Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাউ মুরগি পালন পদ্ধতি

বাউ মুরগি পালন পদ্ধতি
ডা: মনোজিৎ কুমার সরকার
দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা একান্ত প্রয়োজন। পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রাণিজ আমিষ সরবরাহে মুরগি প্রধান ভূমিকা পালন করছে। দেশে মাংসজাত মুরগির উৎপাদন শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে ভোক্তাদের একটি অংশ নরম ব্রয়লার মাংসের চেয়ে শক্ত মুরগির মাংস পছন্দ করেন। এ কারণে দেশে শক্ত মাংসের মুরগির চাহিদা বেশি। শক্ত মুরগির মাংস সাধারণত দেশি মুরগি, সোনালী ও অন্যান্য শংকর মুরগি থেকে আসে। তবে অসুবিধে হলো এ জাতীয় মুরগির বৃদ্ধি ও খাদ্য দক্ষতা কম এবং উৎপাদন খরচ বেশি।
শক্ত ও দেশীয় স্বাদের মাংসজাত মুরগির চাহিদা মেটাতে ‘বাউ মুরগি’ (ইঅট-পযরপশবহ) নামে একটি নতুন জাতের মুরগি উদ্ভাবিত হয়েছে। এ মুরগির মাংস দেশি মুরগির মতোই শক্ত ও মুখরোচক। এ মুরগি অন্যান্য মুরগির তুলনায় খাদ্য দক্ষতা (ঋঈজ), ওজন বৃদ্ধি, অভিযোজন যোগ্যতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উচ্চতর। তাই কম খরচে দেশীয় আবহাওয়ায় ‘বাউ মুরগি’ লাভজনকভাবে পালন করা সম্ভব।
বাউ মুরগির উৎপাদন বৈশিষ্ট্য : বাউ মুরগি দেখতে ও খেতে দেশি মুরগির মতো; ছয় সপ্তাহে বাউ মুরগির গড় ওজন ১১০০+৫৮ গ্রাম; বেঁচে থাকার হার ৯৭-৯৮%; খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা (ঋঈজ) ১.৯৫-২.১০ তাই উৎপাদন খরচ কম; বাউ মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি; বাজারজাতকরণের বয়স ৪৫-৪৯ দিন; একদিন বয়সের বাচ্চার ওজন ৩৬+৪ গ্রাম।
বাউ মুরগি পালন পদ্ধতি : বাউ মুরগি পালন পদ্ধতি, সোনালী ও ব্রয়লার মুরগি পালনের মতোই। প্রতিটি মুরগির জন্য ১ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। এ মুরগি লিটার অথবা মাচা পদ্ধতিতে পালন উপযোগী।
মুরগির ঘর : বাচ্চা উঠানোর পূর্বে ঘর জীবাণুমুক্ত করতে হবে; পুরাতন লিটার ভালোভাবে পরিষ্কার করে ৫০০ মিটার দূরে সরিয়ে ফেলতে হবে; ঘরের পর্দা, মাকড়সার জাল, ফিডার, ড্রিংকার ভালোভাবে ধূয়ে জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে; ২-৩ বার ঘর ধুতে হবে; ঘরের কোথাও ভাঙা, ফাঁটা থাকলে মেরামত করতে হবে; সেডের মেঝে মাটির হলে ২-৩ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি চেছে তুলে ফেলে দিয়ে নতুন মাটি দিয়ে লেপে দিতে হবে। চুন ও পানি মিশিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ৭-১৪ দিন রেখে দিতে হবে; ঘরের চারপাশের ঝোপঝাড় চেছে পরিষ্কার করে দিতে হবে। ৩ ফুট দূর দিয়ে বেড়া দিতে হবে; বাচ্চা ব্রুডিংয়ের একদিন আগে তুষ বিছাতে হবে এবং জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে; বাচ্চা ব্রুডিং করার ২-৩ দিন আগে থেকেই ফুটপাথে জীবাণুনাশক রাখতে হবে। ঘরের চতুপার্শ্বে জীবাণুনাশক অথবা ৫% ফরমালিন স্প্রে করতে হবে।
ব্রুডিং প্রস্তুতি : বাচ্চা উঠানোর ১ দিন পূর্বে লিটার (তুষ) বিছিয়ে গরম করার ব্যবস্থা করতে হবে; ঘরের পর্দার উপরের অংশ ৬-১২ ইঞ্চি পরিমাণ খোলা রাখতে হবে; লিটারের উপর খবরের কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে; চিক গার্ড গোলাকার করে তৈরি করতে হবে, তা না হলে বাচ্চা একদিকে জড়ো হয়ে থাকবে; হোভার গোলাকার চিকগার্ডের মাঝখানে রাখতে হবে; ব্রুডারে বাচ্চা ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে উপযুক্ত তাপমাত্রা অর্থাৎ ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৩০ঈ) এ আনতে হবে এবং ২ ঘণ্টা পূর্বে প্রতি লিটার পানিতে ০.২৫ গ্রাম গ্লুকোজ ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে; বাচ্চা ফোটার পর প্রতি ১ ঘণ্টায় ০.১ গ্রাম করে ওজন হারাতে থাকে তাই এ সময় গ্লুকোজ পানির সহিত পরিচয় করে দেয়া উচিত। গ্লুকোজ পানিতে বাচ্চার ঠোঁট চুবিয়ে দিতে হবে।
ব্রুডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
ব্রুডিং ঘর : বাউ মুরগি ৪২-৪৭ দিনেই বাজারজাত করা হয়। এ কারণে আলাদা ঘরের প্রয়োজন হয় না।
হোভার : টিন বা বাঁশ দিয়ে তৈরি করা যায় ৩ ফুট ব্যাসের হোভারের নিচে ১৫০-২০০টি বাচ্চা রাখা যাবে।
চিক গার্ড : ১.৫ ফুট উঁচু চাটাই বা হার্ডবোর্ডের তৈরি এবং  ৯-১০ ফুট ব্যাসের একটি চিক গার্ডে ৩০০-৪০০টি বাচ্চা ব্রুডিং করা যাবে।
খাবার পাত্র : প্রথম ১-২ দিন পাত্রের পাশাপাশি কাগজের উপর খাদ্য দিতে হবে। ১ম সপ্তাহে ২ ঘণ্টা পরপর খাবার সরবরাহ করতে হবে।
পানির পাত্র : বাচ্চার জন্য ছোট প্লাস্টিকের পানির পাত্র পাওয়া যায়। সকালে ও বিকেলে পাত্র পরিষ্কার করতে হবে।
আলো ব্যবস্থাপনা : পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে বাচ্চা খাবার ও পানির পাত্র দেখতে পারে। রাতে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে আলো প্রদান করতে হবে।
বায়ু চলাচল ব্যবস্থাপনা : ব্রুডার ঘরে বায়ু চলাচল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দূষিত বায়ু নিষ্কাশন ও নির্মল বায়ু সরবরাহ একান্ত প্রয়োজন। বাচ্চার মলমূত্র হতে সৃষ্ট অ্যামোনিয়া গ্যাস বাচ্চার ঘরে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।
৫০০টি বাচ্চা ব্রুডিং করতে ১২ ফুট ব্যাসের ১টি, ৫ ফুট ব্যাসের হোভার ১টি, চিক ফিডার ১৫টি, চিক ড্রিংকার ১০টি, গ্যাস ব্রুডার ১টি প্রয়োজন। গরমকালে লিটার পুরুত্ব হবে ২ ইঞ্চি। শীতকালে ৩-৪ ইঞ্চি পুরু করে দিতে হবে। বাল্ব ব্রুডিং করলে গরমকালে ১০০ ওয়াটের ২টি এবং ৬০ ওয়াটের ১টি। শীতকালে ২০০ ওয়াটের ২টি এবং ১০০ ওয়াটের ২টি বাল্ব সেট করতে হবে।
এ ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে বাচ্চার ওজন নিতে হবে। ৩ সপ্তাহ বয়স হলে ছোট/দুর্বল বাচ্চাকে আলাদা রেখে খাবার প্রদান করতে হবে। ৪ দিন পরপর মাল্টিভিটামিন দিলে ভালো হয়। ১-২১ দিন ব্রয়লার স্টার্টার খাদ্য, ২২-৪২ দিন পর্যন্ত ব্রয়লার গ্রোয়ার খাদ্য এবং ৪৩ দিন হতে বাজারজাত করা পর্যন্ত ফিনিশার খাদ্য খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বাউ মুরগির প্রাপ্তিস্থান : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন- প্রফেসর ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা, পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়।
লেখক : প্রাণি চিকিৎসক ও পোল্ট্রি কনসালট্যান্ট ভেটেরিনারি অফিসার, জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল, ঝিনাইদহ। মোবাইল : ০১৭১৫২৭১০২৬। ই-মেইল :drmorojit66@gmail.com