Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাউ সালাদ কচু সালাদ পরিবারে নতুন সদস্য

বাউ সালাদ কচু সালাদ পরিবারে নতুন সদস্য
ড. এম এ রহিম১ ড.সুফিয়া বেগম২  
বাউ সালাদ কচু Araceae পরিবারভুক্ত একবীজপত্রী হার্বসজাতীয় উদ্ভিদ। এই প্রজাতিটি মূলত বান্দরবান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হয়। খাদ্য সংকটে খাদ্য ও ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে । বাউ সালাদ কচু স্থানীয়ভাবে সালাদ কচু নামে পরিচিত। এটি কাঁচা অবস্থায় সালাদ হিসাবে খাওয়া যেতে পারে এবং গলা চুলকায় না। বাউ সালাদ কচু একটি অপ্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ কন্দজাতীয় উদ্ভিদ যা বাণিজ্যিকভাবে বৃষ্টিবহুল উচ্চ জমি, বাড়ির বাগান এবং ঢাকা শহরসহ অন্যান্য শহরের বহুতল ভবনের খালি ছাদে বেড তৈরি করে বা টব, জিও ব্যাগ, ড্রামে চাষাবাদ করা যায়। আন্তঃফসল পদ্ধতিতে যেমন- কলাগাছ, আনারস বা অন্যান্য বহুবর্ষজীবী ফসলের সাথে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়। সালাদ কচু ট্রপিক্যাল অঞ্চল যেমন: থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও জাপানসহ অন্যান্য এশিয়ান দেশে প্রচুর চাষ হয়।
এ দেশে খরিফ মৌসুমের এটি মূলত শাকসবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয় যখন বাজারে অন্যান্য শাকসবজি সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা, বন্যা, দুর্ভিক্ষ এবং অন্যান্য বিপর্যয়ের মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। পাহাড়ি অঞ্চলে ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত জায়গায় চাষাবাদ হতে পারে। করম, পাতা, পাতার ডাঁটা শাকসবজি এবং ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চারা বা সাকার বীজ হিসাবে বিক্রয় করা যায়।  
সালাদ কচু সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য। এটি মাইক্রো-পুষ্টি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ। এছাড়াও আলসার, ডায়াবেটিস, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি জাতীয় রোগ নিরাময়ের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি কাঁচা সালাদ খাওয়ার ফলে পুষ্টিমান অক্ষুণœ থাকে। জিংক বেশি পরিমাণে থাকার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি মেধার বিকাশ হয়। ক্ষুধা মন্দা দূর হয়, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের জন্য শারিরিক দুর্বলতা দূর হয়।
বাউ সালাদ কচু জাতটি বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টার কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন একটি জাত। উদ্ভিদের প্রকৃতি অর্ধখাঁড়া এই ফসলের পাতাগুলোর আকার ঢেউ খেলানো ও পেটিওল লম্বা হয়। পাতাগুলো হৃদয়ের আকারের এবং খাঁড়া প্রকৃতির, পাতা হলুদাভ ও নিলাভ সবুজ। পাতার উপরিভাগ গ্লেসি রঙের হয়।
কচুতে মারাত্মক কোন রোগ ও পোকামাকড় দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে (Catter piller) পোকা আক্রমণ করে এবং পাতায় গর্ত করে বাসা বাঁধতে চেষ্টা করে। ফলে পাতার মান নষ্ট হয়। আক্রমণ দেখা দিলে ১০ লি: পানিতে ২৫ গ্রাম রিডোমিল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সুমিথিয়ন অথবা রিপকর্ড অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করা যেতে পারে। কবুতর ও মুরগী কচি পাতা ভক্ষণ করে ফসল নষ্ট করে। তাই প্রয়োজনে নেট/জাল ব্যবহার করা যেতে পারে।
বর্তমানে সৌখিন কৃষি উদ্যোক্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন দৌলতপুর, কুষ্টিয়া, কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক মাসিক কৃষিকথায় প্রকাশিত বাউ সালাদ কচু সম্পর্কে জানতে পারে। তিনি বাউ সালাদ কচু চাষে আগ্রহী হন। লেখকের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ অনুযায়ী ৫০টি চারা সংগ্রহ করে এক শতক জমিতে বাউ সালাদ কচু চাষ করেন।
বিশেষভাবে আনোয়ার হোসেন উল্লেখ করেন পতিত, অব্যবহৃত এবং সোলার প্যানেল  এর নিচে যেখানে অন্যান্য ফসল উৎপাদন সম্ভব না সেখানে অনায়াসে এ ফসল চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। তার কাছ থেকে অন্যান্য চাষিরা চারা নিয়ে চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে। তারা  বাউ সালাদ কঁচু সালাদ খেয়ে ও রান্না করে উল্লেখ করেছেন এটি খাওয়ার পর গলা চুলকায় না, সুস্বাদু। এছাড়াও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহবুবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ মাসুদ রেজা বাসার ছাদে টবে লাগিয়ে প্রতিদিন খাবারের টেবিলে সালাদ হিসেবে গ্রহণ করছেন।
বান্দরবান জেলার চাষিদের মতে, ২টি পাতাসহ ডাঁটা ১০ টাকা করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। বডি সালাদ কঁচু নিয়ে ইঞঠ এবং অঞঘ বাংলা টিভিতে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। এতে করে প্রচুর নতুন কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। এ পর্যন্ত চারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল যেমন : খুলনা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, রাজবাড়ি, ময়মনসিংহ, ভোলা, ঢাকা জেলায় আগ্রহী চাষিরা/বাগানিরা বাড়ির ছাদে বারান্দায় টবে অথবা পতিত জমিতে চাষ করছেন।
বাউ সালাদ কচু চাষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে অনুশাসন বাস্তবায়ন হচ্ছে।

লেখক: ১প্রফেসর (অব) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ। মোবাইল: ০১৭৭২১৮৮৮৩০,  ২সহকারী অধ্যাপক (অব:) একেইউ ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজ। মোবাইল: ০১৭১৬৬০৭৫৬৬, ই-মেইল :sufia_beg@yahoo.com