Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ছাদ বাগানে সবজি চাষ

ছাদ বাগানে সবজি চাষ
কৃষিবিদ মোঃ শামীম সেখ
ছাদবাগান হচ্ছে মানব সৃষ্ট সবুজ আচ্ছাদন টবে বা ড্রামে রোপণকৃত গাছ। যা কোন আবাসিক, বাণিজ্যিক বা  কলকারখানার ছাদে করা হয় ফলে শহুরে কৃষি নামক এক নতুন শব্দ আমাদের শব্দ ভান্ডারে যুক্ত হচ্ছে। ছাদ কৃষির শুরটা সৌখিন। বাণিজ্যিক উৎপাদন অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্ভব না হলেও ধীরে ধীরে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শহরাঞ্চলে পারিবারিক বাগানে সবজি চাষ এখন আর কেবল সৌখিনতা নয় বরং পারিবারিক প্রয়োজন। সবজিতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা মানবদেহের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণ জোগান দিয়ে থাকে। খাদ্যোপযোগী সবজিতে জলীয় অংশ, আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ও খাদ্যশক্তি থাকে। এ নিবন্ধে ছাদ বাগানে সারাবছর চাষাবাদ করা যায় এমন সবজি চাষ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
লাউ
লাউ ছাদ বাগানে সারা বছর চাষাবাদ করা যায়। হাইব্রিড জাতের হাজারি লাউ, বারি লাউ-৪, ডায়না, হাই গ্রিন, নাইস গ্রিন, ময়না, রওনক, সুপার, গ্রিন ম্যাজিক, সুলতান, নবাব, স¤্রাট, বাদশাহ, মধুমতি জাতগুলো মোটামুটি ছাদ বাগানের জন্য উপযোগী। বর্তমানে ছাদবাগানীদের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির ছোট ছোট বীজের প্যাকেট পাওয়া যায়। তবে ছাদবাগানে চাষের জন্য হাইব্র্রিড জাত উত্তম। 
চারা তৈরি ও রোপণ
প্রথমে বীজ রোদে শুকিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরপর ১০-১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। শেষ ১০ মিনিট ২ গ্রাম/লিটার পানিতে কার্বেন্ডাজিম দিয়ে শোধন করে নিতে হবে এর পর বীজগুলো ভিজা কাপড়/ টিস্যুতে  পেঁচিয়ে বীজ ফেটে শেকড় বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে কাপড় বা টিস্যু যেন সব সময় ভেজা থাকে। বীজ ফেটে শেকড় বের হলে তা পটে/টবে বপন করতে হবে। সাধারণত অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক জৈবসার, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি, ২০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া মিশ্রিত মাটি দিয়ে পট ভর্তি করতে হবে। প্রতি পটে ২-৩টি বীজ বপণ করতে হবে। চারা একটু বড় হলে দুটি চারা রেখে অবশিষ্ট চারা উপরে ফেলতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা 
চারা একটু বড় হয়ে মাচার উপর উঠলে লাউয়ের ডগা কেটে ফেলতে হবে। যাতে পাশ থেকে ডগা বের হতে পারে। দ্বিতীয় বার বের হওয়া ডগার মাথা আবারো ৯-১০ পাতা বের হবার পর কেটে ফেলতে হবে। তবেই স্ত্রী ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। মাছি পোকা, পাতা ছিদ্রকারী পোকা, সাদা মাছি, জাবপোকা, থ্রিপস  পোকা ইত্যাদি শোষক পোকার আক্রমণে লাউ গাছে মোজাইক ভাইরাস হতে পারে। গাছের পাতা কিছুটা কুঁকড়ে যায় ও  হলুদ-সবুজ ছোপ ছোপ দেখায়। ফলের রং ও আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। এ রোগ প্রতিকার সম্ভব নয়, তাই গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। বাহক পোকা দমন করার জন্য ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর জৈব বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে। যেমন নিমতেল, সাবান পানি, তামাক পাতা ভিজানো পানি ইত্যাদি। এ ছাড়াও মাছি পোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফেরোমন ফাঁদ টানিয়ে দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ছাদ বাগানের লাউগাছের গোড়ার মাটি কোনোভাবেই আলগা করা যাবে না এবং খুব সকালে ও বিকেলে মাটির উত্তাপ কমে গেলে গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। লাউ গাছে ডাউনি মিলডিউ এবং পাউডারি মিলডিউ রোগ দেখা যায়। তবে শোষক পোকা নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে পারলে এর আশঙ্কা অনেক কমে যায়। যদি এ ধরনের রোগ দেখা দেয় তবে সালফার আছে এমন ছত্রাকনাশক ১০ থেকে ১৫ দিন ব্যবধানে দুইবার ¯েপ্র করলে পরবর্তীতে আক্রান্তের হার কমে যায়।
শিম   
জুলাই-আগস্ট মাসে শিমের বীজ বপনের উত্তম সময় তবে প্রজাতিভেদে ছাদবাগানে সারা বছর শিম চাষ করা যায়। বারি শিম ৭, বারি উৎপন্ন বারোমাসি বেগুনী শিম, বিইউ শিম ৩, ইপসা শিম ১, ইপসা শিম ২ সারা বছর চাষ করা যায়। তবে খাটো জাতের শিমগুলো ছাদ বাগানের জন্য বেশি উপযোগী।
চারা তৈরি ও রোপণ
শিমের চারা তৈরির জন্য বীজ ১০-১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। এর পর বীজগুলো ভেজা কাপড়/ টিস্যুতে  পেঁচিয়ে বীজ ফেটে শেকড় বের হওয়া পর্যন্ত  অপেক্ষা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন কাপড় বা টিস্যু সব সময় ভেজা থাকে। বীজ ফেটে শেকড় বের হলে তা পটে/ টবে  বপন করতে হবে। সাধারণত অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক জৈবসার ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি, ২০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া মিশ্রিত মাটি দিয়ে পট ভর্তি করতে হবে। প্রতি পটে ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। চারা একটু বড় হলে তিনটি চারা রেখে বাকি চারা উপড়ে ফেলতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা
চারা একটু বড় হয়ে মাচার উপর উঠলে গাছ ঝোপালো করার জন্য মাথা থেকে সামান্য একটু ছেঁটে দিতে হবে। শিমের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হলো ফল ছিদ্রকারী পোকা, থ্রিপস পোকা ও জাবপোকা। চারা অবস্থায় পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা মারাত্মক ক্ষতি করে। লাল ক্ষুদ্র মাকড়ও অনেক সময় বেশ ক্ষতি করে থাকে। এ ছাড়াও শিমের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ দু’টি হলো মোজাইক ও অ্যানথ্রাকনোজ। এ রোগ প্রতিকার সম্ভব তবে আক্রান্ত গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলে আবার নতুন গাছ লাগানো ছাদবাগানীদের জন্য উত্তম। বাহক পোকা দমন করার জন্য ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর জৈব বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে। যেমন নিমতেল, সাবান পানি, তামাক পাতা ভিজানো পানি ইত্যাদি। 
করলা
করলা আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি সবজি, প্রায় সব ছাদ বাগানে করলা চাষ করা হয়। বাংলাদেশে করলার বেশ কয়েকটি উচ্চফলনশীল জাত রয়েছে। এসব জাতের মধ্যে বারি করলা-১ এবং বিএডিসির গজ করলা উল্লেখযোগ্য এসব ছাড়াও করলার আছে বেশ কয়েকটি হাইব্রিড জাত যেমন : বুলবুলি, টিয়া, প্যারট, কাকলি, তাজ-৮৮, গ্রিনস্টার, গৌরব,  প্রাইড-১,    প্রাইড-২, গ্রিন রকেট, হীরক, মানিক, জয়, রাজা, প্রাচী ইত্যাদি।
করলার চারা তৈরির জন্য বীজ  ২০-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে বীজগুলো ভেজা কাপড়/টিস্যুতে পেঁচিয়ে ফেটে শেকড় বের হওয়া পর্যন্ত  অপেক্ষা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কাপড় বা টিস্যু সব সময় ভেজা থাকে। বীজ ফেটে শেকড় বের হলে তা পটে/টবে  বপন করতে হবে। সাধারণত অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক জৈবসার ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি, ২০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া মিশ্রিত মাটি দিয়ে পট ভর্তি করে। প্রতি পটে ৪-৫টি বীজ বপন করা প্রয়োজন। চারা একটু বড় হলে তিনটি চারা রেখে বাকি চারা উপড়ে ফেলতে হবে।
রোগবালাই দমন 
করলা গাছে মাছি পোকা, পামকিন বিটলসহ বিভিন্ন পোকা ও ভাইরাসজনিত মোজাইক রোগ, পাউডারি মিলডিউসহ বিভিন্ন বালাইয়ের আক্রমণ দেখা দিতে পারে । পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাহক পোকা দমন করার জন্য ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর জৈব বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে। যেমন নিমতেল, সাবান পানি, তামাক পাতা ভিজানো পানি ইত্যাদি। 
মোটামুটি এভাবেই ছাদ বাগানে টমেটো, পেঁপে, ঝিঙা, কুশি, বরবটি, ধুন্দল ইত্যাদি চাষ করা যায়, তবে চাষ করা সময় কিছু সাধারণ নিয়ম মানলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সকল ধরনের সবজি গাছে ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর জৈব বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে। দিনে দুইবার সকালে ও বিকালে পরিমিত পরিমাণ পানি দিতে হবে। কোন গাছের গোড়ায় আঘাত করা যাবে না। ফেরোমন ট্রাপ ও জৈব বালাইনাশক সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে সঠিক নিয়মে হস্ত পরাগায়ন করতে হবে। মিষ্টি কুমড়া সকাল ৯.৩০ ঘটিকা, করলা সূর্য উঠার পর থেকে সকাল ১১.০০ ঘটিকা, শসা সূর্য উঠার পর থেকে সকাল ১১.৩০ ঘটিকা, লাউ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, ঝিঙা বিকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হস্ত পরাগায়নের সব থেকে উত্তম সময়। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য ছাদ বাগানে সবসময় জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করুন, রাসায়নিক কীটনাশক ও বালাইনাশক যতটা সম্ভব পরিহার করুন। শহুরে জীবনে পারিবারিক পুষ্টি বিবেচনায় নিরাপদ সবজি উৎপাদনে ছাদবাগান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। 

লেখক : প্রকল্প পরিচালক, নগর কৃষি উৎপাদন সহায়ক (পাইলট) প্রকল্প, মোবাইল : ০১৭১৭০৩৩৯৩২, ইমেইল: শনফংযধসরসংযধরশয@মসধরষ.পড়স