Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবজির ভূমিকা

পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবজির ভূমিকা
ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক
বাংলাদেশ এখন টেকসই খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য উৎপাদনে এর উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান জলবায়ুর পরিবর্তন, কৃষি জমি কমে যাওয়া, মাটির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস, মানুষের শহরমুখী হওয়া, শ্রমিক অপ্রতুলতা, জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সমস্যা ইত্যাদি নানা কারণে মূল খাদ্যের পাশাপাশি সবজি উৎপাদনে কঠিন সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষে যথাসময়ে সব ধরনের খাদ্য উপাদান বিশেষত সবজি থেকে পাওয়া অনুপুষ্টিসমূহ গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে পরিবারিক পর্যায়ে যদি সময় মতো বীজ, কৃষির আনুষাঙ্গিক অন্যান্য উপকরণ ও সঠিক তথ্য সরবরাহ করা যায় তবে তারা নিজেরাই নিজ জমিতে শাকসবজি উৎপাদন করে পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা বহুলাংশে মিটাতে পারে সাথে বাজারে সবজির সরবরাহও বাড়বে। ফলে মানুষের পুষ্টির চাহিদাও যথাযথভাবে পূরণ হবে।
আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের প্রধান উৎস হচ্ছে সবজি। এটি আমাদের শরীরের অপুষ্টি, দেহের নানাবিধ সমস্যা এবং বিভিন্ন রোগ ব্যাধি, যেমন-রক্তশূন্যতা, অন্ধত্ব, চর্মরোগসহ অন্যান্য অনেক ধরনের অসংক্রামক রোগ হতে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের শারীরিক এবং মানসিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করে কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং কর্মক্ষম জীবনকে দীর্ঘায়িত করে, যা পক্ষান্তরে জাতির অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশে বিরাজমান ব্যাপক অপুষ্টিজনিত সমস্যা মোকাবেলায় সবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা ২০১৫ অনুযায়ী গড়ে দৈনিক অন্তত ২০০ গ্রাম সবজি ও ১০০ গ্রাম শাক গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনের তুলনায় কম উৎপাদন হওয়ায় আমরা সুপারিশকৃত মাত্রায় সবজি গ্রহণে এখনও পিছিয়ে রয়েছি এবং সঠিকভাবে পুষ্টিমান বজায় রেখে শাকসবজি প্রস্তুতেও জ্ঞানের কমতি রয়েছে। সঠিক পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন, সংরক্ষন, মোড়কজাতকরণ, পরিবহন ও বিপণন না হওয়ায়  শস্য আরোহন পরবর্তী সময়ে পরিমাণ ও মানগত উভয়ভাবে শস্যের ক্ষতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে যা সবজি ঘাটতির জন্য অনেকাংশে দায়ী।
খাদ্য উৎপাদন করে বিক্রির মাধমে আয়বৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক কর্মকা-ে বসতভিটার গুরুত্ব রয়েছে যার মাধ্যমে পরিবারের সামগ্রিক উন্নতি ঘটে। বসতবাড়ীতে পরিকল্পিতভাবে গড়া শাকসবজির বাগান পারিবারিক পর্যায়ে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সবজি উৎপাদনের কাঁচামাল যেমন- বীজ, সার, চারা, কীটনাশক এর উচ্চমূল্য অনেক ভূমিহীন প্রান্তিক পরিবারগুলোর পক্ষে বহন করা কঠিন। স্বল্পমূল্যের উপকরণ যথা-মিশ্রসার বা ভার্মিকম্পোস্ট, রান্নাঘর ও খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ দিয়ে বানানো সার,  বেড়া, রোগ ও পোকা দমনের জৈবিক উপায় যেমন- ফেরোমন ট্রাপ, সোলার লাইট ট্রাপ, আঠালো ট্রাপ ব্যবহার করে ভালো সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। অনেক প্রকার সবজি বীজ স্থানীয়ভাবে বাগানেই উৎপন্ন করা যায়। দেশীয় শাক-সবজি যেমন, লাল নটেশাক, সবুজ নটে শাক, পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, ধনেপাতা, সজনেপাতা ইত্যাদি এবং অন্যান্য সবজি যেমন চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, করলা, লাউ, বরবটি ইত্যাদি উৎপাদন করা সম্ভব। সুতরাং বসতভিটায় সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা একটি বাগান হলো একটি সম্পূর্ণ কৃষিভিত্তিক ব্যবস্থা যা দিতে পারে মানসম্মত পুষ্টিকর খাদ্যেও জোগান। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ পুষ্টি বাগান প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ ছাড়াও  বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) তার প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কার্যক্রমে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, পুষ্টিগত মান নির্ণয় ও খাদ্যে পুষ্টিমান বজায় রাখা নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে কার্যক্রম চলমান রেখেছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর সংস্থা সবজি উৎপাদনে নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যা অদূর ভবিষ্যতে পুষ্টির চাহিদা পূরণে যথাযথ ভূমিকা রাখবে। এবার আসুন জেনে নেই, বিভিন্ন প্রকার সবজির পুষ্টিগুণাগুণ ও উপকারিতা (সারণি দ্রষ্টব্য)।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)। মোবাইল : ০১৭৫৯৬৭৬৮৫৯, ই-মেইল :ssosunamganj@gmail.com