Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

শিম : পুষ্টিগুণে ভরপুর ও উৎপাদন প্রযুক্তি

শিম : পুষ্টিগুণে ভরপুর ও উৎপাদন প্রযুক্তি
কৃষিবিদ মনিরুল হক রোমেল
শিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। এর বিচিও পুষ্টিকর সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এটি জমি ছাড়াও রাস্তার ধারে, আইলে, ঘরের চালে, গাছেও ফলানো যায়। শিম মূলত রবি মৌসুমের ফসল হলেও আগাম শীতকালীন ফসল হিসেবেও গ্রীষ্মকালে এদেশে শিম চাষ হয়ে থাকে। শিম মানুষ ও পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 
শিমের পুষ্টিমান : শিম ভিটামিন এ সি কে এবং ফলিক অ্যাসিড ও আঁশের ভালো উৎস। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে- শিম স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বেশ সহায়ক। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী শিমে জলীয় অংশ ৮৬.১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, আঁশ ১.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৮ কিলোক্যালোরি, আমিষ ৩.৮ গ্রাম, চর্বি ০.৭ গ্রাম, শর্করা ৬.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৮৭ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৯ মিলিগ্রাম রয়েছে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে শিম। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোফাইল রয়েছে। ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক শিম।  শিমে থাকা ফলিত উপাদান মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। শিমে তুলনামূলক ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন সি, জিংক আর মিনারেল। এই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। শিমের মধ্যে থাকা খনিজ চুল পড়া রোধে কাজ করে। চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। শীতকালীন এই সবজিতে আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। শিম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
শিম এর জাতসমূহ 
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি শিম-১ থেকে বারি শিম-১০ জাত রয়েছে। এদের মধ্যে বারি শিম-৩ গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে চাষাবাদ করা যায়। এছাড়াও বারি কামরাঙ্গা শিম-১, বারি বারোমাসি বেগুনী শিম, বারি জ্যাক শিম-১, বারি ইপসা শিম-১, বারি ইপসা শিম-২,       সিকৃবি শিম-১ সিকৃবি শিম-২ অন্যতম।
উপযোগী জমি ও মাটি
প্রায় সব ধরনের মাটিতে শিম চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে এর ফলন সবচেয়ে ভালো হয়। পানি জমে না এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি শিম চাষের জন্য বেছে নেয়া ভালো।
বপনের সময় 
গ্রীষ্মকালে চৈত্র (মার্চ) এবং শীতকালে আষাঢ় থেকে ভাদ্র আগাম লাগালে জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে বোনা উত্তম অর্থাৎ ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর আদর্শ সময়। 
মাদা তৈরি ও সার প্রয়োগ  
দেশী শিম প্রধানত মাদা পদ্ধতিতে বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুরপাড়ে, পথের ধারে ও জমির আইলে চাষ করা হয়। তবে সারি করে চাষ করা হলে ১ মিটার দূরত্বে সারি করে প্রতি সারিতে ৫০ সেমি. পর পর ৪৫ সেমি. লম্বা, ৪৫ সেমি. চওড়া ও ৪৫ সেমি. গভীর করে মাদা তৈরি করতে হয়। তারপর প্রতি মাদার মাটির সাথে ১০ কেজি পচা গোবর, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে মাদা ভরাট করতে হবে। বীজ বপনকালে বর্ষা থাকে, তাই মাদায় যাতে পানি না জমে সে জন্য জমির সাধারণ সমতল হতে মাদার ভরাট মাটি ৫ সেমি পরিমাণ উঁচু রাখতে হয়।
বীজের পরিমাণ ও বীজ বপন
জাতভেদে প্রতি শতকে ২৮-৩০ গ্রাম। হেক্টরে ৫-৭ কেজি শিম বীজের প্রয়োজন হয়। মাদায় সার প্রয়োগের ৮-১০ দিন পর প্রতি মাদায় দুই-তিনটি বীজ ফাঁক ফাঁক করে ২.৫-৩.০ সেমি. গভীরে বপন করতে হয়। বীজ বপনের আগে ১০-১২ ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে নিতে নিন। চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর প্রতিটি মাদায় ২-৩টি করে সুস্থ চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হয়। 
জমি তৈরি
বেশি জমিতে আবাদ করা হলে কয়েকটি চাষ ও মই দেয়া ভাল। মাদার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতার আকার ৪৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।
মাদার দূরত্ব : এক মাদা থেকে অন্য মাদার দূরত্ব ৩.০ মিটার।
প্রতি মাদার জন্য সারের পরিমাণ 
গোবর ১০ কেজি, খৈল ২০০ গ্রাম, ছাই ২ কেজি, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম। মাদা তৈরি করার সময় এসব সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজালে ১৪ থেকে ২১ দিন পর পর দুই কিস্তি-তে ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম করে এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
চাষ পদ্ধতি : গাছ ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মাদায় গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা মাটিতে পুঁতে বাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। চারার বয়স ৪০-৪৫ হলে শিমের ডগা পরস্পর প্যাঁচ লেগে যায়। এতে ডগার বৃদ্ধি এবং ফুল-ফল ধারণ ব্যাহত হয়। এজন্য প্যাঁচ ছাড়িয়ে দিন। 
সার ব্যবস্থাপনা
শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর সার এবং জিপসাম সবটুকু ছিটিয়ে জমিতে প্রয়োগ করে চাষ দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপন বা চারা রোপণের ৪-৫ দিন আগেই ইউরিয়া ও পটাশ সারের অর্ধেক এবং টিএসপি সারের সবটুকু একত্রে ছিটিয়ে প্রয়োগ করে মাদার মাটির সাথে (৪ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত) কোদালের দ্বারা হালকাভবে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বপন/রোপণের ৩০ দিন পর বাকি অর্ধেক ইউরিয়া এবং পটাশ সার মাদায় উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। শিমের জমিতে সার উপরিপ্রয়োগের কাজ দুই কিস্তিতে করতে হয়। প্রথম কিস্তি চারা গজানোর এক মাস পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি গাছে দুই-চারটি ফুল ধরার সময়। প্রতি কিস্তিতে মাদাপ্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া (শতক প্রতি) ও ২৫ গ্রাম (শতকপ্রতি) এমওপি সার গাছের গোড়ার চারদিকে (গোড়া থেকে ৪-৫ ইঞ্চি দূরে) উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সারপ্রয়োগের সময় মাটিতে রসের অভাব হলে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে।
সেচ 
বেডের দুইপাশে নালার মাধ্যমে সেচ দিতে হবে। ফসলের পুরো জীবনকালে মাটিতে রসের মাত্রা ৬০% এর নিচে নেমে যাবার আগে সেচ দেয়া প্রয়োজন। রসের মাত্রা অর্ধেকের চেয়ে কমে গেলে ফলন বেশ কমে যাবে। ৯০-১০০ সেমি গভীরতার ৩ ভাগের ২ ভাগ নিচের মাটি হাতের  মুঠোয় নিয়ে চাপ দিলে চিকন বুনটের মাটি/পলিময় কাদা জমিতে তা শক্ত ও কিছুটা আঠালো দলা হলে এবং জমিনে ফেলে দিলে না ভাঙলে ২ দিন পর সেচ দেয়া প্রয়োজন। মাঝারি থেকে মোটা বুনটের মাটি / বেলে প্রধান জমিতে  তা শক্ত ও কিছুটা আঁঠালো দলা হলে এবং জমিনে ফেলে দিলে না ভাঙলে  ১ দিন পরই সেচ দিতে হবে। অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে নালা তৈরি করে রাখতে হবে যাতে অতি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনে সুবিধা হয়।         
আগাছা দমন : জমি নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন। সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র আগাছা  দমন করতে হবে। সেচ ও সার দেয়ার পর জো আসা মাত্র নিড়ানি দিয়ে আগাছা দমন করতে হবে।     
মাচা বা বাউনি দেয়া  
শিমগাছ বাওয়ার সুযোগ যত বেশি পায়, ফলন তত বেশি হয়। তাই শিমগাছ যখন ১৫-২০ সেমি. লম্বা হবে তখন গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা (কঞ্চিসহ) মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। এভাবে শিমগাছ ছড়িয়ে পড়ে ভালো ফুল ও ফল দিতে পারে। দেশীয় পদ্ধতিতেও বাঁশের মাচা বা ঝিকাগাছে অথবা ছনের ঘরের চালে শিমগাছ তুলে দেয়া যায়। এ ছাড়া বাঁশের চটা ও কঞ্চির সাহায্যে ইংরেজি ‘অ’ অক্ষরের মতো কাঠামো তৈরি করে জমিতে মাচা দিয়েও শিমগাছ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
রোপণের আগে পরে করণীয় ও পরিচর্যা
আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দেশী শিমের বীজ বপন করার সময়। তবে শ্রাবণ মাস উপযুক্ত সময়। যে মাসেই বীজ বপন করা হোক, অগ্রহায়ণের শেষ বা কার্তিক শুরুর আগে কোনো গাছেই ফুল ও ফল ধরে না। ব্যতিক্রম বারমাসী জাত। দেশী শিমে যেহেতু আগাম, মাঝারি ও নাবী জাত আছে, তাই জাতের সঠিক তথ্য না জেনে চাষ করলে সময়মতো ফলন পাওয়া যায় না। দেশি শিম ক্ষেত ছাড়াও বসতবাড়ির দেয়ালের পাশে, আঙিনার ধারে ছোট মাচায়, ঘরের চালে, পুকুর ও রাস্তার ধারে এবং ক্ষেতের আইলে চাষ করা যায়। 
প্রতি শতক জমিতে ৪০-৫০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। প্রতি মাদায় ৩-৪টি বীজ বপন করতে হয়। চারা গজালে ১ বা ২টি সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়। তবে বীজের স্বল্পতা থাকলে বা ভালো চারা রোপণ করতে চাইলে পলিব্যাগে বীজ থেকে চারা তৈরি করে নেয়া যায়। এতে বাছাই করা সুস্থ-সবল রোগ বা পোকামুক্ত শিমের চারা মাদায় রোপণ করা যায়। অন্য দিকে বৃষ্টির কারণে জমিতে বীজ বপন করতে না পারলে কিংবা জমিতে অন্য ফসল থাকলে সময়মতো পলিব্যাগে চারা তৈরি করা ভালো।
চারা গজানোর পর গাছে শাখা-প্রশাখা না আসা অথবা ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা রাখাসহ আগাছা জন্মাতে দেয়া ঠিক নয়। গাছ কিছুটা লম্বা হলে প্রথমে কাঠি ও পরে বাউনির জন্য মাচার ব্যবস্থা করতে হয়। বৃষ্টির পানি যাতে গাছের গোড়ায় জমে না থাকে সে জন্য নিষ্কাশনের নালা কেটে রাখতে হয়। বৃষ্টিতে গাছের গোড়ার মাটি ধুয়ে গেলে মাটি দিয়ে গোড়ার চার দিক এমনভাবে উঁচু করে দিতে হয় যাতে পানি সহজেই গড়িয়ে যায়। এ সময়ে গাছের গোড়ার দিকের প্রথম ২ থেকে ৩টি পার্শ্ব শাখা ছাঁটাই করে দিতে হয়। এই শাখাগুলো থেকে তেমন একটা ফল পাওয়া যায় না।
শিমের বালাই নিয়ন্ত্রণ
পাতার দাগ রোগ : দেশী শিমের পাতায় কালো দাগ ও ফোস্কা পড়া দেখা দিলে মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়।
গোড়া ও শিকড় পচা রোগ : শিকড় পচা রোগ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে বাকি গাছে ও মাটিতে ভালো করে কার্বেন্ডাজিম- জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। শিমের গোড়া ও শিকড় পচা রোগ সাধারণত বর্ষার শুরুতে বা অতি বর্ষণের ফলে গোড়ায় পানি জমলে হয়। তবে মাঝে মাঝে আবহাওয়ার আর্দ্রতা বেড়ে গেলে ও উচ্চ তাপমাত্রায় গোড়া পচা রোগের প্রকোপ বাড়ে। গাছের বৃদ্ধির যেকোনো অবস্থাতেই এ রোগ হতে পারে। মাটির ঠিক ওপরে গাছের কা-ে লালচে বাদামি দাগ পড়ে। ধীরে ধীরে এই দাগ বিস্তার লাভ করে। বেশি হলে শিকড়েও ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত অংশ আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়, ফলে গাছ দুর্বল হয়। ফলন কম হয়। কখনো কখনো গাছ মরেও যেতে পারে। চারা অবস্থায় আক্রান্ত হলে চারা মারা যায়। অন্য সুস্থ গাছে বিশেষ করে গাছের গোড়ায় কপারযুক্ত ছত্রাকনাশক বা বাড়িতে তৈরি বোর্দো মিশ্রণ ৭ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।
মরিচা রোগ  : দেশী শিমগাছের বয়স্ক অবস্থায় মোজাইক বা মরিচা রোগ দেখা যায়। এটি ছত্রাকজনিত রোগ। মাঘ মাসের শুরুর দিকে বিশেষ করে এ সময় দু-এক পশলা বৃষ্টি হলে বা বেশি কুয়াশা হলে এই রোগ দেখা দেয়। শিমগাছের পাতায় বিশেষ করে নিচের দিকের পুরাতন পাতায়, কা-ে ও ডগায় বা কখনো কখনো শুঁটিতে মরিচা রোগের আক্রমণ দেখা যায়। এর আক্রমণে ছোট ছোট বাদামি ধূসর রঙের দাগ পড়ে পাতায়। পরে দাগগুলো আকারে বাড়ে, গোলাকার বা কোণবিশিষ্ট হয় এবং গাঢ় বাদামি রঙ ধারণ করে। শেষে বড় দাগগুলো কালো রঙে রূপান্তরিত হয়। সাধারণত দাগগুলো একত্র হয়ে এক জায়গায় থাকে এবং অনেক সময় পরস্পর মিশে গিয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। মরিচা রোগ প্রতিকারের ভালো উপায় হচ্ছে রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা। বারি ও ইপসা জাতের শিমগুলো এই রোগ প্রতিরোধী। একবার এ রোগে গাছ আক্রান্ত হলে রোগ দমন করা যায় না। গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হয়।
হলুদ মোজাইক রোগ  : দেশী শিমের আরেকটি রোগ প্রায়ই দেখা যায়, তা হলো হলুদ মোজাইক রোগ। এ রোগে প্রথমে কচি পাতায় ছাড়া ছাড়াভাবে হলদে দাগ দেখা যায়। দাগগুলো আস্তে আস্তে পুরো পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। হলদে হয়ে যাওয়া পাতার কিছু কিছু অংশ সবুজই থাকতে পারে। আক্রান্ত হওয়ার পর গজানো নতুন পাতায় হলদে ভাব আরো বেশি দেখা যায়। কখনো কখনো পাতার বিকৃতিও ঘটে। পাতা আকারে ছোট হয় ও কিছুটা কুঁচকে যায়। এক ধরনের সাদামাছি এই রোগ ছড়ায়। যেকোনো অন্তর্বাহী কীটনাশক (যেমন-বাইফেনথ্রিন বা ইমিডাক্লোপ্রিড) ১ থেকে ২ মিলিলিটার প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে পোকা ও রোগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। অথবা জৈব কীটনাশক ফাইটোক্লিন বা ফাইটোম্যাক্স ১ লিটার পানিতে ৫-৭ মিলিলিটার অথবা বায়োম্যাক্স এম প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া রোগমুক্ত মাঠ বা গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয় পরবর্তী ফসলের জন্য। আক্রান্ত ক্ষেতের আশপাশের শিমজাতীয় সব গাছে (ফরাসি শিম, ঝাড় শিম, চওড়া শিম, চারকোনা শিম, তলোয়ার শিম, মটরশুঁটি, সয়াবিন, মেথি, খেসারিশাক, ছোলাশাক ও বরবটি) একই সাথে কীটনাশক স্প্রে করা উচিত। কীটনাশক স্প্রে করার আগে সংগ্রহযোগ্য সব ফল বা শুঁটি সংগ্রহ করে নিতে হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে গাছ থেকে কোনো ফসল সংগ্রহ করা যাবে না।
জাব পোকা : দেশী শিমে জাব পোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি। ফুল বের হওয়ার সময় এদের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। কেরোসিন মিশ্রিত ছাই পাতায় ছিটিয়ে এই পোকা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে গাছের গোড়া ও মাচার খুঁটি, যা মাটি সংলগ্ন থাকে সেখানেও এই ছাই ছিটিয়ে দিতে হয় যাতে পিঁপড়া খুঁটি বা গাছ বেয়ে উঠতে না পারে। পিঁপড়া জাব পোকার গা থেকে নি:সৃত এক প্রকার আঠালো পদার্থকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। তাই শিমগাছে জাব পোকা দেখা দিলে পিঁপড়াও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোপ্রিড- জাতীয় কীটনাশক ১৫ দিন পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হয়। অথবা জৈব কীটনাশক ফাইটোক্লিন বা ফাইটোম্যাক্স ১ লিটার পানিতে ৫-৭ মিলিলিটার অথবা বায়োম্যাক্স এম প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। অথবা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি হিসেবে হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
শুঁটির মাজরা পোকা : দেশী শিমের একটি বড় সমস্যা শুঁটির মাজরা পোকা। বাদামি রঙের পূর্ণ বয়স্ক পোকা ফুল বা কচি শিমের গায়ে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বা কীড়া বের হয়ে শুঁটির ভেতরে প্রবেশ করে কচি বীজ ও শাঁস খায়। ভেতরেই মল ত্যাগ করে। এ অবস্থায় শুঁটি কিছুটা বড় হয়। কিন্তু শিমের বাণিজ্যিক মূল্য একেবারেই থাকে না। ফুলের কুঁড়িতে ডিম পাড়লে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর পুষ্পমঞ্জরি খেতে থাকে। পরে পাতায় ছোট ছোট জালের মতো তৈরি করে। পাতা, ফুল ও কচি শুঁটি দিয়ে বাসার মতো তৈরি করে সেখানে লুকিয়ে থাকে। এই পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য শস্যপর্যায় অবলম্বন করা উচিৎ। অর্থাৎ পরপর দুই-তিন মৌসুম একই জমিতে দেশী শিমের চাষ করা থেকে বিরত থাকতে হয়। এতে এই পোকার জীবনচক্র বাধাপ্রাপ্ত হয়। ওই সময়ে কোনো ডালজাতীয় শস্যও চাষ করা যাবে না। কারণ ডাল শস্য এই পোকার বিকল্প পোষক। প্রতি গাছে বা প্রতি বর্গমিটারে যদি ১ থেকে ৩টি পোকার আক্রমণ দেখা যায় তাহলে ফেনিট্রোথিয়ন গ্রুপের কীটনাশক (৫০ ইসি) প্রতি লিটারে ২ মিলিলিটার কিংবা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটারে ১ মিলিলিটার হিসেবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। স্প্রে করার আগে সংগ্রহ করার মতো শিম সংগ্রহ করে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে কোনো শিম সংগ্রহ করা উচিত নয়।
ফসল সংগ্রহ
শিমের কচি শুঁটি, অপক্ব বীজ এবং পরিপক্ব বীজ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত একই ফসল থেকে প্রথম দিকে গুঁটি ও শেষের দিকে বীজ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। গাছ তিন মাসের বেশি সময়ব্যাপী ফল দিতে থাকে। জাতভেদে ফলন ১০-২০ টন/হে. হতে পারে। 
শিম শীতকালে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি হিসেবে পরিচিত। উচ্চ পুষ্টিমানের কারণে শিম খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন।  উচ্চমূল্য ফসল হিসেবে সারা দেশেই এর চাষ হয়ে থাকে। কৃষকগণ শিম চাষ করে লাভবান হতে পারেন।
 
লেখক : আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক কার্যালয়, কুমিল্লা, মোবাইল : ০১৬৮১৬৮৩৩৪২, ই-মেইল : monirulromel@gmail.com