Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি খাতের সম্ভাবনা

কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি খাতের সম্ভাবনা
মোঃ মনজুরুল হান্নান
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ব-দ্বীপ। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের বাহিত পলিমাটিই সৃষ্টি করেছে এ ব-দ্বীপ। আমাদের উর্বর মাটি ও প্রাকৃতিক পানির সহজলভ্যতার কারণে সাড়া বছর বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। মাঠ ফসলের বহুমুখিতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর অন্যতম শস্য ভা-ার। আধুনিক জাতের ফল ও সবজি উৎপাদন বাংলাদেশকে দিয়েছে অনন্যমাত্রা। কিছু কিছু মৌসুমি সবজি এখন প্রায় সারা বছর পাওয়া যাচ্ছে। দেশের মোট আয়তনের ৭০.১০% জমিই হলো আবাদযোগ্য জমি। শ্রমশক্তির ৩৫.২০% এখনও কৃষির উপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যার ২০% মানুষই হলো নবীন যুবক শ্রেণীর। এ নবীন শ্রেণী সম্পৃক্ততার কারণেই কৃষি বহুমাত্রিক রূপ পেয়েছে এবং খোরপোষ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।
কৃষিপণ্যের বিশ্ববাজার দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঋঅঙঝঞঅঞ, ঝঃধঃরংঃধ এবং এষড়নধষ গধৎশবঃ ওহংরমযঃ এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের কৃষিপণ্যের বিশ্ববাজার মূল্যমান ছিল ১৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে তাজা ফল ও সবজি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের। প্রক্রিয়াজাতকৃত ফল ও সবজির মূল্যমান ছিল ২৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। হালকা নাশতা বা স্ন্যাকসের বাজার ছিল অত্যন্ত তেজী। ২০২০ সালের স্ন্যাকসের বাজার পরিমাণ ছিল ৪৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের। এত বড় বিশ্ববাজারে আমাদের দেশ থেকে মাত্র ১১৬২.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের কৃষিপণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে (সূত্র ইপিবি)। বিশ্ববাজারে জবধফু ঃড় ঈড়ড়শ এবং জবধফু ঃড় ঊধঃ পর্যায়ের কৃষিপণ্যের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। তাজা ফলমূল ও শাকসবজি রপ্তানির পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকে উৎসাহিত করার কোন বিকল্প আমাদের হাতে নেই। কারণ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পণ্যের পুষ্টিমান, ‍সুস্বাদুতা এবং সংরক্ষণ জীবনকাল বাড়ানো সম্ভব। কাজেই কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং তারুণ্য শক্তির সংমিশ্রণে বাংলাদেশের কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বিশ্ব উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে তুলনা করলে পাট ও কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। উৎপাদন পর্যায়ে                তৃতীয় অবস্থানে আছে পেঁয়াজ, সবজি এবং ধান। একইভাবে আলু ও আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে আমাদের অবস্থান সপ্তম।
সারা পৃথিবীতে তাজা কৃষিপণ্যের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কমে যাচ্ছে কিন্তু বাড়ছে প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্যের চাহিদা। এরমধ্যে জবধফু ঃড় ঈড়ড়শ এবং জবধফু ঃড় ঊধঃ পণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাজা শাকসবজি এবং ফলমূল রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এ রপ্তানি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে যেতে পারছে না। বহির্বিশ্ব বাজারকে লক্ষ্য করে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো গড়ে উঠেনি। আধুনিক প্যাকহাউজ, এ্যাক্রিডেটেড ল্যাবরেটরি, সুশৃঙ্খল সরবরাহ ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থার অবকাঠামো, ঐড়ঃ ডধঃবৎ ঞৎবধঃসবহঃ চষধহঃ বা ঠধঢ়ড়ঁৎ ঐবধঃ ঞৎবধঃসবহঃ চষধহঃ এর অনুপস্থিতি, স্বল্প পরিসরে অরৎ ংঢ়ধপব সুবিধা, দক্ষ জনশক্তির অনুপস্থিতি, মার্কেট ইন্টেলিজেন্স, এঅচ, ঐঅঈঈচ, প্যাকেজিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন না হওয়া এবং সেই সাথে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে আমরা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে তাজা বা প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি করতে পারছি না। আমাদের কাছের দেশ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম নিজের উৎপাদিত কৃষিপণ্য এবং আমদানিকৃত              কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করে যাচ্ছে। তাদের এ খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পক্ষান্তরে আমরা মাত্র ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের কৃষিপণ্য রপ্তানি করে থাকি। কাজেই কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে এখনই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
কৃষিপণ্য রপ্তানি উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে একযোগে কাজ করতে হবে। করণীয়সমূহকে চিহ্নিত করে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলেই আমরা কৃষিপণ্য রপ্তানি খাতকে সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব। আমাদের এখন নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন করে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার উপর। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ফসলের সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ অবকাঠামো নির্মাণ করা প্রয়োজন। কৃষিপণ্য উৎপাদন শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড এবং ফরওয়ার্ড লিংকেজের উন্নয়ন ও প্রসার ঘটানো সময়ের দাবি। দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজার ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যকে বন্ড লাইসেন্সের সুবিধা প্রদান করা এবং দূতাবাসের বাণিজ্যিক কাউন্সিলরকে বাণিজ্য সম্প্রসারণে তৎপর হতে হবে। ফল ও সবজির প্যাকেজিংকে শুল্কমুক্ত করে অন্য দেশের সাথে মূল্য প্রতিযোগিতামূলক করা প্রয়োজন। সমুদ্রপথে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাহাজ প্রবর্তন করা যেতে পারে। কৃষিপণ্য হতে বৈচিত্র্যময় খাদ্যসামগ্রী উন্নয়নে গবেষণা জোরদার করা প্রয়োজন এবং কৃষিপণ্যের জন্য নিবেদিত পরিবহন ব্যবস্থার প্রচলন করা প্রয়োজন। কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে বিমানের ‘কার্গো স্পেস’ বৃদ্ধি ও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সে সাথে উত্তম কৃষি চর্চা ও ফসলের সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপদ ও গুণগত মানসম্পন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করা যেতে পারে। তাহলেই কৃষিপণ্যের ‘কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং’ করা সম্ভব হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন হলো­- ‘কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে এবং সেই সাথে বিদেশে আমাদের পণ্যের সুনাম বৃদ্ধি করতে হবে’। কৃষিবান্ধব সরকারের সুচিন্তিত পরিকল্পনা অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্টদের কৃষিপণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি উন্নয়নে একযোগে কাজ করলে আমরা কাক্সিক্ষত সফলতা অবশ্যই অর্জন করতে পারবে।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন। মোবাইল : ০১৭১১-৫৬৫৭৩১, ই-মেইল : যড়ৎভবী@যড়ৎঃবী.ড়ৎম