Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দার্জিলিং কমলা বাংলাদেশে আবাদের সূচনা ও সফলতা

দার্জিলিং কমলা বাংলাদেশে আবাদের সূচনা ও সফলতা
কৃষিবিদ রাজেন্দ্র নাথ রায়
২০১২ সালের কথা। পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমাপ্তকৃত কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের কিছু দার্জিলিং জাতের কমলার চারা হর্টিকালচার সেন্টার, ঠাকুরগাঁও এ অতিরিক্ত ছিল। তখন হর্টিকালচার সেন্টার থেকে অনেকটা উদ্বুদ্ধ করেই পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের আগ্রহী কৃষক আবু জাহিদ ইবনে নূর জুয়েলকে দেয়া হয়। হর্টিকালচার সেন্টার কর্তৃপক্ষের কথামতো জুয়েল সাহেব তার ৩ একর ধানের জমির আইলগুলোতে ৩০০টি দার্জিলিং জাতের কমলার চারা রোপণ করলেন। সঠিক পরিচর্যার কারণে রোপণের ৩ বছর পর থেকেই গাছগুলো ফল দেয়া শুরু করল। ৭-৮ বছর পরেই তার বাগানের কমলা মানুষের আকর্ষণ বিন্দুতে পরিণত হলো। বর্তমানে, ১০ বছর পরে প্রত্যেকটি গাছে থোকায় থোকায় প্রায় ৮০০-৯০০টি কমলা ধরেছে। কমলাগুলো বেশ বড় আকৃতির, এক কেজিতে ৫-৬টি অর্থাৎ প্রত্যেকটির ওজন ২০০-২৫০ গ্রাম। কমলাগুলো সুমিষ্ট, তবে গাছ থেকে পাড়ার ২-৩ দিন পরে খেলে বেশি মিষ্টি হয়। কমলার কোয়াগুলো ঠোঁটের মতো রসালো টসটসে, তাই খুবই আকর্ষণীয়। তাছাড়া, কমলার আঁশ কম হওয়াতে খোসা খুব সহজে ছাড়ানো যায়। প্রথমদিকে জুয়েল সাহেব কমলাগুলো বাজারে বিক্রি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। ২০২০ সালে, মৌসুমের শুরুতে (নভেম্বর মাসে) ২০০ টাকা/কেজি দরে বিক্রি শুরু করলেও, পরে দাম কমে ১২০ টাকা/কেজি হয়। কিন্তু ২০২১ সালে মৌসুমের শুরুতে ২০০ টাকা/কেজি দরে বিক্রি শুরু করে চারিদিকে এই কমলার খ্যাতির জন্য দাম বেড়ে হয় ২৫০ টাকা/কেজি। প্রতিদিন প্রায় ২০০০ জন মানুষ তার বাগানের কমলা দেখতে আসেন। তিনি বর্তমানে, কমলা বাগানটি কৃষি-পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করছেন। জুয়েল সাহেব বর্তমানে দার্জিলিং এই কমলার ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি ইতোমধ্যে ২০০০টি অরিজিনাল কমলার চারা উৎপাদন করেছেন। তার মতে, যেহেতু উত্তরাঞ্চলে হিমালয়ের পাদদেশে সমতল ভূমি রয়েছে, তাই দার্জিলিং কমলা উত্তরাঞ্চলে হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। 
কৃষি অফিসারের মতে, উত্তরাঞ্চলের মাটির পিএইচ অম্লমান হওয়ায় এবং হিমালয়ের শীতার্ত   আবহাওয়া বিরাজমান থাকায় ভারতের দার্জিলিং জাতের কমলার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের পক্ষ থেকে লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের সহযোগিতায় জুয়েল কৃষককে পুরাতন বাগান পরিচর্যার জন্য সার, বাডিং নাইফ, সিকেচার, ফেরোমন ফাঁদ, মালচিং বাবদ টাকা ও এক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।       
উদাহরণস্বরূপ নীলফামারী সদরে ২০১৩ সালে এ আর মামুন নার্সারির মালিক লেবু মিয়া সরাসরি দার্জিলিং এর ছিটং থেকে দার্জিলিং কমলার চারা নিয়ে এসে ১৬ শতকের একটি কমলা বাগান সদর, নীলফামারীতে স্থাপন করেন। ২০১৮ সাল থেকে বাগানটিতে পুরোদমে কমলা উৎপাদন হচ্ছে। সুমিষ্ট, রসালো ও আকর্ষণীয় এই কমলা ইতোমধ্যে নীলফামারীতে সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে লেবু মিয়া অরিজিনাল দার্জিলিং কমলার চারা উৎপাদন করে বিক্রয় করছেন। এ ছাড়াও লালমনিরহাট সদরে শোভাবর্ধন নার্সারির মালিক একরামুল হক ২০১৯ সালে যশোর থেকে দার্জিলিং কমলার ২০০টি চারা এনে লালমনিরহাট সদরে ৬ একরের একটি কমলা+মাল্টা মিশ্রবাগান করেন। মাত্র ২.৫ বছরেই গাছগুলো অনেক বড় হয় এবং ফল ধরে। প্রতিটি গাছে ২৫০-৩০০টি কমলা ধরেছে। 
তবে তার কমলাগুলোর রস একটু কম, কিন্তু বড় আকারের ও সুমিষ্ট। তিনিও দার্জিলিং কমলার চারা তার নার্সারির মাধ্যমে বিক্রয় করছেন।
দার্জিলিং কমলা বাগান স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য কয়েকটি বিষয়, যেমন : দেশের উত্তরাঞ্চল দার্জিলিং কমলার জন্য বেশি উপযোগী। অরিজিনাল দার্জিলিং কমলার চারা হতে হবে। কমলার চারা সঠিক পদ্ধতিতে রোপণ করতে হবে ও চুন দিতে হবে। 
সানবার্ন কমাতে বাগানে শেড ট্রি দিতে হবে; কমলায় রস হওয়ার জন্য শীতকালেও ফ্লাডিং পদ্ধতিতে সেচ দিতে হবে; বাগানের ওয়াটার সাকার নিয়মিতভাবে ছাঁটাই করতে হবে; কমলার ফ্রুট ফ্লাই দমনের জন্য ইস্পাহানির ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে; বছরে কমপক্ষে ৩ বার সার দিতে হবে, মিষ্টতা বাড়ানোর জন্য প্রচুর জৈবসার দিতে হবে; স্ক্যাবিস রোগ দমনে গাছে নিয়মিতভাবে বোর্দো মিক্সচার দিতে হবে। য়লেখক : উপজেলা কৃষি অফিসার, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও। মোবাইল: ০১৭১৭৫২৭৩৬১, ই-মেইল: royrazen.dae@gmail.com