বাংলাদেশ এখন সবজি উৎপাদনেই বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে । আমাদের উৎপাদিত প্রযুক্তি এখন বিদেশীরা অনুসরন করে। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশে অনেক সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মিলিত প্রচেষ্টায়। রাজধানীর খামারবাড়ির আ.কা.মু গিয়াস উদ্দিন মিলকী অডিটরিয়াম চত্বরে আয়োজিত তিনদিন (১৭-১৯ জানুয়ারি) ব্যাপি জাতীয় সবজি মেলা ২০১৬ ও সবজি প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন এমপি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে হবে, এছাড়াও যারা উৎপাদন করে থাকেন তারা যেন ন্যায্যমূল্য পান এবং ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে আমাদের সকলের চেষ্টা থাকতে হবে। সারা বছর কিভাবে সবজি উৎপাদন করা যায়, সেজন্য নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষকদের আহবান জানান।
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন, সচেতনতা সৃষ্টি, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সম্প্রসারন এবং মেলায় অংশগ্রহনকারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে একটি ক্রেস্ট, সনদপত্র ও নগদ টাকা প্রদান করা হয়। ব্যাক্তি পর্যায়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পান যথাক্রমে ঝিনাইদহ সদরের মো. আলতাফ হোসেন; ঝিকরগাছা যশোরের আলী হোসেন মন্ডল ও শিবপুর নরসিংদীর দুলাল মিয়া। কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অবদানে বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয় নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মোসাম্মৎ সেলিনা জাহানকে। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পান যথাক্রমে বগুড়ার ম্যানোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি; যশোরের উড়াকি সৃজনী সংঘ ও রায়গঞ্জ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষক সমবায় সমিতি। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ সবজি উৎপাদনের স্বীকৃতিস্বরুপ যশোর, সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলাকে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়াও মেলায় অশগ্রহনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে প্রথম স্থান, যুগ্মভাবে দ্বিতীয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং হর্টেক্স ফাউন্ডেশন তৃতীয় স্থান অর্জন করে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে এসিআই সীড লিমিটেড; বেঙ্গল হাইড্রোফোনিকস দ্বিতীয় এবং ঢাকার ইউনাইটেড সীড স্টোর তৃতীয় স্থান অর্জন করে। মেলায় অংশগ্রহনকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ এআইএস; অজানা মাশরুম; লাইফ টাচ এন্ড আইডিয়াস লিমিটেড; এসআরডিআই; বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল এডভান্সমেন্ট; সুপ্রীম সীড কোম্পানী লিমিটেড; আনোয়ারা ইব্রাহিম সবজি খামার; ভূট্টা ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ; এমআরসিএল মাল্টি ফার্ম; ট্রেন্ড এন্টারপ্রাইজ; বাংলাদেশ অর্গানিক ফুড ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশন; মধুবন মৌ খামার; গ্রীণ বাংলা; আদর্শ মান্না মাশরুমি; আগোরা; বাংলাদেশ ফ্রুটস এন্ড ভেজিটেবল এলাইড এসোসিয়েশন; সিদ্দীকস সীডস; রেড ওয়ার্ম ভার্মি কম্পোষ্ট; মেগা ওয়ার্ক বিডি লিমিটেড; ভার্স ওয়াল লিমিটেড; ন্যাশনাল বায়ো এগ্রো টেক লিমিটেড; মডার্ন এগ্রো ফুড; মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ; কৃষি বিপনন অধিদপ্তর; ডারিয়ান গ্রুপ; ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ; মেটাল সীড কোম্পানী; মল্লিকা সীড কোম্পানী; খিদমাহ মাশরুম; লালতীর সীড লিমিটেডকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ, বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আযাদ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মন্ডল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক ড. কুদরত-ই-গনী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাধ্যমে প্রথমবারের বৃহত পরিসেরে আয়োজিত এ মেলায় প্রচুর দর্শণার্থীর সমাগম ঘটে। ‘হরেক রকম সবজি চাষে, সারা বছর অভাব নাশে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া এ মেলায় বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ পদ্ধতি, সংরক্ষণ, পুষ্টি গুনাগুন ও জাত পরিচিতিসহ ১১২ ধরনের সবজি প্রদর্শিত হয়েছে।