Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাটিতে জৈব পদার্থ সরবরাহে ফসলভেদে সবুজসার

মাটিতে জৈব পদার্থ সরবরাহে ফসলভেদে সবুজসার
নাহিদ বিন রফিক
এক বিশেষ ধরনের ফসল জমিতে চাষ করে নির্দিষ্ট বয়সে সবুজ ও নরম অবস্থায় মাটিতে মিশিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে সবুজ সার বলে। আর যে উদ্ভিদ এ ধরনের সার সরবরাহ করে তাকে বলা হয় সবুজসার ফসল। এ জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে ধৈঞ্চা, শনপাট, মাশকালাই, কাউপি, বরবটি, খেসারি, মসুর, শিম, মুগ অন্যতম। বর্তমানে দেশি ধৈঞ্চার পাশাপাশি আফ্রিকান ধৈঞ্চার চাষ হয়, যার শিকড়ে রাইজোবিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়ার নডিউল বা গুঁটি তৈরি করে। এ ধরনের গুঁটি কা-েও দেখা যায়।  ধৈঞ্চা, বীজ ও কা-ের সাহায্যে বংশবিস্তার করে। আর তা ভেজা ও শুকনো উভয় মাটিতে বছরের  যেকোনো সময় রোপণ করা সম্ভব। সবুজসার এক প্রকার জৈবসার। লিগিউম কিংবা লিগিউম নয় উভয় প্রকার উদ্ভিদ দ্বারা সবুজসার তৈরি করা যায়।
সবুজসার ফসলের বৈশিষ্ট্য : দ্রুত বর্ধনশীল। অপেক্ষাকৃত অনুর্বর মাটিতেও ভাল জন্মে। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। সাময়িক খরা কিংবা জলাবদ্ধতা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। সহজেই মাটিতে মেশানো যায়। মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে। শিমজাতীয় উদ্ভিদ দ্বারা তৈরি সবুজসার এ রাইজোবিয়াম নামক ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে শিকড়ে নডিউল তৈরি করে, যা নাইট্রোজেন ধরে রাখে।
উপকারিতা : সবুজসার জৈব পদার্থ যোগ করে মাটিকে উর্বর করে এবং মাটির ভৌত গুণাবলীর উন্নতি সাধন করে। অধিকাংশ সবুজসার ফসল লিগিউমজাতীয়। তাই সহজেই রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার সহায়তায় বায়ুম-লের নাইট্রোজেনকে শিকড়ের নডিউলে জমা করতে পারে। গাছ জীবিত অবস্থায় তা নিজেই গ্রহণ করে। তবে মারা যাওয়ার পর জমাকৃত নাইট্রোজেন মাটির সাথে মিশে যায়, ফলে পরবর্তী আবাদি ফসলে নাইট্রোজেন সার অনেক কম লাগে। সবুজসার ফসল গভীরমূলী হলে মাটির গভীর স্তর থেকে খাদ্যোপাদান পরিশোষণ করার পর মাটির উপরিভাগে এনে দেয়। জৈব পদার্থ যোগের মাধ্যমে সবুজসার মাটির অভ্যন্তরের উপকারী অনুজীবের বংশবিস্তারসহ এদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। জমির খাদ্যোপাদানসমূহকে সংরক্ষণ করে। সবুজসার জৈব পদার্থ বিয়োজনের সময় উৎপাদিত জৈব এসিডে ফসফরাসের প্রাপ্যতা বাড়ায়। জমিতে আর্দ্রতা বৃদ্ধি অবস্থা বা ‘জো’ বজায় রাখতে সাহায্যে করে। বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায় এবং মাটিতে বাতাস চলাচলে সাহায্যে করে। ভূমিক্ষয় রোধ করে। ফসল বিন্যাসের ক্ষেত্রে সবুজসার ফসল সহজেই খাপখাইয়ে নেয়। দ্রুত বৃদ্ধি হওয়ায় আগাছা ও অন্যান্য গাছপালা বৃদ্ধি হতে পারে না ফলে আগাছা দমনেও সহায়তা করে।
মাটিতে মেশানোর পদ্ধতি : সবুজসার ফসল যে জমিতে জন্মানো হয়, সাধারণত সে জমির মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। অথবা মেশিনের মাধ্যমে চাষাবাদ করে মেশানো যেতে পারে। তবে এক জমিতে জন্মিয়ে অন্য জমিতে স্থানান্তর করেও মেশানো যায়। গাছের রঙ সবুজ থাকতেই অর্থাৎ কচি অবস্থায় কেটে টুকরো টুকরো করে প্রথমে মই দিয়ে পরে চাষ দিতে হবে অথবা মেশিনের মাধ্যমে চাষাবাদ করে মেশানো যেতে পারে। মেশানোর সময় জমিতে ছিপছিপে পানি থাকা উত্তম। কারণ এতে পচনক্রিয়া দ্রুত হয়। তবে লিগিউম জাতীয় উদ্ভিদ যেমন-রেইন্ট্রি, ইপিল-ইপিল, গ্লিরিসিডিয়া প্রভৃতির পাতা জমিতে বিছিয়ে দিয়ে চাষ দিলেই হবে।
জৈবসার হচ্ছে মাটির প্রাণ, যার উৎস হিসেবে সবুজসার ফসলের ভূমিকা অনন্য। অধিক পরিমাণে সবুজসার ফসল চাষ করে জমিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ এবং উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এতে একদিকে ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।লেখক : টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বরিশাল, মোবাইল নম্বর: ০১৭১৫৪৫২০২৬,  ই-মেইল:tpnahid@gmail.com