৮২তম বর্ষ ড় ১২তম সংখ্যা ড় চৈত্র-১৪২৯ ড় মার্চ-এপ্রিল ২০২৩
সম্পাদকীয়
মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় মাস। ১৯২০ সালে ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মানবদরদী কিন্তু অধিকার আদায়ে আপসহীন। বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ চালায়। ২৬ মার্চ জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম। বাঙালি দীর্ঘ ৯ মাস পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। অভ্যুদয় হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা।
চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধুর আজন্ম স্বপ্ন ছিল কৃষি সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমানে বিশ^ব্যাপী মহামারি, সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানামুখী প্রভাব মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারা অব্যহত রেখেছে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের দিকনির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন যুগোপযোগী নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যার ফলে দানাদার শাকসবজি, ফলমূল ও প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। নেই খাদ্যের ঘাটতি, রয়েছে উদ্বৃত্তী এবং স্থান করে নিয়েছে বিশে^র শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায়। এ অর্জনের কারিগর কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সুশীলসমাজ, বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ ও কৃষকেরা। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে এ সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টিতে বর্তমান কৃষির সাফল্য ও আগামীর কৃষির ভাবনা নিয়ে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তনে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী এর বক্তব্যে এবং পল্লী উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও স্মার্ট পল্লী নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও কৃষিকে টেকসই ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা গতিশীল রাখতে আগামীর কৃষিকথায় উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদ, সফল কৃষকের গল্প ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে পত্রিকাটি। আশা করি সময়োপযোগী কৃষিকথার এ সংখ্যা খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি সমৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
সম্পাদকীয়
মার্চ মাস। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় মাস। ১৯২০ সালে ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত মানবদরদী কিন্তু অধিকার আদায়ে আপসহীন। বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ চালায়। ২৬ মার্চ জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম। বাঙালি দীর্ঘ ৯ মাস পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। অভ্যুদয় হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার। ১৭ মার্চ ২০২৪ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ১০৪তম জন্মবার্ষিকীতে জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য- “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে”।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধুর আজন্ম স্বপ্ন ছিল জনগণের সার্বিক মুক্তি। কৃষি সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার অদম্য চেষ্টা। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমানে বিশ^ব্যাপী মহামারি, সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানামুখী প্রভাব মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার মহাসড়কে রয়েছে। বিশ^পরিম-লে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে উন্নয়নের রোল মডেল। এ ধারা অব্যাহত রেখেছে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের দিকনির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন যুগোপযোগী নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বর্তমান দেশে দানাদার শস্যের ঘাটতি নেই, রয়েছে উদ্বৃত্ত। সে সাথে কৃষিপণ্য স্থান করে নিয়েছে বিশে^র শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায়। প্রকৃতপক্ষে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ-স¥ার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রকৃত দেশপ্রেম নিয়ে সচেতনতার সঙ্গে সবাইকে দেশের জন্য কাজে এগিয়ে আসতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে এবারের কৃষিকথায় ’বঙ্গবন্ধুর গ্রামীণ উন্নয়ন ভাবনা’ তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধনটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও কৃষিকে টেকসই ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা গতিশীল রাখতে কৃষি বিশেষজ্ঞগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, আগামীর কৃষি ভাবনা, সফল কৃষকের গল্প ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের সংখ্যায়। কৃষিকথায় এসব মানসম্পন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি লেখা দিয়ে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করি প্রকাশিত লেখাসমূহ সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সহায়ক হবে।
সম্পাদকীয়
ভাদ্র মাস। এ সময় প্রকৃতিতে কখনো অবিশ্রান্ত বৃষ্টি, কখনো অসহনীয় গরম। সে সাথে পাকা তালের মোহনীয় গন্ধ জানান দেয় এটা ভাদ্র মাস। বাংলাদেশে তালের প্রাচুর্য ও জনপ্রিয়তার কারণে রচিত হয়েছে প্রবাদসহ বিভিন্ন রচনাবলী। ‘ভাদ্র মাসের তাল না খেলে কালে ছাড়ে না’ বলে বাঙালি সমাজে প্রবাদ রয়েছে। প্রিয় পাঠক ভাদ্র মাসে তাল গ্রহণের আমন্ত্রণ রইল।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বর্তমান সরকার রূপকল্প ২০৪১ ঘোষণা করেছেন। এই রূপকল্পসহ জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারি বেসরকারি ও অংশীজনের সমন্বয়ে বাংলাদেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফসলের পাশাপাশি দেশীয় ফল, কফি, কাজুবাদাম, ড্রাগনফলসহ বিদেশী ও অপ্রচলিত ফলের উৎপাদন বাড়ছে প্রতি বছর। বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশ পাট, সুপারি ও শুকনা মরিচ উৎপাদনে দ্বিতীয়; চাল উৎপাদনে তৃতীয়; জামসহ বেরী জাতীয় ফল ও সুগন্ধি মসলা উৎপাদনে চতুর্থ; মসুর ডাল ও গ্রীষ্মম-লীয় ফল (কাঁঠাল, লিচু) উৎপাদনে ষষ্ঠ, পেঁয়াজ, আলু, আদা, বেগুন, শিমের বিচি ও নারিকেল ছোবড়া উৎপাদনে সপ্তম; চা ও কুমড়া উৎপাদনে অষ্টম; আম, পেয়ারা ফুলকপি, ব্রকলি, মটরশুঁটি উৎপাদনে নবম অবস্থানে উঠে এসেছে।
বর্তমান সরকারের লক্ষ্য দেশের মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। টেকসই ও লাভজনক কৃষি ব্যবস্থায় টেকসই পরিবেশ প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্ত বিরূপ প্রভাব আমাদের দেশে দৃশ্যমান। জলবায়ু পরিবর্তনসহ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মুদ্রাস্ফীতির কারণে অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অটল। ৫ জুন ২০২৩ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি সবাইকে গাছ লাগানোর আহ্বান জানান। সেক্ষেত্রে অন্যান্য বৃক্ষের মতো প্রকৃতির আশীর্বাদ তালগাছকে লাগানো যেতে পারে। দেশে তালগাছ কমে যাচ্ছে। প্রকৃতিতেও আসছে বজ্রপাতের বিড়ম্বনা। বাড়ছে মানুষের মৃত্যু সংখ্যা। এ সম্পর্কে কৃষিকথায় এবারের সংখ্যায় ‘নিরাপদে তালগাছ ও তালের গুড় উৎপাদন প্রযুক্তি’ এবং ‘পরিবেশ সুরক্ষায় তালগাছ’ নিবন্ধ দুটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, ফসল উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি, পুষ্টিবার্তা, আগামীর কৃষি ভাবনা, সফল কৃষকের গল্প এবং মৎস্য, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের সংখ্যা। আশা করি, কৃষিকথা জনসাধারণের দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনুপ্রাণিত করবে।
সম্পাদকীয়
আশি^ন মাস। শরতের পরিপূর্ণতার সুহৃদ। শুভ্র প্রকৃতির এ সময় মাঠঘাটে জলাবদ্ধতা থাকে। ফসলের মাঠ সবুজ শ্যামলিমায় ছেয়ে যায়। প্রকৃতির চমৎকার বৈচিত্র্যের পাশাপাশি রয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়া, পোকামাকড়, রোগবালাই ও ইঁদুরের উপদ্রব। ইঁদুর খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক বিরাট হুমকি। আশি^ন মাস ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময়। ১৯৮৩ সাল থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ইঁদুর নিধন অভিযান মাসব্যাপী সারাদেশে একযোগে পরিচালনা করে আসছে। এবছরও সমন্বিতভাবে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২ পরিচালিত হচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাঁরই যোগ্য নেতৃত্বে কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য দেশ ও বিদেশে প্রশংসিত। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। বৈশি^ক রাশিয়া-ইউক্রেনযুদ্ধসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ইঁদুরের উপদ্রব মোকাবিলা করাও সময়ের দাবি।
ইঁদুর একটি চতুর, সর্বভুক, নিশাচর ও নীরব ধ্বংসকারী প্রাণী। এটি ছোট হলেও ক্ষতির ব্যাপকতা অনেক। যেকোনো পরিবেশে যে কোনো খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। প্রতি বছর কৃষকের উৎপাদিত ফসলের একটি বড় অংশ ইঁদুর দ্বারা নষ্ট হয়। ইঁদুর যে পরিমাণ খায় তার চেয়ে বেশি কেটেকুটে নষ্ট করে। শুধু ফসল নয়, ইঁদুর মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ সম্পদেরও ক্ষতি করে। ইকোসিস্টেম রক্ষা করে ইঁদুর প্রতিরোধে কোনো একক পদ্ধতি শতভাগ কার্যকর নয়। ইঁদুর সমস্যা একটি সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ।
ইঁদুর দমন অভিযান ২০২২ উপলক্ষ্যে কৃষি তথ্য সার্ভিস কৃষিকথা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংখ্যায় ইকোসিস্টেম রক্ষা করে ইঁদুর নিধনের তথ্য-উপাত্তসমৃদ্ধ প্রবন্ধ, সময়োপযোগী নিবন্ধ, নাটক ও নিয়মিত বিভাগের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি কৃষিকথা জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২ স্বার্থক করে দেশ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে সফলকাম হবে।
সম্পাদকীয়
ভাদ্র মাস। শরতের আগমন। গ্রীষ্মের প্রচ- গরম আর বর্ষাকালের অবিরাম বর্ষণের পর এই ঋতু জনজীবনে আসে স্বস্তি নিয়ে। প্রকৃতি হয়ে ওঠে স্নিগ্ধ ও মনোরম। কৃষিনির্ভর বাংলার বুকে প্রাপ্তির আশা জাগিয়ে তোলে শরৎ। সে সাথে পাকা তালের মোহনীয় গন্ধ জানান দেয় এটা ভাদ্র মাস। বাঙালির শিল্প-সাহিত্যে তালের প্রাচুর্য ও জনপ্রিয়তার কারণে রচিত হয়েছে প্রবাদসহ বিভিন্ন রচনাবলী। দেশে তালগাছ কমে যাচ্ছে। প্রকৃতিতেও আসছে বজ্রপাতের বিড়ম্বনা। বাড়ছে মানুষের মৃত্যু সংখ্যা। পরিবেশ সুরক্ষা ও তালের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তালের বীজ বপনের এখন উপযুক্ত সময়।
পেঁয়াজ বর্ষজীবী ফসল। পেঁয়াজ একদিকে যেমন মসলা অন্যদিকে সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে পেঁয়াজ রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে চাষ হয়ে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭.২৫২ লাখ মেট্রিক টন এবং উৎপাদন হয়েছে ৩৮.৫০১ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদাসম্পন্ন পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণাগার না থাকায় প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্ত বিরূপ প্রভাব আমাদের দেশে দৃশ্যমান। বিরূপ আবহাওয়ায় পেঁয়াজের ঘাটতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে ফসলের আধুনিক জাত উৎপাদন করে যাচ্ছে। বারি নেগি অনিয়ন-১ দেশের নতুন সম্ভাবনার ফসল। পেঁয়াজের বিকল্প ছাড়াও বহুমুখী ব্যবহার করা হয়। এ সম্পর্কে কৃষিকথায় এবারের সংখ্যায় ‘বারি নেগি অনিয়ন-১: পেঁয়াজের বিকল্প’ তথ্য ও প্রযুক্তি নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, ফসল উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি, পুষ্টিবার্তা, আগামীর কৃষি ভাবনা, সফল কৃষকের গল্প এবং মৎস্য, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের সংখ্যা। যারা এসব তথ্য-উপাত্তসমৃদ্ধ লেখা দিয়ে কৃষিকথা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করি, কৃষিকথা কৃষির সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সম্পাদকীয়
জ্যৈষ্ঠ মাস। আমাদের এই ষড়ঋতুর দেশে ঋতু চক্রের পরিক্রমায় ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে আপন গতিতে। সারা বিশ্বব্যাপী জলবায়ুতে অনেক পরিবর্তন আসলেও প্রকৃতির নিয়মে চলে জ্যৈষ্ঠ মাস। প্রচ- খরতাপে এ মাসে প্রকৃতিতে থাকে নাভিশ্বাস অবস্থা। হরেক রকম ফসলের পাশাপাশি এসময় মজার মজার ফলের প্রাপ্তিযোগের কারণে কৃষিজীবীসহ আপামর জনসাধারণের মনপ্রাণ আনন্দরসে ভরপুর থাকে। আর কৃষিজীবী ভাইবোনেরাই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার হাতিয়ার। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য কৃষকের পাশে থেকে কৃষকের সাথে থেকে কৃষিকে টেকসই, আধুনিকরণ ও স্মার্ট কৃষি গড়ার।
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোঠীর কর্মসংস্থানে, শিল্পের কাঁচামাল জোগানে ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এদেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১১.২০ শতাংশ । কৃষিতে নিয়োজিত শ্রমশক্তি ৪৬.৯৬ শতাংশ। খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশে^ শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ, আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম। এছাড়া কৃষি পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বর্তমানে ৭০টিরও বেশি ফল ও সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষি পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখন এক অভূতপূর্ব উন্নয়নের বিস্ময়।
বাংলাদেশ সোনালী আশেঁর দেশ। কৃষিপণ্য হিসেবে পাট বিশে^ ২৮২ ধরনের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে পাট রফতানিতে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। পাটপণ্য বহুমুখী খাতকে রপ্তানিমুখীকরণে পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার বা বর্ষপণ্য এবং পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সম্পর্কে ‘স্মার্ট ইকোনমির নতুন খাত : পাটকাঠি হতে উৎপাদিত চারকোল’ তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবারের কৃষিকথায়।
এ ছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, আগামীর কৃষি ভাবনা, সফল কৃষকে গল্প ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ সংখ্যা। কৃষিকথায় এসব মানসম্পন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি লেখা দিয়ে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা রাখছি বাণিজ্যিক কৃষি, জৈব প্রযুক্তি, ন্যানোটেকলোজিসহ গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণে সহায়ক হবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নলালিত সোনার বাংলা বিনির্মাণ সম্ভব হবে।
সম্পাদকীয়
১৬ ডিসেম্বর বীর বাঙালি জাতির মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ৩০ লাখ শহিদের আত্মদান, দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগ আর তিতিক্ষা এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাথা গণবীরত্বের পর পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের নতুন অভ্যুদয় ঘটে। বিজয় দিবসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় কৃষি প্রধান নিয়ামক। জাতির পিতা স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়ে কৃষি ও পরিবেশের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় এনে সরকারের যুগোপযোগী নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশ দানাদার খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ফসলের পাশাপাশি প্রাণিজ আমিষ খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ফলে কৃষি ক্ষেত্রে বিশ্বে নন্দিত হয়েছে রোল মডেল হিসেবে।
বর্তমানে মহামারি, সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা আগামী ২০২৩ সালকে বিশ^ব্যাপী ক্রাইসিস ইয়ার হিসেবে অনুধাবন করেছেন। বিশ^ব্যাপী অনাগত এই সংকট বাংলাদেশের যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’Ñ এ বাস্তবায়নে অনুশাসন প্রদান করেছেন।
সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশে সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিতকল্পে কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষিকে টেকসই, লাভজনক ও বাণিজ্যিকীকরণে উত্তম কৃষি চর্চা মেনে উৎপাদন, রপ্তানি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কৃষির উন্নয়নের ধারা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সম্পর্কে ‘বর্তমান বিশ^ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কৃষিতে করণীয়’ তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবারের কৃষিকথায়।
এ ছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, কবিতা ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ সংখ্যা। আশা রাখছি শুধু বিজয়ের মাসে আবদ্ধ না হয়ে দৈনন্দিন জীবনাচরণে প্রতিফলিত হবে স্বাধীনতার সারমর্ম। নিশ্চিত হবে নিরাপদ পরিবেশ। সমৃদ্ধ হবে কৃষক, কৃষি ও দেশ।
সম্পাদকীয়
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
শ্রাবণ মাস। প্রকৃতির বহুমাত্রিক রূপ উদ্ভাসিত হয়। মেঘ, বৃষ্টি, রৌদ্রছায়ায় পুরো আকাশে বিছিয়ে দেয় রঙের মহোৎসব। শ্রাবণের শেষ দিন। ১৫ আগস্ট ২০২২। জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে ঘাতকরা জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারকে হত্যার ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠে। জাতি হারায় তার গর্ব, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতির পিতার ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুসহ সব শহীদের বিন¤্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক সুতোয় গাঁথা। তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি কৃষি। তিনি ছিলেন কৃষি অন্তপ্রাণ। সদ্যস্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা কৃষিতে নিয়েছিলেন যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম। তাঁরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার ৫০ বছর পর কৃষির সমৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ফসল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ। খোরপোশের কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর হচ্ছে। কৃষি উন্নয়নের এই সাফল্য সারা পৃথিবীতে বহুলভাবে প্রশংসিত ও নন্দিত হচ্ছে। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দিকনির্দেশনা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী কার্যক্রম এবং কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ, সুশীল সমাজ ও কৃষক সমাজের নিবিড় পরিশ্রমের ফলে।
জাতির পিতা কৃষি উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রমের মধ্যে ১৯৭৩ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। পিতার ধারা অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নীতিমালা ২০১৯ প্রবর্তন করেছেন। তারই আলোকে প্রথমবারের মতো কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা ২০২০’ প্রদান করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে কৃষিকথা শ্রাবণ সংখ্যাটি বিশেষ সংখ্যা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কৃষিকথা এবারের বিশেষ সংখ্যায় কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা ২০২০ এর গুরুত্ব তুলে ধরে দিকনির্দেশনামূলক বাণী ও সময়োপযোগী তথ্য ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ লেখা দিয়ে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের সবার প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। এ ছাড়াও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের বিশেষ সংখ্যা। যা কৃষি কর্মকা-ের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য আরো বেশি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা উৎস হিসেবে কাজ করবে।
সম্পাদক,
সম্পাদকীয়
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বর্ষার ঋতুর আগমন ঘটে আষাঢ় মাস দিয়েই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে আসে- বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে।’ সে সাথে গাছে গাছে নতুন পাতা, ফুল ও ফল। প্রকৃতি সেজে ওঠে নতুন সাজে। ফলদ বৃক্ষজাতীয় গাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় এটি। আমাদের দেশের আবহাওয়া, মাটি ও জলবায়ু ফল চাষের উপযোগী। বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্যে, জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ফলের সমারোহ দেখা যায়। জীবনচক্রের সব পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিতে দৈনিক পরিমিত পরিমাণে ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রাপ্যতা একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জাতির পিতার দূরদর্শী নীতির আলোকে তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) সফলভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
সুষম খাদ্যাভ্যাসের দ্বারাই সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টিকণা জরিপ (২০১৯-২০২০) তথ্য অনুযায়ী অনুপুষ্টিকণা মানুষের খুব কম প্রয়োজন হয় কিন্তু সামান্য ঘাটতিতে অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন হয়। শিশুদের ছয় মাসের পর থেকে ২ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি সুষম খাদ্য দিতে হবে। কিশোর কিশোরীদের পুষ্টিকর খাবারের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। পুষ্টিবিদদের মতে, বাংলাদেশের পুষ্টি উন্নয়নের মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাদ্য গ্রহণের ধরনে কালের ধারায় বৈচিত্র্যতা এসেছে। ঐওঊঝ ২০২২ তথ্য মতে, শহরের (২৩২৪.৬ কি. ক্যালরি) তুলনায় গ্রামে (২৪২৪.২ কি. ক্যালরি) মাথাপিছু দৈনিক খাদ্যশক্তি ভোগের মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাণিজ আমিষ (মাংস, দুধ, ডিম ও মাছ) এবং খাদ্যশস্য বহির্ভূত ফসল (শাকসবজি ও ফলমূল) ভোগের ক্ষেত্রে এ ধারা বিদ্যমান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে মাথাপিছু দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রাম কিন্তু খাওয়া হচ্ছে প্রায় ৯৮-১০০ গ্রাম। দেশের ফলের চাহিদা অর্জনে কৃষি বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, দেশীয় ফলের আবাদের পাশাপাশি বিদেশি ফলের অভিযোজিতা ও মূল্যায়নের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ফলের জাত সম্প্রসারণ হচ্ছে। বর্তমানে ফল চাষের জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলের সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রফতানি উপযোগী জাতের ব্যবহার, উত্তম কৃষি চর্চা (এঅচ) মেনে উৎপাদন, সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্যাকিং হাউজ নির্মাণ, অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব স্থাপনসহ নানামুখী কাজ চলমান রয়েছে। এ সম্পর্কে কৃষিকথায় “ফলের আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়াতে করণীয়” নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও সময়োপযোগী তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রবন্ধ, আগামী কৃষি ভাবনা, সফল কৃষকের গল্প ও নিয়মিত বিভাগ নিয়ে সাজানো হয়েছে এ পত্রিকাটি। যা জনসাধারণের দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনুপ্রাণিত করবে।
৮৩তম বর্ষ ১ম সংখ্যা বৈশাখ-১৪৩০ (এপ্রিল-মে ২০২৩)
সম্পাদকীয়
বৈশাখ-১৪৩০। নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল সবার প্রতি। নববর্ষের উৎসবের সঙ্গে বাঙালি জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। প্রিয় খাবার পান্তা ইলিশ আর ভর্তা দিয়ে বাঙালি বৈশাখকে বরণ করেছে। বাংলা নতুন বছরের সাথে কৃষিকথা পত্রিকাটি ৮৩তম বছরে পদার্পণ করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার। এরই অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ফার্ম ম্যাগাজিন মাসিক কৃষিকথা ১৯৪১ সাল থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রকাশিত হয়ে আসছে। কৃষিকথায় সমসাময়িক কৃষি প্রযুক্তি, তথ্য ও উপাত্ত সহজ, সরল ও সাবলীলভাবে সাধারণ মানুষের বোধগম্য আকারে বিভিন্ন আঙ্গিক ও নান্দনিক কৌশলে উপস্থাপন করে প্রিন্ট করা হয়। যা কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে। দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ হচ্ছে।
বাংলাদেশের শতকরা ৭০-৮০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষির সঙ্গে খাদ্য জড়িত, আর খাদ্যের সঙ্গে জীবন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি এখন ঘাটতি উৎপাদন ব্যবস্থা হতে উদ্বৃত্ত ও বাণিজ্যিকীকরণ অভিমুখী। বর্তমান সরকার প্রত্যেক নাগরিকের সুস্থ জীবনযাপনের লক্ষ্যে পুষ্টি উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে অঙ্গীকারবদ্ধ। আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আবাদের আওতায় নিয়ে আসতে হবে সকল অনাবাদী পতিত জমি। কৃষির বহুমুখীকরণ নিশ্চিত করে প্রতিটি কৃষককে স্বয়ম্ভর হতে হবে কৃষি পণ্যের উৎপাদনে। সেদিক থেকে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সম্পর্কে কৃষিকথায় এবারের সংখ্যায় ‘গণভবনে কৃষি খামার ও জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার’ নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়াও আগামীতে কৃষি ভাবনা, উচ্চমূল্যের ফসলের চাষাবাদ, সফল কৃষকের গল্প, পুষ্টি বার্তা ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে পত্রিকাটি। আশা করি নতুন বছরে সব বাধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে হবে স্মার্ট কৃষিতে পরিণত হবে। কৃষি এগিয়ে যাবে অদম্য গতিতে।
সম্পাদকীয়
১৬ অক্টোবর ২০২৩ বিশ^ খাদ্য দিবস। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ) ১৯৪৫ সাল থেকে ১৬ অক্টোবরকে বিশ^ খাদ্য দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে। পৃথিবীর সব মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের জোগান নিশ্চিতকরণ, পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ এবং দরিদ্রতার মূলোৎপাটন করে ক্ষুধামুক্ত নির্মল পৃথিবী গড়ার কাজে ঋঅঙ নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ^ খাদ্য দিবস প্রতিপাদ্যভিত্তিক পালিত হয়ে আসছে। এ বছর প্রতিপাদ্য ‘ডধঃবৎ রং ষরভব, ধিঃবৎ রং ভড়ড়ফ. খবধাব হড় ড়হব নবযরহফ.’ এর ভাবার্থ ‘পানি জীবন, পানিই খাদ্য। কেউ থাকবে না পিছিয়ে।’ যা পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক জলবায়ুতে সময়োপযোগী ও অর্থবহ।
পানি, জীব, অর্থনীতি, প্রকৃতির চালিকাশক্তি এবং মানুষের খাদ্যের ভিত্তি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরবর্তী দেশ গঠনে কৃষি ক্ষেত্রে পানির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। ১৯৬০ এর দশকে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভূউপরিস্থ এবং ৫ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার হতো। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কৃষি উন্নয়নের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএডিসি কর্তৃক ক্ষুদ্রসেচ উইং বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করেন। ভূগর্ভস্থ ও ভূউপরিস্থ পানির ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহারে আধুনিক সেচ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ব্যবহার প্রচলন করেন। তাঁরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য নিরাপত্তায় যুগোপযোগী পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। ফলে বিশ^ মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ দানাদার খাদ্যের উদ্বৃত্ত দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মাছ, মাংস, ডিম উৎপাদনেও দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বর্তমানে বৈশি^ক মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং নানাবিধ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক আগ্রাসনের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ পানি প্রভাবিত হচ্ছে। গত কয়েক দশকে জনপ্রতি স্বাদুপানি ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যায়ক্রমে নিরাপদ-সাশ্রয়ী খাবার পানি সর্বজনীন ও সমান অধিকার অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পানির সমন্বিত ও পরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ, পরিবেশবান্ধব নীতি অবলম্বন, পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, অপচয় রোধ এবং সেচ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল জাতের ফসল উৎপাদনসহ বাস্তবমুখী কার্যক্রম নিজ নিজ অবস্থান হতে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৩০ সালের মধ্যে কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে নিরাপদ পানি সহজলভ্যতা ও স্যানিটেশন অর্জন সম্ভব হবে।
প্রিয় পাঠক, কৃষি মন্ত্রণালয় ও এফএও বাংলাদেশের উদ্যোগে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৩ উদ্যাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে মাসিক কৃষিকথার বিশেষ সংখ্যা মুদ্রণ করা হচ্ছে। কৃষিকথা বিশেষ সংখ্যায় দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে দিকনির্দেশনামূলক বাণী এবং মানসম্পন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ লেখা যারা দিয়েছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করি তথ্য সংবলিত লেখাগুলো বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্যের সফল বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশ্ব খাদ্য দিবস সফল ও সার্থক হবে এই কামনা।
সম্পাদকীয়
মাঘ মাস। গ্রামীণ জনপদে আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার হয়, মাঘ আসে শীতের দাপট নিয়ে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশব্যাপী পাল্টে যাচ্ছে মাঘের শীতে বাঘের কাঁপুনি প্রবাদটিও। বিরূপ প্রকৃতির পাশাপাশি চলছে আবাদি জমি হ্রাস, বাড়তি জনসংখ্যার চাপ, বৈশ্বিক সংঘাতময় পরিস্থিতিসহ নানামুখী প্রভাব। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুপ্রিয় সোনার বাংলা গড়তে থেমে নেই কৃষক, কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, সম্প্রসারণকর্মীসহ অংশীজনেরা।
জনসাধারণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শস্য বহুমূখীকরণ, পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক করা এবং জনসাধারণের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত নীতি ও পরিকল্পনা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এখন ২০টিরও বেশি ফসল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন বেশ উপযোগী। কৃষিপণ্য উৎপাদনে ফসলের তুলনায় সবজিতে ফলন ও আয় দুইই বেশি হয়। এ ছাড়া শাকসবজি ও ফলমূল পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী একজন মানুষের গড়ে প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম শাকসবজি ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সবজির উৎপাদন ছিল ২৯.০৯ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সবজি উৎপাদন ২২৫.৪১ লাখ মেট্রিক টন, যা ১৫ বছরে শতকরা ৬৭৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ফলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের রূপকল্প কৃষিপণ্য রপ্তানিমুখী করা। শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে কৃষি মন্ত্রণালয় উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণ করে ফসল উৎপাদন, রপ্তানি উপযোগী জাতের ব্যবহার, আধুনিক প্যাকিং হাউজ নির্মাণ, অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব স্থাপনাসহ নানাবিধ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। এ সম্পর্কে ‘শাকসবজি ও ফলমূল সংগ্রহোত্তর পরিচর্যা, ব্যবস্থাপনা ও মূল্য সংযোজনের গুরুত্ব’ তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবারের কৃষিকথায়।
এ ছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞবৃন্দের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, কবিতা ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ সংখ্যা। কৃষিকথায় এসব মানসম্পন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি লেখা দিয়ে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করি সময়োপযোগী লেখাসমূহ নতুন বছরে আপামর জনসাধারণের জন্য কৃষি খাতকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও স্মার্ট কৃষিতে এগিয়ে নিতে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগাবে।
১৬ অক্টোবর ২০২২ বিশ্ব খাদ্য দিবস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) তার জন্মকাল ১৯৪৫ সাল থেকে ১৬ অক্টোবরকে বিশ্ব খাদ্য দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে। পৃথিবীর সব মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের জোগান নিশ্চিতকরণ, পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ এবং দরিদ্রতার মূলোৎপাটন করে ক্ষুধামুক্ত নির্মল পৃথিবী গড়ার কাজে ঋঅঙ নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য দিবস প্রতিপাদ্যভিত্তিক পালিত হয়ে আসছে। এ বছর পতিপাদ্য ‘Leave no one behind. Better production,better nutrition,a better environment and a better life.’ এর ভাবার্থ ‘কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়। ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন’ যা সময়োপযোগী।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরবর্তী দেশ গঠনে এ উপলব্ধি করেছেন। জাতির পিতা প্রদর্শিত পথেই বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে কৃষি উন্নয়নে বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। ফলে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ দানাদার খাদ্যের উদ্বৃত্ত দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশে^র প্রথম ১০টি দেশের কাতারে রয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম উৎপাদনেও দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ সাফল্য এসেছে কৃষিক্ষেত্রে লাগসই জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তার যথাযথ ব্যবহারে কৃষিবিজ্ঞানী, কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণবিদ, সুশীল সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে। বৈশ্বিক মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং নানাবিধ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক আগ্রাসনের কারণে কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা প্রভাবিত হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সাফল্য অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও অধিক বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন বিশ্ব খাদ্য দিবস প্রতিপাদ্যের মূল লক্ষ্য।
প্রিয় পাঠক, কৃষি মন্ত্রণালয় ও এফএও বাংলাদেশের উদ্যোগে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২২ উদ্যাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে মাসিক কৃষিকথার বিশেষ সংখ্যা মুদ্রণ করা হচ্ছে। কৃষিকথা বিশেষ সংখ্যায় দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে দিকনির্দেশনামূলক বাণী এবং মানসম্পন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ লেখা যারা দিয়েছেন তাদের প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করি তথ্য সংবলিত লেখাগুলো বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্যের সফল বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশ্ব খাদ্য দিবস সফল হোক, সার্থক হোক এই কামনা। সবাইকে অফুরান শুভেচ্ছা।
সম্পাদকীয়
খাদ্য প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার সব মানুষের ক্ষুধা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টি থেকে মুক্ত থাকার অধিকারকে রক্ষা করে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) পৃথিবীর সব মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের জোগান নিশ্চিতকরণ, পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ এবং দরিদ্রতার মূলোৎপাটন করে ক্ষুধামুক্ত নির্মল পৃথিবী গড়ার কাজে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ১৯৪৫ সাল থেকে ১৬ অক্টোবরকে বিশ^ খাদ্য দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে। প্রতিবারের মতো এবারও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো কৃষি মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৪। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ^ খাদ্য দিবস প্রতিপাদ্যভিত্তিক পালিত হয়ে আসছে। এ বছর প্রতিপাদ্য Right to foods for a better life and a better future এর ভাবার্থ উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য খাদ্যের অধিকার । যা বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সময়োপযোগী ও অর্থবহ।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির বাস্তবতায় খাদ্য নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের কৃষিই দারিদ্র্যহ্রাসকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রযাত্রার নিয়ামক। কৃষি জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চয়তা প্রদান করে। এ ছাড়াও কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের কাঁচামাল সরবরাহ করে। দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ফসলের পাশাপাশি প্রাণিজ আমিষ খাতেও সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ^ব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক মন্দা, বৈষম্য এবং মহামারী চ্যালেঞ্জগুলোর প্রেক্ষাপটে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈচিত্র্যময় খাদ্য উৎপাদন শুরু থেকে খাবারের টেবিল পর্যন্ত খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সাথে বিজ্ঞানমনস্ক খাদ্যাভ্যাসেও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য অপচয় রোধের বিকল্প নেই।
প্রিয় পাঠক, বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে মাসিক কৃষিকথার বিশেষ সংখ্যা মুদ্রণ করা হচ্ছে। কৃষিকথা বিশেষ সংখ্যায় দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে মানসম্পন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধ সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের কৃষিকথা। যারা এসব লেখা দিয়ে কৃষিকথা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি তথ্য সংবলিত লেখাগুলো বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্যের সফল বাস্তবায়নে একসাথে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।
সম্পাদকীয়
অগ্রহায়ণ মাস। বাঙালি ঐতিহ্যের নবান্ন উৎসব। মুখরিত হয়ে আমন ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাহারি ফসল চাষে ব্যস্ত থাকে কৃষিজীবী ভাই-বোনেরা। আমাদের দেশে বৃহত্তর কৃষি ভুবনের উর্বর মাটিই জনগণের মৌলিক চাহিদার প্রয়োজনীয় উপাদান জোগান দেয়।
৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২। স্বাস্থ্যকর মাটির গুরুত্বের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা এবং মৃত্তিকা সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার প্রতি সবাইকে সচেতন করা বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উদ্যাপনের মূল লক্ষ্য। মাটি ব্যবস্থাপনার ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা, সামগ্রিক মান সংরক্ষণ ও উন্নত রাখতে এবং সমাজকে উৎসাহিত করতে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বছর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২ এর প্রতিপাদ্য Soil : Where Food Begins এর ভাবার্থ ‘মাটি : খাদ্যের সূচনা যেখানে’।
মাটির মাধ্যমে জীবনের শুরু ও শেষ হয়। মাটি ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা অকল্পনীয়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বপ্ন পূরণে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না নির্দেশনায় নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। জাতীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে মাটি, মাটির উর্বরতা, কৃষি জলবায়ু ও হাইড্রোলজির উপর ভিত্তি করে দেশব্যাপী ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল গঠন করা হয়েছে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষক ও কৃষক গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশ ও চাহিদা উপযোগী জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণ করছেন। সাধারণভাবে বলা হয় বাংলাদেশের মাটি প্রায় দ্বিগুণ উর্বর ও উৎপাদনশীল। মাটির উৎপাদন ক্ষমতা একটি অর্জিত গুণ। যা মাটির উর্বরতা, আবহাওয়া, ফসল প্রযুক্তি, সার সেচ, বালাইমুক্ততা ও কৃষি জলবায়ুর সহযোগে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম।
প্রিয় পাঠক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, সয়েল সাইন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বয়ে দিবসটি উদ্যাপিত হয়ে থাকে। এ উপলক্ষ্যে মাসিক কৃষিকথা বিশেষ সংখ্যা মুদ্রণ করা হচ্ছে। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ও সম্মানিত কৃষি সচিব মহোদয়ের দিকনির্দেশনামূলক বাণী এবং মানসম্পন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি লেখা সংযোজন করা হয়েছে। এসব তথ্যসমৃদ্ধ লেখা যারা দিয়েছেন তাদের প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করি সময়োপযোগী লেখাসমূহ বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২ সফল বাস্তবায়নে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগাবে।
সম্পাদকীয়
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষি এখন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা। অধিকাংশ জনগণই জীবন জীবিকা ও কর্মসংস্থানের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। এ দেশের আবহাওয়া ও উর্বর জমি সারা বছর ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের যত অর্জন আছে, তার মধ্যে ফসলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য। ফসল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ। কৃষিক্ষেত্রে এ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দিকনির্দেশনা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী কার্যক্রম পাশাপাশি কৃষি বিজ্ঞানি, কৃষিবিদ, সুশীলসমাজ ও কৃষকসমাজের নিবিড় অংশগ্রহণে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে এসেছে বৈচিত্র্য। প্রতিকূল আবহাওয়ার পাশাপাশি রয়েছে পোকামাকড়, রোগবালাই ও ইঁদুরের উপদ্রব। আশ্বিন মাস ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময়। ইঁদুর একটি চতুর, সর্বভুক, নিশাচর ও নীরব ধ্বংসকারী প্রাণী। এটি ছোট হলেও ক্ষতির ব্যাপকতা অনেক। যেকোন পরিবেশে যেকোন খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। প্রতি বছর কৃষকের উৎপাদিত ফসলের একটি বড় অংশ ইঁদুর দ্বারা নষ্ট হয়। শুধু ফসল নয়, ইঁদুর মানুষের স্বাস্থ্য পরিবেশ সম্পদেরও ক্ষতি করে। ইকোসিস্টেম রক্ষা করে ইঁদুর প্রতিরোধে কোনো একক পদ্ধতি শতভাগ কার্যকর নয়। ইঁদুর সমস্যা সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে ১৯৮৩ সাল থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ইঁদুর নিধন অভিযান মাসব্যাপী সারাদেশে একযোগে পরিচালনা করে আসছে। এ বছরও সমন্বিতভাবে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২৩ পরিচালিত হচ্ছে।
ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২৩ উপলক্ষ্যে কৃষি তথ্য সার্ভিস কৃষিকথা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংখ্যায় ইকোসিস্টেম রক্ষা করে ইঁদুর নিধনের তথ্য উপাত্তসমৃদ্ধ প্রবন্ধ, সময়োপযোগী নিবন্ধ, কবিতা ও নিয়মিত বিভাগের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি কৃষিকথা সকল স্তরের জনগণকে ইঁদুর নিধন কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। দেশ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে সফলকাম হবে।
আগস্ট বাঙালি জাতির শোকের মাস। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এ দেশের অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম দরদ ও ভালোবাসা। দুঃখী দারিদ্র্যক্লিষ্ট বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি আজীবন লড়াই করেছেন। স্বাধীন দেশে তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ, বৈষম্যহীন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর এই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি মানবতার শত্রু, প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্রের দল। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শোকের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকীতে জাতির পিতাসহ তাঁর পরিবারের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং গভীরভাবে জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা।
ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করলেও তাঁর মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব। তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের বিনাশ নেই। শত্রুদের নীল-নকশাকে নস্যাৎ করে শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, কৃষকরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর পদাংক অনুসরণ অব্যাহত রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় উজ্জ্বীবিত হয়ে দেশের আবালবৃদ্ধ বনিতাসহ একটি সুখীসমৃদ্ধ আধুনিক দেশ গড়তে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষিমন্ত্রী সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন। দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সমর্থ হয়েছে। যেকোন বৈরী পরিস্থিতিতে দেশের কৃষি খাত ও কৃষকের কোনোরূপ ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয় সে লক্ষ্যে প্রণোদনা ও ভর্তুকি প্রদান করছেন। এ ছাড়াও কৃষির আধুনিকায়ন, যান্ত্রিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও স্মার্ট কৃষিতে পরিণত করতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আর বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে।
এ সংখ্যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীতে শোক শক্তির হাতিয়ারে কৃষির জয়যাত্রা উল্লেখপূর্বক সময়োপযোগী তথ্য ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কবিতা ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে কৃষিকথা। এসব লেখার বিষয়বস্তু তথ্য উপাত্ত ও মতামত লেখকের নিজস্ব। যারা লেখা দিয়ে কৃষিকথা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করি কৃষিকথা জাতির পিতার স্বপ্ন সোনালি ফসলের ভরপুর বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশ সমৃদ্ধ হবে।
সম্পাদকীয়
মাঘ মাস। শীতের দাপট নিয়ে হাজির হয় এই বাংলায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাল্টে যাচ্ছে প্রকৃতি। পাল্টে যাচ্ছে মাঘের শীতে বাঘের কাঁপুনি প্রবাদটি। বিরূপ প্রকৃতির পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী চলছে মহামারি, সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানামুখী প্রভাব। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে থেমে নেই কৃষকের ব্যস্ততা।
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জীবিকা নির্বাহের অন্যতম চালিকাশক্তি। স্বাধীনতার পর ১ কোটি ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতো। বর্তমানে ৪ কোটি ৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। গম, ভুট্টা, শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনেও এসেছে ব্যাপক সাফল্য। খাদ্য নিরাপত্তায় আমন একটি অন্যতম ফসল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে খরিপ-২ মৌসুমে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬৩.৪৫৬ মে.টন/হেক্টর। ৯২.৫৫ শতাংশ কর্তন করে অর্জন হয়েছে ১৬৪.৬৫৯ মে. টন/হেক্টর (০১ জানুয়ারি ২০২৩, ডিএই)। প্রকৃতির বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ অর্জনের কারিগর হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সুশীলসমাজ, বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ ও কৃষকেরা। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সহযোগিতা করে আসছে। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনুমান করছেন পৃথিবীতে খাদ্য সংকট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে বাংলাদেশের কৃষির অগ্রগতি পরিবীক্ষণ করে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি উল্লেখ করেন বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার কোনরকম সম্ভাবনা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শীতায় বিশ্বব্যাপী অনাগত এই সংকট বাংলাদেশে যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সে প্রেক্ষাপটে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। এ সম্পর্কে ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন- দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে বাস্তবায়নের রূপরেখা’ তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবারের কৃষিকথায়।
এ ছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, আগামীর কৃষি ভাবনা, উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদ, সফল কৃষকের গল্প ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের এ সংখ্যা। আশা করি, মাসিক কৃষিকথা নতুন বছরে আপামর জনসাধারণের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে তথা কৃষি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সবার জন্য রইল ইংরেজি নতুন বছর ২০২৩ এর প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
সম্পাদকীয়
শ্রাবণ মাস। আমাদের ঋতুবৈচিত্র্যের সঙ্গে বারো মাস এবং প্রকৃতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মেঘ, বৃষ্টি, রৌদ্রছায়ায় পুরো আকাশে বহুমাত্রিক রূপ উদ্ভাসিত হয়। শ্রাবণ শেষেই হবে বর্ষার বিদায়। নদীমাতৃক সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা এ দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক কর্মকা-ের মূল চালিকাশক্তি কৃষি। এ সময় নিচু জমিতে পাট কাটা আর জাগ দেয়ার কাজ চলে। সে সাথে উফশী রোপা আমনের বীজতলা তৈরি, পাটের পোকামাকড় দমন এবং আগাম শীতকালীন সবজি শিম লাউয়ের বীজ রোপণের কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠে গ্রাম বাংলার কৃষক-কৃষাণীরা।
কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল জলবায়ু, খরা, লবণাক্ততা, পোকামাকড় এবং রোগবালাই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বায়োইনফরমেটিক্স একটি আধুনিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ফসলের জাত উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ, জেনেটিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সম্পর্কে কৃষিকথায় এবারের সংখ্যায় ‘কৃষিতে বায়োইনফরমেটিক্স-বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ নিবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, ফসল উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি, আগামীর কৃষি ভাবনা, কৃষিতে সফলতা ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের সংখ্যা। যারা এসব লেখা দিয়ে কৃষিকথা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের সবার প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করি, কৃষিকথা জনসাধারণের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনুপ্রানিত করবে।
সম্পাদকীয়
জ্যৈষ্ঠ মাস। আমাদের এই ষড়ঋতুর দেশে ঋতু চক্রের পরিক্রমায় ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে আপন গতিতে। সারা বিশ্বব্যাপী জলবায়ুতে অনেক পরিবর্তন আসলেও প্রকৃতির নিয়মে চলে জ্যৈষ্ঠ মাস। প্রচ- খরতাপে এ মাসে প্রকৃতিতে থাকে নাভিশ্বাস অবস্থা। হরেক রকম ফসলের পাশাপাশি এসময় মজার মজার ফলের প্রাপ্তিযোগের কারণে কৃষিজীবীসহ আপামর জনসাধারণের মনপ্রাণ আনন্দরসে ভরপুর থাকে। আর কৃষিজীবী ভাইবোনেরাই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার হাতিয়ার। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য কৃষকের পাশে থেকে কৃষকের সাথে থেকে কৃষিকে টেকসই, আধুনিকরণ ও স্মার্ট কৃষি গড়ার।
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জীবীকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোঠিীর কর্মসংস্থানে, শিল্পের কাঁচামাল জোগানে ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এদেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১১.২০ শতাংশ । কৃষিতে নিয়োজিত শ্রমশক্তি ৪৬.৯৬ শতাংশ। খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশে^ শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ, আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম। এছাড়া কৃষি পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বর্তমানে ৭০টিরও বেশি ফল ও সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষি পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখন এক অভূতপূর্ব উন্নয়নের বিস্ময়।
বাংলাদেশ সোনালী আশেঁর দেশ। কৃষিপণ্য হিসেবে পাট বিশে^ ২৮২ ধরণের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে পাট রফতানিতে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। পাটপণ্য বহুমুখী খাতকে রপ্তানিমুখীকরণে পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার বা বর্ষপণ্য এবং পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সম্পর্কে ... তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবারের কৃষিকথায়।
এ ছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, আগামীর কৃষি ভাবনা, সফল কৃষকে গল্প, ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ সংখ্যা। কৃষিকথায় এসব মানসম্পন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি লেখা দিয়ে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা রাখছি বাণিজ্যিক কৃষি, জৈব প্রযুক্তি, ন্যনোটেকলোজিসহ গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণে সহায়ক হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নলালাতি সোনার বাংলা বিনির্মান সম্ভব হবে।
৮৩তম বর্ষ ড় ৪র্থ সংখ্যা ড় শ্রাবণ-১৪৩০ (জুলাই-আগস্ট ২০২৩)
সম্পাদকীয়
শ্রাবন বৈচিত্র্যময় মাস। মেঘ, বৃষ্টি, রৌদ্রছায়ায় পুরো আকাশে বহুমাত্রিক রূপ উদ্ভাসিত হয়। শ্রাবণের শেষ দিন। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫। সে দিন মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মছেঁড়া অশ্রুর প্লাবন। জাতি হারায় তার গর্ব, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৫ আগস্ট ২০২৩। জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতার ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুসহ সব শহীদদের বিন¤্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা এ দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি প্রধানত কৃষিকেন্দ্রিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম অনুধাবন করেছিলেন জ্ঞাননির্ভর আধুনিক কৃষিই উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রথম সোপান। তাই তিনি স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কৃষি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম নিয়েছিলেন। চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দিকনির্দেশনা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী কার্যক্রম পাশাপাশি কৃষি বিজ্ঞানি, কৃষিবিদ, সুশীল সমাজ ও কৃষক সমাজ নিবিড় পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ফলে স্বাধীনতার প্রায় ৫২ বছর পর কৃষি সমৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি হচ্ছে। জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ফসল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ। খোরপোশের কৃষি থেকে রূপান্তর হচ্ছে বাণিজ্যিক কৃষিতে। স্মার্ট কৃষি বাস্তবায়নে বর্তমানে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষি ক্ষেত্রে। কৃষি উন্নয়নের এ ধারা বহুলভাবে প্রশংসিত ও নন্দিত হচ্ছে। এ সম্পর্কে কৃষিকথায় এবারের সংখ্যায় ‘বঙ্গবন্ধু দূরদর্শিতা ও আজকের কৃষি গবেষণার সাফল্য’ নিবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, ফসল উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি, পুষ্টিবার্তা, আগামীর কৃষি ভাবনা, সফল কৃষকের গল্প ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের সংখ্যা।
আশা করি, কৃষিকথা বর্তমান প্রয়াসকে আরও গতিশীল করে ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে। সেসাথে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার উন্নত, সুখী, সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের পথ ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুসহ বাংলা ভাষা মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষা শহীদদের গভীরভাবে স্মরণ করছি এবং জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশের কৃষি, সংস্কৃতি, অর্থনীতির ভিত্তিই হচ্ছে কৃষি। ফাল্গুন রবি মৌসুমের শেষ মাস। এ সময় বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি শাকসবজির প্রাধান্য থাকে মাঠে ও স্থানীয় বাজারগুলোতে। শাকসবজি মোট উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ রবি মৌসুমে হয়ে থাকে। শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খণিজ পদার্থসহ অন্যান্য অনেক পুষ্টি উপাদান। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত প্রায় ১৩১টি জাত এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত জাত মিলে দেশে প্রায় ১৮২ জাতের সবজি উৎপাদন হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে শাকসবিজর উৎপাদন হয়েছে ২১৬.৭০ লক্ষ মে.টন। বিগত ১২ বছরে শাকসবজির উৎপাদন প্রায় ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে (ডিএই)। যার ফলে শাকসবজি উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি সাথে সাথে খাদ্য তালিকায় নিরাপদ সবজির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী সংঘাত, মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানামুখী বিরূপ সংকট বিরাজমান। এ অনাগত সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি জনগণের পুষ্টি স্তর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম অভীষ্ট। সে লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সকল অংশীজনের অংশগ্রহণে উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণ করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন, সংগ্রহোত্তর ও বাজার ব্যবস্থাপনা এবং রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব ও আধুনিক প্যাকিং হাউজ সক্ষমতাসহ নানামুখী কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ‘বাংলাদেশের নিবিড় সবজি উৎপাদনে সাফল্য’ নিবন্ধটিতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবারে কৃষিকথায়। এ ছাড়াও কৃষি বিশেষষ্ণগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ বারের সংখ্যা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরবর্তী কৃষির উন্নয়নে ১৯৭৩ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর পদ মর্যাদা প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু এ অবদান স্মরণীয় করে রাখতে ২০১১ সাল থেকে কৃষিবিদরা এ দিনটিকে কৃষিবিদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। সবার জন্য রইল কৃষিবিদ দিবস ও ফাল্গুনের শুভেচ্ছা।