Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ ব্যবস্থাপনা

কৃষিবিদ মোঃ ফজলুল করিম

উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা প্রাণিসম্পদে একটি সহজাত প্রবৃত্তি। স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠনে প্রাণিসম্পদের অবদান অপরিসীম। তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে আলোচনা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে তা হচ্ছে পশুপাখির খাদ্যে গ্রোথ প্রোমোটার হিসেবে এন্টিবায়োটিকসের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং মানব স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া।  


দৈহিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে এন্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটার (AGP) দীর্ঘদিন যাবৎ ক্রমাগতভাবে খামারিগণ কর্তৃক পশুপাখির খাদ্যে ব্যবহৃত হওয়ার প্রেক্ষিতে অণুজীব কর্তৃক এন্টিবায়োটিকসের প্রতি প্রতিরোধী হয়। এ ধরনের প্রাণিজ আমিষ গ্রহণের ফলে মানব দেহে এন্টিবায়োটিকসের প্রতি প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এর ফলশ্রতিতে রোগাক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা অনেক সময় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
এন্টিমাইক্রোবিয়ালস বিভিন্ন প্রকার রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। যদি প্রতিনিয়ত এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) তৈরি হতে থাকে তবে অদূর ভবিষ্যৎ জীবাণুুঘটিত রোগ চিকিৎসার জন্য কার্যকর কোনো ওষুধ পাওয়া যাবে না, ফলশ্রæতিতে অতি সাধারণ রোগেই অনেক মানুষসহ প্রাণিকুল এ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। ২০১৬ সালে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) জন্য পৃথিবীতে সাত লাখ (৭০০০০০) মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে আমরা এখনই যদি এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করি তবে আগামী ২০৫০ সালে এক কোটি (১০০০০০) মানুষ মারা যাবে।


নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী প্রাণিসম্পদের প্রতিক‚লতা দুই ধরনের।  ১. এলার্জিক প্রতিক্রিয়া, ২. এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স যেটি জনস্বাস্থ্যের হুমকির কারণ বলে বিবেচিত। ফলস্বরূপ, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা মতে, প্রাণিজাত পণ্য খাওয়ার ফলে মানব শরীরে কলিব্যাসিলোসিস, এন্টারোকক্কাস, কম্পাইলোব্যাকটার, কলেরা বা ডাইরিয়া, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, ক্লোসট্রিডিয়াম ইত্যাদি এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR)  রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ে।


এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR)  
কোনো জীবাণুু এন্টিমাইক্রোবিয়াল বা এন্টিবায়োটিক এর প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেললে বা এন্টিমাইক্রোবিয়াল (এন্টিবায়োটিক) এর প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সক্ষম হলে ওই এন্টিমাইক্রোবিয়াল (এন্টিবায়োটিক) দিয়ে ওই  জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট কোনো রোগের চিকিৎসা ফলপ্রসু হয় না বা রোগীকে সুস্থ করা যায় না, জীবাণুুর এ পরিবর্তনকে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) বলে। এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR)  একটি মারাত্মক সমস্যা যা জনস্বাস্থ্য  সুরক্ষা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবিভূত হয়েছে।


সুপার বাগ (Super bug) বা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ওরগ্যানিজম (MDRO)
কোনো জীবাণু যখন একই সাথে অনেকগুলো এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয় তখন তাকে সুপার বাগ বা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ওরগানিজম বলে।


এন্টিমাইক্রোবিয়ালস এবং এন্টিবায়োটিক  
এন্টিমাইক্রোবিয়ালস এক প্রকার জৈব বা অজৈব উপাদান যা এক বা একাধিক জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে জীবাণুুর কার্যকারিতা নষ্ট করতে সক্ষম, জীবাণুু ঘটিত নানা রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যেমন- পেনিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন, মেট্রোনিডাজল ইত্যাদি। এদের মধ্যে যে সব উপাদান শুধুমাত্র ব্যাক্টেবিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর তাদেরকে এন্টিবায়োটিক বলে। যেমন- পেনিসিলিন, জেন্টামাইসিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিন ইত্যাদি।

এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) কেন এবং কিভাবে হয়


বিংশ শতাব্দিতে এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বার উন্মোচন করেছে। অদ্যবধি এ এন্টিবায়োটিক কোটি কোটি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের জীবন রক্ষা করে চলেছে। তবে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) শুরু হয়েছে। এন্টিবায়োটিক এর মাত্রারিক্ত ব্যবহার এবং অপব্যবহার এ এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।

প্রাণিজ পণ্য অনিরাপদ হওয়ার কারণসমূহ
গরু মোটাতাজাকরণে ফিড এডিটিভস যেমন প্রোবায়োটিকস্, এনজাইম, এমাইনো এসিড, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স, ইউরিয়া ইত্যাদি এর ফলে ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি মিটিয়ে প্রাণীর খাবার শরীরে কাজে লাগে এবং পশম খুব চকচকে হয়। তাছাড়া ক্যালসিয়াম জাতীয় ওষুধে প্রাণী খুব শক্তিশালী হয় এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অনুরুপভাবে মেটাবলিক স্টিমুলেন্টস যেমন- বিউটাফসফেন, টলডিমফস ইত্যাদি। অতিদ্রæত গরুর শরীরে মাংস বৃদ্ধির জন্য ভিটামিনের পাশাপাশি টনিক জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে গরুর মাংসের গুণগত মানের কোনো ক্ষতি হয় না বা মাংস খাওয়ার ফলে মানুষের দেহে ক্ষতিকর কোনো প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না। এসব রাসায়নিক উপাদান সঠিক মাত্রায় ব্যবহার বিজ্ঞানসম্মত এবং স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ। তবে মাত্রাতিরিক্ত ফিড এডিটিভস, প্রিজারভেটিভস ও কনজারবেটিভস এর  মাধ্যমে প্রাণির মাংস ও মুরগির ডিমে ভেজাল ঢুকে পড়ে।
স্টেরয়েড হরমোন যেমন ডেক্সামেথাসন, ডাইথাইলস্টিলব্রেল, হেক্সাট্রল, জেরানল ইত্যাদি এক ধরনের জরুরি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। গরু মোটাতাজাকরণে এর ব্যবহার একটি বড় সমস্যা। দ্রুত গরুকে মোটাতাজাকরণের জন্য যেসব বাণিজ্যিক স্টেরয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় তা হল ডেক্সাভেট, ডেক্সাকট, জেকাসন, ওরাডেক্স, প্রিক্সোনল-এস, প্রেডনিভেট, প্রেডনিসলন  ইত্যাদি।


এছাড়াও পোলট্রি ডিম ও মাংস সাধারণত ফিডে দূষকের মাধ্যমে পোলট্রির মাংস ও ডিম তথা ফিডে ভেজাল মেশানো হয়। যেমন- ঝিনুকের গুঁড়ার মাধ্যমে ই. কোলাই/ সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। টাইলসের গুঁড়া লাইমস্টোনের সাথে মেশানোর ফলে পোলট্রি খাদ্য দূষিত হয়। ট্যানারি বর্জ্য বা মিট ও বোন মিলের লেড, ক্রোমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিকের উৎকৃষ্ট উৎস। ভুট্টা হলো পোলট্রি খাদ্য তৈরির সিংহ ভাগ অংশ দখল করে আছে। কিন্তু কালো ভুট্টা রোগজীবাণু তৈরির ডিপো হিসেবে কাজ করে। তেল বিহীন চালের কুড়া পোলট্রিকে খাওয়ানোর মাধ্যমে পোলট্রিতে নানাবিধ রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) এর কারণে, অতিরিক্ত ও সঠিক মাত্রায় ভেট. ওষুধ ব্যবহার করায় সুপারবাগ নামক পৃথিবী ধ্বংসকারী ব্যাধি আজ জেঁকে বসেছে। উত্তম মানের ওষুধের অভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ। উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতায় দক্ষ জনবল ও দক্ষতার বড় অভাব। অতিরিক্ত রোগ সংক্রমণ, রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে উপযুক্ত কৌশলের অভাব। দুর্বল রোগজীবাণু শণাক্তকরণ পদ্ধতি। খামার ও খামারিদের সাথে চিকিৎসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে শিশুসহ মানব স্থাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাণিসম্পদে নিষিদ্ধ উপকরণগুলো
জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে গবাদিপ্রাণি ও পোলট্রি খাদ্যে মানবস্থাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে উল্লিখিত উপকরণগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে-১. এন্টিবায়োটিক  ২. এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিডউ ৩. গ্রোথ হরমোন ৪. স্টেরয়েড ৫. ক্রোমিয়াম ৬.পেস্টিসাইড ৭. জিএম প্রোডাক্টস ৮. মাইকোটক্রিন ৯. ভারি ধাতু ১০. তেজস্ক্রিয় পদার্থ ১১. বিসমাথ ইত্যাদি।

 

নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ সরবরাহে করণীয়
প্রাণিজ শিল্পে এন্টিবায়োটিকসের ব্যবহার সম্পর্কিত তিনটি মূলনীতি অনুসারিত হলে এন্টিবায়োটিকসের প্রতি অহেতুক প্রতিরোধী ক্ষমতা সৃষ্টি করার মূল ফ্যাক্টরগুলো বহুলাংশে হ্রাস বা বিদূরিত করা যাবে। ১. মানুষের মারাত্মক সংক্রমণের ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য ব্যবহার্য ‘সর্বশেষ’ ধরনের এন্টিবায়োটিকস্ মানুষের খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতিপালিত পশুপাখি বা কৃষিতে ব্যবহার করা উচিত নয়। ২. পশুপাখির রোগ প্রতিরোধকল্পে এন্টিবায়োটিকসের ব্যবহার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধের পদ্ধতি (এন্টিবায়োটিকস ব্যতীত) উন্নয়ন ও বিস্তৃত করতে হবে। ৩. গ্রোথ প্রোমোটার হিসেবে এন্টিবায়োটিকস ব্যবহার পর্যায়ক্রমে পরিত্যাগ করতে হবে।


বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে পরিমাণ প্রোটিনের প্রয়োজন তার চাহিদা মেটানোর জন্য খামারিদেরকে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মীরা গরু মোটাতাজাকরণের কলাকৌশল সম্প্রসারিত করছেন। যদিও সরকার খুব সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে আমেরিকা থেকে ব্রাহমান জাতের যাঁড়ের বীজ আমদানি করে সরকার যদি বৈধভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পশু আমদানিসহ ‘বাংলাদেশ ও পশুজাত পণ্য সঙ্গনিরোধ আইন’ ২০০৫ (২০০৫ সনের ৬নং আইন) প্রয়োগ করে তবে এ সমস্যার সমাধান হবে।
 

যেহেতু গবাদিপশুতে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ মাংসের গুণাগুণ নষ্ট করে দেয় এবং মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাই মোটাতাজা করার জন্য গরুতে স্টেরয়েডের ব্যবহার মোটেই কাম্য নয়। ব্যবহৃত ওষুধ হতে পারে  কৃমিনাশক, ফিড এডিটিভ বা মেটাবোলিক স্টিমুলেন্টস।


এছাড়াও ১. প্রাণিসম্পদের খাদ্য ও ফিড এডিটিভের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা। ২.  ওষুধ, হরমোন, স্টেরয়েড ও তার রেসিডিউ এর গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা। ৩. বেসরকারি খাতে গুণগত মানসম্পন্ন পশুপাখির খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণ উৎপাদনের জন্য গবেষণাগার পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ প্রদান করা। ৪. প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহায়তা করা। ৫. প্রাণিসম্পদ হতে উৎপাদিত পণ্য ও উপজাতের রুটিন এনালাইসিস পরিচালনা করা। ৬. গুণগতমান সম্পন্ন পশুপাখির খাদ্য ব্যবহারে জনসচেতনতা তৈরি করা। ৭. এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে প্রচার- প্রচারণার মাধ্যমে জাতীয় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ৮. স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের কারিকুলামে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও এর প্রতিরোধী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৯. এক স্বাস্থ্য, এক বিশ^ সম্পর্কিত ধারণার অবতারণা করতে হবে (‘এক স্বাস্থ্যনীতি মিশনের’ মতে, মানব স্বাস্থ্য, প্রাণী স্বাস্থ্য ও বাস্তুসংস্থানের পরিবেশ একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল। ভেটেরিনারিয়ান, চিকিৎসক ও অন্যান্য পেশাজীবিদের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই মানুষ ও অন্যান্য প্রজাতির স্বাস্থ্যের উন্নতি করা সম্ভব যা ‘এক স্বাস্থ্যের’ লক্ষ্য)। ১০. জাতীয় রেফারেন্স গবেষণাগার স্থাপন করা প্রয়োজন। ১১. নতুন নতুন আবির্ভাবযোগ্য রোগ ও তার প্রতিরোধী হওয়া সম্পর্কে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি ও নির্ণয় করতে হবে। ১২. নতুন চিকিৎসা সম্পর্কে গবেষণা ও দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন। ১৩. উত্তম স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও আদর্শিক খামার পরিচালনার নীতি অনুসরণে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১৪. কোনো খামার স্থাপনের আগে মানসম্মত প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ১৫. প্রয়োজনীয় লাইসেন্সকৃত ওষুধের তালিকা ও আদর্শ চিকিৎসা নীতিমালা থাকতে হবে। ১৬. খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা  কৌশল প্রস্তুত করতে হবে। ১৭.  উত্তম কৃষি অনুশীলন চর্চা করা ভালো। ১৮. উত্তম শিল্প অনুশীলন ও উত্তম ব্যক্তিগত পরিচর্যা বাড়াতে হবে। ১৯. নিরাপদ খাদ্যে নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষণ ও নজরদারিতা বাড়াতে হবে। ২০. রোগব্যাধি মুক্ত খামার পরিচালনা করতে হবে। ২১. ইচ্ছামত ড্রাগ নিবন্ধন দেয়া যাবে না। ২২. ওষুধের প্যাকে উত্তম লেবেল, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোতীর্ণের তারিখ সুস্পষ্ট থাকতে হবে। ২৩. ওষুধের প্রত্যাহার কাল অবশ্যই মানতে হবে। ২৫. প্রাণিস্বাস্থ্য ও মানবস্বাস্থ্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ২৬. এন্টিমাইক্রোবিয়াল বা এন্টিবায়োটিক গ্রহণ বা ব্যবহারের আগে বিএমডিসি বা বিভিসি রেজিস্ট্যার্ড ডাক্তার এবং বিশেষজ্ঞের এর ব্যবস্থাপত্র নেয়া প্রয়োজন। ২৭. সংক্রামক রোগের (Infectious diseases) চিকিৎসায় যতদূর সম্ভব স্বল্প বর্ণালীর (Narrow spectrum) এন্টিমাইক্রোবিয়াল বা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা। ২৮. এন্টিমাইক্রোবিয়াল বা এন্টিবায়োটিক এর সঠিক মাত্রায় এবং পূর্ণ কোর্স ব্যবহার করা প্রয়োজন। এন্টিবায়োটিক অপর্যাপ্ত ব্যবহার অগজ এর অন্যতম কারণ। ২৯. অধিকাংশ ক্ষেত্রে জ¦র সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়া ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা ভালো। ৩০. প্রাণিসম্পদে বা মৎস্যে ওজন বর্ধক (Growth promoter) হিসেবে এন্টিবায়োাটিকের ব্যবহার দন্ডনীয় অপরাধ। ৩১. সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা প্রয়োজন এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ৩২. গবাদি পশু পাখির খামারের জীব নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ৩৩. নিয়মিত খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।


বিজ্ঞানীদের মতামত হচ্ছে, জীব নিরাপত্তা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা কঠোর করতে হবে এবং এর সাথে ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি, all-in all-out পদ্ধতি, বিভিন্ন বয়সী মুরগি স্বতন্ত্রভাবে প্রতিপালন, ভ্যাকসিন প্রদান মনিটরিং, সুষম খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদি অবশ্যই বৈজ্ঞানিক পন্থায় গৃহীত হতে হবে। আমাদের দেশের প্রাণিজ আমিষ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দেশিয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি (মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এসবের বিভিন্ন প্রোডাক্ট) বিদেশের বাজারে লোভনীয় সামগ্রী হিসেবে গৃহীত হবে এটাই আমাদের আন্তরিক কামনা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা, মোবাইল : ০১৭২৪১৪১৬৬২; ই- মেইল : fazlurahi@gmail.com