শীতকালীন সবজির রোগ ও প্রতিকার
ড. মোঃ হাফিজুর রহমান
বাংলাদেশে সারা বছরই সবজি চাষ হলেও বেশির ভাগ সবজি শীতকালে উৎপাদিত হয়। আমাদের দেশে সাধারণত বছরের পর বছর একই জমিতে কৃষকরা সবজি চাষ করেন। একই জমিতে একই ফসল চাষ করলে রোগের ইনোকুলাম বৃদ্ধি পায় যার ফলে অনুকূল পরিস্থিতিতে মহামারি আকারে রোগ বিস্তার লাভ করে। চারাপর্যায় থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত সবজি উৎপাদনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ফসলের রোগবালাই এবং পচন যা মাঠে দাঁড়ানো ফসলে এবং সবজি ট্রানজিট, সংরক্ষণ ও বিপণনের সময় বিভিন্ন অণুজীব দ্বারা ঘটে থাকে। বিভিন্ন পরিবারের শাকসবজির প্রধান প্রধান রোগ ও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নি¤েœ আলোচনা করা হলো।
কপি (ফুলকপি, বাঁধাকপি) জাতীয় সবজির রোগও তার প্রতিকার
রোগের নাম : নেতিয়ে পড়া
রোগের কারণ : Pythium sp, Phytophthora spp., Rhizoctonia solani, Fusarium spp., Sclerotium rolfsii নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : চারা অবস্থায় এই রোগ হয়; শিকড় পচতে শুরু করে মাটির উপরের কা-ে সংকোচন দেখা দেয়; চারা গাছ মাটির উপর হেলে পড়ে ও মারা যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা : বীজতলার মাটি ৪.০% ফরমালিন অথবা শুকনা করাতের গুঁড়া দ্বারা শোধন করতে হবে; বপনের পূর্বে ০.২৫% ভিটাভেক্স ২০০ নামক ছত্রাক নাশক দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে; আর্দ্র ও স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে বীজতলা তৈরি করা যাবে না; রোগ দেখা দিলে রিডোমিল গোল্ড এম জেড-৭২ নামক ছত্রাকনাশক ০.২% হিসেবে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার বীজতলায় ঢেলে দিতে হবে; সরিষার খৈল বীজ বপনের ১৫ দিন পূর্বে ৩০০ কেজি/হে. হিসাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে; মুরগির বিষ্ঠা বীজ বপনের ৩ সপ্তাহ আগে ৩ টন/হে. হিসেবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
রোগের নাম : মূল পচা
রোগের কারণ : Sclerotium rolfsii নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : মাটি বরাবর গাছের গোড়ার টিস্যু পচে যায় এবং সাদা মাইসেলিয়াম দেখা যায় ও পরে গাছ মরে যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা : ভিটাভেক্স-২০০ বা ব্যাভিস্টিন /নোইন ০.২% অথবা স্যাভলন ০.৫% হারে পানিতে মিশিয়ে স্টেম বেসের চারপাশে স্প্রে করলে অত্যন্ত কার্যকর ফল পাওয়া যায়
রোগের নাম : ব্লাকলেগ
রোগের কারণ : Phoma lingam নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : জমিতে অধিক রস থাকলে ফসলের যে কোন বয়সে আক্রমণ হতে পারে; আক্রান্ত গাছ ফ্যাকাশে সবুজ বা হলুদ হয়ে ঢলে পড়ে মারা যায়; আক্রান্ত গাছে কা-ে মাটির উপরে ও নিচে কালো দাগ দেখা যায়; পচা অংশ এক ধরনের উগ্র, বিদঘুটে গন্ধ ছড়ায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা : ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৩০ মিনিটের জন্য গরম পানিতে বীজ শোধন ; দুই থেকে তিন বছর ফসল আবর্তন ভিটাভেক্স-২০০ বা ব্যাভিস্টিন /নোইন ০.২% অথবা স্যাভলন ০.৫% হারে পানিতে মিশিয়ে স্টেম বেসের চারপাশে স্প্রে করলে অত্যন্ত কার্যকর ফল পাওয়া যায়।
রোগের নাম : ফুলকপির কার্ড রট/ কার্ডপচা
রোগের কারণ : : Fusarium equisiti, Alternaria spp নামক ছত্রাক Ges Erwinia carotovora এবং নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : Gurd এর উপর প্রথমে ডিম্বাকৃতি বাদামি দাগ দেখা যায়; দাগ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে কার্ডের সর্বাদিক অংশে ছড়িয়ে পড়ে; পচা কার্ড বীজের জন্য ফুল ফোটাতে ব্যর্থ হয়।
প্রতিকার ব্যবস্থা
ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন; কপি জাতীয় ফসল ছাড়া অন্য ফসলের সাথে শস্য আবর্তন ; রোগ দেখা দিলে রোভরাল এবং ব্যাভিস্টিন নামক ছত্রাক নাশক ০.২% হিসাবে র্পযায়ক্রমে ৫ বার ১০ দিনের ব্যবধানে স্প্রে করতে হবে।
রোগের নাম : বাঁধাকপির টিপবার্ন
বাতাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মাটির আর্দ্রতার অভাব বা মাটির অতিরিক্ত আর্দ্রতা টিপবার্নের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে; টিপবার্ন সাধারণত তরুণ, দ্রুত বর্ধনশীল পাতার টিস্যুতে বিশেষত কার্ড বৃদ্ধিও সময় ঘটে; অধিক নাইট্রোজেন সার প্রয়োগের কারণে ফুলকপি ও বাঁধাকপিতে টিপবার্নের প্রবণতা বাড়ে।
রোগের নাম : অল্টারনারিয়া লিফ ব্লাইট
রোগের কারণ : Alternaria brassicicola, A. brassicae নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ :
পাতায় ছোট ছোট বাদামি দাগ দেখা যায় এবং দাগগুলো একত্র হয়ে অনিয়মিত বড় দাগের সৃষ্টি হয় ও পাতার টিস্যু মারা যায়
প্রতিকার ব্যবস্থা : রোগ দেখা দিলে ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে ৪ বার রোভরাল ৫০ ডব্লিউপি বা ইমপ্রোসাম নামক ছত্রাকনাশক ০.২% হারে পানিতে মিশিয়ে পর্যায়ক্রমে ফলিয়ার স্প্রে করতে হবে।
আলু, বেগুন, টমেটোর রোগও তার প্রতিকার
রোগের নাম : বেগুনের ফোমোপসিস ব্লাইট রোগ
রোগের কারণ :Phomopsis vexans নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : ফল পচে যায় তবে পাতা এবং কা-কে সংক্রামিত করতে পারে, পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে; মাটি সংলগ্ন কা-ের ত্বক পচে অভ্যন্তরীণ টিস্যুগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায়; ফলে প্রবল বাতাসে এ ধরনের গাছ মূল কা- ভেঙে নিচে পড়ে যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা : সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা; চারা লাগানোর তিন সপ্তাহ আগে হেক্টর প্রতি আধাপচা মুরগীর বিষ্ঠা ৫ টন বা সরিষার খৈল ৬০০ কেজি বা ট্রাইকো-কম্পোস্ট ২.৫ টন জমিতে প্রয়োগ করে দমন করা যায়; ট্রাইকো-লিচেট প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলি মিশিয়ে সব্জির বাড়ন্ত অবস্থা থেকে ১০/১৫ দিন অন্তর ¯েপ্র করা; ব্যাভিস্টিন (১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে) পানির সাথে মিশিয়ে ¯েপ্র করা।
রোগের নাম : আলু, বেগুন, টমেটোর ঢলে পড়া বা ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট
রোগের কারণ : Ralstonia solanacearum নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : যে কোন বয়সে এ রোগ হতে পারে; প্রথমে যে কোন পাতা বা একটি শাখার পাতা আংশিকভাবে ঢলে পড়ে; উচ্চ তাপমাত্রা (৩০-৩৫ সে.) উক্ত ঢলে পড়াকে খুবই ত্বরান্বিত করে এবং অকালে গাছ মরে যায়; কর্তিত কা- পরিষ্কার পানিতে স্বচ্ছকাচের গ্লাসে আধা ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখলে ব্যাকটেরিয়ার সাদা দুধের মতো ধারা বেরিয়ে আসে; কর্তিত কা- দুই আঙুলে চাপ দিলে ব্যাকটেরিয়ার পুঁজ বেরিয়ে আসে।
প্রতিকার ব্যবস্থা : চারা লাগানোর ২ সপ্তাহ আগে হে: প্রতি আধা পচা মুরগির বিষ্ঠা ৫ টন বা সরিষার খৈল ৬০০ কেজি বা ট্রাইকো-কম্পোস্ট ২.৫ টন জমিতে প্রয়োগ করা; রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার; পর্যাপ্ত মাত্রায় জৈব ও সুষম রাসায়নিক সার প্রয়োগ; রোগ দেখা দেয়া মাত্র সেচ বন্ধ রাখা; প্রতি বছর কমপক্ষ ৪-৫ মাস পানির নিচে থাকে এরূপ জমি ভাল; আক্রান্ত জমিতে কমপক্ষে ৪ বছর শস্যপর্যায় অবলম্বন করতে হবে; লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা; প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ কেজি স্টাবল ব্লিচিং পাউডার দ্বারা মাটি শোধন করা।
রোগের নাম : টমেটো ও আলুরআগাম ব্লাইট
রোগের কারণ :Alternaria solani নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : সাধারণত : একটু বয়স্ক গাছে এ রোগ দেখা দেয়; এ রোগ পাতার উপরে ছোট ও বড় এক বা একাধিক বলয় আকারের (ঈড়হপবহঃৎরপ ৎরহম) বাদামি রঙের দাগ পড়ে; রোগের প্রকোপ বেশি হলে একাধিক দাগ মিলে বড় বাঁকাতেড়া আকারের দাগ বা ক্ষতের সৃষ্টি করে, এ অবস্থায় আক্রান্ত গাছের পাতা ঝলসে শুকিয়ে কুঁকড়ে যায়।
রোগের প্রতিকার : সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে; সুষম সার প্রয়োগ এবং সময়মতো সেচ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। আক্রমণের পূর্বে ডাইথেন এম-৪৫ ০.২% হারে স্প্রে করলে এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
রোগের নাম : আলুর লেট ব্লাইট
রোগের কারণ :Phytophthorainfestans নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
অনুকূল আবহাওয়া : ১০ সে: থেকে ২৫ সে: তাপমাত্রায়, ঘন কুয়াশায়, মেঘলা আবহাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে; পাতা সবসময় ভিজা থাকলে রাতের তাপমাত্রা ১৫-২৪০ সে. এবং দিনের তাপমাত্রায় ৩৫০ সে. হলেও এ রোগের বিস্তার ঘটে।
রোগের বিস্তার : প্রধান উৎস হলো আক্রান্ত বীজ। সাধারণত এক হেক্টর জমিতে একটি রোগাক্রান্ত বীজ আলু থাকলে সেটাই অনুকূল পরিবেশে ঐ পরিমাণ জমির ফসল মড়ক রোগে নষ্ট করে ফেলতে পারে; বাতাস, বৃষ্টিপাত, সেচের পানি বিভিন্ন উপকরণ ইত্যাদির সাহায্যে এ রোগের জীবাণু আক্রান্ত গাছ থেকে সুস্থ গাছে বিস্তার লাভ করে; বিকল্প পোষক যেমন টমেটো গাছ থেকেও এ রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে। হিমাগারে রাখা আলুতে এই রোগজীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং গাছ গজানোর ৪৫-৫০ দিন পর অনুকূল পরিবেশে রোগের সূচনা করে।
গাছে রোগের লক্ষণ : পাতার উপরের দিকে ফিকে সবুজ বা হালকা হলুদ রং এর দাগ পরে, দাগের ভেতরের অংশ প্রথমে পানি ভেজা বাদামি থেকে কালো বর্ণ ধারণ করে; আক্রান্ত পাতার নিচের দাগের চারিদিকে সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক দেখা যায় ।
টিউবারেও রোগের আক্রমণ দেখা যায়
পাতা থেকে স্পোরানজিয়া মাটিতে ধুয়ে গেলে জমিতে আলুর কন্দ সংক্রমিত হয়। সংক্রমণ সাধারণত কন্দের ফাটল, চোখ বা লেন্টিসেলে শুরু হয়; বেগুনি বা বাদামি রঙ্গের দাগগুলো জল-ভেজানো, গাঢ়, কিছুটা লালচে বাদামি টিস্যু (মাংসে ৫ থেকে ১৫ মিমি) কন্দের উপর লক্ষ্য করা যায়; পরে আক্রান্ত স্থানগুলো শক্ত ও শুষ্ক হয়ে কিছুটা ডুবে (ংঁহশবহ) যায়; ক্ষতগুলো ছোট হতে পারে বা কন্দের প্রায় পুরো পৃষ্ঠকে জড়িয়ে থাকতে পারে; স্টোরেজে সংক্রমিত কন্দের পৃষ্ঠে বা বাছাই স্তূপগুলোতে স্পেরুলেশন হতে পারে। সংক্রমিত কন্দগুলো প্রায়ই ংড়ভঃ ৎড়ঃ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়, যা দ্রুত সংলগ্ন ভালো আলুগুলোকে দুর্গন্ধযুক্ত এবং পচে যেতে পারে।
রোগের প্রতিকার : মনে রাখতে হবে, লেট ব্লাইট রোগ দমনের জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয় তাই; আক্রান্ত বীজ আলুর জমি থেকে বীজ রাখা যাবে না, ভালো প্রতিষ্ঠানের বীজ রোপণ করতে হবে; প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউপি দ্বারা বীজ শোধন করে নিলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে; নিয়মিতভাবে ৭-১০দিন অন্তর ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন-পেনকোজেব/ডায়াথেন এম ৪৫/এগ্রিজেব/ এন্ডোফিল ৪ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে দিয়ে ফসলটি স্প্রে করে এ রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়; আবহাওয়া খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তার আগে ও পরে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করতে হবে; এ রোগ দেখা দিলে বা আক্রমণের সময় জমিতে সেচ ও সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। এসময় সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হলে তার আগে ও পরে অবশ্যই ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে; আগাম জাতের আলু চাষ করতে হবে এবং আগাম সংগ্রহ করতে হবে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত); সারিতে ভালভাবে মাটি উঁচু করে দিতে হবে; রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হলে আরো ঘন ঘন ঔষধ ছিটানোর প্রয়োজন পড়তে পারে। ছত্রাকনাশক ভালোভাবে ছিটাতে হবে যাতে পাতার নিচের অংশও ছত্রাকনাশকের পানিতে ভিজে যায়। রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে নিম্নের যে কোন একটি ছত্রাকনাশক বা ছত্রাকনাশকের মিশ্রণ ৭ দিন পর পর পাতার উপরে ও নিচে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
এক্রোভেট এম জেড ২ গ্রাম +ডাইথেন এম-৪৫/এন্ডোফিল এম জেড ২ গ্রাম + প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউপি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে অথবা; সিকিউর ২ গ্রাম + ডাইথেন এম-৪৫/এন্ডোফিল এম জেড ২ গ্রাম + প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউপি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে অথবা; মেলোডি ডুও ২ গ্রাম +ডাইথেন এম-৪৫/এন্ডোফিল এম জেড ২ গ্রাম + প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউপি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এ রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় ।
রোপণের ৮০ দিন পর আলু গাছের উপরের অংশ সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলে আলু মাটির নিচে কয়েকদিনের জন্য রেখে দিতে হবে (হাম পুলিং); মাটি ভেজা অবস্থায় কিংবা বৃষ্টির পর পর আলু না তুলে শুকনা অবস্থায় মাটিতে জো এলে আলু তুলতে হবে; রোগাক্রান্ত গাছ দিয়ে আলুর স্তূপ বা সংগৃহীত আলু ঢেকে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে; ফসল তোলার৭-১০ দিন আগে পাতা ধ্বংস করা উচিত; হিমাগারে আলু রাখার আাগে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বীজ বাছাই করতে হবে, যাতে কোনোভাবে আক্রান্ত আলুবীজের সাথে না থাকে।
শিমজাতীয় ফসলের রোগও তার প্রতিকার
রোগের নাম : এনথ্রাকনোজ
রোগের কারণ :Colletotrichum lindemuthianum নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
গাছে রোগের লক্ষণ : শিমের উপর কালো, নিমজ্জিত ক্ষতের সাথে দাগের কেন্দ্রে হালকা বা ধূসর রঙের এরিয়া দেখা যায়; কা-ের উপর লম্বালম্বি ভাবে ডার্ক বাদামি আইস্পট পড়ে; কচি চারাগুলোর কা-ে আইস্পট বড় হয় এবং কা- ভেঙে যেতে পারে।
রোগের প্রতিকার : রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে; রোপণের পূবে ২.৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স ২০০ প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে; অনুমোদিত ছত্রাকনাশক টিল্ট ২৫০ ইসি ০.০৫% হিসেবে বা ব্যাভিস্টিন নোইন/২০ গ্রাম ১০ লি: পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন অন্তর ৩ বার স্প্রে করতে হবে। অথবা একোনাজল আক্রমণের শুরুতেই প্রয়োগ করতে হবে। অথবা ডাইথেন এম-৪৫ ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এ রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় ।
রোগের নাম : সারকোসপোরা লিফ স্পট
রোগের কারণ : Cercospora cruenta,Cercospora নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
গাছে রোগের লক্ষণ : পাতার ওপর গোলাকার থেকে কৌনিক দাগ দেখা যায়; কয়েকটি দাগ একত্র হয়ে বড় দাগ তৈরি হাত পারে; দাগের কেন্দ্রটি ধূসর হয়ে যায় এবং বোর্ডারটি হয় লালচে বা গাঢ় বাদামি; পাতার দাগের কেন্দ্রটি শুকিয়ে ঝরে পড়ে ছিদ্রযুক্ত পাতায় পরিণত হয়।
রোগের প্রতিকার : রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে; রোপণের পূর্বে ২.৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স ২০০ প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে; অনুমোদিত ছত্রাকনাশক টিল্ট ২৫০ ইসি ০.০৫% হিসাবে বা ব্যাভিস্টিন নোইন /২০ গ্রাম ১০ লি: পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন অন্তর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
সবজির ভাইরাস রোগ দমন ব্যবস্থাপনা
রোগাক্রান্ত গাছ দেখামাত্র তুলে নষ্ট করা; সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা; ইমিডাক্লোপ্রিড কীটনাশক দিয়ে পোকা যেমন- এফিড, সাদা মাছি দমন করা। এডমায়ার নামক কীটনাশক ০.২৫ মিলি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে অথবা ১-২ মি.লি. নিম/সরিষার তেল প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে। সাদা বা হলুদ ট্রাপ ব্যবহার করে বাহক পোকা দমন।
লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, শিবপুর, নরসিংদী, মোবাইল : ০১৭২০৬৪৫৬২৯