Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা ও কৃষি

বছর ঘুরে আবার এলো বিশ্ব খাদ্য দিবস। বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য আমাদের বিশেষ বিষয়ের ওপর কিছুদিন বিশেষভাবে ভাবায়। আমরা চেষ্টা করি সে প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে দেশ জাতি সমাজ এবং গণমানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং তার ফলশ্রুতিতে একটু সুন্দর সাবলীল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে, সহায়তা করতে। যার পরিণামে আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার কিছু কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আশা করা যায়, আমরা আশাবাদী হই। এভাবেই চলে বিশ্ব খাদ্য দিবসের সালতামামি। ১৯৪৫ সনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার জন্ম হলেও মূলত প্রতিপাদ্যভিত্তিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৯৮১ থেকে। সে সময় ১৯৮১/৮২ দুই বছর একই প্রতিপাদ্য ছিল। পরবর্তীতে প্রতি বছর আলাদা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ নির্বাচন করে বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপনের রেওয়াজ চালু হয়ে আসছে। তাছাড়া ১৯৯৪/৯৫ থেকে টেলিফুড নামে নতুন আরেকটি কার্যক্রম কর্মসূচি বিশ্বখাদ্য দিবসের সাথে চালু হয়েছে। টেলিফুডের মূল উদ্দেশ্য ছিল টেলিভিশনের মাধ্যমে বিশ্বের সেলিব্রেটিদের দিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য বিভিন্ন ব্যঞ্জরিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের আহ্বান অনুরোধ জানানো। যেন ক্ষুধা দারিদ্র্যপীড়িত মানুষগুলো ক্ষুধা থেকে মুক্তি পায়, পুষ্টির ঘাটতি থেকে পরিত্রাণ পায়। গণমানুষ যেন দুমুঠো ভাত খেয়ে প্রয়োজনীয় বস্ত্র পরিধান করে সামান্য মাথা গোজার ঠাঁই নিয়ে আশ্রয়টুকু খুঁজে পায়। আর অসুখে বিসুখে প্রয়োজনীয় ওষুধ পথ্য পায়। অবশ্য টেলিফুড কার্যক্রমটি বেশি দিন স্থায়ী থাকেনি। ২০০৪/০৫ সনের পরে বন্ধ হয়ে গেছে। সেখান থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিশ্ব খাদ্য দিবস বেশ আড়ম্বর আর অনাড়ম্বরের মধ্যে পালিত হয় জাতিসংঘের সবক’টি সদস্য দেশের মধ্যে। বিবেচনার জন্য বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্যভিত্তিক দিবস পালনের শুরু থেকে এ যাবৎকাল পর্যন্ত প্রতি বছরের প্রতিপাদ্যের ওপর একনজরে চোখ বুলানো যাক।


১৯৮১/৮২ সনে প্রতিপাদ্য ছিল সবার আগে খাদ্য, ১৯৮৩ সনে খাদ্য নিরাপত্তা, ১৯৮৪তে কৃষিতে নারী, ১৯৮৫এ গ্রামীণ দরিদ্রতা, ১৯৮৬তে জেলে ও জেলে সম্প্রদায়, ১৯৮৭তে ক্ষুদ্র কৃষক, ১৯৮৮তে গ্রামীণ যুবক, ১৯৮৯ খাদ্য ও পরিবেশ, ১৯৯০ সনে ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য, ১৯৯১ জীবনের জন্য গাছ, ১৯৯২ খাদ্য ও পুষ্টি, ১৯৯৩ মানবকল্যাণে প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় সমাহার, ১৯৯৪ জীবনের জন্য পানি, ১৯৯৫ সবার জন্য খাদ্য, ১৯৯৬ ক্ষুধা ও পুষ্টির বিরুদ্ধে সংগ্রাম, ১৯৯৭ খাদ্য নিরাপত্তায় বিনিয়োগ, ১৯৯৮ অন্ন জোগায় নারী, ১৯৯৯ ক্ষুধা জয়ে তারুণ্য, ২০০০ ক্ষুধামুক্ত সহস্রাব্দ, ২০০১ দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুধামুক্তির সংগ্রাম, ২০০২ পানি খাদ্য নিরাপত্তার উৎস, ২০০৩ ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংহতি, ২০০৪ খাদ্য নিরাপত্তায় জীববৈচিত্র্য, ২০০৫ কৃষি ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ, ২০০৬ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিতে বিনিয়োগ, ২০০৭ খাদ্যের অধিকার, ২০০৮ বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জলবায়ুর পরিবর্তন ও জৈবশক্তি; ২০০৯ সনে সংকটকালীন খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন; ২০১০ ক্ষুধার বিরুদ্ধে ঐক্য; ২০১১ সংকট নিরসনে সহনশীল খাদ্যমূল্য নির্ধারণ; ২০১২ কৃষি সমবায় : ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার উপায়, ২০১৩ খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য টেকসই খাদ্য কৌশল, ২০১৪ পারিবারিক খামার : পরিবেশসম্মত প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগান ও সমৃদ্ধির মূল উৎস। আর এবার ২০১৫ নির্ধারিত হয়েছে গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষায় কৃষি।


মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন। এজন্য প্রথম এবং প্রধান ধাপ হলো সবার আগে খাদ্য। আর নিরাপদ খাদ্য দিয়ে যদি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না যায় তাহলে মানব জীবনই বৃথা। কৃষিতে নারী একথা আর নতুন করে বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। কেননা সব সংস্কৃতির আদি সংস্কৃতি কৃষি। আর কৃষি সংস্কৃতির অগ্রদূত নারী। পুরো পৃথিবী একটা বড় গ্রাম। আর গ্রামের দরিদ্রতা পৃথিবীকে টলটলায়মান করে ভঙ্গুর করে নড়বড়ে করে। সুতরাং গ্রামীণ দরিদ্রতার যাতাকল থেকে মুক্তি পাওয়ার সব ব্যবস্থা আমাদের করতেই হবে। জেলে কিংবা জেলে সম্প্রদায় আমাদের গ্রামীণ তথা দেশে অর্থনীতি এবং পুষ্টির বিরাট অংশের জিম্মাদার। ক্ষুদ্র কৃষকতো কৃষির মূলভিত্তি। গ্রামীণ যুবকের ধনাত্মক উচ্ছ্বাসে গ্রামগুলো প্রাণবন্ত হয়। আমাদের খাদ্য আর পরিবেশ যদি সুসম্মত না হয় তাহলে আমাদের বাঁচা দায় হয়ে যায়। খাদ্য ছাড়া আমাদের জীবন চলে না। কিন্তু এর মাঝেও ভবিষ্যতের খাদ্যের জন্য আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি আর পরিকল্পনা থাকতে হবে। গাছ আমাদের জীবনের জন্য এক বড় আমানত এবং নিয়ামত। সুতরাং জীবনের জন্য গাছ একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। খাদ্য শুধু খেলেই চলবে না। খাদ্য ও পুষ্টির সমন্বয়ে আমাদের খাদ্য তালিকা সুনিশ্চিত সমৃদ্ধ করতে হবে। আমাদের প্রকৃতি আমাদের কল্যাণে ব্যঞ্জরিতভাবে বিস্তৃত আছে বিশ্বময়। পানির অপর নাম জীবন, সুতরাং জীবনের জন্য পানি অপরিহার্য। এক দল বা এক এলাকার জন্য খাদ্য নিশ্চিত হলে হবে না। খাদ্য হতে হবে সার্বজনীন সবার জন্য পরিমাণমতো পরিমিত। আর সে কারণে আমরা ক্ষুধা আর পুষ্টির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছি। এজন্যইতো খাদ্য নিরাপত্তায় বিনিয়োগ বিবেচনা করে করতে হবে। নারী শুধু কন্যা জায়া জননী নয় অন্ন জোগানে নারী অনন্য। তারুণ্যের উচ্ছ্বলতা দিয়েই আমরা বিশ্বক্ষুধাকে জয় করব। আর সেজন্য আমাদের আকাক্সক্ষা ক্ষুধামুক্ত পৃথিবীর ক্ষুধামুক্ত সহ¯্রাব্দের। প্রতিনিয়ত দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুধা মুক্তির সংগ্রাম চলছেই। আমাদের সংগ্রাম চলবেই। এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই পানি খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান উৎস। ক্ষুধার বিরুদ্ধে যদি আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশ না পায় তাহলে বিশ্ব ক্ষুধা নির্মূল হবে না। জীব বৈচিত্র্যকে যত বেশি লালন করা যাবে খাদ্য নিরাপত্তা তত অর্থবহ হবে। পৃথিবীর সার্বিক সমৃদ্ধিতে কৃষি ও আন্তঃসংস্কৃতির সংলাপ আবশ্যকীয়ভাবে জরুরি। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে অধিক পরিমাণে। খাদ্য অধিকার আমাদের সবার সব সময় সবখানে। জলবায়ুর পরিবর্তন আর জৈবশক্তির কারণে খাদ্য নিরাপত্তা এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সেজন্য সংকটকালীন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যকীয়। এটা সম্ভব শুধু ক্ষুধার বিরুদ্ধে ঐকমত্য প্রকাশ করে। যে কোন সংকট নিরসনে সহনশীল খাদ্য মূল্য নির্ধারণ একাকি বা এক জাতির কাজ না এটি আমাদের সবার। কৃষি সমবায়ই পারে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে। একথাতো আমরা জানি খাদ্য নিরাপত্তা আর পুষ্টির জন্য টেকসই খাদ্য কৌশল কত প্রয়োজনীয়। আমাদের পারিবারিক খামার আর সমন্বিত খামার পরিবেশসম্মত খাদ্য জোগান আর সমৃদ্ধির মূল উৎস হিসেবে কাজ করে। গ্রামীণ দারিদ্র্যর দুষ্ট চক্রকে নির্মূল না করতে পারলে আমাদের সামাজিক বন্ধন আর আবশ্যকীয় কৃষিকে মানসম্মত আর আলোর পথে নিয়ে যাওয়া যাবে না কখনো।


এবার বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষায় কৃষি। এর মূল কারণ গ্রামীণ দরিদ্রতা দূর করে মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগান ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। আর সামাজিক নিরাপত্তা বা সুরক্ষা মানে সমাজে বসবাসরত সবাইকে তাদের মৌলিক চাহিদার বিষয়গুলোকে আকাক্সক্ষা অনুযায়ী নিশ্চিত করা। এরা একে অপরের সাথে সম্পৃক্তযুক্ত। সমাজের বিভিন্ন কাজে সুযোগ সৃষ্টি, খাদ্য উৎপাদন, নিরাপদ খাদ্য দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অর্থ এবং সংশ্লিষ্ট সেবাসমূহ যা সমাজের মানুষকে তার ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে পরিত্রাণ রাখবে। একটি সুখী সুন্দর জীবন যাপনের পথ সুগম করবে। প্রতিপাদ্যভিত্তিক বিশ্লেষণে গেলে প্রথমই আসে কেন সামাজিক সুরক্ষা জরুরি? সামাজিক কারণে যখন কোন পরিবারের প্রয়োজনীয় আয় করা সম্ভব হয় না, তারা দুঃখ কষ্ট যাতনার মধ্যে জীবন যাপন করে, ক্ষুধায় অন্ন পায় না, শীতে বস্ত্র পায় না, অসুখে ওষুধ পায় না, তখন সে সমাজ আক্ষরিক আর বাস্তব অর্থে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। সামাজিক নিরাপত্তা মানে বুঝায় কিছু নীতি আইন কানুন, কর্মসূচি যার মাধ্যমে যারা অন্ন বস্ত্র আশ্রয় থেকে বঞ্চিত তাদের সামান্য কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব কিছু করা। সামাজিক নিরাপত্তা মানে বৃহত্তর কল্যাণে সমন্বিত কার্যক্রম, গরিবদের সাহায্য সহযোগিতা সহমর্মিতা এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করার কিছু সমন্বিত কার্যক্রম। সমাজের মানুষের জন্য কিছু করা মানে আর্থিক সহযোগিতা কিংবা সরাসরি কিছু দেয়া। কখনো উপকরণ কখনো আর্থিক সহযোগিতা। অন্ন বস্ত্র আশ্রয় শিক্ষা স্বাস্থ্য এসবই সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে পড়ে। শিক্ষা জাতির মেরুদ- এ কথাকে প্রমাণ করার জন্য পিছিয়ে পড়া মানুষের শিক্ষাকে সার্বিকভাবে অনুপ্রাণিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিনামূল্যে বই খাতা কলম পেন্সিল বিতরণ শিক্ষাভাতা স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থাসহ আরো অন্যান্য কাজগুলো থেকে পিছিয়ে পড়া সমাজে লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ আরো বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়।


সামাজিক নিরাপত্তা আসলে একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। এর মানে এই নয় যে সমাজের মানুষকে শুধু ক্ষুধা দারিদ্র্য থেকে দূরে রাখবে। এটি অবশ্যই আরো অনেক কিছু। এটি সমাজের মানুষকে তাদের খাদ্য উৎপাদনকে বাড়াবে, খাদ্য গ্রহণ আর প্রাসঙ্গিকতাকে আরো নিরাপদ আর নিশ্চিত করে। সামাজিক নিরাপত্তা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ২০১৩ সনে  পৃথিবীব্যাপী সামাজিক নিরাপত্তার ম্যাধমে ১৫০ মিলিয়ন মানুষকে পরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব হয়েছে। আমরাতো জানি উন্নয়নশীল দেশের ৭৫% বেশি মানুষ কাক্সিক্ষত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত। তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি পায় না। এ অপুষ্টি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কৃষিই তাদের জীবন ধারণের মূল উপদান। এ কারণেই কৃষক এবং কৃষির সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। এর মধ্যে আছে প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ, সেবা এসব। সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে সেখানকার পরিকল্পনা উৎপাদন বিপণন সব কিছুই বাধাগ্রস্ত হয়, থমকে দাঁড়ায়। খাদ্য নিরাপত্তা মানে শুধু খাদ্যে পর্যাপ্ততা-ই নয় বরং খাদ্য উৎপাদন আর খাদ্য গ্রহণও বুঝায়। সামাজিক নিরাপত্তা আমাদের সুখ শান্তি আর কল্যাণময় বসবাসের নিশ্চয়তা দেয়। এখানে মানুষের মৌলিক অধিকার আর প্রাপ্তিগুলোকে আরো বিশুদ্ধভাবে সংজ্ঞায়িত করে। পারস্পরিক বন্ধনকে আরো অটুট সুদৃঢ় করে।


ব্যক্তিগত বন্ধন থেকে পারিবারিক বন্ধন, পারিবারিক বন্ধন থেকে সামাজিক বন্ধন আর সামাজিক বন্ধন থেকে জাতি বন্ধন সৃষ্টি হয়। তবে সামাজিক বন্ধনের মূল্য ব্যাপ্তি গভীরতা সব কিছুর চেয়ে বেশি। কেননা আমাদের সুখ দুঃখ হাসি কান্না বিপদ আপদ সব কিছুতে আমারা পরস্পরের কাছে অলিখিতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যে কোন প্রয়োজনে সমাজ এগিয়ে আসে আপন দায়ে আপন মহিমার দায়িত্বে। সামাজিক আচার আচরণে এখনো অনেক অনন্য সুন্দর গেঁথে আছে আমাদের জীবনে। ঈদ পূর্জা পার্বণ মেলা বিয়ে আমরা সবাই এখনো সম্মিলিত কাজে বিশ্বাসী। আর এখানকার কৃষি আরো সুদৃঢ় বন্ধনে আটকা পড়ে আছে। একজনের বীজ অন্যের জমিতে একজনের সার অন্যের জমিতে। এক জনের গরু দিয়ে অন্যের জমি চাষ করা, একজনের কাজের লোড বেশি হলে অন্য সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে বৃহৎ কলেবরের কাজকে সহজ আর সরল করে দেয়ার রীতি এখনো প্রমাণ করে এ সমাজ অনেক সুন্দর সম্মিলিত।


এবার সামজিক বন্ধন আর কৃষির মেল বন্ধনের সমন্বয়ের সূত্রটুকু বের করতে পারলেই এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য আবশ্যকীয়তার দিক থেকে সুপ্রমাণিত হবে। কৃষি আমাদের অন্ন বস্ত্র আশ্রয় আর ওষুধের জোগান দেয়। আমাদের জীবন ধারণের সুন্দর স্বপ্নপানে টেনে নিয়ে যায়। আবার সমাজ এ সুন্দরকে পুঁজি করে আমাদের সুখ সমৃদ্ধি আর প্রগতিকে আরো বেগবান করে কাক্সিক্ষত বাতিঘরে পৌঁছে দেয়। আমরা তখন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা হয়ে স্বগতোক্তিতে বলি সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এ দেশে।


বাংলাদেশ সরকার সাংবিধানিকভাবে জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করতে দায়বদ্ধ। অধিকাংশ লোক গ্রামে বসবাস করে এবং কৃষি তাদের প্রধান জীবিকা। সকলের মৌলিক চাহিদা পূরণের সাথে সাথে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে কৃষক তার সামাজিক ও পরিবেশের বাধাগুলো আরো দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে পারবে, যা উৎপাদন বৃদ্ধি, নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, কৃষিতে কর্মসংস্থান, কৃষির বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরিকরণে বিশেষ অবদান রাখবে। কেননা কৃষকরাই হচ্ছে গ্রামীণ উন্নয়নের একমাত্র শক্তি এবং দারিদ্র্য চক্র ভাঙার শক্তিশালী হাতিয়ার। গ্রামীণ জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে স্বল্প সুদে এবং সহজে কৃষি ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা, কৃষি ভর্তুকি প্রদান, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্বোধন ও কৃষকের মাঝে বিস্তার, কৃষিতে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, খামার যান্ত্রিকীকরণ, সঠিক সময়ে তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, সচেতনতা বৃদ্ধি করা উল্লেখযোগ্য। সরকারের দক্ষ পরিকল্পনা ও তার সঠিক বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে গ্রামীণ জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার সাথে সাথে সুষম খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু পালন ও মাছ চাষের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে কৃষি ক্ষেত্রে সিংহভাগ সাফল্য এসেছে এদেশের কৃষক ও কৃষিজীবীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও মানসম্মত জীবনযাপনের জন্য কৃষিজ উন্নতি অত্যাবশ্যক। এর মাধ্যমেই আমাদের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি পাবে এবং সমাজের উন্নয়ন সাধিত হবে। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সুষ্ঠু উন্নয়নই পারে আমাদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা তথা দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রের অবসান ঘটাতে।
বিশ্ব খাদ্য দিবস বার বার আসবে নতুন নতুন প্রতিপাদ্য নিয়ে। আমাদের উচিত নির্ধারিত প্রতিপাদ্যের ওপরভিত্তি করে কার্যকরভাবে কাজ করে যাওয়া। তা না হলে বারবার প্রতিপাদ্য আসবে চাকচিক্যের দিবস পালন করা হবে। ইতিহাসের স্মৃতিতে কিছু ছবি কিছু কাজ থেকে যাবে। আসল বাস্তবায়ন তখন প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়াবে। আমরা চাই আমাদের চাহিদা হলো প্রতিটি প্রতিপাদ্যের ওপর যথাযথভাবে কাজ হবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে। আমাদের সামাজিক কৃষিভিত্তিক নিরাপত্তা যত বেশি নিরাপদ নিশ্চিত হবে আমাদের গ্রামীণ দারিদ্র্যমুক্ত সুন্দর সাবলীল জীবন যাপন তত সুখকর হবে। গ্রামের অভাব অনটন কমে গিয়ে একটি উন্নতর ও কাক্সিক্ষত কল্যাণময় সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন হবে।

 

কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম*
* উপপরিচালক (গণযোগাযোগ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫