Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২০ এপ্রিল ২০১৬

পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ


প্রকাশন তারিখ : 2016-04-20

শাক-সবজী ও ফল-মূল হলো মানব শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন,খনিজ উপাদান ও এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ রোগ প্রতিরোধকারী খাদ্য সম্ভার, যা সুস্থ এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে । বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যাপক বিস্তৃত পুষ্টিহীনতা নিয়ন্ত্রনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সবজী ও ফলের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
অপুষ্টি দূরীকরনে  দেশব্যাপী এই সবজী ও ফল উৎপাদনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর একটি বিরাট কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান দেশ থেকে অপুষ্টি দুর করতে খুব সহজ , সুলভ এবং কার্যকর একটি পন্থা বের করেছেন। তিনি ভ্রমণের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সাধারণ কৃষকের সাথে মতবিনিময় ক’রে অনুভব করতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি কৃষক পরিবার যদি বসত বাড়িতে ঘরের কোনায় কমপক্ষে ২টি বা নিদেন পক্ষে ১টি সজিনার ডাল রোপন করে তাহলে পরের বছর হতেই পুষ্টির উৎস হিসেবে উৎপাদিত সজিনা মানব দেহে পুষ্টির ডিনামাইট হিসেবে কাজ করবে। অধিকন্তু এটি সুস্বাদু সবজি হিসেবেও পরিবারের ব্যঞ্জনের চাহিদা পূরন করবে। ভিটামিন, খনিজ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই সজিনার পুষ্টি গুনের কথা আমাদের দেশের অনেকেই জানেনা। তাই তিনি পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে সারা দেশ ব্যাপী কৃষক উদ্বুদ্ধ করনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি সজিনার ডাল রোপনের বিশেষ কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। এটা দেশের সকল জেলা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাগনকে পত্র জারীর মাধ্যমে নির্দেশ আকারে মেসেজটি প্রেরণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার পশ্চিম বাহিরচর ব্লকের বারো মাইল গ্রাম,খোকশা উপজেলার আমলা বাড়ি ব্লকের সমস্ত গ্রাম, দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর গ্রাম, মীরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া ব্লকের চুনিয়াপাড়া গ্রামসহ জেলার আরো আরো গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িতে সজিনার ডাল/কান্ড রোপন ক’রে ঐ সমস্ত গ্রামকে সজিনা গ্রাম হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সজিনার ২-৩টি ডাল পুঁতে অপুষ্টি দূরীকরনের ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাপক হারে সজিনা উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের এই মেসেজটি পাওয়ার সাথে সাথে তড়িৎ গতিতে কৃষক উদ্বুদ্ধ করন, সজিনার ডাল/ কান্ড সংগ্রহ, ডাল/কান্ড রোপন কাজ সহ আনুসঙ্গিক সকল কার্যই কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ কিংকর চন্দ্র দাস তার অধীনস্থ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপ সহকারী  কৃষি কর্মকর্তা গনকে দিয়ে বিভাগীয় গুরু দায়িত্ব হিসেবে এবং কৃষকের অপুষ্টির কথা ভেবে তিনি এটা বাস্তবায়ন করছেন। কুষ্টিয়া জেলা সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার সকল উপজেলার সকল গ্রামকেই পর্যায় ক্রমে সজিনা গ্রাম হিসেবে নামকরণ করার জন্য সকল বাড়িতেই সজিনার ডাল/কান্ড রোপন করা হবে।

সজিনা গ্রাম তৈরি করতে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাঁ, নাটোর,বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের সকল জেলা-উপজেলা সমূহে এ কার্যক্রম সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাজারে সজিনার আমদানি ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে,কম দামে কৃষকেরা সজিনা খাওয়ার সুযোগ পাবে; আর সেই সাথে অপুষ্টি নামক একটি ঘাতককে দূর করতে সমর্থ হবে আমাদের কৃষক সমাজ। এছাড়া সজিনা গাছের পাতা একটি পুষ্টিকর সুস্বাদু শাক।

ফল সংগ্রহ শেষে প্রতি বছর ডাল পালা ছাঁটাই করে দিলে তাতে নতুন জাতের ডাল গজায় শাক ও ফল বেশী ফলে। প্রতি বয়স্ক  গাছে ২০-৩০ কেজি শাক এবং সম পরিমাণ সবজি (সজিনা) পাওয়া যায়।

সজিনার শাক এবং সবজির  (সজিনা) পুষ্টি উপাদান আহার উপযোগী
প্রতি ১০০ গ্রামের হিসাব নিচে সন্বিবেশিত করা হলো-

আমিষ:-শাকে ৬.৭ গ্রাম, সবজিতে-৩.২গ্রাম । শ্বেতসার:-শাকে ১২.৫ গ্রাম,সবজিতে ১১.৪ গ্রাম। চর্বি:-শাকে ১.৭ গ্রাম,সবজিতে ০.১ গ্রাম। খনিজ লবন:-শাকে ২.৩ গ্রাম,সবজিতে ১.৯ গ্রাম।  ভিটামিন বি-১:-শাকে ০.০৬ মি: গ্রাম,সবজিতে ০.০৪ মি: গ্রাম।  ভিটামিন বি -২:-শাকে ০.০৫ মি: গ্রাম,সবজিতে ০.০২ মি:গ্রাম।ভিটামিন সি:-শাকে ২২০ মি:গ্রাম এবং সবজিতে ৪৫ মি:গ্রাম। ক্যালসিয়াম:-শাকে ৪৪০ মি:গ্রাম এবং সবজিতে ২১ মি:গ্রাম। লৌহ:-শাকে ৭.০ মি: গ্রাম এবং সবজিতে ৫.৩ মি: গ্রাম। ক্যারোটিন:-শাকে ৬৭৮০ মাই: গ্রাম এবং সবজিতে ৭৫০ মাই: গ্রাম। খাদ্য শক্তি:-শাকে ৯২ কি: ক্যালোরি এবং সবজিতে ৬০ কি: ক্যালোরি।

চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ইত্যাদি দেশে ভাত আমাদের মতই প্রধান খাদ্য হলেও তারা কম ভাত এবং বেশী ফল-সব্জী খেয়ে থাকে। অথচ আমরা কেবল ভাত খাবার জন্যই সামান্য সব্জী ও কিছু ফল খেয়ে থাকি। আমরাও যদি  একই ভাবে বেশী করে ফল সব্জী খাবার অভ্যাস গড়ে তুলি তাহলে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টন চাউল খাদ্য হিসেবে প্রয়োজন হবে না, উপরন্তু তাতে আমরা সুস্বাস্থের অধিকারী হতে পারি।