করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে সাশ্রয়ী ভাড়ায় বিআরটিসির ট্রাক ব্যবহার,ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো, ফিরতি ট্রাকের বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অন্যান্য সেতুতে টোল হ্রাস করা, ট্রাকের জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রদান, পার্সেল ট্রেনে হিমায়িত ওয়াগন বা প্যাডেস্টাল ফ্যানের ব্যবস্থা, ত্রাণ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল অন্তর্ভূক্তকরণ প্রভৃতি বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংস্থাকে অনুরোধ জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আজ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত পৃথক পৃথক চিঠিতে এসব অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপির সভাপতিত্বে গত ১৬ মে ২০২০ তারিখে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য বিপণন সংক্রান্ত অনলাইনে (জুম প্ল্যাটফর্মে) মতবিনিময় সভায় প্রাপ্ত সিদ্ধান্তের আলোকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত পৃথক পৃথক চিঠিতে যেসব অনুরোধ জানানো হয়:
১. হাওরে ধান কাটা শ্রমিকদের যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠানো হয়েছে, তেমনি অন্যান্য জেলা হতে ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, প্রয়োজনে তাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রত্যয়নপত্র প্রদান ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা; ২. মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, পরিবহণের সময় যাতে কোনরূপ হয়রানির শিকার না হয় ; ৩. এছাড়া, ফরমালিন আতঙ্কে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের যাতে কোন হয়রানি না করা হয় এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৪. মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা ও পরিবহণের সময় যাতে কোনরূপ হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৫. মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিআরটিসির ট্রাক সাশ্রয়ী ভাড়ায় ব্যবহারে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিআরটিসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৬. স্থানীয়ভাবে ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৭. হিমায়িত ওয়াগন অথবা সাধারণ ওয়াগনে প্যাডেস্টাল ফ্যানের ব্যবস্থা রেখে পার্সেল ট্রেনে মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৮. কৃষিপণ্য পরিবহণকারী ফিরতি ট্রাকের বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অন্যান্য সেতুতে টোল হ্রাস করার জন্য সেতু বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৯. মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণকারী ট্রাকে জ্বালানি তেলের উপর ভর্তুকি প্রদানের জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
১০. ত্রাণ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল অন্তর্ভূক্ত করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
১১. পুলিশ ব্যারাক, সেনাবাহিনীর ব্যারাক, বিজিবি, হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানাসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে যেখানে সরকারি ক্রয়ের সুযোগ রয়েছে উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে আম, লিচু, তরমুজসহ মৌসুমি ফল সরবরাহের মাধ্যমে স্থানীয় বাজার নিশ্চিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপির সভাপতিত্বে গত ১৬ মে ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহ্রিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. আতিউর রহমান, চাঁপাই নবাবগঞ্জের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান।
এছাড়া, এ সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থাপ্রধান, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর ও সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, দেশের শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানিকারক সমিতি, সুপারশপ মালিক সমিতি, আম-লিচু চাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদার এবং সংশ্লিষ্ট এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিবৃন্দ সংযুক্ত ছিলেন।