Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মুরগির খামারে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ

ইঁদুর মুরগির খামারের মূল অবকাঠামো নষ্ট করে খামারের স্থায়িত্বকাল কমিয়ে ফেলে। খামারের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি যেমন পানি পাত্র, খাদ্য পাত্র, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি যাবতীয় কাঠের, প্লাস্টিকের, রাবারের জিনিসপত্র কেটে নষ্ট করে ফেলে। পানি সরবরাহ পাইপ কেটে পানি সরবরাহ বিঘœ ঘটায়। বৈদ্যুতিক তার কেটে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন ধরে সমগ্র খামার পুড়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।


ইঁদুর মুরগির খাবার খেয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতি করে। ১০০টি ইঁদুর বছরে ১ টন খাদ্য খেয়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া ইঁদুর যতটুকু খায় তার ১০ গুণ খাবার ইঁদুরের বিষ্ঠাজনিত কলুষের কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়।


ইঁদুর দ্বারা প্রায় সব ধরনের সংক্রামক রোগ যেমন রানীক্ষেত, গামবোরো, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (বার্ড ফ্লু), মাইকোপ্লাজমোসিস, সালমোনেলসিস, কোলিব্যাসিলোসিস, ইনফেকসাস করাইজা,   এসক্যারিওসিস, উকুন আটুলি, মাইট ইত্যাদি রোগ খামারে সংক্রামিত হয়ে খামারের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
ইঁদুর ছোট মুরগির বাচ্চাকে মেরে ফেলতে এবং ডিম খেয়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া ইঁদুরের উপদ্রবে মুরগির ডিম পাড়া কমে যায়।
খামারে ইঁদুরের উপস্থিতি নির্ণয়


বাংলাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ মুরগির খামারে ইঁদুরের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ইঁদুরের দৌড়াদৌড়ি, কিচিরমিচির শব্দ, কাঠ প্লাস্টিক দ্রব্যাদিতে চিবানোর চিহ্ন, পায়খানা, গন্ধ, গর্ত সর্বোপরি স্বচক্ষে দেখার মাধ্যমে খামারের ইঁদুরের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়।


ইঁদুরের বংশবিস্তার
ইঁদুরের প্রজনন ক্ষমতা অত্যাধিক। স্ত্রী ইঁদুর ৮-১০ সপ্তাহে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। এদের গর্ভধারণ কাল ২০-২১ দিন। ইঁদুর বছরে ৮-১০ বার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবারে ৫-৬টি বাচ্চা প্রদান করে। হিসাব করে দেখা যায়, সুবিধাজনক পরিবেশে এক জোড়া ইঁদুর হতে ৩ বছরে ২ কোটি ইঁদুর জন্ম নিতে পারে।

 

ইঁদুরের স্বভাব
অতি অল্প সময়ের মধ্যে ইঁদুর দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে খামারে প্রকাশ্যে উৎপাত শুরু করে। খাদ্য ও পানি পাত্রের চারপাশে এদের বেশি দেখা যায়। এরা দেওয়াল ঘেঁষে দৌড়াদৌড়ি করে। ইঁদুর লাফ দিয়ে ৩ ফুট উঁচুতে এবং ৪ ফুট দূরে যেতে পারে। ১/৪ ইঞ্চি ব্যাসের ছিদ্র দিয়ে ছোট ইঁদুর সহজে খামারে যাতায়াত করতে পারে। সন্ধ্যার পর এদের উৎপাত বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এরা নতুন বস্তুর প্রতি খুবই সংবেদনশীল। সহজে নত­­ুন বস্তুর নিকট যায় না।

 

ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম- তাই খামার নির্মাণে আধুনিক প্রকৌশল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে যেন খামারটি ইঁদুর মুক্ত থাকে।     * আমরা জানি ১/৪ ইঞ্চি ব্যাসের ছিদ্র দিয়ে ইঁদুর সহজে চলাফেরা করতে পারে তাই সকল দরজা জানালা ভেন্টিলেটর দেয়াল নেট ইত্যাদি তৈরি এবং সংরক্ষণ করতে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। 

      
*দরজার তলদেশ, ত্রুটিপূর্ণ জানালা সেটিংসের ফাঁক, পানির পাইপ প্রবেশের ছিদ্র, ড্রেন ইত্যাদির প্রতিও বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। খামারের চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যেন মুরগির উচ্ছিষ্ট খাদ্য খামারের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থাকে।
*নির্মাণসামগ্রী, ভাঙা ইটের স্তূপ, পুরাতন খাদ্যের বস্তা, নির্মাণকালীন গর্ত, ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে।
*খামারের সিলিং যেন কোনভাবেই ইঁদুরের নিরাপদ বাসস্থান না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
*খাদ্য রাখার স্থান বা গুদাম বিশেষভাবে সংরক্ষিত রাখতে হবে যেন কোনভাবেই ইঁদুর বাসা বাঁধতে না পারে।
সারাবিশ্বে পোলট্রি শিল্প ইঁদুর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে এবং পোলট্রি উৎপাদনকারীদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। পোলট্রি শিল্পে ইঁদুর দ্বারা অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে লক্ষ্য রেখে মুরগির খামারিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে যাতে সমন্বিতভাবে ইঁদুর দমনে অংশগ্রহণ করে এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইঁদুর বর্তমানে পোলট্রি ফার্মে ছোট বাচ্চা ও ডিম খয়ে ফার্মের মালিকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতির ধরন, এর ব্যাপকতা ও দমন প্রক্রিয়া অন্যান্য বালাই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও কৌশলগত। তাই স্থান কাল পাত্রভেদে কৌশলের সঠিক ও সমন্বিত দমন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ইঁদুর দমন করতে হবে। এতে করে ইঁদুর বাহিত রোগ ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব হবে। তথাপি ইঁদুরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ইঁদুর নিধনে নিম্নোক্ত সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ইঁদুর মারার যন্ত্র (¯œ্যাপ ট্রাপ): খামারে ইঁদুরের সংখ্যা কম প্রতীয়মান হলে তা দমনে ইঁদুর মারার যন্ত্র ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। বেশির ভাগ যন্ত্রই খাঁচা আকারে যাতে    একমুখী পথ থাকে যে দিক দিয়ে শুধু প্রবেশ করা যায় কিন্তু বের হওয়া যায় না। এসব যন্ত্রে ইঁদুরের সুস্বাদু খাদ্য যেমন টাটকা মাছ মাংস, শুঁটকি, রুটি, বিস্কুট টোপ হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। ইঁদুর ঐ সব খাবার খেতে খাঁচায় প্রবেশ করবে কিন্তু বের হতে পারবে না। যন্ত্রগুলো খামারের অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে দেওয়াল ঘেঁষে স্থাপন করতে হবে। উল্লেখ করা হয়েছে যে ইঁদুর নতুন বস্তুর প্রতি খুবই সংবেদনশীল। তাই ইঁদুর মারার যন্ত্রগুলো খামারে দিনের পর দিন ব্যবহার করতে হবে যেন ইঁদুরগুলোর ভয় কেটে যায়। তারপর সেটিতে টোপ ব্যবহার করে ইঁদুর মারতে হবে। তাছাড়া খামারে ইঁদুরের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহজলভ্য হলে তাদের পেট ভরা থাকবে, সেক্ষেত্রে ইঁদুর যন্ত্রের টোপ-খাদ্যের প্রতি আকৃষ্ট নাও হতে পারে।


আঠালো বোর্ড (গ্লু বোর্ড) : বিশেষ আঠাযুক্ত পাটাতন ইঁদুর মারার জন্য বেশ কার্যকর। ইঁদুর এই পাটাতনের সংস্পর্শে আসলেই আঠার সাথে আটকে যায়। আঠাযুক্ত পাটাতন সর্বদা পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে। কারণ ধুলা মাটি কিংবা লিটার লাগলে আঠার কার্যকারিতা লোপ পায়। আঠাযুক্ত পাটাতন ধরার সময় অবশ্যই রাবারের গ্লোভস পরিধান করতে হবে।
 

শিকারী প্রাণী (প্রিডেটরস) : ইঁদুর ধরার জন্য পোষা প্রাণী বিড়ালের জুড়ি নেই। তবে ইঁদুরের বংশবৃদ্ধি এত দ্রুত হয় যে একাধিক বিড়াল রাখার প্রয়োজন হতে পারে। তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন বিড়াল নিজেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বাহক না হয়।
বিষটোপ ব্যবহার : ইঁদুর মারার বিষ মুরগি এবং খামারের কর্মীদের জন্যও বিষ। তাছাড়া ইহা পরিবেশবান্ধবও নয়। তাই বিষটোপ ব্যবহারের চিন্তা প্রথমেই না করে বিকল্প পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা উচিত। বিষটোপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে বিশ^ব্যাপী অনুমোদিত কয়েকটি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের নাম নিম্নে দেওয়া হলো।
বাংলাদেশে ব্যবহৃত কয়েকটি বিষাক্ত তীব্র বিষ বা একমাত্রা বিষ (জিংক ফসফাইড), দীর্ঘ স্থায়ী বিষ (যেমন-ল্যানির‌্যাট, ব্রমাপয়েন্ট, ক্লেরাট) এবং গ্যাস বড়ি (অ্যালুমিনিয়াম  ফসফাইড)।
বিভিন্ন পদ্ধতির সমন্বয় করে সম্মিলিত উপায়ে ইঁদুর দমন করলেই মুরগির খামারে ইঁদুরের উপদ্রব কমানো সম্ভব।

 

ডা. শাহ মোঃ বায়েজীদ রব্বানী (বাহালুল)

সহকারী পরিচালক, এনএটিপি-২, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাংলাদেশ, কৃষি খামার সড়ক, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল : ০১৭১২০৮০৪৪৪,Email : bahalulvet@gmail.com