Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

নিয়মিত বিভাগ (প্রশ্নোত্তর)

শ্যামলী মণ্ডল, গ্রাম : ঝুটিহারা, থানা : দাকোপ, জেলা : খুলনা
প্রশ্ন : বেগুন গাছে পোকা ফল ছিদ্র করে নষ্ট করছে। প্রতিকার কী?
উত্তর : বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা  সাধারণত চারা রোপণের ৪/৫ সপ্তাহের মধ্যেই আক্রমণ শুরু করে। পোকার কীড়া কচি ডগায়, ফুলে এবং ফলে  আক্রমণ করে এবং এর ভেতরে খেতে থাকে। আক্রমণ হলে সপ্তাহে অন্তত একবার পোকা আক্রান্ত ডগা ও ফল বাছাই করে বিনষ্ট করতে হবে। চারা রোপণের ২/৩ সপ্তাহের মধ্যেই প্রতি শতাংশ জমিতে ১টি ফেরোমন ফাঁদ পাততে হবে।  আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে  কারটাপ গ্রুপের কীটনাশক যেমন- সানটাপ ২.৪ গ্রাম/ লিটার হারে বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক যেমন- রিপকর্ড বা ফেনকর্ড ০.৫ মিলি./লি হারে বা এ পোকার জন্য অন্যান্য অনুমোদিত রাসায়নিক কীটনাশক ১০-১২ দিন পর পর ৪-৫ বার স্প্রের করতে হবে। স্প্রে করার ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাওয়া বা বিক্রি করা ঠিক নয়। আগাম বীজ বপন, সুষম সার ব্যবহার ও সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করে পোকার আক্রমণ কমানো যায়।
অমিত দত্ত, গ্রাম : মুন্সেফপুর, থানা : যশোর সদর, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : পান পাতা পচে যাচ্ছে। কী করব?
উত্তর : পানের পাতা পচা রোগ  ফসলের বৃদ্ধির যে কোনো পর্যায়ে হতে পারে। প্রথমে মাটির কাছাকাছি পাতাগুলোতে পাতার প্রান্তের দিকে পানি ভেজা  দাগ দেখা দেয়। পরে তা বেড়ে গিয়ে পাতার অধিকাংশ জায়গা বা পুরো পাতাতেই ছড়িয়ে যায় এবং পাতা পচে যায়। এ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত লতা তুলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে। রোগ  প্রতিরোধের জন্য রোগমুক্ত লতা বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।   বরজ ও এর আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে। বর্ষাকালে বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি জমিতে যেন জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শামসুল আলম, গ্রাম : বলরামপুর, উপাজেলা :   হরিনাকুণ্ডু,  জেলা : ঝিনাইদহ
প্রশ্ন : আমার  ৬ মাস বয়সী ছাগলের  জ্বর হয়েছে কী চিকিৎসা করব?   
উত্তর : ছাগলকে একটি ফাস্ট ভেট অথবা পাইরোভেট বোলাস চারভাগ করে দিনে তিনবার তিন ভাগ খাওয়াতে হবে। এভাবে  দুইদিনে দুটি বোলাস ব্যবহার করতে হবে। সাথে একটি ডিলারজেন বোলাস চার ভাগ করে একভাগ দিনে একবার করে তিন দিনে একটি বোলাস খাওয়াতে হবে অথবা এস্টাভেট ইনজেকশন ১ মিলিলিটার করে প্রতিদিন একবার মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে। এভাবে ওই ইনজেকশন তিন দিন ব্যবহার করতে হবে।
জোবায়ের উদ্দিন, গ্রাম : পূর্ব ফিরুজ শাহ কলোনি, উপাজেলা : আকবর শাহ, জেলা :  চট্টগ্রাম
প্রশ্ন : আমার বেশ কিছু দেশি মুরগি আছে, এগুলো কম ডিম দিচ্ছে, মুরগিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি কী করব?
উত্তর : মুরগিকে বাড়ির খাবারের পাশাপাশি লেয়ার ফিড, সাথে ঝিনুক ভাঙা, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের মিশ্রণ খাওয়াতে হবে।  প্রতি ২ লিটার পানির সাথে ১ মিলি ক্যালপ্লেক্স লিকুইড অথবা রেনাক্যাল পি লিকুইড মিশিয়ে ৭ দিন খাওয়াতে হবে। প্রতি ৪ লিটার পানির সাথে  ১ মিলি এস্কাভিট এডিই সল্যুশন প্রতিদিন খাওয়াতে হবে।  
মো. পারভেজ, গ্রাম : বারইখালি,  উপজেলা : মাগুরা,  জেলা : মাগুরা
প্রশ্ন : মাছ বড় হচ্ছে না কী করা যায়?
উত্তর :  হ্যাচারি বা যে কোনো উৎস থেকে অপরিপক্ব বা পুষ্টিহীন বা খারাপ মানের পোনা আনলে বা পুকুরে মাছের পোনা বেশি ঘনত্বে ছাড়লে এ সমস্যা হতে পারে।  তাই পোনা সংগ্রহের আগে পোনার গুণগত মান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বিশ্বস্ত কোন হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। তবে দৈনিক সম্পূরক খাদ্য অর্থাৎ মানস¤পন্ন খাবার দিলে, সার প্রয়োগ করলে এবং পানি ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করতে পারলে এ সমস্যার নিরসন হয়। মাছের ঘনত্ব বেশি থাকলে কমিয়ে দিতে হবে। শতকপ্রতি ৪০-৫০টি মাছ (মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে সিলভারকার্প, কাতল/বিগহেড শতকপ্রতি ২০টি; রুই ১২টি; মৃগেল/মিররকার্প/কার্পিও ১০টি; গ্রাসকার্প ২টি, সরপুঁটি ৬টি) থাকা ভালো। পুকুরে মাছের মোট ওজনের ৩-৫ শতাংশ হারে সম্পূরক সুষম খাদ্য প্রতিদিন প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরের পানি ঘোলা হলে শতকপ্রতি চুন ০.৫ কেজি এবং ইউরিয়া সার শতকপ্রতি ১০০ গ্রাম হারে দিতে হবে।
মো. ফারাবি, গ্রাম : উত্তর চরটিটিইয়া, উপজেলা : বোরহানুদ্দিন, জেলা : ভোলা
প্রশ্ন : পুকুরে পাঙ্গাস মাছ হঠাৎ মারা যাচ্ছে, কী করব?
উত্তর : সাধারণত গ্যাস ও ব্যাক্টেরিয়াজনিত কারণে মাছ মারা যায়। পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে হবে কারণ অনেক সময় ঘনত্ব বেশি হলে অক্সিজেনের স¦ল্পতার কারণেও মাছ মারা যায়। হররা টেনে দিতে হবে। সম্ভব হলে পানি প্রবেশ করাতে হবে। জিওলাইট ২৫০ গ্রাম-শতক হারে দিতে হবে। অক্সিটেট্রাসাইক্লিন  ১০ মিলিগ্রাম এক কেজি খাবারের সাথে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ৩ বার দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। পুকুরের পাড়ে যদি বড় গাছ থাকে তাহলে গাছের ডাল ছেঁটে দিতে হবে যাতে পাতা পুকুরে না পড়ে। তাছাড়া পুকুরের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। পুকুরে যাতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
শাহাদাত হোসেন, গ্রাম : পলাশবাড়ি, উপজেলা : কুড়িগ্রাম সদর,  জেলা : কুড়িগ্রাম
প্রশ্ন : ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে চাই। কেমন করে করব?
উত্তর : দেশের জলাবদ্ধ ও নি¤œাঞ্চলে কচুরিপানা ব্যবহার করে ভাসমান সবজি উৎপাদন একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। ভাসমান বেড কোথাও কোথাও ধাপ নামেও পরিচিত। ধাপ পদ্ধতিতে সাধারণত  বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করা যায়। এর মাধ্যমে প্রতিকূল পরিবেশে অব্যবহৃত জমিতে  ফসল উৎপাদন করা যায়। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ (জুন-জুলাই) মাসে ভাসমান বেড তৈরি করা হয়। এলাকা ভেদে জ্যৈষ্ঠ-কার্তিক (জুন-নভেম্বর) মাস পর্যন্ত বেড তৈরি করা হয়। সাধারণত আয়তাকার ধাপ ১০-২০ মিটার দৈর্ঘ্য,  ২ মিটার প্রস্থ  এবং ১ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এবং  বর্গাকার ধাপ ৫-১০ মিটার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ  এবং ১ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। ধাপ তৈরির জন্য নির্ধারিত জায়গার ওপর ২-৩ টি বাঁশের খ- বা লম্বা ডাল ফেলতে হবে। প্রখমে নিচের দিকে বড় আকারের কচুরিপানা এবং ওপরের দিকে ছোট আকারের কচুরিপানা জড়ো করে স্তূপ তৈরি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে ১ বর্গমিটারের একটি ছোট ধাপ তৈরি করতে হবে। পরে চারপাশ থেকে আরও কচুরিপানা টেনে টেনে এ স্তূপের ওপর এবং পাশে ফেলতে হবে। ধাপ তৈরির শেষের দিকে কচুরিপানাগুলোর শিকড় ওপরের দিকে এবং কা-গুলো নিচের দিকে করে আস্তে আস্তে প্রস্থ থেকে দৈর্ঘ্য বরাবর সাজাতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে এর ভেতরে যেন কোনো কলমি, মালঞ্চ ও দুর্বা না থাকে। ধাপের উপরিভাগ হাত বা কাঠি দিয়ে সমতল করে নিতে হবে। ভাসমান বেড বা ধাপ তৈরি করার পর আবাদ উপযোগী থেকে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত জৈব সার থাকে। ভাসমান পদ্ধতিতে লালশাক, ধনেপাতা, ফুলকপি, পুঁইশাক, বরবটি, করলা, শসা, পানিকচু,  বাধাকপি, গাজর, মুলা, ঢেঁড়শ, পালংশাক, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, রসুন এসব চাষ করা যায়।  
সুপ্রিয় পাঠক বৃহত্তর কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কল সেন্টার এর ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির ব্যতিত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে। তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৬ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।

কৃষিবিদ ঊর্মি আহসান*
*উপজেলা কৃষি অফিসার (এলআর), সংযুক্ত কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫