুদিন আগে সেখানে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
 ২০১৬ সালে ব্যাংকঋণ ও বড় ভাইয়ের কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সবজিক্ষেত করেন তিনি। কৃষিকাজে সফলতা জানতে চাইলে তিনি জানান, সীতাকু- ও বগুড়া থেকে আধুনিক জাতের বীজ ও চারা আনেন তিনি। আবার নিজেও বীজ তৈরি করেন। পেঁপে, সিলেটি জাতের কচু, দেশি জাতের পুতা বেগুন, মরিচ, আলু, শিম, কাঁকরোল, আদা ও টমেটো চাষ করেছিলেন প্রথম দিকে। প্রথম বছরই প্রায় ৯ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেন জমি থেকে। সংসারের সব খরচ দিয়েও ধার শোধ করে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে নতুন বিনিয়োগ করেন।
ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না উল্লেখ করে আবদুল জব্বার জানান, জমিতে গোবর ও কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেন তিনি। এ ছাড়া কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেন। বিশেষ করে হলুদ আঠালো ফাঁদ ও ফেরমোন ট্র্যাপ ব্যবহার করেন তিনি।
আব্দুল জব্বারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি জনান, তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি পরিবারের ষষ্ঠ সন্তান। পাহাড়ি এলাকায় তাদের নিজস্ব ১২০ শতক জমিতে ধান চাষ করতেন তার বাবা। এসএসসির পর বিদেশে যাওয়ার ভিসা ফেরত দিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন আবদুল জব্বার। ২০১৮ সালে চক্রশালা কৃষি উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি বিভাগের আয়োজনে দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। সেখানেই বিষমুক্ত সবজি চাষে অনুপ্রাণিত হন তিনি। পরে নিজের সবজিক্ষেতকে রাসায়নিক বিষমুক্ত করতে কাজ শুরু করেন। এরপর তার লাভ আরও বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে ১৭ লাখ টাকায় একটি ট্রাক্টরও কেনেন কৃষির আয় থেকেই।
অতপর তিনি জানান, মৌসুম কোনো বিষয় নয়। তার সবজিক্ষেতে বছরজুড়ে অন্তত ১০ জাতের সবজি চাষ থাকে। প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ক্ষেতে কাজ করতে হয়। তাঁর সঙ্গে দৈনিক ৮০০ টাকা বেতনে আরও ৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিন দুইটি টেম্পো ও তিনটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে সবজি নিয়ে যান পটিয়ার কমলমুন্সির হাটে বেচাকেনার জন্য। আবার পাইকারি ক্রেতারাও ক্ষেতে এসে সবজি কিনে নেন অনেক সময়। বর্তমানে সবজি চাষ করে মাসিক তার গড় আয় হচ্ছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা বিষয় উল্লেখ করে তিনি জানান, পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান উপসহকারী কৃষি অফিসার দিপন চৌধুরীর সহযোগিতায় তিনি সময়োপযোগী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রয়োজনে কৃষি খামার পরিদর্শন করে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। গ্রামবাসী তার খামার দেখে অনেকেই উৎসাহী হচ্ছেন।
লেখক : আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক কার্যালয়, চট্টগ্রাম। মোবাইল : ০১৯২২১৫৬৬৭০,