পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সারা বছরই কলা উৎপন্ন হলেও বছরের এই সময় কলার উৎপাদন বেড়ে যায় কয়েকগুন, একই সাথে মৌসুমি ফল বাতাবিলেবু একই সময়ে বাজারে আসতে থাকায় রাঙ্গামাটির বাজার এখন কলা ও বাতাবিলেবুর দখলে। পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় উৎপাদিত বাতাবিলেবু ও কলা আসছে স্থানীয় বাজার থেকে বড় বড় বাজারে। আড়তদাররা সেই ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে এসব ফসল চাষে আরো উৎসাহিত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন রাঙ্গামাটিতে ১১ হাজার ৭ শত হেক্টর জমিতে কলা ও ১২ শত ১০ হেক্টর জমিতে বাতাবিলেবুর বাগান রয়েছে এবং এর পরিমান প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায়, বাজারে সার ও বালাইনাশকের দাম ও সরবরাহ কৃষক বান্ধব থাকায় এবং মাঠ পর্যায়ের সম্প্রসারণকর্মীগণ ফল চাষ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করায় এ বছর কলা ও বাতাবিলেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরো বলেন উৎপাদিত কলার একটি বড় অংশই হচ্ছে স্থানীয় জাতের বাংলা কলা। তবে পাহাড়ে উচ্চফলনশীল জাতের ফলের আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষি দপ্তর থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প, পার্বত্য অঞ্চলে মিশ্র ফল বাগান স্থাপন ও বিদ্যমান ফল বাগান পরিচর্যা কর্মসূচীসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে পাহাড়ের কৃষকরা প্রচলিত জুম চাষের পরিবর্তে উদ্যান ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। কৃষকরা পাহাড়ের ঢালে এককভাবে বা অন্যান্য ফলের গাছের সাথে মিশ্রভাবে কলা ও বাতাবিলেবুর চাষ করে থাকেন। সাধারন চাষীরা বলেন এ এলাকায় ফল সংরক্ষণের জন্য কোন হিমাগার না থাকায় উৎপাদন মৌসুমে সময়মত পাইকারি ব্যবসায়ি বা আড়তদাররা ফল না কিনলে তাদের ফল পঁচে নষ্ট হয়ে যায় ফলে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এ প্রসংগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার উপপরিচালক কৃষিবিদ পবন কুমার চাকমা বলেন এ এলাকার উৎপাদিত ফল সঠিক সময়ে বাজারজাতকরণের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দূর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা। কৃষকরা যাতে ফসলের সঠিক দাম পায় এবং তাদের উৎপাদিত ফল যাতে নষ্ট হতে না পারে সেজন্য রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্তাবধানে ফ্রুট প্রসেজিং সেন্টার স্থাপিত হয়েছে। সেখানে আনারস, কাঠাল, কলা ও অন্যন্য ফলের জুস, চিপস, জ্যাম, জেলি তৈরির সুযোগ রয়েছে। পার্বত্য এলাকার যোগাযোগ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, আরো বেশি ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র এবং ফল সংরক্ষণাগার স্থাপন করা গেলে এ এলাকার উৎপাদিত ফল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রাপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জণ করা সম্ভব হবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।