আশা
নূর-ই-ফাতিমা*
সবুজ শ্যামল দেশটি আমার
সজীব পরিপাটি।
রৌদ্র তাপে, বৃষ্টি জলে- সতেজ সোঁদা মাটি।
নদী ধৌত পলিমাটি জাগায় চাষির আশ,
ধান, গম, ডাল ফলে নানান, নিত্য বারো মাস।
কোথাও দো-আঁশ, এঁটেল, বেলে-
কোথাও মিশ্র মাটি;
ফলায় চাষিরা ইচ্ছে, তাই ফলছে দারুণ খাঁটি।
মাঠে বাটে মৌসুমি ক্ষেত পান্না সবুজ রঙে,
লতিয়ে উঠে শাকসবজি দোলে নানান ঢঙে।
মাচায় ঝুলে লাউ কুমড়ো-
দোলায় সবার প্রাণ,
বরবটি, শিম, পুঁইয়ে ভরে আঙিনা বিতান।
শাখে শাখে আম, জাম, বেল, লিচু, কাঁঠাল, কুল;
কাঁধি কাঁধি কলা, তাল আর আনারস, জামরুল।
নাম না জানা ফুলে ফলে-
ভরা এ দেশ ভাই।
আমাদেরই স্বভাব দোষে আমরা ভালো নাই।
অধিক লাভের লোভে দিচ্ছি অন্যায়ভাবে চাষ,
কীটনাশক আর কেমিক্যালে করছি সর্বনাশ।
ফরমালিনের
তোড়ে ভেসে- দিক কুল,
ভয়ঙ্কর সব রোগ ব্যাধিতে গুনছি এর মাশুল।
মৎস্য খাবার, গো-খাবার আর খাবার সংরক্ষণে,
সততা আর নিষ্ঠা বজায় রাখব সচেতনে।
মুনাফা নয় অধিক সাথে থাকবে ভালোবাসা,
‘সুস্থ, সুন্দর থাকুক সবাই’ এই হোক সবার আশা।
দখিনের চাষি
কৃষিবিদ মো. ফরহাদ হোসেন*
আমরা চাষি দখিন বাসী, কৃষি কাজে শত
বাধা পেরোই হরহামেশ এবং অবিরত
জোয়ার ভাটা, বন্যা পানি, লবণ মাটিও আছে
উৎপাদনটা চ্যালেঞ্জ যেন, সদাই মোদের কাছে।
দখিন দিকের মাঠগুলো সব, নিচু যেন খুব
বর্ষা এলেই জলের নিচে, দেয় যে ধীরে ডুব।
আমন ধানের উফশী জাতে, পায় না তাতে ঠাঁই
তাইতো লাগাই দেশীয় জাত, বিকল্প আর নাই।
ডুবো পানি তাইতো মোরা, মুঠ ভরে রুই চারা
কোথায় গোছা কিংবা সারি, এসব হিসাব ছাড়া।
পানির নিচে লাইন থাকে না, এলোমেলো রোপণ
দূরের মানুষ কেউ জানে না, রহস্য রয় গোপন।
নিচু বলে সিক্ত মাটি, ধান পাকিতে দেরি
রবি ফসল যায় না করা, হাতে পায়ে বেড়ি।
যদিওবা হয় কিছু চাষ, আগাম জোয়ার এসে
নষ্ট হয়ে যায় যে সবই, যায় পানিতে ভেসে।
স্বল্প আয়ুর জাত যত সব, করতে হবে বার
খুলবে তবে এ অঞ্চলে, কৃষির নতুন দ্বার।
দূষণ সন্দেহে খাদ্য
মো. জুন্নুন আলী প্রামাণিক***
সুন্দর সুন্দর পাকা ফল বাজারে মন মত,
আকৃষ্ট হৃদয় তিক্ষ্ণ দৃষ্টি পাইতে চায় শত।
খাদ্যের কারণে শ্রম ব্যস্ত জীবনে কত কষ্ট,
ক্ষতির ভাবনা খাদ্যে হলে সকল রুচি নষ্ট।
নিকৃষ্ট বিষাক্ত দ্রব্য যদি মেশানো তাতে থাকে।
বিশুদ্ধি বিনাশ করে তাহা বিষাদ চোখে মুখে।
অন্তর ভুলানো মুগ্ধ করা আকৃষ্ট রূপে শোভে।
অনেক ক্রেতার ব্যস্ত মন নিকটে ছোটে লোভে।
অদৃশ্য আকারে মিশে খাদ্যে ছলনা করে রয়,
আনন্দে আহার করে শেষে ভীষণ রোগ ভয়।
ভক্ষণ যোগ্যতা সেই খাদ্য হারিয়ে ফেলে তাই,
ধুর্তামী করার ক্ষেত্র নয় আহার্য খাদ্য ভাই।
বিভিন্ন দূষণে রুগ্ণ দেহ উদ্বেগ ভরা খাদ্য,
পুষ্টির শীতল স্বস্তি নাশে দেয় না শক্তি সাধ্য।
ফাঁদের মতন খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল চুপে থাকে,
সৌন্দর্য ভরাট দৃশ্য গুলি নিকটে খেতে ডাকে।
অনীহা উদ্বিগ্ন ঘুরে ফিরে মনের আঁকে বাঁকে,
ভাবনা সাগরে চিন্তা মগ্ন দুচোখ শুধু দেখে।
আহার্য সকল খাদ্যে সেজে দোকান স্নিগ্ধ হয়,
রুচিকে বিনষ্ট করে শেষে সন্দেহ ঘূর্ণি ভয়।
অনেক ব্যয়ের ফলে কেনা উত্তম খাদ্য মাঝে,
দূষণ বিষের ক্ষেপা বিনা গোপনে সেথা বাজে।
ভেজাল বিহীন খাদ্য খেয়ে মানুষ শান্তি পায়,
দেহের মনের পুষ্টি মিটে ক্ষয়ের পূর্তি হয়।
সবল করার মূলমন্ত্র কেবলি খাদ্যে আছে,
মানুষ দূষিত করে খাদ্য করে না কোন গাছে॥
* ফ্ল্যাট ৮/এন, এ ২, সুরভি, লেকসিটি কনকর্ড, ঢাকা-১২২৯। **উপজেলা কৃষি অফিসার, ঝালকাঠি সদর, ঝালকাঠি। ***গ্রাম- বিদ্যাবাগীশ, ডাক ও উপজেলা- ফুলবাড়ী, জেলা- কুড়িগ্রাম