Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ভাদ্র মাসের কৃষি (১৬ আগস্ট-১৫ সেপ্টেম্বর)

ভাদ্র মাসের কৃষি
(১৬ আগস্ট-১৫ সেপ্টেম্বর)
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
ঋতুবৈচিত্র্যের ভাদ্র মাস শরৎ মৌসুমের আগমন হয়। ¯িœগ্ধ শরৎকে বলা হয় ফসল সম্ভাবনার ঋতু। বৈশি^ক আবহাওয়া পরিবর্তনে এসময় ঝরে অঝোর বৃষ্টি। আগাম বন্যা বা নাবি বন্যার কারণে কৃষক নতুন পলিমাটির জমিনে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তির মধ্যমে ফলাবে নতুন ফসল । বাংলার শস্য ভা-ার  সমৃদ্ধ করার জন্য ভাদ্র মাসে কৃষিতে করণীয় বিষয়গুলো জেনে নেবো সংক্ষিপ্তভাবে।
আমন ধান
আমন ধান ক্ষেতের অন্তর্বর্তীকালীন যত্ন নিতে হবে। ক্ষেতে আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। আমন ধানের জন্য প্রতি একর জমিতে ৮০ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয়। এ সার তিন ভাগ করে প্রথম ভাগ চারা লাগানোর ১৫-২০ দিন পর, দ্বিতীয় ভাগ ৩০-৪০ দিন পর এবং তৃতীয় ভাগ ৫০-৬০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। আমন মৌসুমে মাজরা, পামরি, চুঙ্গী, প্রভৃতি পোকা এবং খোলপড়া, পাতায় দাগ পরা রোগ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বালাই নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
পাট
এ সময় পাট বীজ উৎপাদনের জন্য ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত দেশি পাট এবং আশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত তোষা পাটের বীজ বোনা যায়। বন্যার পানি উঠে না এমন সুনিষ্কাশিত উঁচু জমিতে জো বুঝে  লাইনে বুনলে প্রতি শতাংশে ১০ গ্রাম আর ছিটিয়ে বুনলে ১৬ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। জমি তৈরির সময় শেষ চাষে শতকপ্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬৫০ গ্রাম টিএসপি, ৮০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। পরবর্তীতে শতাংশ প্রতি ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম করে দুই কিস্তিতে বীজ গজানোর ১০-২০ দিন পরপর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
আঁশের মান উন্নয়নে পলিথিন কাগজ ব্যবহারে পাটের পচন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। এই পদ্ধতিতে পাট পচনে তুলনামূলক সময় কম লাগে। কাটিংস মুক্ত উন্নতমানের পাট আঁশ পাওয়া যায়। জাকের পানি দ্রুত বেশি পচবে না বা কলুষিত করবে না। পাট মৌসুমে (মে-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের পূর্বে প্রচলিত পাট পচন পদ্ধতিতে প্রাপ্ত পাটের বিক্রয় মূল্য ২৮০০-৩০০০/- এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের পরে প্রাপ্ত পাটের বিক্রয় মূল্য ৩২০০-৩৫০০/- হয়ে থাকে,যা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। 
আখ
এ সময় আখ ফসলে লালপচা রোগ দেখা দিতে পারে। লালপচা রোগের আক্রমণ হলে আখের কা- পচে যায় এবং হলদে হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। এজন্য আক্রান্ত আখ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং জমিতে যাতে পানি না জমে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধী জাত ঈশ্বরদী ১৬, ঈশ্বরদী ২০, ঈশ্বরদী ৩০, ঈশ^রদী ৩৯, ঈশ^রদী ৪০, বিএসআরআই আখ৪৫, বিএসআরআই আখ ৪৬, বিএসআরআই আখ ৪৮  চাষ করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। 
তুলা
ভাদ্র মাসের প্রথম দিকেই তুলার বীজ বপন কাজ শেষ করতে হবে। হাতে সময় না থাকলে জমি চাষ না দিয়ে নিড়ানি বা আগাছা নাশক প্রয়োগ করে ডিবলিং পদ্ধতিতে বীজ বপন করা যায়। বীজ গজানোর পর কোদাল দিয়ে সারির মাঝখানের মাটি আলগা করে দিতে হবে।
শাকসবজি
এ সময় লাউ ও শিমের বীজ বপন করা যায়। এজন্য ৪-৫ মিটার দূরে দূরে ৭৫ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সেমি. গভীর করে মাদা বা গর্ত তৈরি করতে হবে। এরপর প্রতি মাদায় ২০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৭৫ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। মাদা তৈরি হলে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনে দিতে হবে এবং চারা গজানোর ২-৩ সপ্তাহ পর দুই-তিন কিস্তিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৭৫ গ্রাম এমওপি সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এ সময় আগাম শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদনের কাজ শুরু করা যেতে পারে। সবজি চারা উৎপাদনের জন্য উঁচু এবং আলো-বাতাস লাগে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। এক মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা করে বীজতলা করে সেখানে উন্নতজাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো এগুলোর বীজ বপন হবে।
গাছপালা
ভাদ্র মাসেও ফলদবৃক্ষ এবং ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা যায়। বন্যায় বা বৃষ্টিতে মৌসুমের রোপিত চারা নষ্ট হলে মরা চারা তুলে নতুন চারা রোপণ করতে হবে।
এ মাসে আম, কাঁঠাল, লিচু গাছ ছেঁটে দিতে হয়। ফলের বোঁটা, গাছের ছোট ডালপালা, রোগাক্রান্ত অংশ ছেঁটে দিলে পরের বছর বেশি করে ফল ধরে এবং ফলগাছে রোগও কম হয়। 
তালের ফল ও বীজ আগস্ট মাস থেকে শুরু করে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা সম্ভব। নির্বাচিত মাতৃবৃক্ষ থেকে পাকা তাল থেকে রস বের করে নেয়ার পর সংগৃহীত বীজ সাথে সাথে বীজতলায় বপন করতে হবে। বীজ শুকিয়ে গেলে তা থেকে চারা পাওয়া যাবে না। পরিপক্ব তালের বীজের অংকুরোদগমের হার ৭০% এর উপর হয়ে থাকে।

লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪; ই-মেইল :editor@ais.gov.bd