Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আজম খাঁনের স্বদেশ-বিদেশ

ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার পূর্ব ছাড়াইতকান্দি গ্রামের মৃত মাস্টার আহসান আহম্মদ খাঁনের পুত্র কৃষক মো. আজম খাঁন ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় একযুগ আগে পাড়ি দেন প্রবাসে। এক যুগের বেশি সময় পরিবার থেকে দূরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবাস জীবনে ভাগ্য পরিবর্তন আশানুরূপ না হওয়ায় ২০০৮ সালে সংকল্প করে দেশে পরিবারের কাছে থেকে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন এবং ভাগ্য পরিবর্তনের পেশা হিসেবে কৃষিকে বেছে নেন। এজন্য তিনি সরকারের বিভিন্ন কৃষি দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তারা উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করলেও তাদের মূলধন হিসেবে কোনো ঋণ দেয়ার সুযোগ নেই। পরবর্তীতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ থাকায় তিনি সেখান থেকে মাছ চাষ ও পোনা উৎপাদনের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং প্রবাস জীবনের সঞ্চিত ৫০ হাজার টাকার সাথে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ঋণ হিসেবে প্রাপ্ত ৪০ হাজার টাকাসহ মোট ৯০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করেন মাছ চাষ। তারপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মাছ চাষের পাশাপাশি তিনি মাছের পোনা উৎপাদনও শুরু করেন এবং সেগুলো বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হন। মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১১ সালে জেলা মৎস্য দপ্তর থেকে সম্মাননা স্মারকসহ পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে তাঁর নিজ গ্রামে ১১টি পুকুর যার আয়তন ৪ একর এ মাছ চাষ ও মাছের পোনা উৎপাদন করেন। এসব পুকুরে চাষকৃত মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, নাইলোটিকা, তেলাপিয়া, শিং, মাগুর ও কৈ মাছ। এছাড়াও মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকায় তার আরও দুইটি পুকুর রয়েছে। এ দুইটি পুকুরের আয়তন ১০ একর। এ পুকুরগুলোতে রুই, কাতলা, মৃগেল মাছের পাশাপাশি চাষ করেন বাটা, কোরাল, টেংরা ও চিংড়ি মাছ। মাছ ছাড়াও তার বর্তমানে রয়েছে নার্সারি ও ডেইরি খামার। তার নার্সারিতে কলা, পেয়ারা, কাঁঠাল, লাউ এসবের চারা কলম উৎপাদন করে নিজে ব্যবহার করেন এবং এলাকার লোকদের মাঝে বিতরণ করেন। তার ডেইরি খামারে বর্তমানে ছোট বড় ১৩টি গরু আছে। এর মধ্যে ৫টি গাভী দুধ দিচ্ছে। এ ৫টি গাভী থেকে গড়ে প্রতিদিন ২৫  থেকে ৩০ লিটার দুধ সংগ্রহ করা হয়। দুধ বিক্রি করে প্রতিদিন ১৫০০ টাকা হিসাবে মাসে মোট ৪৫ হাজার টাকা আয় হয়। তাঁর এসব খামারে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ১০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের পারিশ্রমিক হিসাবে আজম খাঁনের মাসিক ব্যয় প্রায় ৪০ হাজার হাজার টাকা। এ বছর তার এসব প্রকল্পের মাছ চাষ, পোনা উৎপাদন, ডেইরি খামার ও নার্সারি থেকে সব খরচ বাদ দিয়েও ১০ লাখ টাকার ওপরে লাভ হবে বলে আশা করছেন।
আজম খাঁন একজন সচেতন কৃষক। কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন কেবল একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার’ ওপর কৃষক মাঠ স্কুলে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর স্থানীয় উপসহকারী কৃষি অফিসারের পরামর্শে গড়ে তোলেন ছাড়াইতকান্দি আইপিএম ক্লাব। পরবর্তীতে এ ক্লাবের সক্রিয় কর্মকা-ের জন্য ২০১১ সালে কৃষি তথ্য সার্ভিসের উদ্যোগে ক্লাবটিতে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এআইসিসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এআইসিসি কেন্দ্রের প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রয়োগ করে নিয়মিত কৃষি প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিচ্ছেন এলাকার কৃষকদের মাঝে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আজম খাঁন সংগ্রহ করেন টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে উৎপাদিত কলার চারা, বারমাসী আম, উচ্চফলনশীল ধান বীজ, ফল গাছের পরিচর্যার নানা কৌশলসহ উন্নত সর্বশেষ প্রযুক্তি। তার উৎপাদিত বিষমুক্ত ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে আশপাশের কৃষকও বর্তমানে বিষমুক্ত ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। একই গ্রামের এনামুল করিম রাসেল নামে এক যুবক তার দেখাদেখি এবং পরামর্শে নার্সারি স্থাপন, মাছ চাষ ও কলা চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। আজম খাঁন বিভিন্ন সময়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে কৃষি, মৎস্য,  পোলট্রি ও ডেইরি বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
আজম খাঁন একজন কৃষিপ্রযুক্তি নির্ভর সফল কৃষক। আগামীতে তিনি গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প, খামারের বর্জ্য ব্যবহার করে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন ও জৈবসার উৎপাদন এবং ফলদ নার্সারি স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন। কৃষি খামার স্থাপনে সাফল্যের জন্য প্রযুক্তির পাশপাশি বাজারজাতকরণ ও ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ বড় নেয়ামক বলে তিনি মনে করেন। কৃষি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো প্রশিক্ষণের সাথে মূলধন সরবরাহ ও বাজারজাতকরণের সুযোগ সৃষ্টি করে দপ্তরগুলোর কার্যপরিধি বৃদ্ধি করা হলে কৃষককে প্রযুক্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও সম্মৃদ্ধ করা হবে বলে তিনি মনে করেন।

 

মো. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া*
*এআইসিও, কৃষি তথ্য সার্ভিস, চট্টগ্রাম। মোবাইল : ০১৮১৭-৭৮৬৫৭৩