Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বীজের-দাগ-রোগ-ও-পরিবেশবান্ধব-প্রতিকার

বীজের দাগ রোগ ও 
পরিবেশবান্ধব প্রতিকার
ড. এ এইচ এম আসাদুর রহমান১ ড. মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম২
বীজের দাগ ধানের একটি জটিল রোগ যা উৎপাদন মওসুম, এলাকার বিভিন্নতা এবং আক্রমণকারী রোগজীবাণুগুলোর উপর নির্ভর করে বিভিন্ন লক্ষণ প্রদর্শন করে। এই গুরুতর রোগকে প্রশমিত করার জন্য, রোগজীবাণুর সুনির্দিষ্ট শনাক্তকরণ প্রয়োজন। জেনেটিক সম্পদের ভালো ব্যবহার, উন্নত কৃষি পদ্ধতির ব্যবহার, রাসায়নিক বা জৈবিক এজেন্ট দিয়ে বীজ শোধনের সাথে জড়িত একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার কৌশল অবলম্বন করতে হবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য।
ধানবীজের দাগ রোগ বিশ্বব্যাপী ধানচাষিদের জন্য একটি বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; কেননা এটি ধানের ফলন এবং গুণগতমান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিভিন্ন কারণে ধানবীজে দাগ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগজীবাণুর সংক্রমণ, পরিবেশ বিপর্যয়জনিত অভিঘাত এবং অনুপযুক্ত স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা। ধানের বীজের মানের জন্য উদ্ভুত বায়োটিক হুমকির মধ্যে রয়েছে পোকামাকড় ও রোগজীবাণুগুলোর বালাইনাশক প্রতিরোধী নতুন নতুন স্ট্রেন এবং এবায়োটিক হুমকির মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত ও অনুপযোগী স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা।
ধানবীজে দাগপড়া রোগের লক্ষণ
বীজের দাগ রোগের লক্ষণ বাহ্যিকভাবে ধানের তুষ বা খোসার উপর এবং অভ্যন্তরীণভাবে চাল বা কার্নেলের উপর কিংবা উভয়ের উপরই দেখা যেতে পারে। প্রধান প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ধানের উপর বাদামি বা কালো বা কালচে বাদামি ডোরা দাগ, ফাঁপা হালকা ওজনের শীষ বা প্যানিকেল, এবং অপুষ্ট দানাসহ সংক্রমিত প্যানিকেল। আক্রমণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে ধান/স্পাইকলেটের উপর বিচ্ছিন্নভাবে ছোট ছোট দাগ পড়া থেকে শুরু করে পুরো ধানই বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। বীজের দাগ রোগ থেকে ধানের বীজপচা, খোল-পচাজাতীয় বিভিন্ন রোগ, শীষ জলসানো, দানার দাগ এবং চাড়াপচা রোগের বিস্তার ঘটতে পারে। বীজের দাগরোগ বীজের অবয়ব তথা বীজের আকার-আকৃতির উপর প্রভাব ফেলে। 
ধানবীজের দাগপড়া রোগের কারণ
ধানবীজে দাগপড়ার জন্য অনেকগুলো ফ্যাক্টর দায়ী হতে পারে যেমন ধান গাছ হেলেপড়া, মাটি ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব এবং রোগজীবাণুর সংক্রমণ। জলবায়ুর আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে নতুন রোগজীবাণুর আবির্ভাব বা একসময়ের দুর্বল রোগজীবাণু হঠাৎকরে তীব্র আক্রমণকারী জীবাণুরূপে আবির্ভূত হয়ে ধানের ফলনে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে। ধানের শীষ বেরোনো ও দানার গঠন পর্যায়ে উচ্চ আর্দ্রতা, পরাগায়নের সময় উচ্চ তাপমাত্রা এবং প্রবল বায়ুপ্রবাহ, পরিপক্ব পর্যায়ে বৃষ্টিপাত, গাছের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, পুষ্টির ঘাটতি, সঠিক পরাগায়ন বা নিষিক্তকরণের অভাব, নির্বিচার রাসায়নিক/ছত্রাকনাশক ব্যবহারজনিত ক্ষত ইত্যাদি বীজে দাগপড়ার জন্য দায়ী।
রোগজীবাণুর সংক্রমণ : বীজের দাগ রোগের প্রধান কারণ হলো বীজে রোগজীবাণুর সংক্রমণ। প্রচুর সংখ্যক ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া ধানের দাগ রোগের যুক্ত  ধানের দানার বিবর্ণতার সাথে যুক্ত। ছত্রাক অণুজীবের দুটি প্রধান গ্রুপ ফিল্ড-ফানজাই এবং স্টোরেজ মোল্ড ধানের দাগ রোগের জন্য দায়ী। ফিল্ড ফানজাই এবং বিভিন্ন মৃতজীবী ছত্রাক স্টোরেজ মোল্ড বীজে দাগ সৃষ্টি করে। শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ দাগপড়া ধানবীজে ব্যাকটেরিয়ার সংশ্লিষ্টতার কথা বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা রিপোর্ট করেছেন সাধারণত কম পরিমাণে হলেও কিছু ক্ষেত্রে ধানের টুংরো ভাইরাস বীজের দাগ বা বীজের বিকৃতি ঘটাতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন। 
পোকামাকড়ের আক্রমণ : কীটপতঙ্গ যেমন ধানের ওইভিল, ধানের মথ এবং অনেকসময় মাজরা পোকাও ধানে ক্ষত তৈরি করতে পারে, যার ফলে বীজে দাগ পড়া, ছত্রাকের মোল্ড জন্মে এবং অন্যান্য রোগজীবাণুর জন্য সংক্রমণের প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বীজের ফলন ও গুণগতমানের ক্ষতি করে।
পরিবেশগত কারণ : খরা, বন্যা, অতিরিক্ত আর্দ্রতা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং মাটির অনুর্বরতাসহ প্রতিকূল পরিবেশগত অভিঘাত ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ এবং দানার দাগ রোগের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে ফলে বীজের ফলন ও গুণমানে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। 
বীজগুদামের অনুপযুক্ত পরিবেশ : অনুপযুক্ত স্টোরেজ ব্যবস্থা, যেমন উচ্চ আর্দ্রতা, অপর্যাপ্ত বায়ুচলাচল এবং তাপমাত্রার ওঠানামা, গুদামজাতকৃত বা সংরক্ষিত ধানে ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং পোকামাকড়ের আক্রমনকে উৎসাহিত করতে পারে। অনুপযুক্তভাবে সংরক্ষণ করা ধানবীজে বিবর্ণতা, ছত্রাকের মোল্ড জন্মানো কিংবা গুধামজাত পোকার উপদ্রবে বীজের কোয়ালিটির অবনমন বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 
রাসায়নিক দূষক : রাসায়নিক দূষক, যেমন নির্বিচারে বালাইনাশক বা আগাছানাশকের ব্যবহার এবং ভারী ধাতুর সংস্পর্শে ধানে রাসায়নিক ক্ষত বা দাগ পড়ে বীজের বিবর্ণতা এবং গুণমানের ত্রুটি হতে পারে। এসব রাসায়নিক দূষকগুলো মাঠে ধানের দানার বিকাশ এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে বীজধানে দৃশ্যমান বিবর্ণতা এবং ভোক্তাদের জন্য স্বাস্থ্যের ঝুঁকি দেখা দেয়।
বীজের ফলন এবং গুণমানের উপর ধানের দাগ পড়া রোগের প্রভাব
ধানে বিভিন্ন আক্রমণকারী রোগজীবাণু যেমন ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত বীজে বিকশিত হয়, ফলে বীজের অভ্যন্তরীণ কোষগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে, অ্যালবুমেনের ক্ষতি করে এবং বীজের জীবনীশক্তিকে নষ্ট করে ফেলে ফলে অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হ্রাস, ত্বক বা খোসার বিবর্ণতা, অঙ্গবিকৃতি এমনকি সংক্রামিত বীজ থেকে টক্সিন উৎপন্ন হতে পারে। বীজবাহিত রোগের কারণে জাতের সংবেদনশীলতা, আক্রমণের তীব্রতা এবং পরিবেশগত আনুকূল্যের উপর নির্ভর করে ধানের ফলন শতকরা ৫০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। 
অঙ্কুরোদগম হার এবং শক্তি হ্রাস : আক্রান্ত বীজের মানের অগ্রহণযোগ্যভাবে অবনমন ঘটতে পারে, অঙ্কুরোদগমের হার ও ক্ষমতা উভয়ই হ্রাস পায় ফলে কম সংখ্যক চারা জন্মায় এবং গাছের বৃদ্ধিতেও রকমফের হয় ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে স্বাভাবিক ফলনের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
ফলন ও গুণমানের ক্ষতি : শস্য দানার ওজন হ্রাস পায়, শীষ বা ছড়ার আকৃতি ছোট হয়ে যায় ফলে ধানের সামগ্রিক ফলন হ্রাস পায়। বিবর্ণ ধানের মিলিংয়ে কম পরিমাণ চাল হওয়া, গুণমান কমে যাওয়ায় বাজারমূল্য কমে যায় এবং খাদ্য ও শিল্প প্রয়োগের জন্য উপযোগিতা কমে যেতে পারে, যা কৃষক এবং স্টেকহোল্ডারদের অর্থনৈতিক ক্ষতিকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
রোগের বিস্তার এবং ফসলের স্বাস্থ্য : দীর্ঘ দূরত্বে উদ্ভিদের রোগজীবাণু বিস্তারের জন্য বীজ একটি অত্যন্ত কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রামিত বা দূষিত বীজ আমদানির ফলে উদ্ভিদ রোগের আন্তর্জাতিক বিস্তারের অসংখ্য নজির বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় রিপোর্ট করেছেন। বীজবাহিত রোগগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটি নতুন রোগজীবাণু প্রবর্তন করতে পারে, পরিমাণগত এবং গুণগতভাবে ফসলের ক্ষতি এবং মাটির স্থায়ী দূষণ ঘটাতে পারে। আক্রান্ত ধানবীজ ক্ষেতে লাগানো হলে এর জীবাণু যেমন ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া আশেপাশের সুস্থ গাছপালা কিংবা পাশাপাশি জন্মানো ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। রোগের প্রাদুর্ভাব সামগ্রিকভাবে ফসলের স্বাস্থ্য নষ্ট করে, ব্যবস্থাপনার খরচ বাড়াতে পারে এবং রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বালাইনাশক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দিতে পারে।
ধানবীজের বাজারমূল্য হ্রাস এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি : এরোগে আক্রান্ত বীজের কোয়ালিটি নিম্নমানের হওয়ায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রত্যাখ্যান বা মূল্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে, যার ফলে কৃষক, ব্যবসায়ী এবং রপ্তানিকারকদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। 
খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীবিকায় প্রভাব : দানার দাগরোগের কারণে ধানের ফলন এবং গুণমান হ্রাস পাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে ধান একটি প্রধান খাদ্যশস্য এবং পুষ্টির প্রাথমিক উৎস। ধান চাষ থেকে আয় কমে যাওয়ায় ধান চাষনির্ভর গ্রামীণ জীবনযাত্রাকে খারাপভাবে প্রভাবিত করতে পারে, দারিদ্র্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে যা গ্রামীণ অর্থনীতি এবং খাদ্য-নিরাপত্তাকে দুর্বল করে দিতে পারে।
যথোপযুক্ত কৃষি পরিচর্যা : অনুপযোগী ফসল পরিচর্যা বীজধানের চাষে ইনপুট সারের প্রয়োগ প্রয়োগে সতর্কতা ও উপযোগী শস্যপর্যায় অনুসরণ করা প্রয়োজন। 
ক্স রোগ-প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনে নির্দিষ্ট ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়াকে অকার্যকর করতে প্রজননবিদদেরকে সঠিক ব্রিডিং কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। 
ক্স রোপণের আগে ধানের বীজকে উপযুক্ত রাসায়নিক বা জৈব বালাইনাশক, বায়োকন্ট্রোল এজেন্ট বা অণুজীবীয় জীবাণুনাশক দিয়ে শোধন করা হয় যাতে বীজবাহিত রোগজীবাণু থেকে ফসলকে রক্ষা এবং বীজের দাগরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এক্ষেত্রে, সুপারিশকৃত নির্দেশিকা এবং নিরাপত্তা সতর্কতা অনুসরণ করে বীজ শোধন করা উচিত। 
ক্স পরিমিত আর্দ্রতা সংরক্ষণ সেচ কৌশল, পর্যায়ক্রমে মাটি ভেজানো এবং শুকানোর (অডউ) মতো কৌশলগুলো রোগের চাপ কমাতে পারে। 
ক্স মাটির স্বাস্থ্যকে উন্নত করে, যেমন মাটিতে জৈব পদার্থ সংযোজন, আচ্ছাদন ফসল বা কভার ক্রপিং এবং লিগুমিনাস জাতীয় ফসল সহযোগে শষ্য-পরিক্রমা মাটির গঠন, পুষ্টি উপাদানের সরবরাহতা এবং অণুজীবীয় ক্রিয়াকলাপকে উন্নত করে উর্বরতা বাড়ায়, যা রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা কমিয়ে স্বাস্থ্যবান ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে। 
ক্স রোগের লক্ষণ, কীটপতঙ্গের উপদ্রব এবং পরিবেশগত প্রভাব পর্যবেক্ষণের জন্য ধানক্ষেত নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে যা রোগবালাইয়ের প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং সময়মতো হস্তক্ষেপের জন্য অপরিহার্য। 
ক্স বীজকে যথাযথভাবে শুকিয়ে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত, সঠিকভাবে বায়ু চলাচল সুবিধাযুক্ত সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণ করা উচিত। 
ক্স দায়িত্বশীলভাবে পরিমিত মাত্রার রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করা প্রয়োজন। পরিবেশগত ক্ষতি যথাসম্ভব ন্যূনতম সীমায় নামিয়ে বালাইনাশক প্রতিরোধেী রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব এড়াতে সুপারিশকৃত প্রয়োগের হার ও মাত্রা ব্যবহার এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সতর্কতা অনুসরণ করতে হবে।
ক্স বায়োকন্ট্রোল এজেন্ট ধানের বীজ বা মাটিতে প্রয়োগ করা হয় যাতে প্রতিযোগিতামূলকভাবে রোগজীবাণুর প্রতিষ্ঠা এবং বিস্তার রোধ করা যায়। নি¤েœ গুরুত্বপূর্ণ কিছু জৈবিক ব্যবস্থাপনা আলোকপাত করা হলো:
ট্রাইকোডার্মা প্রজাতির ছত্রাক ফর্মূলেশন : ট্রাইকোডার্মা প্রজাতির ছত্রাক, যেমন ট্রাইকোডার্মা হারজিয়ানাম এবং  ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি, বিভিন্ন উদ্ভিদের রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে তাদের এন্টি-প্যাথোজেনিক ক্ষমতার জন্য পরিচিত এবং এদের অণুবীজ সরাসরি কিংবা ফর্মুলেশন আকারে এখন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।  এসমস্ত অণুজীব গাছের রাইজোস্ফিয়ার এবং মূলের গাত্রে উপনিবেশ তৈরি করে প্যাথোজেনের সাথে পুষ্টির জন্য প্রতিযোগিতা করে অবদমিত করে রাখে এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল মেটাবোলাইট তৈরি করে, যার ফলে বীজবাহিত রোগের প্রকোপ হ্রাস পায়।
সিউডোমোনাস ও ব্যাসিলাস প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ফর্মূলেশন : সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার কিছু স্ট্রেন, যেমন সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স এবং সিউডোমোনাস পুটিডা ধানের রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে এন্টিপ্যাথোজেনিক কার্যকলাপ প্রদর্শন করে এবং বীজের দাগ দমন করতে পারে
মাইকোরাইজা জাতীয়ছত্রাকের ব্যবহার : আরবাস্কুলার মাইকোরাইজা জাতীয় ছত্রাক ধানের শিকড়ের সাথে মিথোজীবী বা সিম্বায়োটিক অ্যাসোসিয়েশন গঠন করে গাছের পুষ্টি গ্রহণে সহায়তা, চাপ সহনশীলতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অগঋ এর কলোণী মাটিবাহিত রোগজীবাণুর বৃদ্ধি দমন করতে পারে এবং ধানের বীজের দাগপড়া রোগ কমাতে পারে।
ইনডিউসড সিস্টেমিক রেজিস্ট্যান্স : ওঝজ-এর মধ্যে উদ্ভিদের অন্তর্নিহিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয়করণের ক্ষমতা রয়েছে, যেমন প্যাথোজেনেসিস-সম্পর্কিত প্রোটিন এবং ফাইটোঅ্যালেক্সিন উৎপাদন, যা রোগের বিরুদ্ধে গাছকে সুরক্ষা প্রদান করে।
শস্যপর্যায় এবং পলিকালচার বাড়াতে হবে। নন-হোস্ট বা অপোষক জাতীয় ফসলের সমন্বয়ে ধান চাষের ফসলচক্র নির্ধারণ এবং মিশ্রফসলের চাষ বা পলিকালচার অনুশীলন ধানের রোগচক্রকে ব্যাহত করতে পারে, মাটিতে রোগজীবাণুর জনসংখ্যা কমাতে পারে এবং জীববৈচিত্র্যকে সুসংহত করতে পারে। 
ধানের বীজকে উপকারী অণুজীব, যেমন মাইকোরাইজাল ছত্রাক বা রাইজোব্যাকটেরিয়া দিয়ে প্রাইমিং এবং ফোর্টিফিকেশন করলে রোপণের আগে উন্নত পুষ্টি গ্রহণ, চাপ সহনশীলতা এবং রোগ প্রতিরোধী চারা তৈরি হয়। বীজ বায়োফোর্টিফিকেশন বীজের জীবনীশক্তি এবং বীজ থেকে গজানো উদ্ভিদের স্বাস্থ্য বাড়ায়, দাগ পড়া রোধ করে, ফলে বীজের ফলন ও গুণগত মান ভালো হয়।
ধানবীজের দাগ রোগের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি যথেষ্ট হতে পারে, যা ধানচাষি বা বৃহত্তর পরিসরে দেশের অর্থনীতি উভয়কেই প্রভাবিত করে। বীজের গুণমান হ্রাসের ফলে ফলন কম হয়, বাজারমূল্য কমে যায় এবং রোগ ব্যবস্থাপনা ও দমন প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। এতদ্ব্যতীত, বীজের দাগরোগ খাদ্য নিরাপত্তা এবং গ্রামীণ জীবিকাকে ব্যাপক প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভরণ-পোষণ এবং আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে ধান।
 
লেখক : ১উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদ, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের একান্ত সচিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর, ১৭০৬ ২বীজ প্রযুক্তিবিদ, ডিএজিএম, এমএনটি সিড টেস্টিং ল্যাব, লালতীর সিড লিমিটেড, আর এন্ড ডি ফার্ম, বাসন, গাজীপুর। মোবাইল : ০১৭১৭৬৪৫৮৩৯, ই-মেইল : asad@bsmau.edu.bd