বোরো মওসুমের লবণাক্ততা সহনশীল দুটি ও আউশ মওসুমে চাষাবাদের উপযোগী একটি সহ মোট তিনটি নতুন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২০) জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৩তম সভায় ব্রি ধান৯৭ ও ব্রি ধান৯৯ দেশের উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলও অনুকূল পরিবেশে এবং ব্রি ধান৯৮ সারা দেশে আউশ মওসুমে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। এর ফলে ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধান জাতের সংখ্যা হলো ১০৫টি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অবমুক্ত করা নতুন জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান৯৮ আউশ মওসুমে চাষ উপযোগী জাত। এর ফলন প্রতি হেক্টরে ৫.০৯ থেকে ৫.৮৭। এর দানালম্বা ও চিকন। এ জাতের ধানের দানার রং সোনালী। এ জাতেরজীবনকাল ১১২ দিন যা রোপা আউশ মওসুমের জাত বিআর২৬ এর সমান। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২২.৬ গ্রাম।ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭.৯ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৯.৫ ভাগ। ভাত ঝরঝরে। এ জাতের কৌলিক সারিটি নির্বাচনের পর ব্রির গবেষণা মাঠে তিন বছর এর ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিটি আউশ ২০১৮-১৯মওসুমেবাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। উক্ত কৌলিক সারিটির জীবনকাল বিআর২৬ এর মতো এবং ফলন বেশী হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল আউশ ২০১৯-২০মওসুমের কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় আউশ মওসুমের জন্য বিআর২৬ এর একটি পরিপূরক জাত হিসাবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়।
ব্রি ধান৯৭ ও ব্রি ধান৯৯ বোরো মওসুমের উচ্চ ফলনশীল লবণাক্ততা সহনশীল ধানের জাত । এ জাতগুলো চারা অবস্থায় ১৪ ডিএস/মি এবং সমগ্র জীবনকাল ৮-১০ ডিএস/মি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে।ব্রি ধান৯৭ এর গড় জীবনকাল ১৫২ দিনএবং গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৪.৯ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৭.০ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম ।এ জাতের ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৫.৫ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৫.২ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৬ ভাগ। গাছের গড় উচ্চতা ১০০ সে.মি. ও ডিগপাতা খাড়া। এর চাল মাঝারি মোটা হওয়ায় বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর ও খুলনা অঞ্চলে অধিক জনপ্রিয় হবে।
ব্রি ধান৯৯ এর গড় জীবনকাল ১৫৫ দিনএবং গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৫.৪ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৭.১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম ।এ জাতের ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২২.৮ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭.১ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৭.৯ ভাগ। গাছের গড় উচ্চতা ৯৪ সে.মি. ও ডিগপাতা খাড়া। এর চাল লম্বা ও চিকন হওয়ায় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে অধিক জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ জাতের কৌলিক সারিগুলো নির্বাচনের পর ব্রির গবেষণা মাঠে তিন বছর এর ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিগুলোর বোরো ২০১৭-১৮ মওসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। উক্ত কৌলিক সারিগুলো লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান৬৭ এর থেকে ফলন বেশী হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল বোরো ২০১৮-১৯ মওসুমে কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় বোরো মওসুমের জন্য লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান৬৭ এর পরিপূরক জাত হিসাবে এ জাত দুটিঅবমুক্ত করা হয়।