Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কাজুবাদামের-উন্নত-চাষাবাদ-কৌশল

কাজুবাদামের উন্নত চাষাবাদ কৌশল 
কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী
কাজুবাদাম গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, বহু বর্ষজীবী এবং চিরসবুজ বৃক্ষ। কাজুবাদাম গাছে পুরুষ এবং উভলিঙ্গ ফুল একই মুকুলে থাকে। ফুলগুলো ৫টি চোঙ্গাকার বৃতি দ্বারা আবৃত থাকে। খুব ছোট ছোট ফুল হয় যা লম্বায় প্রায় ৭-১৫ মিমি হয়। উভলিঙ্গ ফুলের পুংকেশরের ফিলামেন্ট ছোট হয় যার জন্য স্বপরাগায়ন কঠিন হয় এবং তুলনামূলকভাবে পরপরাগায়ন সহজ হয়। সকাল ৯টা থেকে ফুল ফোটে এবং দুপুর ১টা পরযন্ত পরাগায়ন চলতে থাকে। পরাগায়নের ৬-৮ সপ্তাহ পর ফলের দেখা পাওয়া যায়। প্রধানত মৌমাছি ও অন্যান কীটপতঙ্গ দ্বারা পরপরাগায়ন হয়।
কাজু ফল : কাজু ফলকে কাজু আপেল বলা হয়। কাজু আপেল মূলত একটি স্যুডো ফ্রুট যার নিচে নাট বা বাদামটি ঝুলে থাকে। পরাগায়নের এক সপ্তাহ পর ছোট আকারের সবুজ রংয়ের নাট সহ আপেল দেখা যায়। প্রথমত নাটটি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ৮০% বৃদ্ধি হওয়ার পর কাজু আপেলটি বৃদ্ধি পায়। পরিপক্ব কাজু আপেল লাল, হলুদ, কমলা ইত্যাদি রঙের হয় এবং আপেলের আকার ধারণ করে। রসালো কাজু আপেল থেকে প্রাকৃতিক বা অ্যালকোহলিক পানীয়, জ্যাম, জুস, জেলি, সিরাপ ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করা হয়। কাজু আপেল ভিটামিন সি, এন্টি অক্সিডেন্ট, মিনারেলস এবং সুগার সমৃদ্ধ হয়। ১০০ গ্রাম কাজু আপেল জুসে ২৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে যা অন্যান সাইট্রাস জাতীয় ফলের তুলনায় ৫-৬ গুণ বেশি।
কাজুবাদাম :  কাজুবাদাম বা বীজ কাজু ফলের বাইরের দিকে সংযুক্ত নিচে থাকে। কাজুবাদামই প্রকৃত ফল বা ড্রুপ জাতীয় ফল। কাজুবাদামের তিনটি অংশ যেমন: কারনেল, শেল এবং টেস্টা। কারনেলই হচ্ছে খাওয়ার উপযোগী কাজুবাদাম এবং অনন্য পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মূল্যবান খাবার যার চাহিদা ও জনপ্রিয়তা গোটা পৃথিবীতে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 
কাজুবাদামে ৫% পানি, ৩০% কারবোহাইড্রেট, ৪৪% ফ্যাট এবং ১৮% প্রোটিন রয়েছে। ১০০ গ্রাম কাজুবাদাম ৫৫৩ কিলোক্যালরি শক্তি, ফ্যাটের ৬৭%, প্রোটিনের ৩৬%, ডায়েটরি ফাইবারের ১৩% এবং কার্বহাইড্রেটের ১১%  ডেইলি ভ্যালু সরবরাহ করে।
কাজুবাদাম মিনারেলের সমৃদ্ধ উৎস (২০ বা বেশি ডেইলি ভ্যালু)। এ ছাড়া কপার, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাঙ্গানিজেরও সমৃদ্ধ উৎস (৭৯-১১০% ডেইলি ভ্যালু)। থায়ামিন, ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন কে (৩২-৩৭% ডেইলি ভ্যালু)। আয়রন, পটাশিয়াম, জিংক ও সেলেনিয়ামেরও উচ্চ মাত্রার উৎস (১৪-৬১% ডেইলি ভ্যালু)। ১০০ গ্রাম কাজুবাদামে বিটা-সাইটোসটেরল আছে ১১৩ মিলিগ্রাম।
কাজুবাদাম রোস্টেড, সল্টেড, সুইটি বা ফ্লেবারড খাবার হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। কাজু কারনেল বা বাদাম আস্ত, টুকরা, গুঁড়া বা পাউডার রূপে খাওয়া হয়। ইদানীং কাজু মিল্কও জনপ্রিয় হচ্ছে। শেলে এক ধরনের নকশাস কারডল এবং এনাকার্ডিক এসিড থাকে যার সংস্পর্শে মুখে, চামড়ায় জ¦ালাপোড়া বা ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। শেল থেকে এক ধরনের ফেনলিক অয়েল পাওয়া যায় যা সিএনএসএল নামে পরিচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাই প্রোডাক্ট। সিএনএসএল রেজিন, জৈব বালাইনাশক, পলিমারাইজিং, ড্রাগ, সিমেন্ট ইত্যাদি শিল্পে ব্যবহার হওয়া আন্তর্জাতিক বাজারে একটি মূল্যবান বাই প্রোডাক্ট। 
জলবায়ু ও মাটি : পাহাড়, সমতল বা উপকূল সব জায়গায় কমবেশি কাজুবাদাম জন্মাতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে কাজুবাদাম চাষাবাদের জন্য আদর্শ হলো মাটির পিএইচ ৫.৮ থেকে ৬.৮, সুনিষ্কাশিত বেলে দোয়াশ মাটি, ২০-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০০-২০০০ মিমি। ফুল আসা বা ফল ধরার সময় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি থাকলে ফলনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে। ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচের তাপমাত্রায় গাছে ফুল আসতে দেরি হয়। এ ছাড়া অত্যধিক বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় (৮৫% এর বেশি) ফুল ও ফল ঝরে যায়, ছত্রাকজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
জাত নির্বাচন : বাংলাদেশে কাজুবাদামের কোন অনুমোদিত জাত নেই। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় কিছু স্থানীয় জাতের চাষ করা হয়। কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের ডিএই ও  বারি অঙ্গ হতে কম্বোডিয়া ও ভারত হতে কিছু উচ্চফলনশীল হাইব্রিড ও ননহাইব্রিড জাতের চারা/কলম আমদানি করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে উন্নত ও উচ্চফলনশীল জাতের কাজুবাদাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। যেমন গাছপ্রতি ফলন, নাটের ওজন, কার্নেলের ওজন, শেলিং এর শতকরা হার ইত্যাদি। এ দেশে কাজুবাদামের গাছপ্রতি ফসল খুবই কম। কাজুবাদামের বাগান করার সময় অবশ্যই মানসম্পন্ন, উন্নত জাতের চারা/কলম রোপণ করতে হবে। যে জাতের গাছে বড় আকারের বাদাম হয় এবং ফলন ভালো হয় এমন গুণসম্পন্ন বাদামের চারা/কলম লাগাতে হবে।
রোপণ পদ্ধতি, মাদায় সার প্রয়োগ ও মালচিং: মাটির উর্বরতা, প্রকার এবং জমির টপোগ্রাফির উপর চারা/কলম লাগানোর পদ্ধতি বা লেআউট নির্বাচন করতে হবে। কাজুবাদামের বাণিজ্যিক বাগান স্থাপনের জন্য সাধারণত বর্গাকৃতি, আয়তাকার এবং ত্রিভুজাকৃতি বা কনট্যুর পদ্ধতিতে চারা/কলম লাগানোর সুপারিশ করা হয় (সারণি দ্রষ্টব্য)। 
আন্ত:ফসল : কাজুবাদাম গাছকে ছায়া প্রদান করবে না আবার ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের পোষক হবে না এমন ফসল আন্ত ফসল হিসাবে বেছে নিতে হবে। বর্গাকৃতির বা আয়তাকার পদ্ধতিতে সৃজিত বাগানের দুই সারির ফাঁকা স্থানে স্বল্পমেয়াদি আনারস, কচুুজাতীয় সবজি, মসলাজাতীয় ফসল যেমন-আদা হলুদ চাষ করা যায়। ফসলের মধ্যে সিম গোত্রীয় ফসল যেমন চীনা বাদাম, সিম, ফেলন সহ অন্যান্য ডাল জাতীয় ফসলের আবাদ করলে বাড়তি আয়ের পাশাপাশি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং আগাছার প্রাদুর্ভাব কমে।                                                               
মালচিং : কাজু বাগান সাধারণত পতিত, অনুর্বর ও বালি মাটিতে চাষ করা হয়। তাই সেখানে পানির অভাব পরিলক্ষিত হয়। মালচিং পদ্ধতি সে অবস্থায় গাছের উপকার করে থাকে। বিশেষ করে চারা অবস্থায় মালচিং আরো বেশি উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে কালো পলিথিন দ্বারা মালচিং করা হলে গাছের বৃদ্দি,সজীবতা ও ফলন বেশি হয়।
আগাছা দমন : আগাছা খাদ্য ও পানির উপর ভাগ বসায়। বৃষ্টির পর কোদাল দ্বারা হালকাভাবে কোপায়ে আগাছা দমন করতে পারলে ভাল। আগাছানাশক দ্বারা আগাছা দমন না করাই উত্তম। তবে সময়মতো শ্রমিক পাওয়া না গেলে আগাছানাশক দ্বারা আগাছা দমন করা যেতে পারে। 
সার ব্যাবস্থাপনা : গাছের সারের পরিমাণ নির্ভর করে মাটির বুনট, মাটির র্উরতা, আবহাওয়া ও গাছের বয়সের উপর। 
সেচ : খরার সময়ে সেচ দিতে পারলে ছোট চারা গাছের বৃদ্ধি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। চারা গাছে সেচ দেয়ার জন্য ড্রিপ বা স্প্রিংলার পদ্ধতিতে সেচ দেয়া ভালো উপায়। ফুল-ফল ধরার সময় অতিরিক্ত খরা হলে কচি ফল ঝরে পড়ার সমস্যা দেখা যায়। তাই খরা মৌসুমে সেচ দিতে পারলে ফল ঝরা রোধ করে ফলন বৃদ্ধি করে। পাহাড়ি অঞ্চলে সেচ পদ্ধতির মধ্যে ড্রিপ সেচ পদ্ধতি সবচেয়ে উপযুক্ত। কেননা এতে পানি সবচেয়ে বেশি সাশ্রয় হয়। আগাছার প্রাদুর্ভাব কম হয়। আর বাষ্পীভবনের  মাধ্যমে পানি নষ্ট কম হয়। 
ভূমির ক্ষয়রোধ ও মাটির আদ্রতা সংরক্ষণ : পাহাড়ি এলাকার ঢালু জমির জন্য ভূমি ক্ষয়রোধ ও মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণের জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে। নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি ট্রেঞ্চ, ক্রিসেন্ট বাউন্ড ট্রেঞ্চ, বৃত্তাকার ট্রেঞ্চ ইত্যাদি পদ্ধতি ঢালু জমিতে কাজুবাদামের উৎপাদন বৃদ্ধিতে র্কাযকরী উত্তম পদ্ধতি। ৩.৫ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও .৫ মিটার গভীর ট্রেঞ্চে নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি পদ্ধতিতে খুব ভালোভাবে মাটির আর্র্র্দ্রতা সংরক্ষণ করা যায় 
ডালপালা ছাঁটাইকরণ (প্রুনিং) : গ্রাফটিং বা কলমের চারার ক্ষেত্রে রুটস্টক থেকে কোন প্রকার শাখা-প্রশাখা বের হলে তা  যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেটে দিতে হবে। কেননা এগুলো জোড়া লাগানো সায়নকে দুর্বল করে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত কলমটি মারা যায়। কাজুবাদামের গাছ দ্রুত বর্ধনশীল বিধায় রোপণের ২/৪ বছরের গাছ ঝড় বাতাসে সহজে হেলে পড়ে। শক্ত সামর্থ কাঠামো গঠনের জন্য গাছের নিচের এবং পাশের ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। গাছকে নির্দিষ্ট উঁচুতে রাখতে প্রায় ১-১.৫ মিটার উচ্চতায় মূল বা প্রধান কা-ের মাথা কেটে দিতে হবে। পরবর্তীতে মাটি থেকে ২-২.৫ মিটার হলে আবার প্রধান প্রধান কা-গুলোর মাথা কেটে দিতে হবে। এভাবে গাছকে ছোট অবস্থায় ঝোপালো গাছ গঠন করতে হবে। পরর্তীতে শুধু আড়াআড়ি ভাবে থাকা মরা ডাল রোগ/পোকামাকড়ে আক্রান্ত ডালপালা এবং অতিরিক্ত ঘন ডালপালা কেটে রাখতে হবে। বড় ডালপালার কাটা অংশে বোর্দ্রাে পেস্ট লাগাতে হবে। যাতে পরবর্তীতে ছত্রাকজনিত রোগের আক্রমণ রোধ করা যায়। ছাঁটাইয়ের কাজ ফল সংগ্রহের পর বর্ষার পূর্বে অথবা বর্ষা শেষে অর্থাৎ আগষ্ট- সেপ্টেম্বর মাসে করা উচিত। হাইডেনসিটি কাজুবাদামের বাগানে প্রতি বছর জুলাই আগস্ট মাসের মধ্যেই প্রুনিং এর কাজ শেষ করতে পারলে ভালো। 
বালাই ব্যবস্থাপনা : বাংলাদেশে কাজুবাদামের চারা কলম থেকে শুরু করে ফলন্ত গাছে বেশকিছু ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও রোগ জীবাণুর সংক্রমণ হয় এবং কাজুবাদাম ফসলের অনেক ক্ষতিসহ ফলন কমে যায়। কাজুবাদামের মারাত্মক ক্ষতিকর কয়েকটি পোকা মাকড় ও রোগ জীবাণু যেমন : কা- ও মূল ছিদ্রকারী পোকা; টি মসকিউটু বাগ; থ্রিফস; ফল ও বাদাম ছিদ্রকারী পোকা; লিফ মাইনার ও মিলি বাগ ইত্যাদি । এই সকল পোকার আক্রমণে কাজুবাদামের ফলন প্রায় ৩০% কম হতে পারে। টি মসকুইটো বাগের অপরিণত নিম্ফ এবং পরিণত পোকা গাছের পাতা, কা-, পুষ্পমঞ্জরি এমনকি কাজুবাদামের ফলের রস চুষে খায়। কচি ডাল আক্রান্ত হলে আগামরা রোগ দেখা যায়। এই পোকার বংশবৃদ্ধি বর্ষার প্রারম্ভেই হয়ে থাকে যখন গাছে কচি ডালপালা ও কুশি দেখা যায়। কা- ও মূল ছিদ্রকারী পোকার গ্রাবসমূহ কা- ও মূলের টিস্যু ছিদ্র করে এবং সাব-এপিডারমাল টিস্যু খেয়ে অনিয়মিত সুড়ঙ্গ তৈরি করে। এর ফলে গ্যামোসিস দেখা যায়, পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে এবং ডালপালা শুকিয়ে যায়।
রোগ :  কাজুবাদামে বেশ কিছু রোগের সংক্রমণ দেখা যায়। যেমন: পাউডারি মিলডিউ, ডাইব্যাক, এনথ্রাকনোজ, ডেম্পিং অব ইত্যাদি রোগের সংক্রমণে কাজুবাদামের ক্ষতি হয়ে থাকে। প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক সমন্বিত বালাই দমনব্যবস্থার মাধ্যমে এ সকল ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও রোগ জীবাণুর ক্ষতিকারক প্রভাব কমানো যায়। 
বাদাম সংগ্রহ : আমাদের দেশে সাধারণত নভেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফুল আসে এবং এপ্রিল/মে মাসে কাজু বাদাম পরিপক্ব হয়। পরিপক্বের পরপরই এ বাদাম সংগ্রহ করতে হয়। পরিপক্ব হলে বাদাম গাছ থেকে পড়ে যায়। কচি অবস্থায় এ বাদামের ফল থেকে বাদামটি বেশ বড় এবং নরম থাকে। পাকার সময়  বাদামটি উজ্জ্বল রং ধারণ করে এবং খোসা খুব শক্ত, মসৃণ ও ভেতরের বাদাম ভালোভাবে পরিপুষ্ট হয়। এখানে উল্লেখ্য যে বীজের জন্য বাদাম সংগ্রহ করতে হলে  বাদামের  আপেক্ষিক ঘনত্ব ১ এর বেশি হতে হবে। অর্থাৎ বীজ বাদাম পানিতে ডুবালে বাদাম ডুবে যাবে। তখনই বাদাম সংগ্রহ করতে হবে। শুধু বাদাম সংগ্রহের প্রয়োজন হলে, পরিপক্ব ফল গাছ থেকে ঝরে পড়লে তখনই মাটি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। ফল থেকে বাদামটি যতদ্রুত সম্ভব আলাদা করে বাদামটি ভালোভাবে ৪-৫ দিন রৌদ্রে শুকাতে হবে। 
কাজু আপেল সংগ্রহ : যদি ফল থেকে সিরাপ, জ্যাম, জেলি, ভিনেগার ইত্যাদি তৈরি করতে হয়, তবে পরিপক্ব ফল হাত দ্বারা সাবধানে গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। অথবা নিচে জাল বা কাপড় বিছিয়ে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করতে হবে।  বাংলাদেশে ১০ বছরের একটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৪-৬ কেজি বাদাম পাওয়া যায়। উন্নত জাত বা হাইব্রিড জাতের একটি গাছ থেকে গড়ে প্রায় ১০ থেকে ২৫ কেজি বাদাম এবং ৭০-১০০ কেজি কাজু আপেল  পাওয়া সম্ভব। বর্তমানে  এদেশে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১ থেকে ২.৫ মে.টন। তবে উন্নত বা হাইব্রিড জাতের ফলন ৩ থেকে ৫ মে.টন পর্যন্ত হতে পারে।
বাদাম সংরক্ষণ : বাদামগুলো যদি সঠিকভাবে শুকানো না হয় তবে প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় অনেক বাদাম নষ্ট হয়ে বাদ পড়ে যায়। বাদামের আর্দ্রতা ১০% এর নিচে রেখে এবং শুকনা, ঠা-া এবং বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা রয়েছে এমন আদর্শ  গুদামে  ১ বৎসর সংরক্ষণ করা যায়। সংরক্ষণ করার পূর্বে রোগাক্রান্ত, পোকায় আক্রান্ত বা চিটা, দাগ পড়া ও বিকৃত আকারের বাদামগুলো বেছে বাদ দিতে হবে। শুকনা বাদামগুলো বায়ুরোধক বস্তায় সংরক্ষণ করা উচিত। ভালোভাবে শুকানো বাদামগুলো বায়ুরোধক বস্তায় না রাখা হলে বাদামগুলো বাতাসের আর্দ্রতা ধারণ করে নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া কাজুবাদামের বস্তাগুলো সরাসরি ফ্লোরে রেখে কাঠের পাটাতনের উপর রাখতে হবে। কাজুবাদাম বিক্রয় কিংবা প্রক্রিয়াজাতকরণের আগে অক্টোবর/নভেম্বর মাসে কাজুবাদামগুলোকে গুদাম থেকে বের করে পুনরায় রৌদ্রে দিয়ে শুকালে বাদামের গুণাগুণ ভালো থাকে বা সঠিক বিক্রয় মূল্য পাওয়া যায়। (সূত্র : USDA Food Data Central. BARI,) 
 
লেখক : কাজুবাদাম উৎপাদন বিশেষজ্ঞ, কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। মোবাইল : ০১৭১২৫০১৪৯২, ইমেইল:chakrobortykc@gmail.com