Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রশ্নোত্তর (অগ্রহায়ণ) ১৪২৭)

কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন

কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
মোছাঃ আনজুআরা বেগম, গ্রাম: দক্ষিণ পাতাকাটা,  উপজেলা: বরগুনা সদর, জেলা: বরগুনা
প্রশ্ন: ডালিয়া ফুলের পাতায় সাদা সাদা গুঁড়ার মতো আবরণ পড়ে। এ সমস্যা দূরীকরণে কী করব। জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর : ডালিয়া ফুলের পাতার এ সমস্যাকে সাদা গুঁড়া রোগ বা পাউডারি মিলডিউ রোগ বলে। এটি এরিসাইফি পলিগনি নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত স্থান এবং অল্প জায়গাতে বেশি গাছ থাকলে এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও রাতে ঠাÐা আবহাওয়া বিরাজ করলে এ রোগ বেশি হয়। সেজন্য রোগ দেখা দিলে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক  যেমন-থিয়োভিট ৮০ ডবিøউজি বা কুমুলাস ডিএফ ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে অথবা প্রোপিকোনাজোল যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি ১ লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে  মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করবেন। আশা করি আপনার ফুলের সমস্যার সমাধান হবে এবং আপনি উপকৃত হবেন।
মো: হাবিব, গ্রাম: দক্ষিণ মহেশপুর, উপজেলা: ফুলবাড়ি, জেলা: দিনাজপুর
প্রশ্ন : গত বছর মিষ্টি আলুতে কালো দাগ পড়ে সংরক্ষিত মিষ্টি আলু নষ্ট হয়েছিল। এ বছর কী ব্যবস্থা নিলে এ সমস্যা দূর হবে। জানাবেন।
উত্তর : মিষ্টি আলুর এ রোগটিকে কালচে রোগ বা চারকোল রট বলে। আর এটি ম্যাক্রোফোমিনা ফ্যাজিওলিনা/ডিপ্লোডিয়া নাটালেনসিস নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের সমাধানে আপনাকে রোগমুক্ত মিষ্টি আলুর লতা লাগাতে হবে। এ ছাড়া শস্যপর্যায় অবলম্বন করা দরকার। জমিতে মিষ্টি আলুর লতা লাগানোর আগে কার্বেন্ডাজিম গ্রæপের ছত্রাকনাশক যেমন-অটোস্টিন অথবা কার্বোক্সিল ও থিরাম গ্রæপের ছত্রাকনাশক যেমনÑপ্রোভ্যাক্স ২০০ ডবিøউপি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে তার মধ্যে লতা ডুবিয়ে শোধন করে জমিতে লাগাতে হবে। এ ছাড়া সংরক্ষিত মিষ্টি আলুকে এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য মিষ্টি আলুকে সংরক্ষণের আগে ভালোভাবে কিউরিং বা শুকিয়ে নিতে হবে। এ রোগ যাতে না হয় সেজন্য কাটা, ছেড়া ও থেঁতলানো মিষ্টি আলু না নিয়ে শুধু নিখুঁত মিষ্টি আলু সংরক্ষণ করবেন। আর ফসল সংগ্রহের পর মেনকোজেব গ্রæপের ছত্রাকনাশক     যেমন-ডাইথেন এম ৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে মিষ্টি আলুতে স্প্রে করে সংরক্ষণ করবেন।       বালাইনাশক স্প্রে করা ফসল কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ দিন খাওয়া যাবে না। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনি উপকার পাবেন।
মোকসেদুর রহমান, গ্রাম: উমরগ্রাম, উপজেলা: গঙ্গাচরা, জেলা: রংপুর
প্রশ্ন: আলু গাছের গোড়ার দিকে কালো দাগ পড়ে। আলু গাছ শক্ত ও মট করে ভেঙে যায়। এমনকি আলু গাছের কাÐের সাথে ছোট সবুজ আলু দেখা যায়। এ অবস্থায় কী করণীয়। জানাবেন।
উত্তর : আপনার আলু গাছের এ সমস্যাটিকে আলুর স্টেম ক্যাংকার বা স্কার্ফ রোগ বলে। এমনকি কৃষক পর্যায়ে একে রাইজোকটনিয়া রোগও বলে। উচ্চ তাপমাত্রা ও উচ্চ আর্দ্রতা এ রোগের সহায়ক। এ রোগটি বীজ ও মাটিবাহিত। সেজন্য এ রোগ দমনে প্রত্যায়িত বা রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া ভালোভাবে অঙ্কুরিত বীজ আলু রোপণ করার পাশাপাশি শস্যবিন্যাস অবলম্বন করা জরুরি। আর কোনোভাবেই বীজআলু মাটির গভীরে লাগানো যাবে না। বীজআলু শোধনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স ২০০ অথবা কার্বেনডাজিম গ্রæপের ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম মিশিয়ে বীজআলু শোধন করলে উপকার পাওয়া যায়। যদি কোনো কারণে ক্ষেতে রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় তবে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে কম্প্যানিয়ন অথবা সানভিট মিশিয়ে গাছের গোড়া ভিজিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে আপনি উপকার পাবেন।
মো: ফারুক, গ্রাম: রনসিয়া, উপজেলা: পীরগঞ্জ, জেলা:   ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন : অনুন্নত আমগাছকে কিভাবে উন্নত জাতের আমগাছে পরিণত করা যাবে ?
উত্তর : টপ ওয়ার্কিং এর মাধ্যমে অনুন্নত আমগাছকে সহজেই উন্নত জাতের আম গাছে পরিণত করা যায়। এজন্য  ফেব্রæয়ারি-মার্চ মাসে অনুন্নত আম গাছের সব শাখা প্রশাখা কেটে ফেলতে হবে। জুন-জুলাই মাসে আম গাছের কর্তিত শাখা প্রশাখা থেকে উৎপন্ন ডালসমূহে ভিনিয়ার বা ক্লেফট পদ্ধতিতে উন্নত জাতের কলম করতে হয়।  কলমের নিচে থেকে কুশি বের হলে তা নিয়মিতভাবে কেটে দিতে হবে। এভাবে ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে অনুন্নত আমগাছটি উন্নত জাতের আমগাছে পরিণত হবে।
মো. জয়নাল উদ্দীন, গ্রাম: ল²ীরপাড়, উপজেলা: বিশ্বম্বপুর, জেলা: সুনামগঞ্জ
প্রশ্ন :  মাল্টা গাছের ডাল ছাঁটাই সর্ম্পকে জানতে চাই।
উত্তর : মাল্টা গাছের জন্য ডাল ছাটাই খুব জরুরি। গাছ লাগানোর পর ফল ধরার আগ পর্যন্ত গাছকে একটা ভালো আকার দিতে হয়। এতে করে গাছ চারদিকে ছড়াতে পারে। কারণ পাশের ডালগুলোতে বেশি মাল্টা ধরে। মাল্টা গাছের কাÐের ১ মিটার বা ৩ ফুট পর্যন্ত সব ধরনের ডাল ছাঁটাই করে দিতে হয়।  ডাল ছাঁটাই করার পর কাটা অংশে বর্দোপেস্ট এর প্রলেপ দিতে হয়। নাহলে রোগের আক্রমণ হতে পারে। অনেক সময় মাল্টা গাছে পানি তেউর বা ওয়াটার সাকার দেখা যায়।  এসব অংশ দেখামাত্রই কেটে দিতে হবে। মরা, শুকনো এবং রোগ, পোকামাকড় আক্রান্ত ডালপালা সবসময়ই পরিষ্কার রাখতে হবে।  এভাবে মাল্টা গাছের যতœ নিলে রতœ মিলে।
মো.  গোলাম মোস্তফা, গ্রাম: পিরোজপুর, উপজেলা: মেহেরপুর সদর, জেলা: মেহেরপুর
প্রশ্ন :  বেগুন গাছের পাতা কেমন জানি ছোট হয়ে গেছে এবং পাতাগুলো গুচ্ছাকারে দেখা যাচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান জানাবেন।  
উত্তর :  বেগুন গাছের এ সমস্যাকে বেগুনের ছোট পাতা রোগ বলে। এ ধরনের সমস্যা মাইকোপ্লাজমা জনিত কারণে হয়ে থাকে। জ্যাসিড পোকা এ রোগ ছড়ায়। এ ধরনের রোগাক্রান্ত গাছ ক্ষেতে দেখামাত্রই সেটি তুলে ফেলা দরকার। আর সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি জরুরি সেটি হলো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। সেজন্য আক্রান্ত জমিতে বেগুন ফসলের চাষ না করা। আর বেগুন গাছের বয়স ১ মাস হলেই বাহক পোকা অর্থাৎ জ্যাসিড দমনের জন্য ইমিডাক্লোরপ্রিড গ্রæপের কীটনাশক যেমন এডমায়ার ১ মিলি বা এমিটাফ ১ মিলি বা এসাটাফ ০.২৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে। আশা করি উপকৃত হবেন।
মৎস্য বিষয়ক
মোঃ ইয়াজুল ইসলাম, গ্রাম: বাগজান, উপজেলা: পাঁচবিবি, জেলা: জয়পুরহাট
প্রশ্ন : পানির রঙ গাঢ় সবুজ, মাছ মরে যাচ্ছে কী করব ?
উত্তর : অতিরিক্ত প্ল্যাকটন তৈরি হওয়ার কারণে এবং অক্সিজেনের অভাব হলে এমনটি হয়। এ সমস্যার প্রতিকারে শতকপ্রতি ৫০০ গ্রাম পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। খাবার ও রাসায়নিক সার সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হবে। কপার সালফেট বা তুঁতে ১২ থেকে ১৪ গ্রাম শতকপ্রতি ছোট ছোট কাপড়ের পোঁটলায় বেঁধে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে দিতে হবে যেন ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানির নিচে থাকে। সিলভার কার্প মাছ ছাড়া যেতে পারে। এছাড়া জিপসাম প্রয়োগ করা যাবে শতকপ্রতি ১ কেজি হারে।
শিউলি বেগম, গ্রাম: আসমাড়াই, উপজেলা: রাজবাড়ী সদর, জেলা: রাজবাড়ী
প্রশ্ন : মাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না। কি করব ?
উত্তর : পুকুরের পানির পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে হবে। এক সপ্তাহ পরপর জাল টানতে হবে। খাদ্য চাহিদা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া দ্রæত দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এসিমিক্স সুপার ফিস ব্যবহার করতে হবে ১ থেকে ২.৫ কেজি প্রতি টন খাদ্যে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনি উপকার পাবেন।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
শুভচন্দ্র, গ্রাম: মূলগ্রাম, উপজেলা: কালাই, জেলা: জয়পুরহাট

প্রশ্ন: আমার ছাগলের বয়স ৬ মাস। খাবার খেতে চায় না। রক্তশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় কি করণীয়। পরামর্শ চাই।  
উত্তর:  আক্রান্ত ছাগলকে এনডেক্স বা রেনাডেক্স ১৫০০ মিলগ্রাম (৭০ কেজির জন্য ১টি ট্যাবলেট) খাওয়াতে হবে। ছাগলকে বছরে অন্তত ২ বার বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষার শেষে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। তাহলে আপনি উপকার পাবেন।
মোঃ আক্কাছ আলী, গ্রাম: খাটুরিয়া, উপজেলা:  ডোমার, জেলা: নীলফামারী
প্রশ্ন : আমার টার্কির বয়স ১ মাস। টার্কিও গায়ে অতিরিক্ত জ¦র। সব টার্কি একসাথে জমা হয়ে থাকছে। সাদাটে চুনের মতো ডায়রিয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় কি করব?
উত্তর: এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যার নির্দিষ্ট কোন     চিকিৎসা নেই। তবে এই রোগে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং অন্যান্য রোগের সংক্রমণ খুব সহজেই হয়। সেজন্য নি¤েœ্াক্ত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। সিপ্রোফ্লক্সাসিন ১ মিলি ১ লিটার পানিতে এবং ভিটামিন সি ১ গ্রাম ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে ৩ থেকে ৫ দিন।
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)


উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫,  ফোন নং: ০২-৫৫০২৮৪০০, ই-মেইল : taufiquedae25@gmail.com