Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কাজু বাদাম সমৃদ্ধির হাতছানি

কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম

কাজু বাদাম একটি নাট (ঘঁঃ) বা বাদাম জাতীয় ফল। বৃক্ষ জাতীয় ফসলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজু বাদামের স্থান তৃতীয়। এর বীজ থেকে পাওয়া বাদাম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়েও মূল্যবান। বাদামের উপরের অংশের ফল থেকে জুস, ভিনিগার এবং অ্যালকোহল তৈরি করা যায়। তাছাড়া বাদামের খোলসের তৈল শিল্প কাজে ব্যবহৃত মূল্যবান দ্রব্য। আমাদের দেশের জলবায়ু কাজু বাদাম চাষের জন্য বেশ সহায়ক। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে কাজু বাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা এখানে অল্প মূল্যে প্রচুর জমি পাওয়া যায়, যেখানে কাজু বাদাম চাষের উপযুক্ত আবহাওয়াও রয়েছে। আরও একটু যতœবান হলে অর্গানিক কাজুু বাদাম উৎপাদন করা খুবই সম্ভব যা রফতানিযোগ্য এবং এর বাজারমূল্যও অনেক।
কাজু বাদামের ইতিহাস
আজ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং উদ্যান উন্নয়ন বিভাগ (কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ) সমন্বয়ে পার্বত্য এলাকায় কৃষকের উন্নয়নের জন্য প্রচুর পরিমাণে অন্যান্য ফলের চারা/কলমের সাথে কাজু বাদামের চারা সরবরাহ করে থাকে। কালের চক্রে কাজু বাদাম গাছ বড় হয়ে ফল দিতে থাকে। কিন্তু কাজু বাদামের বিক্রি, বাজারজাত করা বা প্রক্রিয়াজাত করার কোন প্রকার ব্যবস্থা তেমন ছিল না। শুধু রাঙ্গামাটিতে দেশীয় পদ্ধতিতে স্বল্প কিছু কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করা হতো। তবে বিপুল পরিমাণ কাজু বাদাম অবিক্রীত থেকেই যেত। লোকসান বিধায়  কাজু বাদামের প্রতি কৃষকগণ অনীহা প্রকাশ করে এবং অনেকে  প্রতিষ্ঠিত  বাগানের গাছ কেটে ফেলে। পরবর্তীতে কিছু রপ্তানিকারক ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে স্বল্প পরিমাণে কাজু বাদাম রপ্তানি করতে থাকে। লেখক  রুমা এবং থানচি উপজেলার দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজু বাদামের বিক্রি, বাজারজাত করা বা প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে মনোযোগ দেন। এ ব্যাপারে বিগত ২৫/৯/২০১৬ সালে থানচিতে বাণিজ্য  মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মশালার ব্যবস্থা করেন। এতে লেখক প্রধান আলোচক হিসাবে পেপার উপস্থ্াপন করেন। এর ফলে পরবর্তী মৌসুমে কৃষকগণ আগ্রহ সহকারে কাজু বাদাম সংগ্রহ ও সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এতে কাজু বাদামে বাজারমূল্য অনেক বেশি হয় এবং উৎপাদনকারীগণ বিপুল পরিমাণে আর্থিকভাবে লাভবান হন। বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ কাজু বাদাম সমিতি লিমিটেড আধুনিক ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠার  চেষ্টা করছেন। আশা করা যায়, অচিরেই এদেশের প্রক্রিয়াজাতকৃত  কাজু বাদাম জনগণ খাওয়ার সুযোগ পাবেন।
কাজু বাদামের পুষ্টি গুণ : খাদ্য মানের দিক দিয়ে কাজু বাদাম অতি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর। এ বাদামে শতকরা ২১ ভাগ আমিষ, ৪৭ ভাগ ¯েœহ, ২২ ভাগ শর্করা, ২.৪ ভাগ খনিজ পদার্থ, ০.৪৫ ভাগ ফসফরাস, ০.৫৫ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামে ৫ মিলিগ্রাম লৌহ ৭৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ১১০ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লোবিন রয়েছে। প্রচুর শর্করা, আমিষ, ¯েœহ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিনসহ অন্যান্য উপকারী অনেক ফাইটো ক্যামিক্যালস রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্যের জন্য কাজুবাদাম নিম্নের কাজগুলি করে থাকে।
১। হৃৎপিন্ডের শক্তিদায়ক; ২। হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্যে করে; ৩। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে; ৪। হজমে সাহায্যে করে;                                     ৫। চুলের উপকার করে; ৬। পিওথলি/কিডনি পাথর তৈরিতে বাধা দেয়; ৭। ভালো ঘুম আনয়ন করে; ৮। ¯œায়ুতন্ত্রকে সুস্থ সবল করে; ৯। বøাড প্রেসার কমায়; ১০। ডায়বেটিস রোগীর জন্য  উপকারী; ১১। রক্ত শূন্যতা কাজ করে; ১২। অবসাদ দূর করে ইত্যাদি।  
কর্মসংস্থানের  ব্যবস্থা
কাজু বাদামের চাষে, ফল সংগ্রহে ও প্রক্রিয়াজাতকরণে অনেক লোকের প্রয়োজন হয়। পাহাড়ি এলাকায় জনগণের  সরকারি/বেসরকারি পর্যায়ে তেমন কোন চাকুরীর সুযোগ নেই। কিন্তু  কাজু বাদাম চাষে, ফল সংগ্রহে এবং  প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণে প্রচুর লোকের প্রয়োজন হয়। সাথে সাথে বেকার জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।         
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
বর্তমান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্যের তালিকায় বৃক্ষ জাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজু বাদামের স্থান   তৃতীয়। আর বাদামজাতীয় ফসলে কাজু বাদাম প্রথম স্থানে রয়েছে। আমাদের দেশের কথা চিন্তা করলে দেখতে পাই, সাধারণ কৃষকগণ কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলেও শুধু বাদাম বিক্রি করে টন প্রতি যার মূল্য প্রায় ১,০০,০০০/- থেকে ১,২০,০০০/- টাকা পেয়ে থাকেন। তবে এর বাজার বেশ পরিবর্তনশীল।
পাহাড়ি অঞ্চলে কাজু বাদামের উন্নয়ন সম্ভাবনা
কাজু বাদাম চাষের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া হলো, গড়ে ২৫ সেন্টিগ্রেড থেকে ২৭ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা, ১০০০ মিমি. থেকে ২০০০ মিমি. বার্ষিক বৃষ্টিপাত, ৫০০-১০০০ মিটার সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং বন্যামুক্ত অ¤øীয় বালু বা বালু দোঁআশ মাটি। এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করলে কাজু বাদাম চাষের উপযুক্ত জমি এ পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় নভেম্বর থেকে প্রায় এপ্রিল/মে মাস পর্যন্ত সাধারণত কোন বৃষ্টিপাত হয় না। অর্থাৎ ৫/৬ মাস পাহাড়ি ভ‚মি বৃষ্টিবিহীন অবস্থায় থাকে। আবার সেখানে সেচ দেয়ার তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই। মার্চ এপ্রিল মাসে প্রচÐ খরা এবং গরম হাওয়া বিদ্যমান থাকে। সে অবস্থায়ও কাজু বাদাম বেশ ভালো ফলন দিয়ে থাকে। আবার স্বল্প মূল্যের জমি এবং কর্মঠ শ্রমিক প্রাপ্যতা এখানে রয়েছে। তাছাড়া এখানে বসবাসকারীগণ খুবই কর্মঠ ও পরিশ্রমী। এ জনবলকে কাজে লাগাতে পারলে কাজু বাদাম চাষে আরো             সুবিধা হবে। তাছাড়া এখানকার মানুষ আগে থেকে কাজু বাদাম চাষের অভিজ্ঞতা রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় কাজু বাদাম স্বল্প পরিচর্যায় পাহাড়ি পতিত জমিতে ফলন দিয়ে থাকে। সামান্য পরিচর্যা করা হলে এক হেক্টর থেকে ১.৫ থেকে ১.৮ টন কাজু বাদাম পাওয়া সম্ভব।
অর্গানিক কাজু বাদাম চাষের গুরুত্ব
ইদানীং দেখা যায়, আগের তুলনায় মারাত্মক রোগ যেমন- ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, বøাডপ্রেসার, কিডনি, লিভারসহ শারীরিক সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞের মতে এগুলোর অনেক কারণ থাকলেও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যসহ বালাইনাশকের অপব্যবহার একটি প্রধান কারণ। আমরা কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার যত কমাতে পারব ততই মানব স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকার হবে। বিগত কয়েক দিন আগে মন্ত্রী পরিষদ সভায় বাংলাদেশে জৈব কৃষিনীতি অনুমোদন করেছে। আমরা অন্যান্য ফল ফসলের মতো কাজু বাদাম উৎপাদনে জৈব কৃষি নীতি পালন করে, এদেশে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও ভালো দামে বিক্রির সুযোগ পাবো। আর আন্তর্জাতিক বাজারেও অর্গানিক ফসলের চাহিদা তো দিন দিন বাড়ছেই।
রপ্তানি             
কাজু বাদাম আমাদের দেশে উৎপন্ন হলেও প্রক্রিয়াজাত করার অভাবে খোসাসহ বাদাম বিদেশে রপ্তানি করতে হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত আমাদের দেশের কাজু বাদাম আমদানি করে থাকে। তবে আধুনিক মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করা হলে বাদামের বাণিজ্যিক মূল্য বেড়ে যায়। যদি  আধুনিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তবে আমরাই আবার আকর্ষণীয় মূল্যে কাজু বাদাম বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। এতে দেশের যেমন অতিরিক্ত বৈদিশিক মুদ্রা উপার্জন হবে সাথে সাথে এখানে কর্মসংস্থানের উন্নতি  হবে।
মানসম্পন্ন কাজু বাদাম উৎপাদন ও সংরক্ষণ ঠিক মতো করতে না পারলে কাজু বাদামের ভালো মূল্য পাওয়া যায় না। মানসম্পন্ন কাজু বাদাম চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নি¤œরূপঃ
উন্নত জাতের বাদামে চারা লাগানো : কাজু বাদামের আকার ছোট বড় ও মাঝারি আকারে হয়ে থাকে। কাজু বাদামের বাগান করা সময় অবশ্যই মানসম্পন্ন, উন্নত জাতের চারা ব্যবহার করতে হবে। যে জাতে বড় আকারে বাদাম হয় এবং ফলন ভালো হয় এমন গুণসম্পন্ন বাদামের গ্রাফটিং চারা লাগাতে পারলে সব চেয়ে ভালো। তা না হলে বড় আকারে বাদাম হয় এবং ফলন বেশি হয় এমন মার্তৃগাছ নির্বাচন করে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। সে বীজ দ্বারা চারা করে গাছ লাগাতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে ১ কেজি কাজু বাদামে ১৮০টি বীজ হলে গ্রেড-অ এবং ১৮১ থেকে ২১০টি বাদামে ১ কেজি হলে গ্রেড- ই এবং ১ কেজিতে ২১০ এর বেশি হলে গ্রেড- ঈ, যার মূল্য অনেক কম। তাই অবশ্যই বড় আকারে বাদাম হয় এমন চারা লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আগাছা পরিষ্কার করা : সঠিকভাবে বাগান পরি”র্যা করার জন্য বাগান অবশ্যই আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এতে পোকামাকড়সহ রোগবালাই অনেক কম হয়। আবার মানসম্পন্ন ফসল সংগ্রহে সুবিধা হয়।
সার ব্যবস্থাপনা : সার হলে গাছের খাবার। কাজু বাদাম যদিও মাঝারি মানের উর্বর জমিতে  হয়। কিন্তু ভালো ফলন পেতে হলে জৈবসার, ইউরিয়া, টিএসপি/ডিএপি, এমওপি, জিংক ও বোরন সার পরিমিত মাত্রাই প্রয়োগ করতে হবে।
বালাই ব্যবস্থাপনা ও সেচ ব্যবস্থাপনা : এখানে কাজু বাদামে মারাত্মক তেমন কোন রোগবালাই দেখা যায় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। কাজু বাদাম শুকনা আবহাওয়াতেও ফল দিতে পারে তবে শুকনা মৌসুমের সেচ দিতে পারলে ফলন প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সঠিক সময়ের কাজু বাদাম সংগ্রহ করা : সাধারণত আমাদের দেশে মে-জুন মাসে কাজু বাদাম পরিপক্ব হয়। পরিপক্বের পরপরই এ বাদাম সংগ্রহ করতে হয়। পরিপক্ব হলে বাদাম গাছ থেকে পড়ে যায়। কাঁচা অবস্থায় এ বাদামের ফল থেকে বাদামটি বেশ বড় এবং নরম থাকে। পাকার সময়  বাদামটি ছোট এবং  পরিপুষ্ট হয়। তখনই বাদাম সংগ্রহ করতে হবে। অপরিপক্ব বাদাম থেকে কখনও ভােলা মানসম্পন্ন কাজু বাদাম পাওয়া সম্ভব নয়।
সঠিকভাবে শুকানো ও সংরক্ষণ : এদেশে কাজু বাদাম সংগ্রহের সময় সাধারণত মে থেকে জুলাই মাস। এ সময় আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বাতাসে আর্দ্রতা থাকেও প্রচুর। কাজু বাদাম তৈলাক্ত জাতীয় ফসল। বাদামটিকে প্রচুর আর্দ্রতাসহ গুদামজাত করা হলে  ভিতরে বাদাম বা কার্নেল অতি দ্রæত নষ্ট হয়ে যায়। বাদামে উপরের রং ও নষ্ট হয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও এর মূল্য অনেক কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে রপ্তানি করা যায় না। তাই ফসল সংগ্রহের পর পরই বাদামগুলো ভালভাবে গুকানো প্রয়োজন।
শুকনা বাদামগুলো বায়ুরোধক বস্তায় সংরক্ষণ করা উচিত। সঠিকভাবে গুদামজাত করা হলে বাদামের গুণাগুণ ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
কাজু বাদামের ফেক্টরি স্থাপন
আন্তর্জাতিক বাজারে কাজু বাদামের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমাদের দেশে প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন  কাজু বাদাম উৎপন্ন হলেও প্রক্রিয়াজাত করার অভাবে খোসাসহ বাদাম বিদেশে রপ্তানি  হয়ে যায়। অন্য দিকে আমাদের প্রয়োজনে  আবার বেশি দামে কাজু বাদাম আমদানি করে থাকি। এক কেজি প্রক্রিয়াজাত করা কাজু বাদামের মূল্য প্রায় ১২০০/- থেকে ১৮০০/- টাকা। এক কেজি প্রক্রিয়াজাত করা বাদাম পেতে প্রায় ৩.৫ -৪ কেজি খোসাসহ কাজু বাদামের প্রয়োজন হয়। এর দাম প্রায় ৩০০-৪০০/- টাকা। তবে আমাদের দেশে বিছিন্ন ভাবে দেশীয় এবং প্রাচীন পদ্ধতিতে কিছু কিছু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করা হলেও এ গুলোর গুণগত মান তেমন ভালো নয়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা একেবারে নেই। তবে  আধুনিক মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করা হলে বাদামের বাণিজ্যিক মূল্য অনেক বেড়ে যায়। তখন  আমাদের প্রয়োজন মিটায়ে আমরাই আবার আকর্ষণীয় মূল্যে কাজু বাদাম বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। এতে দেশের যেমন বৈদিশিক মুদ্রা উপার্জন হবে সাথে সাথে এখানে কর্মসংস্থানেরও উন্নতি  হবে।  
বর্তমানে কাজু বাদামের সমস্যাবলী এবং সম্ভাব্য সমাধান  
ি    আমাদের দেশে যে কাজুবাদামের চাষাবাদ হচ্ছে তা তেমন উন্নত জাতের নয়।
ি    ভারত, ভিয়েতনামে গবেষণা করে বেশ উন্নত জাতের কাজু বাদামের জাত উদ্ভাবন করেছে যেগুলোর ছোট ছোট গাছে তাড়াতাড়ি ফলন দেয়। আর ফলনও হয় প্রচুর এবং আকারেও বড়। সেগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য অনেক বেশি।
ি    উন্নত জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) কার্যকরি ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।
ি    স্থানীয় জাতগুলোর উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেয়া যেতে পারে।
ি    ভারত, ভিয়েতনামের যে স্থানে কাজু বাদাম চাষ হয় সেখানকার আবহাওয়া বাংলাদেশের অনুরূপ। বর্তমানে জরুরিভিত্তিতে সেসব উন্নত জাতের জার্মপ্লাজম আমদানি করে স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উপযোগিতা যাচাই করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে পাহাড়ি এলাকার কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরি ভ‚মিকা রাখতে পারে।
ি    বর্তমান জাতগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদেরকে বাগান ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে।
ি    উন্নত বাজার ব্যবস্থাপনার লিংকেজ (উৎপাদক, পাইকার, প্রসেসর/এক্সপোর্টার) জোরদার করতে হবে।
ি    অনাবাদি ও সাময়িক পতিত জমিগুলো কাজু বাদাম চাষের আওতায় নিয়ে আসা।
ি    কাজুবাদাম পচনশীল নয় বিধায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে পচনশীল ফলের চাষের পরিবর্তে কাজুবাদাম চাষের আওতায় নিয়ে আসা।
সমাধানের উপায়
কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাত ফ্যাক্টরি স্থাপন হলে বাদাম ছাড়াও আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য পাওয়া যায়।
১। কাজু জুস : কাজু বাদামের উপরে কাজু ফল বা আপেল থাকে। এ আপেলে প্রায় ৮০ শতাংশ জুস থাকে, যা অনেক ঔষধিগুণ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং কমলা লেবুর চেয়ে ৬ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। কাজু থেকে উৎপাদিত কাজু জুস দিয়ে দেশের মানুষের পুষ্টিহীনতা দূর করা যায়।।
২। ঈঘঝখ : কাজু বাদাম শেল বা খোসা থেকে উৎপাদিত তেল দিয়ে উৎকৃষ্টমানের জৈব বালাইনাশক উৎপাদন করা যাবে, যা নিরাপদ ফসল এবং খাদ্য উৎপাদনে অত্যন্ত জরুরি। অপরদিকে মানবদেহ এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক কীটনাশক আমদানি করতে হবে না বরং আমদানি প্রতিহত করে শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে। বাদামের খোসার তৈল শিল্প কাজে ব্যবহৃত মূল্যবান দ্রব্য। পেইন্টিং ফ্যাক্টরির মূল্যবান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৩। জৈবসার : কাজু আপেল থেকে জুস বের করে নেয়ার পর যে মন্ড বা ছোবরা হবে তা দিয়ে হাজার হাজার টন মাটির প্রাণ উত্তম জৈবসার উৎপন্ন হবে। ঠিক একইভাবে শেল বা খোসা থেকেও তেল বের করে নেয়ার পর যে খৈল হবে তা দিয়েও হাজার হাজার টন জৈবসার হবে। য়
অতিরিক্ত পরিচালক (অব.), ডিএই ও সাবেক পরিচালক এআইএস, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৫১১১৪৮৬, ই-মেইল :subornoml@yahoo.com