মনু প্রকল্পের আওতাধীন কাশিমপুর পাম্প হাউস সচল থাকায় বিশ বছর পর এবার এক হাজার হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে রোপা আমন। তাই হাওরপাড়ের কৃষকরা মহাখুশি। এ মৌসুমে যদি আর কোন দূর্যোগ না আসে তবে আমাদের গোলায় বেশি ধান উঠবে। কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলায় হাওর কাওয়াদিঘির অবস্থান। মনুনদী প্রকল্পভূক্ত এ হাওর কাওয়াদিঘির অবস্থান। মনুনদী প্রকল্পভূক্ত এ হাওর অঞ্চলের ফসলি জমি থেকে অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যেই ১৯৮৩ সালে কাশিমপুর পাম্প হাউস নির্মাণ করা হয়। এতে হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আটটি আধুনিক পাম্প স্থাপন করা হয়। এ পাম্পগুলোর মাধ্যমে কাওয়াদিঘি হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও এ পাম্পগুলোর কার্যকারিতা হারিয়ে যান্ত্রিক ত্রæটি দেখা দেয়। এতে হাওরের পানি নিষ্কাশন ব্যহত হয়ে পড়ে। যার ফলে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার ২৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর স্থায়ী জলাবদ্ধতা রূপ নেয়। স্থানীয় একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, একটানা দশ বছরের মতো স্থায়ী জলাবদ্ধতায় এখানে কোন রকম ফসল আবাদ করতে পারেননি। এমনকি এ এলাকায় বিগত বিশ থেকে পঁচিশ বছর ধরে অনেক জমি পানিতে নিমজ্জিত ছিলো। কয়েক বছর আগে কাশিমপুর পাম্প হাউস নতুনভাবে পুন:স্থাপনের ফলে হাওর কাওয়াদিঘি মনুনদী প্রকল্পভূক্ত এলাকার ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। এতে কৃষকরা সঠিক সময়ে বোরো আউশ ও আমন চাষাবাদ করতে পারছেন। এসব জমিতে দীর্ঘ বিশ বছর পর আমন আবাদ করেছেন। এসব জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকায় এক রকম পরিত্যাক্ত হয়ে পড়েছিল। রসুলপুর গ্রামের কৃষক মুহিবুর রহমান জানান, পানি সরে যাওয়াতে তিনি দীর্ঘ বিশ বছর পর এবার তার পনের বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন। তিনি জানান, তার এলাকায় এক সময় কৃষকরা নিয়মিত আমন ক্ষেত করে একশো থেকে দেড়’শ মণ ধান ঘরে উঠাতে পারতেন। আর বড় পর্যায়ে গৃহস্থরা বিশ থেকে পঁচিশ মন ধান উৎপাদন করতেন। এবছর পানি নামাতে সবাই মহাখুশিতে আমন চাষ করছেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জনান, এ বছর মনুনদীর বন্যা না থাকায় এবং সুষ্ঠ পানি নিষ্কাশনের কারণে নতুন করে দুটি উপজেলার ৫০০ হেক্টর থেকে সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়ভালো ফলনের আশা করছেন তারা।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জনাব কাজী লুৎফুল বারী জানান, হাওরে গত বছর সঠিক পানি নিষ্কাশনের ফলে কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাত হাজার হেক্টর অতিরিক্ত আমন চাষাবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে এবার মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলায় আরো এক হাজার হেক্টর জমির পানি সরে গেছে। এতে নতুন করে দুটি উপজেলা পাঁচটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক আমন চাষাবাদ করতে পারছেন। জেলা কৃষি বিভাগের দাবি, এ বছর সিলেট বিভাগে সিলেটের পরই মৌলভীবাজার জেলার আমনের অধিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। পরিবেশ ভালো থাকায়, ফলনও ভালো হওয়ার আশাবাদী।