Wellcome to National Portal
  • 2025-03-12-16-25-15c95fd3ae0d740427f19c779208b30b
  • 2025-03-12-16-16-b41688fcb8ac3df55c13eb5c82b62083
  • 2025-01-05-17-19-232bbb16275acb0da535d705c9b6f6d8
  • 2024-12-15-10-13-de23faa6fead7deef93b5973ae193323
  • 2023-12-28-06-44-fad1b3dffb04c90c1f14863ef06978d5
  • ICT Ebook
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আত্মকর্মসংস্থানে রাজপুঁটি মাছের চাষ

jpg-011

রাজপুঁটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দ্রুত বর্ধনশীল এক বিশেষ প্রজাতির মাছ। এ মাছ ১৯৭৭ সালে থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে। তাই আমাদের দেশে থাই রাজপুঁটি নামেই বহুল পরিচিত। মাছটি দেখতে আমাদের দেশীয় সরপুঁটির চেয়ে আরও উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়। এ মাছটিকে অনেকে থাই সরপুঁটি নামেও আখ্যায়িত করেন।
 

থাই রাজপুঁটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। এটি বেশ শক্ত প্রকৃতির অধিক ফলনশীল মাছ। প্রতিকূল পরিবেশে কম অক্সিজেনযুক্ত বেশি তাপমাত্রার পানিতেও এ মাছ বেঁচে থাকতে পারে।
 

আমাদের দেশে অধুনা মাছের দারুণ সংকট। প্রয়োজনের তুলনায় মাছের সরবরাহ দিনদিন প্রকটভাবে হ্রাস পাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাছের উৎপাদন আনুপাতিক হারে মোটেই বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের প্রতিদিনের মাছ তথা আমিষের চাহিদা ন্যূনতম পর্যায়েও মেটানো সম্ভব হয়ে উঠছে না।


এ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পুকুর, ডোবা, জলাশয়। বেশির ভাগ নি¤œবিত্ত চাষির বাড়ির আশপাশেই রয়েছে একটি বা দুইটি মাঝারি আকারের পুকুর অথবা ডোবা। এ সব পুকুর ডোবায় বছরের অধিকাংশ সময়ই পানি থাকে না। তাই অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়।


গ্রামাঞ্চলের পতিত এ পুকুর-ডোবাগুলো সামান্য সংস্কার করে অতি সহজেই মাছ চাষোপযোগী করা যায়।
এ দেশের গরিব প্রান্তিক চাষিরা স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে এ ধরনের জলাশয়ে রাজপুঁটির চাষ করে পরিবারের প্রয়োজনীয় মাছ তথা আমিষের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উৎসের সন্ধান পেতে পারেন।

 

রাজপুঁটি চাষের কিছু সুবিধাজনক দিকও রয়েছে। রুই জাতীয় মাছের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম খরচে, কম সময়ে ও সহজতর ব্যবস্থাপনায় এ মাছ থেকে অনেক বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। মিশ্র চাষ পদ্ধতি অর্থাৎ রুইসহ অন্যান্য উন্নত প্রজাতির মাছের সাথেও অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে এ মাছ চাষ করা যায়। এ মাছের রোগবালাই খুবই কম। ছয় মাসে একটি রাজপুঁটি গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। একই পুকুরে বছরে দুইবার এ মাছের চাষ করা যায়।

 

নিম্নে রাজপুঁটি মাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো-
রাজপুুঁটি চাষের জন্য পুকুরের আয়তন ৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ হতে পারে। এর চেয়ে বেশি হলেও ক্ষতি নেই। তবে একরের ঊর্ধ্বে হলেই ভালো হয়। পুকুরের গভীরতা হবে ১.৫ থেকে ২ মিটার অর্থাৎ তিন থেকে চার হাত। পোনা ছাড়ার আগে ভালোভাবে পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হয়। শুকনো মৌসুমে পুকুরের সম্পূর্ণ  পানি নিষ্কাশন করে তলার মাটি ১০-১৫ দিন ধরে রোদে শুকাতে হবে। অতঃপর লাঙল দিয়ে কর্ষণ করে নিতে হয়। পুুকুর শুকানো সম্ভব না হলে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী মেরে ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ পর্যায়ে পুকুর প্রস্তুতির জন্য প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হয়। চুনে পানির বিষাক্ত গ্যাস দূরীভূত হয়; উপরন্তু চুন পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াও ত্বরাণি¦ত করে। চুন প্রয়োগের সাত দিন পর প্রতি শতাংশে ৪ কেজি গোবর, ১৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়।


সারগুলো পুকুরের তলায় মাটির ওপর ছড়িয়ে দিয়ে কোদালের সাহায্যে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পর পুকুর পানি দিয়ে ভরে দিতে হবে।
প্রস্তুতকৃত পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত হয়ে প্রতি শতাংশে ১.৫ ইঞ্চি থেকে ২ ইঞ্চি সাইজের ৬০ থেকে ৬৫টি রাজপুঁটির পোনা ছাড়া যেতে পারে। পুকুরে যে পরিমাণ মাছ আছে সে মাছের  মোট ওজনের শতকরা ৪ থেকে ৬ ভাগ হারে চালের কুড়া বা গমের ভুসি সম্পূরক খাদ্য হিসাবে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে দুইবার ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রতি মাসে একবার জালটেনে মাছের গড় ওজন নির্ধারণ করে খাবার পরিমাণ ক্রমশ বাড়াতে হবে।


পুকুরে মাছের খাবারের ঘাটতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতি শতাংশে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ওই পরিমাণ টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। রাজপুঁটি মাছ সাধারণত  নরম ঘাস বেশি পছন্দ করে। তাই তাদের জন্য ক্ষুদে পানা, টোপা পানা, নেপিয়ার ও কলাপাতা ইত্যাদি নরম ঘাস প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে হলেও সরবরাহ করতে পারলে মাছের আনুপাতিক উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।


ওই প্রক্রিয়ায় পাঁচ ছয় মাস পালনের পর একেকটি মাছের গড় ওজন দাঁড়াবে ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম। ওই সময়ে মাছ বাজারজাত করার পুরোপুরি উপযোগী হয়।
ছয় মাস পর জাল টেনে সম্পূর্ণ মাছ আহরণ করে আবার ওই পুকুরে পোনা মজুদ করা যায়। এভাবে পুকুরে রাজপুঁটি মাছ চাষ করে বছরে পূর্ণ দুইটি ফলণ পাওয়া সম্ভব। রাজপুঁটি চাষাবাদ করে যথেষ্ট লাভবান হতে পারেন ।

 

দলিল উদ্দিন আহমদ*

*মৎস্য কর্মকর্তা (অব.), প্রযতেœ, শক্তি ঔধালয়, উকিলপাড়া, বি.বি. রোড, নারায়ণগঞ্জ