কৃষি মন্ত্রণালয় ও এফএও এর উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এ বছরও ১৬ অক্টোবর বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও যথাযথ গুরুত্বসহকারে পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৫। এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য- Social Protection and agriculture: breaking the cycle of rural poverty (গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষায় কৃষি)। এ দিবস উপলক্ষে ঢাকা ছাড়াও দেশের জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে ঢাকায় সকাল ৯:৩০ টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র্যালি, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ফার্মটেস্থ বিএআরসি চত্বরে ১৬-১৮ অক্টোবর তিনদিনব্যাপী খাদ্যমেলা এবং সকাল ১০:১৫ মিনিটে বিএআরসি অডিটরিয়ামে “গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষায় কৃষি” বিষয়ক প্রতিপাদ্যের ওপর সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৫ উপলক্ষে বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার, মাসিক কৃষিকথার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার প্রকাশনা ও বিতরণ, মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে খাদ্যমেলা ও সেমিনারের উদ্বোধন করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষের সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আ হ ম মুস্তফা কামাল, মাননীয় মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মাননীয় সভাপতি জনাব মো. মকবুল হোসেন এমপি এবং এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি জনাব মাইক রবসন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সকলের মৌলিক চাহিদা পুরণের সাথে সাথে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে কৃষক তার সামাজিক ও পরিবেশের বাধাগুলো আরো দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে পারবে, যার ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি, নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, কৃষিতে কর্মসংস্থান, কৃষির বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরনে বিশেষ অবদান রাখবে। কেননা কৃষকরাই হচ্ছে গ্রামীণ উন্নয়নের একমাত্র শক্তি এবং দারিদ্র্য চক্র ভাঙ্গার এক শক্তিশালী হাতিয়ার। গ্রামীণ জনগনের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে স্বল্প সুদে এবং সহজে কৃষি ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা, কৃষি ভর্তুকি প্রদান, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভবন ও কৃষকের মাঝে বিস্তার, কৃষিতে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, খামার যান্ত্রিকীকরণ, সঠিক সময়ে তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, সচেতনতা বৃদ্ধি করা উল্লেখযোগ্য। সরকারের দক্ষ পরিকল্পনা ও তার সঠিক বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি আরও বলেন, দানাদার খাদ্য শস্যের পাশাপাশি মাছ, ডিম, মাংস উৎপাদনে সরকার উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছে এবং দেশে বন্যা, খরা এসব প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বর্তমান সরকার খাদ্য উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে কৃষিক্ষেত্রে সিংহভাগ সাফল্য এসেছে এ দেশের কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও মানসম্মত জীবনযাপনের জন্য পরিকল্পিতভাবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমেই আমাদের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি ঘটিয়ে সমাজের উন্নয়ন সাধন ও দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হবে।
সভাপতির বক্তব্যে কৃষি সচিব বলেন, গ্রামীণ দরিদ্রতা দূর করে মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। গ্রামের মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক তথা সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে কৃষিকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করার বিকল্প নেই। গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে গৃহীত সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কৃষিতে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তি, কলাকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ সহজতর হবে।
বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৫ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শামসুদ্দীন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আযাদ। কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিজ্ঞানী, গণমাধ্যমকর্মী প্রমুখ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।