‘মান্না’ দের সেই জনপ্রিয় গান ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ আড্ডার এই নিত্য উপকরণ ‘কফি’ চাষ হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জে উপজেলায়। এই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা জনপ্রিয় একজন নার্সারী ব্যবসায়ী মো: আবদুল কুদ্দুস বেশ কয়েক বছর ধরে কফি চাষ করে আসছেন এবং পাশ^বর্তী উপজেলায় ও জেলায় আস্তে আস্তে এর চাষের বিস্তার ঘটছে বলে তিনি জানান। প্রথমেই তিনি ১৫০টি চারা দিয়ে কফির চাষ শুরু করলেও এখন বছরে প্রায় ৬০০০-৭০০০ চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। চাষি কুদ্দুস মিয়ার মতে এ এলাকার মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী । তাই, কফি চাষ বাণিজ্যিকভাবে শুরু করা গেলে বদলে যেতে পারে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। তিনি আরও বলেন যে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে কয়েক লাখ কফির চারা রোপণ করা গেলে প্রতি বছর কয়েক ‘শ কোটি টাকার কফি উৎপাদন সম্ভব, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চল এবং বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
কক্সবাজারের জাহানারা অ্যাগ্রো ফার্ম থেকে ২০১৪ সালে ১৫০টি চারা এনে নিজের দুই শতক জমিতে চাষ করেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মুনশি পাড়ার মরহুম জবান উদ্দিনের ছেলে আবদুল কুদ্দুস (৭০)। কফি চাষ সম্পর্কে তিনি জানান যে, ২০০৯ সালে ঢাকায় নার্সারি সমিতির সভায় গিয়ে প্রথম কফি চারার খবর পান। পরে ২০১৪ সালে কক্সবাজারের জাহানারা অ্যাগ্রো ফার্ম থেকে ১৫০টি গাছ এনে তিনি তার নার্সারির দুই শতক জমির মধ্যে তিন ফুট ফুট পর পর চারা রোপণ করেন। এরপর ধীরে ধীরে কফির গাছ বড় হতে থাকে। এর দুই বছর পর অর্থ্যাৎ ২০১৬ সালে ফল দেয়া শুরু করে। সেই বছর তিনি শুকনো কফি প্রথম দিকে আটার মিলে মাড়াই করে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করেন। তিনি আরও বলেন যে এ কফির স্বাদ ও গন্ধ দুটোই ভিন্ন এবং খুব সুস্বাধু। তিনি সে বছর ৬৭ কেজি কফি উৎপাদন করে যা গড়ে দুই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করে প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ঘরে তুলেন। কফির গাছগুলো চাষ, পরিচর্যা এবং মাড়াইয়ে মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে এখন তিনি শুধু চারা তৈরি করে বিক্রি করছেন। তিনি আরও জানান যে, কফি চাষের ব্যাপক বিস্তার হলে কফির প্রসেসিং এ যাবেন তিনি এই মূহুর্তে সম্ভব না। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও,নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চায়ের চাষ হচ্ছে বিধায় এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের জন্য উপযোগী হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে অনুসন্ধান করা দরকার । কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান যে, বর্তমানে কফি চাষি আব্দুল কুদ্দুস এবং অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক সুলতানসহ আশপাশে যারা চাষ করছেন তাদের সকলকে কৃষি বিভাগ হতে যতদূর সম্ভব বিভিন্ন কারিগরী পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ আরও জানান যে, অল্প পরিসরে অনেকে চাষ করছেন এবং ফল আসছে সেহেতু এ অঞ্চলে কফি চাষ হতে পারে, তবে বাণিজ্যিকভাবে সম্ভব কিনা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া আরো বলেন যে, ভবিষতে কফি চাষের ব্যাপারে সরকারিভাবে প্রদর্শনী স্থাপনসহ কারিগরী সহযোগিতা পেলে নীলফামারী, রংপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়সহ এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের সম্প্রসারণ ঘটানো যেতে পারে ।