Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

রানীশংকৈলবাসীর-কাছে-এসএমই-কৃষক-জনাব-মো:-পয়গাম-আলীর-উৎপাদিত-বীজ-আস্থার-প্রতীক

রানীশংকৈলবাসীর কাছে এসএমই কৃষক জনাব মো: পয়গাম আলীর উৎপাদিত বীজ আস্থার প্রতীক
কৃষিবিদ মো. শাহাদৎ হোসেন
কৃষির মূল উপকরণ হচ্ছে বীজ। কৃষিনির্ভর এ দেশের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রয়োজন উন্নতমানের ভালো বীজ। সেই ধারাবাহিকতায় কৃষকপর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় রানীশংকৈল উপজেলায় বীজ উৎপাদন এবং বিপণনে বেশ কিছু উদ্যোক্তার তৈরি হয়েছে। তাদেরই মধ্যে একজন পয়গাম আলী। কৃষি সম্প্রসারাণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন করে হয়ে উঠেছেন একজন সফল এবং আদর্শ কৃষি উদ্যোক্তা।
জনাব মোঃ পয়গাম আলী, পিতা : মৃত তৈয়ব উদ্দীন, গ্রাম : বনগাঁও। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। কৃষিকাজের শুরুতে তিনি গরুর হাল ও পাওয়ার টিলার দিয়ে নিজ জমি চাষাবাদ করতেন। স্থানীয় জাতের ধান যেমন- স্বর্ণা, রত্নমালা চাষাবাদ করতেন। উৎপাদিত বীজ বস্তায় সংরক্ষণ করতেন এবং বীজ বিপণন করে তেমন লাভের মুখ দেখেননি। জমিতে ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার সম্পর্কে জানতেন না। ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিন তেল ব্যবহার করতেন এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণে ডাল, তেল ও মসলাজাতীয় ফসলের অপর্যাপ্ততা ছিল। পয়গাম আলীর বীজ উৎপাদন ও বিপণনের গল্পটা শুরু ২০১৮ সালে। 
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রবি মৌসুমে প্রকল্পের সহায়তায় উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে এক একরের একটি সরিষা প্রদর্শনী, একটি মুগ প্রদর্শনী এবং একটি মাসকলাই প্রদর্শনী পান। যেখানে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জনাব সঞ্জয় দেবনাথের পরামর্শে এবং বনগাঁও ব্লকে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব             মো. সাদেকুল ইসলামের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত সফলতার সাথে প্রথমবারেই ৯৬০ কেজি সরিষা বীজ, ৫০০ কেজি মাষকলাই বীজ, ২০০ কেজি মুগডাল বীজ উৎপাদন করেন। উক্ত বীজগুলো বিক্রি করে তিনি সর্বমোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মুনাফা পান। অনুরূপভাবে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রবি মৌসুমে প্রকল্পের সহায়তায় এক একরের একটি সরিষা প্রদর্শনী, একটি মুগ প্রদর্শনী, একটি মাষকলাই প্রদর্শনী এবং একটি সূর্যমুখী প্রদর্শনী পান। উক্ত প্রদর্শনীগুলো থেকে তিনি ১০০০ কেজি সরিষা বীজ, ৪০০ কেজি মাষকলাই  বীজ, ৩০০ কেজি মুগডাল বীজ এবং ৮০০ কেজি সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন করেন। উক্ত বীজগুলো বিক্রি করে তিনি সর্বমোট ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা  এবং সরিষাক্ষেতে মধু চাষ করে তিনি (১০ হাজার) টাকা আয় করেন। পাশাপাশি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রবি মৌসুমে প্রকল্পের সহায়তায় এক একরের একটি সরিষা প্রদর্শনী, একটি মুগ প্রদর্শনী এবং একটি মাষকলাই প্রদর্শনী, একটি পেঁয়াজ প্রদর্শনী এবং একটি রসুন প্রদর্শনী পান। উক্ত প্রদর্শনীগুলো থেকে তিনি ৯৫০ কেজি সরিষা বীজ, ২৫০ কেজি মাষকলাই বীজ, ২০০ কেজি মুগডাল বীজ, ৮০ কেজি পেঁয়াজ বীজ এবং ১৫০০ কেজি রসুন বীজ উৎপাদন করেন। উক্ত বীজগুলোর মধ্যে তিনি মাষকলাই বীজ বিক্রি করে (৩০ হাজার) টাকা আয় করেন এবং সরিষাক্ষেতে মধু চাষ করে তিনি ১৫ হাজার টাকা আয় করেন। অবশিষ্ট বীজ মৌসুমে বিক্রয় করে সর্বমোট ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। এছাড়াও কৃষকপর্যায়ে ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় পয়গাম আলী একটি সেলাই মেশিন, একটি ওজন মেশিন, দুইটি মৌ বক্স সেট, তিনটি প্লাস্টিক ড্রাম, একটি ময়েশ্চার মিটার, একটি ড্রাইং বিডস সেট এবং ১৮০০টি বীজ বিপণনের জন্য প্যাকেট পান। 
বর্তমানে বীজ উৎপাদন করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান উন্নত জাতের উচ্চফলনশীল ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৬৪, ব্রি ধান-৭৪, ব্রি ধান-৮৭, ব্রি ধান-৯৩, ব্রি ধান-৯৫ জাতের ধান চাষাবাদ করেন, যা পরিবারের জিংকের ঘাটতি পূরণসহ আর্থিক সচ্ছলতায় অবদান রাখছে। তিনি নিজে ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করেন যা নিজ জমিতে ব্যবহার করে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার তেল ব্যবহার করেন এবং বনগাঁও ব্লকে অনুষ্ঠিত মাঠদিবসে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন। মাঠ দিবসে উপস্থিত সকল কৃষকগণ সরিষার তেল ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার করছেন। ফলে সয়াবিন তেলের আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। এ ছাড়াও তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাল, তেল ও মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন করেন। বিসিক, দিনাজপুর থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়ে এবং প্রকল্প থেকে মৌ-বাক্স সহায়তার মাধ্যমে এবং নিজ উদ্যোগে তিনি কলোনি সংগ্রহ করে মধুচাষে অবদান রাখছেন। বীজ ব্যবসায়ী হিসাবে স্বীকৃতি লাভের পর বীজ বিপণন করে লাভের অর্থ দিয়ে তিনি মহেন্দ্র ট্রাক্টর এবং একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ক্রয় করে নিজে ব্যবহার করেন এবং ভাড়ায়চালিত করেন। প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বীজ সংরক্ষণ ও বিপণনের কাজ করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আধুনিক জাতের এবং মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে এবং বিপণনে বর্তমানে রানীশংকৈলবাসীর কাছে তিনি আস্থার প্রতীক। তার উৎপাদিত মানসম্পন্ন বীজ অত্র এলাকার কৃষকের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পুরো উপজেলার কৃষকের চাহিদা পূরণে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। পাশাপাশি মৌচাষ সম্প্রসারণ করে অত্র এলাকার মানুষের মধুর চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন। 
জনাব মো: পয়গাম আলী উপজেলা কৃষি অফিস রানাীশংকৈল এর মাধ্যমে কৃষকপর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পরপর দুইবার ঠাকুরগাঁও জেলাপর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বীজ উৎপাদনকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার এই ধারাবাহিক সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও মাধ্যমে প্রকল্প থেকে নগদ অর্থ ও সনদ  দেয়া হয়। অত্র এলাকার কৃষকদের কাছে তিনি বীজের ডিলার এবং নির্ভরযোগ্য বীজ ব্যবসায়ী হিসেবে ইতোমধ্যে খ্যাতি লাভ করেছেন। 

লেখক : আঞ্চলিক বেতন কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রংপুর অঞ্চল, মোবাইল : ০১৭১২৬২৬২৯৬,rangpur@ais.gov.bd