Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

গরুর লাম্পি চর্মরোগ ও প্রতিরোধের কৌশল

গরুর লাম্পি চর্মরোগ ও প্রতিরোধের কৌশল
ডা: মনোজিৎ কুমার সরকার
গরুর লাম্পি চর্মরোগ (Lumpy Skin Diseases-LSD)  একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ (Neething poxvirus) বাংলাদেশে ২০১৯ সালে প্রথম এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। এ রোগে গবাদি পশুর মৃত্যু ও চিকিৎসা খরচের কারণে খামারিরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বাংলাদেশে বছরের সব সময়ই কমবেশি এ রোগের সংক্রমণ লক্ষ করা যাচ্ছে। এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় না।
রোগের লক্ষণ :
 উচ্চমাত্রার জ্বর (>৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস), যা প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে বিরাজ করে।
 চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়ে। মুখ দিয়ে লালা পড়ে এবং পরবর্তীতে খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়।
 গরুর শরীরের চামড়ায় গোলাকার হয়ে (চাকা চাকা) ফুলে উঠে (৫০%), ফোলা অংশে চাপ দিলে ব্যাথা অনুভব করে।
 মুখের ভেতর, অন্ত্রনালী, শ্বাসতন্ত্র ও প্রজননতন্ত্রের ভেতরেও চাকা চাকা হয়ে ফুলে উঠে।
 শরীরের বিভিন্ন স্থানের লিম্ফ নোড/গ্রন্থি ফুলে উঠে।
 আক্রান্ত গরুর বুক, ওলান ও পায়ে রস জমে (ঊফবসধ) যায়।
 সুপ্তকাল প্রায় ৪-১৪ দিন। আক্রান্তের হার ৫-৫০%। এক মাসের কম বয়সের বাছুর আক্রান্তের হার বেশি ৪০%। দেশী গরুর চেয়ে শংকর জাতের গরু বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। গরুর শরীরের নিজস্ব ইমুনিটির উপর নির্ভর করে আক্রান্তের হার কমবেশি হয়ে থাকে।
 আক্রান্ত গরুর চামড়ায় গোলাকার ফোলা কয়েক মাস পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে। 
 চোখ আক্রান্ত হলে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
 দুধ উৎপাদন কমে যায়।
 চামড়ার ঘায়ে পোকা হতে পারে।
কিছু দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার সৃষ্টি করতে দেখা যায়। যেমন- নিউমোনিয়া, ওলান প্রদাহ, পশু স্থায়ী অথবা অস্থায়ীভাবে বন্ধ্যা হয়ে  যাওয়া, গর্ভপাত ঘটা ও গরুর গরম না হওয়া ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
রোগের বিস্তার
 শুষ্ক ঋতুতে উচ্চতাপমাত্রায় ও আর্দ্রতায় দ্রুত বিস্তার লাভ করে। 
 বিভিন্ন প্রজাতির মাছির কামড়ের মাধ্যমে স্থিতিশীল মাছি, ঘোড়া মাছি (Stomoxys, Tabanidae Glossina, Culicoides Spp)। মশা ও টিকের কামড়ের মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। 
 এ ভাইরাস আক্রান্ত গরুর রক্ত, লালা, চোখ, নাক থেকে পড়া পানিতে এবং ষাড় গরুর বীর্যে বিদ্যমান থাকে, যা সুস্থ গরুকে আক্রান্ত করতে পারে।
 সংক্রমিত গাভীর দুধ খেয়ে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে।
 গাভীকে বীজ দেয়ার যন্ত্র (Culicoides Spp), সুচ, সংক্রামিত কাপড়, যন্ত্রপাতি, পানি ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়।
চিকিৎসা :
 ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা।
 এন্টিহিস্টামিনস জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। 
 জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা।
 চামড়ায় ঘা/ক্ষত সৃষ্টি হলে - পোভিডোন আয়োডিন ক্ষত স্থানে - দিনে ২ বার স্প্রে করতে হবে।
 তরহপ ও )| (Al-gun)  খাওয়াতে হবে।
সতকর্তা : এ রোগের চিকিৎসায় ব্যথানাশক ওষুধ)| (Al-gun) iclofen Kitopurofen)প্রয়োগ করা যাবে না।
প্রতিরোধ :
* গরুকে নিয়মিত এ রোগের টিকা প্রয়োগ করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির টিকা পাওয়া যায়।
*  খামারে স্বাস্থ্যবিধি ও জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা পালন করতে হবে। যেমন- আক্রান্ত গরুকে মশারির মধ্যে আটকে রাখা; মশারির ব্যবহার; দ্রুত সেডের গোবর সরিয়ে ফেলা; সেডের পাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা।
* মশা-মাছি, আঁঠালির জীবন চক্র ভেঙে দেয়া। মশা-মাছি, আঁঠালি নিধন করা। সেডের মেঝের সকল প্রকার গর্ত ভরাট করে দিতে হবে যেন পানি দাঁড়িয়ে না থাকে। সকল ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। লার্ভিসাইড প্রয়োগ করতে হবে। 
বেশির ভাগ আক্রান্ত গরু সারা জীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে থাকে। ইমিউন গাভী থেকে বাছুর গধঃঁবৎহধষ ধহঃরনড়ফু পেয়ে থাকে, যা ৬ মাস পর্যন্ত প্রতিরোধ করে। 
তথ্য সূত্র : ) The Merck Veterinary Manual.
: সাবেক ভেটেরিনারী অফিসার, জেলা ভেটেরিনারী হাসপাতাল, কুড়িগ্রাম। মোবাইল : ০১৭১৫২৭১০২৬, ই-মেইল : drmonojit@gmail.com