ড. ফ. ম. মাহবুবুর রহমান
মধু মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক অপূর্ব নেয়ামত। স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর গুণ অপরিসীম। রাসূলুল্লাহ (সা.) একে ‘খাইরুদ্দাওয়া’ বা মহৌষধ বলেছেন। খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ সহস্রাদের শিলালিপিতে মৌমাছি পালনের ইতিহাস পাওয়া যায়। ব্যাবিলন সাম্রজ্যে অর্থাৎ খ্রীষ্টপূর্ব ৪র্থ সহস্রাব্দের শেষে ও ৩য় সহস্রাব্দের শুরুতে বিপুলভাবে মৌমাছি পালন করা হতো। মৌমাছি চাষের ইতিহাস অনেক প্রাচীন হলেও পদ্ধতিগতভাবে সর্বপ্রথম ১৬৩৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৌমাছি চাষ শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৮৪০ সালে ‘মোস্সে কুইনবি’ নামক বৈজ্ঞানিক মৌচাষ শুরু করেন। ১৮৫১ সালে আধুনিক পদ্ধতিতে মৌচাষ শুরু করেন ল্যাংস্ট্রোথ নামক বৈজ্ঞানিক যাকে আধুনিক মৌচাষের জনক বলা হয়। ভারতবর্ষে ১৮৮৩ খ্রিঃ আধুনিক মৌমাছি পালন কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশে আকতার হামিদ খান ১৯৬১ সালে কুমিল্লার পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে প্রথম মৌচাষ শুরু করেন। এরপর ১৯৬৩ সালে সাতক্ষীরাতে বিসিক প্রথম মৌচাষের উদ্যোগ নেয় এবং অদ্যাবধি বিসিকের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে ও সারাদেশে বিস্তৃত হয়েছে। বিসিকের প্রচেষ্টার সাথে পরবর্তীতে ৮০’র দশকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সম্পৃক্ত হয় এবং এর মাধ্যমে বর্তমানে মৌপালন সম্প্রসারণে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে মৌচাষের সম্ভাবনা
মৌচাষ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আয়েনস্টাইন (Einstein) মৌমাছির উপকারিতা বুঝাতে গিয়ে বলেছেন, If the bee disappeared the surface of the globe, then the man would only have four years to live (যদি মৌমাছি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়, তবে মানুষের জীবন পরবর্তী চার বছরেই শেষ হয়ে যাবে)”। ফসল উৎপাদন ও মানব কল্যাণে মধু ও মৌমাছির অপরিসীম ভ‚মিকা বিবেচনা করেই এই উক্তিটি করা হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশে নানা ধরনের রোগব্যাধি নিরাময়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া বিভিন্ন মিষ্টান্ন ও সুস্বাদু খাবার তৈরিতে মধু ব্যবহার করা হয়। মৌচাক থেকে প্রাপ্ত মোম দিয়ে নানা সামগ্রী যেমন- প্রসাধনী, মোমবাতি ইত্যাদি তৈরি হয়। এ দেশের ভ‚মিহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মৌপালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারে। এমন কি মধু বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। ইতোমধ্যেই ভারত ও জাপানে বাংলাদেশের মধু রপ্তানি হচ্ছে, যা ইউরোপ ও অন্যান্য উন্নত দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশের অপরিশোধিত মধু ক্রয় করে সেদেশে পরিশোধন করে পুনরায় বাংলাদেশে রপ্তানি করে প্রচুর মুনাফা করছে। এ ছাড়াও দেশীয় কিছু কোম্পানি মৌচাষিদের কাছ থেকে সরাসরি মধু ক্রয় করে পরিশোধনের মাধ্যমে দেশে/বিদেশে বাজারজাত করছে। আমাদের দেশে মধু চাষের অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। সুজলা সুফলা ষড়ঋতুর বাংলাদেশ, যার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আছে ফসলের মাঠ, বৃক্ষরাজী, সবজি ও ফুলবাগান। এখানে প্রায় প্রত্যেক ঋতুতেই কোন না কোন ফুল ফোটে। এসব জায়গা থেকে মৌমাছি প্রায় সারা বছরই মধু আহরণ করতে পারে। বর্তমানে প্রায় ২৫০০ জন মৌচাষি বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করছে এবং বছরে প্রায় ৬ হাজার টন মধু উৎপাদিত হচ্ছে। যথাযথ পরিকল্পনা ও আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে মধুর উৎপাদন এক লক্ষ টনে উন্নীত করা সম্ভব। বাছবিচারহীন কীটনাশক প্রয়োগ, ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন, শিল্পায়ন ও অন্যান্য কারণে প্রকৃতিতে বসবাসরত মৌমাছি ও অন্যান্য পরাগায়নকারী কীট-পতঙ্গের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন, মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মৌচাষিদের মৌপালনে উৎসাহিত করলে এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে, এমন কি অনেক প্রজাতির গাছপালা বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মৌচাষের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষ বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি, শ্রমিক শ্রেণী এবং সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন হবে। তারা মধু এবং অন্যান্য উপজাত দ্রব্য যেমন, রয়েল জেলি, পোলেন গ্রেইন, মৌ বিষ, প্রপেলিস, মোম ইত্যাদি দেশ-বিদেশে বিক্রির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য আয় বাড়াতে সক্ষম হবেন। ব্যক্তিপর্যায়ে মৌমাছি পালন প্রকল্প স্থাপনের জন্য আলাদাভাবে কোনো জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আনাচে-কানাচে, ঘরের বারান্দায়, ছাদে কিংবা বাগানেও মৌ-বাক্স রাখা যায়। অ্যাপিস মেলিফেরা প্রজাতির ৫টি মৌ-কলোনি সম্বলিত মৌ-খামার স্থাপনের জন্য মোট ব্যয় হয় ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে ১০-১৫ বছর পর্যন্ত মৌ-বাক্স ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা যাবে। এজন্য আর কোনো অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে না। মেলিফেরা প্রজাতির প্রতিটি মৌ-বাক্স থেকে বছরে ৫০ কেজি পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করা সম্ভব, যার বাজারমূল্য প্রতি কেজি ২৫০ টাকা হিসেবে, ৫টি বাক্স থেকে ৬২,৫০০ টাকা। প্রকল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে মাত্র ২৫-২৭ হাজার টাকা এককালীন বিনিয়োগ করে প্রতি বছর ৬০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে আয় করা সম্ভব। মৌ-বাক্সের সংখ্যা প্রতি বছর বৃদ্ধির মাধ্যমে এ আয় অনেকগুণ বাড়ানো যায়। স্বল্প পরিশ্রমে এ ধরনের প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে একদিকে যেমন আর্থিক দিক থেকে লাভবান হওয়া যায়, তেমনি ফসলের পরাগায়নে সহায়তাকরণের মাধ্যমে দেশের ফল ও ফসলের উৎপাদনে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা প্রদান করা যায়।
মৌচাষ এমন একটি ব্যবস্থাপনা যেখানে জমিতে বাড়তি কোন চাপ পড়ে না। বর্তমান পরিবেশকেই কাজে লাগিয়ে মৌচাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন সাধন করা যায়। এছাড়া মৌচাষে চ্যালেঞ্জসমূহ উত্তরণ করলে মৌচাষকে জনপ্রিয় করা সম্ভব। যা দেশের ৮৫ হাজার গ্রামে এর সম্প্রসারণ ঘটলে লাখো মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
মৌচাষের চ্যালেঞ্জ
লাভজনক মৌচাষে চাষিদের জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব; প্রাথমিক বিনিয়োগের জন্য তেমন কোনো আর্থিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই; সাধারণ কৃষকদের জমিতে মৌ বাক্স স্থাপনে অনীহা প্রকাশ করে; মৌসুমে মধুর মূল্য কম থাকা; মৌ বাক্স চুরি হয়ে যাওয়া; আশেপাশে যথেচ্ছ কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মৌমাছি মারা যাওয়া; অফ সিজনে মৌমাছি বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়; মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের স্বল্পতা; মৌচাষে দলভিত্তিক কাজ করতে হয়, দলীয় কাজে অনেকেই উৎসাহিত না হওয়া; এলাকায় ধারাবাহিকভাবে মধু পাওয়া যায় এমন ফসলের অভাব; মৌ-কলোনিসহ বাক্স পরিবহণে নানা জটিলতা।
মৌচাষ সম্প্রসারণে ডিএই
বাংলাদেশে উন্নতমানের বীজ ব্যবহারের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইউনিয়নভিত্তিক কৃষক উদ্যোক্তা (এসএমই) তৈরির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে ডাল, তেল এবং মসলাজাতীয় ফসলের উন্নতমানের বীজের সরবরাহ ও ব্যবহার বৃদ্ধি এবং আধুনিক বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষকপর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প-৩য় পর্যায় (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো যথাযথ পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৌচাষ সম্পৃক্তকরণ। এ ছাড়াও প্রকল্পের আওতায় মৌচাষের মাধ্যমে গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। প্রকল্পাধীন সময়ে ফসলের পরাগায়ন কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য আগ্রহী বীজ এসএমইগণকে মোট ২০০০টি উন্নতমানের মৌবাক্স, এক্সট্রাক্টর ও এক্সেসরিজ সরবরাহ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে এসএমই ও তার পরিবারের সদস্যরা মৌচাষে সম্পৃক্ত থাকবে এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড উৎসাহিত হবে। এসব বস্তু থেকে প্রতি বছর ৪০ মে. টন করে অর্থাৎ প্রকল্পাধীন সময়ে প্রায় ১৬০ মে. টন উৎকৃষ্ট মানের মধু উৎপাদিত হবে যা মূল্যমান প্রায় ২.৫০ কেটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৯০০ জন কর্মকর্তার ডাল, তেল ও মসলা ফসলের উৎপাদন প্রযুক্তি ও মৌপালনের উপর ৬ দিনব্যাপী টিওটি কোর্স সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৬০ জন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মৌচাষের ওপর ৩ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেছেন, যারা বর্তমানে মাঠপর্যায়ে মৌচাষে মৌ-বিশেষজ্ঞ হিসেবে কৃষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ মৌ-পালন বিষয়ে সম্পৃক্ত রয়েছেন। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন এসএমইগণকে মৌ-বক্স সরবরাহের ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মধু উৎপাদন এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ পরপরাগী ফসলের পরাগায়ন নিশ্চিত হচ্ছে। প্রকল্পে মৌচাষ সম্পৃক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ১৫-৩০% ফলন বৃদ্ধিসহ মধু উৎপাদন ও পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদে কৃষকগণ উৎসাহিত হচ্ছে।
উপপ্রকল্প পরিচালক, কৃষকপর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প-৩য় পর্যায় (১ম সংশোধিত), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। মোবাইল : ০১৫৫২৩২৭১৮৮, ই-মেইল: mahbubur_fuad@yahoo.com
প্রতিদিন আমরা যে খাবার খাই, তার তিন ভাগের এক ভাগ আসে মৌমাছির পরাগায়ন থেকে। পরিসংখ্যানের দিক থেকে, কীটপতঙ্গের মাধ্যমে যেসব উদ্ভিদের পরপরাগায়ন হয় তাতে শুধু মৌমাছির অবদানই ৮০% (অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার উদ্ভিদ)। বর্তমানে মানুষ খাবার হিসেবে যে ফলমূল, শাকসবজির ওপর বেশি নির্ভরশীল সেগুলোর ৭০% উৎপন্ন হয় মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে। পৃথিবীতে প্রতি বছরে যে পরিমাণ খাদ্য মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে উৎপাদিত হয় সেগুলোর আর্থিক মূল্য আনুমানিক ২২ হাজার কোটি ডলার। এ অর্থনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী ১৪০ কোটি মানুষের জীবিকা। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাবারের জোগান দিতে প্রয়োজন বাড়তি উৎপাদন। মৌমাছির সহায়তা ছাড়া যা এক প্রকার অসম্ভব। তাই মৌমাছির জীবন হুমকির মুখে পড়লে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও হুমকির মুখে পড়বে। আর একটি মৌচাকে যত মৌমাছি বাস করে তার চারপাশে ৪ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে যত ফুল ফোটে, একদিনে সেগুলোতে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ ও পরাগায়ন করতে সাহায্য করে এসব মৌমাছি। মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন হয় এমন ফল ও সবজির তালিকা অনেক লম্বা। যেসব ফল ও সবজি উৎপাদনে মৌমাছির প্রত্যক্ষ ভ‚মিকা আছে সেগুলোর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ, সরিষা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, মরিচ, পেঁপে, বাদাম, তরমুজ, কমলা, আঙুর, কুমড়া, লেবু, গাজর, লিচু, আপেল, আম, শিম, টমেটো অন্যতম। রাজশাহী, দিনাজপুর, ঈশ্বরদী, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর প্রভৃতি জেলায় লিচু, আম, সরিষার মধু প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। গোপালগঞ্জ আবার কালোজিরা ও ধনিয়া মধুর জন্য বিখ্যাত। মধুর জন্য নাম রয়েছে টাঙ্গাইলের লালমাটির মধুপুর এলাকার মধুপুর, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়ীয়া, ঘাটাইল, সখীপুর, ভালুকা ও জামালপুর সদর উপজেলায় আনারস, কাঁঠাল, কলা, সরিষা, তিল, তিসি, জলপাই, লিচু, আম, পেঁপে, কুল, আদা, হলুদ, মিষ্টিকুমরা, লাউ, শিম, আলু, কাসাভা, কপি, গাজর, মুলাসহ বিভিন্ন কৃষিজ ফসল বাণিজ্যিকভিত্তিতে উৎপাদন করা হয়। ফলে এসব এলাকায় রয়েছে অনেক মৌচাষি। বীজ ও ভালো ফসল উৎপাদনে পরাগায়ন অত্যাবশ্যক, বীজ ফসলের মাঠে কীটপতঙ্গ দ্বারা পরাগায়ন অধিক কার্যকর।
প্রাচীনকাল থেকেই মৌমাছি মানুষের কাছে সামাজিক পতঙ্গ হিসেবে পরিচিত কারণ এরা দলবদ্ধভাবে বাস করে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন এর মতে, গবেষণা থেকে প্রাপ্ত যে মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে বনজ, ফলদ ও কৃষিজ ফসলের উৎপাদন ২৫-৩০% বাড়িয়ে দেয়। উৎপাদিত বাড়তি ফসলের মূল্য মোট উৎপাদিত মধু ও মোমের মূল্যের ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি। মৌমাছিকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করাই মূলত মৌমাছি পালন। একটি মৌচাকে গড়ে প্রায় ২০ হাজার মৌমাছি থাকে। একটি চাকে সাধারণত ৩ শ্রেণির মৌমাছি থাকে একটি রানী মৌমাছি যা প্রজননে অংশ নেয়; ড্রোন বা পুরুষ মৌমাছি, কর্মী মৌমাছি। রানী মৌমাছি সবচেয়ে বড় প্রকৃতির। একটি চাকে একটি মাত্র রানী মৌমাছি থাকে। এর একমাত্র কাজ ডিম পাড়া। পুরুষ মৌমাছি মধ্যম আকৃতির ও এদের চোখ বড় কিন্তু হুল নেই, একমাত্র কাজ রানীর সাথে মিলিত হওয়া। শ্রমিক মৌমাছি সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির। এদের চোখ ছোট, কিন্তু হুল আছে। রানী ও পুরুষ বাদে অবশিষ্ট সকল সদস্যই শ্রমিক মৌমাছি। এরা নানা দলে ভাগ হয়ে চাকের যাবতীয় কাজ যথা- চাক নির্মাণ করা, ফুলের মিষ্টি রস ও পরাগরেণু সংগ্রহ করা, মধু তৈরি করা, চাকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, চাকে বাতাস দেয়া চাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করে।
বাংলাদেশে পাঁচটি প্রজাতির মৌমাছি দেখা যায়- Apis mellifera, A. cerana, A. dorsata, A. florea এবং Triogona. এর মধ্যে অ্যাপিস মেলিফেরা প্রজাতির চাষাবাদ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে লাভজনক। ইউরোপীয় জাতের অঢ়রং সবষষরভবৎধ আকারে মাঝারি ও শান্ত প্রকৃতির, তাই এদের বাক্সে লালন-পালন করা যায়। অ. পবৎধহধ, অ. ভষড়ৎবধ অন্ধকার স্থান যেমন- গাছের ফোকর, দেয়ালের ফাটল, আলমারি, ইটের স্ত‚প ইত্যাদি স্থানে এরা চাক বাঁধে। চাকপ্রতি মধুর উৎপাদন প্রতিবারে গড়ে প্রায় ৪ কেজি। অ. ফড়ৎংধঃধ প্রজাতির মৌমাছি পালন করা যায় না কারণ খুব হিংস্র স্বভাবের, বন-জঙ্গলে এদের চাক দেখা যায়, সুন্দরবনে এদের বেশি দেখা যায়। পাহাড়ি এলাকাতে ঞৎরড়মড়হধ (ংঃৎরহমষবংং নবব নামে পরিচিত) প্রজাতি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়।
ফসল ও পরাগায়নের ধরন অনুযায়ী মৌমাছির বাসা নির্বাচন করা হয়। বাঙ্গি ফসলে ১০টি ফুলের জন্য একটি মৌমাছি যথেষ্ট। শসা, তরমুজ, মিষ্টিকুমড়া আর লাউয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ ফুলের জন্য একটি মৌমাছির উপস্থিতির প্রয়োজন হয়। বাঁধাকপি, ফুলকপি প্রভৃতি ফসলের ক্ষেত্রে হেক্টরপ্রতি ফসলের (বীজ) জন্য দুটি বা তিনটি মৌমাছির বাসা মাঠের উপযুক্ত স্থানে বসিয়ে দিলেই পরাগায়ন নিশ্চিত হয়। মুলার ক্ষেত্রে যেহেতু ফুল একেবারেই আকর্ষণীয় নয়, সেজন্য মাঠে অধিক সংখ্যক কীটপতঙ্গের উপস্থিতির প্রয়োজন হয়। তাই প্রতি হেক্টর মুলার জমিতে তিন-চারটি মৌমাছির বাসা মাঠে বসিয়ে দিলে বীজের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়। পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কমসংখ্যক মৌমাছির উপস্থিতির প্রয়োজন হয়। এক থেকে ১০ হেক্টর পেঁয়াজের ফসলের (বীজ) মাঠে একটি মৌমাছির বাসা বসিয়ে দিলেই চলে। গাজরে একই সঙ্গে বায়ু পরাগায়ন ও কীটপতঙ্গ পরাগায়ন সম্পন্ন হয়। তবে মৌমাছি গাজরের পরাগায়নে সবচেয়ে কার্যকর ভ‚মিকা রাখে। প্রতি হেক্টর গাজরের জমিতে একাধিক মৌমাছির বাসা স্থাপন করলে ভালো কাজ হয়। ধান সাধারণত বায়ু পরাগায়নে নির্ভরশীল। ধান ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স বসালে ধানের ফলন অন্য ক্ষেতের চেয়ে বেশি হয়।
আবহমানকাল থেকে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ বাংলাদেশের নিজেস্ব খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে মধু অন্যতম। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তবে পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করতে মধু গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে। কারণ মধু শর্করা জাতীয় খাদ্য হলেও বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, এনজাইম ও খনিজ পদার্থ থাকে। একে সব রোগের মহাষৌধ বলা হয়। মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। মধুতে যে ডেক্সট্রিন ও শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়, সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে। প্রাকৃতিকভাবে মধুর বড় একটি উৎস সুন্দরবন, যার কেওড়া ও খলিসা ফুল মৌমাছিদের প্রথম পছন্দ। ঈধহধফরধহ ঐড়হবু ঈড়ঁহপরষ এর তথ্য অনুযায়ী এক পাউন্ড মধু উৎপাদনে মৌমাছিদের প্রায় ২০ লাখ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে হয়, যার জন্য প্রায় ৮০,০০০ কিমি. পথ অতিক্রম করতে হয়। একটি মৌমাছি তার জীবনে এক চা চামচ পরিমাণ মধু সংগ্রহ করে। মধু ছাড়াও মৌমাছি থেকে পাওয়া অন্যান্য পণ্যের মাঝে রয়েছে মোম, পরাগরেণু, প্রোপোলিস, রাজকীয় জেলি, মৌবিষ ইত্যাদি।
বাংলাদেশে মৌ চাষের বর্তমান প্রেক্ষাপট
* দেশে মধু উৎপাদনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছে প্রায় ১৮ হাজার মৌচাষি।
* চাষি ছাড়াও বিভিন্নভাবে মধু শিল্পে কর্মরত আছেন প্রায় ২ লাখ মানুষ।
* ২০১৯-২০ অর্থবছরে সারাদেশে মৌ চাষের আওতায় জমির পরিমাণ ৮৯,০৩৭ হেক্টর।
* বর্তমানে ২ হাজার মৌ খামার ও ৫৬,৬৮৮ টি মৌবাক্স স্থাপিত রয়েছে।
* বাংলাদেশে বর্তমানে ৭টি মৌচাষিদের সংগঠন রয়েছে।
* বর্তমানে মাত্র ১,১৫১ জন সক্রিয় মৌখামাড়ি মৌ পালনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন।
* প্রকল্পের তত্ত¡াবধানে নতুন পুরাতন মিলিয়ে আরও ৭০,০০০ কৃষককে মৌ চাষের সাথে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
* বর্তমানে উৎপাদিত মধুর পরিমাণ প্রায় ৭০০-৮০০ মেট্রিক টন।
* ৭ টি বেসরকারি মধু প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র রয়েছে।
* মাত্র ৩টি মৌপালন বাক্স তৈরির ছোট কারখানা ও ২টি মৌমাছি পালন আনুষঙ্গিক সরবরাহকারী রয়েছে।
বিভিন্ন ফসলের মাঠে স্থাপিত মৌ বাক্স থেকে মধু উৎপাদন (কেজি)
মৌ চাষ সম্পর্কিত ডিএই এর ভিশন : আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌ চাষ কার্যক্রম গ্রহণে আগ্রহী লক্ষ জনগোষ্ঠীকে মৌ চাষে উদ্বুদ্ধকরণসহ অধিক মধু উৎপাদনের মধ্য দিয়ে দেশে খাঁটি মধুর চাহিদা পূরণ, সফল পরাগায়নের মাধ্যমে ফল ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি তথা দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব।
* মৌপরাগায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন মাঠ ফসলের উৎপাদন ১৫-৩০% এ বৃদ্ধি।
* কৃষিকে বাণিজ্যকীকরণে ও বহুমুখীকরণে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন।
* প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
* টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন ও বজায় রাখা।
* মধু ও অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে বৈদেশিক মুনাফা অর্জন এর মাধ্যমে জিডিপিতে অবদান।
* দেশে মধু ও মৌপণ্যভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষ ভ‚মিকা পালন।
* জৈব বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা।
মৌ চাষের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প : কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প। প্রকল্পে মৌ চাষ সম্পৃক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ১৫-৩০% ফলন বৃদ্ধিসহ মধু উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ উৎসাহিত হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে ২০০০ আধুনিক মৌবাক্স বিতরণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মৌ চাষ সম্পর্কিত কর্মপরিকিল্পনাগুলো হলো-
* আধুনিক পদ্ধতিতে মৌপালন ও এর সাহায্যে সঠিক সময়ে উপযুক্ত পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন ১৫-৩০% বৃদ্ধি;
* পরিবেশবান্ধব উৎপাদন কৌশল সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করা;
* কৃষকদের জমিতে মৌবক্স স্থাপনে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধি;
* ডিএই এর মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মৌচাষ সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি।
মৌ চাষের সম্ভাবনার ক্ষেত্রসমূহ
Tridge.com এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব বাজারে প্রতি কেজি মধুর দাম ৩.৫৩ মার্কিন ডলার; মোট উৎপাদিত মধুর পরিমাণ ১.৭৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন (২০১৬); মধু উৎপাদনে প্রথম চীন (২৭.৫%), রপ্তানিতে প্রথম নিউজিল্যান্ড (১১.১%) ও আমদানিতে প্রথম আমেরিকা (২০.৯%); বিশ্ব বাজারের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান রপ্তানিতে ৮৩তম ও আমদানিতে ৬৬তম। কিন্তু আশার কথা ঞৎরফমব.পড়স এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে জাপানে রপ্তানি হয়েছে ৬৪.৫% মধু আর বিশ্বে মোট রপ্তানিকৃত মধু থেকে আয় ১,৫৩,৪২,০০০ মার্কিন ডলার এবং আমদানিতে মোট ব্যয় ১১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পায়নে ও কারুশিল্পে প্রোপোলিস ও মম এর চাহিদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক প্যাকেট (৬০০ গ্রাম) পরাগরেণুর খুচরা বাজার মূল্য ৩০০০-৪০০০ টাকা। রাজকীয় জেলি, মৌ বিষ এর বাজার এর আমাদের দেশে এখনও তৈরি হয়ে ওঠেনি, তবে বিশ্ব বাজারে এর গুরুত্ব অনেক। আমাদের দেশের বর্তমান মাঠ ফসল, শস্য চক্র ও সময় বিবেচনা করে মধু উৎপাদন ৪০-৫০ হাজার মে. টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
পর্যাপ্ত ফসলি জমি ও চারণভ‚মির অভাব ও বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাবে বিশ্বেই মৌমাছির স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে মানসম্পন্ন মধু ও মোমের উৎপাদন বাড়াতে মৌ-রানীর (রানী মৌমাছি) কৃত্রিম প্রজনন করা হয়। যদিও রানী প্রজননের ক্ষেত্রটি এদেশে নতুন। কৃত্রিম মৌ প্রজনন পদ্ধতিতে রানী মৌমাছির সংখ্যা যেমন বাড়ানো যায়, তেমনি প্রাকৃতিক উপায়ে মৌ চাষকে সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে দেশের মানুষ গ্রহণ করলে দেশের বেকার সমস্যা অনেকখানি দূর হবে। প্রজননকৃত রানী সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে সক্ষম, যেখানে প্রচলিত বা সনাতন পদ্ধতিতে রানী ৬-৭ মাস পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। বর্তমানে কৃত্রিম প্রজননকৃত একটি রাণির আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য প্রায় ২৪০০ টাকা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে গবেষণার মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে আমাদের দেশীয় আবহাওয়া-উপযোগী রানী উৎপাদন করতে পারলে বাঁচবে সময় ও অর্থ। সমগ্র দৃষ্টিতে গ্রামের স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর জন্য মৌমাছি পালন এখন একটি লাভজনক ক্ষেত্র। এ বিষয়ে বেকার ও দরিদ্র্যজনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই গ্রামীণ আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব।
মৌপালনের চ্যালেঞ্জসমূহ : আমদানিকৃত মধুর তুলনায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মধুর পাইকারি বাজারমূল্য অনেক কম। ভারত থেকে আমদানিকৃত মধু দেশীয় বাজারের ৭৩.৭% দখল করে আছে (tridge.com) । সকল কৃষক পর্যায়ে মৌপালনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। সেই সাথে আগ্রহী মৌচাষিদের আর্থিক সামর্থ্যও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। মাঠে বিদ্যমান মৌবাক্সে বিভিন্ন প্রকার শত্রু ও রোগের আক্রমণে মৌমাছি কলোনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারাদেশে মধু ও মৌপণ্য পরিবহন হয়রানি, জটিলতা, স্থানীয় চক্র ইত্যাদি অতিক্রম করে বাজারজাত করতে কৃষককে হিমশিম খেতে হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠপর্যায়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মৌচাষ সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করায় দেশে মধু উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৌচাষিদের প্রশিক্ষণ ও মৌবাক্স বিতরণ ছাড়াও সারা বাংলাদেশে মৌচাষিদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি কৃষি অফিস থেকে স্থাপিত মৌবাক্স পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। মৌচাষি ও শিল্পকারখানার মাঝে সমন্বয় ও সহযোগিতা কার্যক্রম চলছে। মৌমাছি পালন সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে হলে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
ড. মোঃ আবদুল মুঈদ
মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, ফোন : ৯১৪০৮৫০, ইমেইল : dg@dae.gov.bd