প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণকে আমরা সহকর্মী মনে করি এবং তারাও কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও সাংবাদিকগণ দেশের উন্নয়ন ও সমাজের জন্য অনেক কাজ করে থাকেন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রীর সঠিক দিক দর্শনের জন্য কৃষিতে আমাদের ধারাবাহিক সাফল্য এসেছে। কৃষিতে আমাদের এ সাফল্য ধরে রাখতে হবে এবং এ সাফল্য উত্তোরত্তর এগিয়ে যাবে এটা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি বিস্তারে কৃষিভিত্তিক সংস্থাগুলো আরো নিবিড়ভাবে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কিভাবে কাজ করতে পারে, পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এ সংস্থাগুলোর প্রত্যাশার দিকটি নিয়ে ২৩ এপ্রিল ২০১৬ তারিখ রোজ শনিবার সকাল ১০:৩০ টায় কৃষি তথ্য সার্ভিসের কনফারেন্স রুমে কৃষি তথ্য সার্ভিস, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কৃষি উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ক সেমিনার প্রধান অতিথি বক্তব্যে কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ এসব কথা বলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার সময় আমাদের সাড়ে সাত কোটি জনংসংখ্যা থাকার পরও খাদ্য ঘাটতি ছিলো। অথচ বর্তমানে ষোল কোটির ওপর মানুষ হওয়া সত্বেও প্রতিবছর কৃষি জমি কমে যাচ্ছে ০.৭% হারে তারপরও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং আমরা খাদ্য রপ্তানির স্বপ্ন দেখছি এবং শুরু করছি। ব্রি ২৮ ধান চাষ করে কৃষকের মাথায় হাত উদাহরন টেনে বলেন এ ধরনের চমকপ্রদ সংবাদ প্রচার হলে পরবর্তী মৌসুমে কৃষির ভবিষ্যত কি হতে পারে। মাথায় হাত অনেক কারনে হতে পারে যেমন কৃষকরা যদি সম্প্রসারণ কর্মীর পরামর্শে না নিয়ে বেশি উৎপাদনের আশায় বেশি পরিমানে ফার্টিলাইজার ব্যবহার করে তাহলে র্যাপিড গ্রোথের কারনে পড়ে যাবে যাতে কৃষির মাথায় হাত হবে। একটা ঘটনা বা একটা উপজেলার জন্য মাথায় হাত হয়ে যাবে এ ধরনের বিষয়গুলো ভাবার জন্য সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় আমাদের সম্প্রসারণ কর্মীগণ কোন পরামর্শ দিলে কৃষকরা মানতে চায় না কিন্তু টেলিভিশন বা পত্রিকায় আসলে কারা এক বাক্যে তা মেনে নেয়। আমাদের যদি কেউ অনিয়ম বা দুর্নীতি করেন এটা লিখবেন না, এটা আমরা অবশ্যই আশা করি না। আপনারা লিখবেন এবং সে সাথে একটা সাজেশন দিবেন এটা করা উচিত তাহলে আমরা তা পালন করতে পারবো। কোন একটা নতুন বিষয় বা তথ্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানাতে হলে ইমেইলের মাধ্যমে তাদেরকে অবহিতকরণের বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলোকে পরামর্শ দেন। সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে লিখবেন না এটা নয়, আমাদের ভুল ত্রুটি অবশ্যই লিখবেন আমাদের কাজটাকে সহজ করার জন্য আপনারা আমাদের সাহায্য করেন, আমরা একসাথে কাজ করার জন্য আগ্রহী।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা কৃষি সংশ্লিষ্ট সংবাদকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখি। সংবাদে পজেটিভ ও নেগেটিভ দু ধরনের সংবাদ থাকে। বিশেষ করে আমরা নেগেটিভ সংবাদ বেশি এড্রেস করি কিভাবে আমরা সমাধান করতে পারি। আমরা এ কাজটা প্রতিনিয়ত ডেভেলপড করার চেষ্টা করি। কৃষির বিভিন্ন বিষয় প্রচারের ক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিকরা অনেক বেশি ভূমিকা রাখছে। সরকারিভাবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা যেটা পারছি না সেক্ষেত্রে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোরও সহায়তা আমরা নিচ্ছি। কৃষি হচ্ছে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জাত আসতেছে একদিনের হেরপের হলে বিরাট গ্যাপ পড়ে যায়। আমরা এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে যাচ্ছি, রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা এখন ফাইটোস্যানিটারী কমপ্লায়েন্স অনুসরন করছি। আমাদের এখন খাদ্য সরপ্লাস আছে আমদানি বাড়াতে হবে। উদ্বৃত্ত খাদ্য বা কি পরিমাণ আমদানি করা প্রয়োজন এমনকি আমদানিকৃত পণ্যের গুণাগুন সম্পর্কিত সংবাদও গুরুত্ব সহকারে এই মূল ধারার সংবাদে প্রচারিত হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, কৃষি বিষয়ক তথ্য যত বেশি সম্প্রচারিত হবে কৃষি তত বেশি গুরুত্ব পাবে আমাদের সমাজে। কৃষি আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় বিষয় এবং কৃষি আমাদের সভ্যতা আমাদের জীবনযাপনের বিষয়। সেটার সাথে গবেষণা থাকবে, সম্প্রসারণ থাকবে ও কৃষক সমাজ থাকবে। কৃষি ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যাদের অবদান তার স্বকৃতী দেওয়া ও তাদেরকে সম্মানিত করা বিষয় উল্লেখ করেন।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রধান তথ্য অফিসার মোহম্মদ আনোয়ার হোসেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের উপপরিচালক ডক্টর জাহাঙ্গীর আলম। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচক হিসেবে অংশগ্রহন করেন চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক মীর মাশরুর জামান ও দি ডেইলী স্টারের এসাইনমেন্ট এডিটর রিয়াজ আহমদ। সেমিনারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থার প্রধানগণ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ অংশগ্রহন করেন।