Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পরিবেশ সুরক্ষা ও লবণাক্ততাসহিষ্ণু বৃক্ষরোপণ

পরিবেশ সুরক্ষা ও লবণাক্ততাসহিষ্ণু বৃক্ষরোপণ
ড. আসম হেলাল উদ্দীন আহম্মেদ সিদ্দীকি
বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ সুরক্ষা শব্দ দুটি সকলের অতি পরিচিত। জনজচেতনতা মূলক উক্তি, গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান। আমাদের পৃথিবীর পরিবেশ আজ অসুস্থ। অসুস্থ পরিবেশ সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর রাখতে হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমাতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আজ মরণ দশায় পরিণত হয়েছে। বায়ুম-লে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ক্লরোফ্লোরো কার্বনের (ঈঋঈ) মাত্রা অধিক, ওজনস্তরে ফুটো হয়ে যাওয়া, বাতাসে সিসার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার ফলে নিশ্বাসে বিষ ঢুকে মানব শরীরে ক্যান্সারের নানাবিধ রোগব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। গাছই একমাত্র নিয়ামক যা বাতাসের বিভিন্ন ক্ষতিকারক বর্জ্য শোধন করে বাতাস পরিশীলিত করে বাসযোগ্য পৃথিবী উপহার দিতে পারে।
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য নির্মল পরিবেশ প্রয়োজন। পৃথিবীর পরিবেশ সুরক্ষায় গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গাছ বায়ুম-ল হতে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঈঙ২ গ্রহণ করে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য তৈরি করে এবং ঙ২ ত্যাগ করে বাতাস শুদ্ধ করে; বাতাসের উষ্ণতা কমায় এবং পরিবেশের মধ্যে মেঘ বৃষ্টি ও আর্দ্র আবহাওয়া সৃষ্টি করে।
মরুর বুকে গাছ নেই। সেখানে বৃষ্টি  বাদল হয় না। আবার যেখানে অধিক গাছপালা ও বনাঞ্চল সেখানে প্রতিনিয়ত বৃষ্টিপাত হয়। ভারতের চেরাপুঞ্জি এলাকায় কখনও কখনও দিনে ১৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে অধিক গাছ, পাহাড় ও বনভূমি থাকার কারণে এ অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গাছের সাথে বৃষ্টি ও পরিশীলিত পরিবেশ ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং গাছ যেখানে নাই সেখানে অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনের জন্যও বৃক্ষরোপণ করতে হবে। প্রকৃতিকে শান্ত রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশে ১৯৭১ সাল হতে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৯৩টি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু ঘটেছে প্রায় ২০ লাখ লোকের এবং কৃষি ও অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত খরার কারণে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন ধান নষ্ট হয়েছে এবং বন্যার কারণে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। বিগত ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে প্রায় ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। যাহোক গাছপালা কমে যাওয়ায় পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজান ধ্বংস হওয়াই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশ রুক্ষ হচ্ছে। কাজেই বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবেশ টেকসই করতে হবে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় সুন্দরবনের অবস্থান। উপকূলীয় এলাকায় সুন্দরবনের পানিতে এখন লবণের পরিমাণ অনেক বেশি কোথাও কোথাও ২৮ পিপিটি পর্যন্ত লবণের মাত্রা। গাছ বেশি লবণ সহ্য করতে পারে না। সুন্দরবনের কতিপয় প্রজাতি যেমন- গেওয়া গরান, গোলপাতা, খলসি, কেওড়া বাইন, ধুন্দুল, ঝানা প্রভৃতি বৃক্ষ লবণসহিষ্ণু। সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী, পশুর, আমুর লবণাক্ততার কারণে আগামরাসহ বিভিন্ন পরিবেশীয় কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সে কারণে সুন্দরবন হতে অনেক প্রজাতির বৃক্ষ সম্পদ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কিছু আবার বিরল এবং কিছু  বা বিপদাপন্ন হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। গাছের ন্যায় পরিবেশীয় কারণে অনেক প্রজাতির প্রাণিও বিলীন হয়ে যাচ্ছে যা বিরল ও বিপদাপন্ন হচ্ছে। বন্য প্রাণির খাবারের ও মারাত্মক সংকট হচ্ছে।
এ সকল দিক বিবেচনা করে উপকূলীয় অঞ্চলের ফাঁকা জায়গায় বাড়ি ঘরের আশে পাশে নতুন চরাঞ্চলে লবণসহিষ্ণু গাছপালা রোপণের মাধ্যমে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সকল প্রকার টক ফল যেমন- আমড়া, পেয়ারা, লেবু, কামরাঙ্গা, জলপাই, আম, তেঁতুল, কুল, তাল, খেজুরসহ নারিকেল, সুপারি প্রভৃতি লবণসহিষ্ণু প্রজাতির গাছ রোপণ করে পরিবেশ প্রচ্ছন্ন করে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ করতে হবে। বরফ গলন কমাতে হবে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা হ্রাস করতে হবে, পৃথিবী একটাই একে সুস্থ রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে প্রত্যেকে ২টি করে গাছ লাগাতে হবে। পৃথিবীর উষ্ণতা কমিয়ে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

লেখক : বিভাগীয় কর্মকর্তা, ম্যানগ্রোভ সিলভিকালচার বিভাগ, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, খুলনা। মোবাইল নং-০১৭১৮৫০৩৪৪৯।  ই-মেইল : dr.helalfri@gmail.com