শনিবার ২২/০৮/২০২০ ঢাকা থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে মেহেরপুর জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে সদর উপজেলার কালাচাঁদপুর গ্রামে আউশ ধান কর্তন উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান। সভায় সভাপতিত্ব করেন মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আবদুল মুঈদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোঃ শাহজাহান কবীর, মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী প্রমুখ।
কৃষিমন্ত্রী বলেন , আউশ আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষককে বীজ, সার, সেচখরচসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। সারের দাম কমানো হয়েছে। অন্যদিকে, কৃষি বিজ্ঞানীরা অনেক উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে, যা চাষের ফলে গড় ফলনও বেড়েছে। আজকের ক্রপ কাটিংয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবিঘা জমিতে এখন ১৮-১৯ মণ ধান হচ্ছে যেটি অত্যন্ত গর্বেও ও অহঙ্কারের। অথচ, এক সময় আউশ উৎপাদন সবচেয়ে কম হত। বিঘাতে ২/৩ মণের মতো। ফলে, এবছর অনেক উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে কৃষক আউশ চাষ করেছেন। সারা দেশে আউশের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, মেহেরপুর কৃষিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ অঞ্চল। দেশের কৃষিতে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের ব্যাপক অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। তাই এ অঞ্চলের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে দেশের কৃষি খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রতিমন্ত্রী এ সময় এ অঞ্চলের বিভিন্ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকে আরও এগিয়ে নিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন
কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, নতুন জাতের প্রসার ও জনপ্রিয়করণে এ ধরনের ফসল কর্তন উৎসব খুবই প্রয়োজন। বর্তমানে ব্রি ধান-৪৮ আউশের একটি ভাল জাত, তবে এর চেয়েও ভাল জাত বা মেগাভ্যারাইটি ব্রি ধান-৮৩ নিয়ে আসা হচ্ছে।আউশে কৃষকের খরচ নেই বললেই চলে। রোপণের পর নিড়ানি দিতে পারলে খুবই ভাল হয় আর অল্প দিনেই এই ফসল ঘরে ওঠে। সচিব বলেন, অল্পদিনেই একটি ভাল ফসল ঘরে আনা সম্ভব। ফলন কম, পোষায় না কৃষকের এমন মন্তব্য ছিলÑ তবে আউশের একটি ভাল জাত এসেছে। কৃষকেরও আগ্রহ বাড়ছে। এবার রেকর্ড পরিমাণ আউশ আবাদ হয়েছে। কোন কোন এলাকায় আউশ ঘরে ওঠার পর আমন না লাগিয়ে সরাসরি রবিশস্যে চলে যায় বলেও জানান সচিব। সচিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে আমরা কাজ করছি। সারা পৃথিবীতে যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ার কথা বলা হচ্ছে আমরা সেটিকে বিবেচনায় রেখেই কাজ করছি।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিইঞ্চি জমিতে ফসল ফলাতে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া, জেলায় কৃষির সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ নেয়া হবে। জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায়ও ক্রমাগত আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১০ বছরে আউশ আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১০-১১ সালে আউশ আবাদ হয়েছিল ১০ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে, চলতি বছরে আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। ফলন ভাল হওয়ায় এ বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭০ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন অর্জিত হবে বলে আশা করছে মেহেরপুর কৃষি বিভাগ।
মেহেরপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুরে এ বছর আউশের, মাসকলাই ও পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ৮ হাজার ৫৫০ কৃষকের মাঝে ৩৮ লাখ টাকার প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, সেচের পানির কম ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়া এবং কৃষি বিভাগের নিরলস উৎসাহ-সহযোগিতার ফলে কৃষক আউশ আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেহেরপুরে আমনে এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮৭ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমনে উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান চাষ ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম চলছে। এছাড়া, বাজারদর ভাল হওয়ায় মেহেরপুর জেলায় ক্রমাগত ভুট্টা চাষ বাড়ছে।