Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ভুট্টার-ছত্রাকজনিত-(ফিউজারিয়াম-স্টক-রট)-রোগের-দমন-ব্যবস্থাপনা

ভুট্টার ছত্রাকজনিত (ফিউজারিয়াম 
স্টক রট) রোগের
দমন ব্যবস্থাপনা
কিশওয়ার-ই-মুস্তারিন
দানাজাতীয় ফসলের মধ্যে সাড়া বিশে^ ভুট্টা উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে এবং বাংলাদেশে ধানের পরেই এর অবস্থান। বাংলাদেশে ভুট্টার চাহিদা প্রতি বছর ১০-১২% হারে বেড়েই চলেছে। ভুট্টার চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়গুলোর মধ্যে বিভিন্ন রোগবালাইয়ের আক্রমণ অন্যতম। এসব রোগবালাইয়ের মধ্যে একটি হলো ‘ফিউজারিয়াম স্টক রট রোগ’ যা ফিউজারিয়াম নামক ছত্রাকের বিভিন্ন প্রজাতি দ্বারা সংগঠিত হয়ে থাকে। ভুট্টার বিভিন্ন রোগের মধ্যে এ রোগটি অন্যতম এবং যার সংক্রমণের ফলে ক্ষেত্রবিশেষে ফলনের ১০০ ভাগ পর্যন্ত ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। এটি মূলত মাটি ও বীজবাহিত রোগ এবং এর পোষক দেহের (ঐড়ংঃ ৎধহমব) সংখ্যা অনেক বেশি। সাম্প্রতিককালে, ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা খরিপ মৌসুমে আবাদকৃত ভুট্টা ফসলে বেশি পরিলক্ষিত হয়। ফলে ভুট্টা ফসল চাষের ক্ষেত্রে এই রোগের দমন ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
রোগের গুরুত্ব/ক্ষতির পরিমাণ 
সংবেদনশীল ভুট্টার জাত চাষাবাদ করলে ক্ষতির আশংকা বেশি থাকে। ফসলের প্রাথমিক পর্যায়ে রোগের সংক্রমণ হলে অপরিপক্ব অবস্থায় ভুট্টার গাছ মারা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে এ রোগের সংক্রমণে সাধারণত ১০-৪০ ভাগ ফসলের ক্ষতি সাধিত হয় তবে অনুকূল পরিবেশে ক্ষেত্র বিশেষে এর পরিমাণ ১০০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়াও দানা গঠন পর্যায়ে সংক্রমণ হলে মোচা ও দানার ওজন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়।
রোগের বিস্তৃতি ও পোষকদেহ
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই রোগের সংক্রমণ পরিলক্ষিত হয়েছে বিশেষত আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতসহ বাংলাদেশের কিছু কিছু জেলায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। দানা ফসলের মধ্যে ধান ও গমসহ বিভিন্ন সবজি ফসলে (বেগুন, টমেটো, কলা ইত্যাদি) এ রোগের জীবাণুর বিকল্প পোষক হিসেবে কাজ করে।
রোগের জীবনচক্র 
এই রোগের জীবাণু মাটির পৃষ্ঠে অথবা মাটিতে বিদ্যমান ফসলের অবশিষ্টাংশ ও বীজে সুপ্ত অবস্থায় লুকিয়ে থাকে। পরবর্তীতে ভুট্টা ফসল লাগানোর পর অনুকূল পরিবেশে এই রোগের জীবাণু ভুট্টা গাছের মূলে আক্রমণ করে এবং আক্রান্ত স্থান পচিয়ে ফেলে এবং গোড়া সংলগ্ন অংশের জাইলেম ও ফ্লোয়েম ভেসেল টিস্যুগুলো নষ্ট করে ফেলে এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ণ গাছ শুকিয়ে মারা যায়। এ ছাড়াও পাতায় এ রোগের জীবাণু থাকলে বাতাস বা বৃষ্টির পানির ঝাপটায় এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ণ ফসলে বিস্তার লাভ করে। 
রোগের বিস্তারের অনুকূল আবহাওয়া  
চারা অবস্থায় শুষ্ক আবহাওয়া এবং সিল্ক বের হওয়া অর্থাৎ ফুল আসার পর বৃষ্টিপাত হলে অথবা উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজমান থাকলে এই রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়; তাপমাত্রা ২৬-৩৫০ সেন্টিগ্রেড এবং অধিক আর্দ্রতা (৮০-১০০%) এই রোগের সংক্রমণের হার তরান্বিত করে; গাছের ঘনত্ব অধিক হলে এবং সেই সাথে নাইট্রোজেন সারের আধিক্য ও পটাশ সারের অভাব হলে এই রোগের আধিক্য বেড়ে যায়; মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে ও অধিক মাত্রায় ভাসমান সেচ প্রয়োগ করলেও এই রোগের আধিক্য বেড়ে যায়।
রোগের লক্ষণ
আক্রান্ত গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়, গাছ শুকিয়ে ধূসর বর্ণ ধারণ করে এবং অপরিপক্ব অবস্থায় মারা যায়; শিকড়, গোড়া এবং নিচের ইন্টারনোডগুলো পচে যায়; কা-ের নিচের অংশ বিভক্ত করলে ভেতরে বিবর্ণতা দেখা যায় এবং জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যুগুলো নষ্ট হয়ে আক্রান্ত গাছের পিথ নষ্ট হয়ে যায়; আক্রান্ত গাছের কা-ে চাপ দিলে নরম বোধ হয় এবং নীচের ইন্টারনোডগুলো সহজেই ভেঙে যায়; আক্রান্ত গাছের মোচাগুলো হেলে পড়ে এবং দানা অপুষ্ট থাকে।
রোগের দমন ব্যবস্থাপনা 
শক্ত কা- বিশিষ্ট এবং পাতার রোগ প্রতিরোধী হাইব্রিড জাত নির্বাচন; উপর্যুক্ত ছত্রাকনাশক (কার্বক্সিন+থিরাম) দ্বারা শোধনকৃত বীজ ব্যাবহার; গাছের উপর্যুক্ত ঘনত্ব (সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি. এবং গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ২৫ সেমি.) বজায় রাখতে হবে; সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ বিশেষ করে নাইট্রোজেন এবং পটাশসার এর ভারসাম্য বজায় রাখা; অম্ল মাটিতে ফসল লাগানোর ১ সপ্তাহ আগে অনুমোদিত মাত্রায় ডলোচুন প্রয়োগ; একই জমিতে বারবার ভুট্টার আবাদ না করে ধান/গম/তরমুজ/বাদাম/শাকসবজি প্রভৃতি দ্বারা শস্য পর্যায় অনুসরণ; আক্রান্ত জমির ফসল সংগ্রহ করার পর গাছের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলা; কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন অটোস্টিন ৫০ ডব্লিউডিজি ২ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে মাটি হতে গাছের গোড়ার এক ফিট উপর পর্যন্ত প্রথমবার গাছের ৮ পাতা অবস্থায় (হাঁটু সমান উচ্চতা) এবং দ্বিতীয়বার সিল্ক বের হওয়ার পর (মোচায় ফুল আসার পর) স্প্রে; প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন টিল্ট ২৫০ ইসি অথবা টেবুকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন ফলিকুর ২৫০ ইসি অথবা এজোক্সিস্ট্রোবিন+ডাইফেনোকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- এমিস্টার টপ ৩২৫ এসসি ১ মিলি/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন অন্তর ২ বার পাতায় স্প্রে করতে হবে।
উপরোক্ত দমন ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে ‘ফিউজারিয়াম ষ্টক রট’ ছাড়াও ভুট্টার অন্যান্য ছত্রাকজনিত রোগ যেমন- পাতা ঝলসানো, পাতার মরিচা পড়া, মোচা পঁচা ইত্যাদি দমন হবে।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট। মোবাইল : ০১৭১২০০২৭৬১, ইমেইল : ৎরসঁনধৎর@ুধযড়ড়.পড়স