Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রশ্নোত্তর কৃষিকথা ১৪২৩ (নিয়মিত বিভাগ)

ওমর ফারুক, গ্রাম-বিছন্দই, উপজেলা-হাতিবান্ধা, জেলা-লালমনিরহাট
প্রশ্ন : আলু গাছের পাতা খসখসে হয়ে যায় এবং ওপরের দিকে মুড়ে যায়। এর প্রতিকার কী?

উত্তর : এটি আলুর একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগ হলে পাতা খাঁড়া ও ওপরের দিকে মুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রঙ হালকা সবুজ হয়ে যায়। কখনও কখনও পাতার কিনারা লালচে বেগুনি রঙের হয়ে যায়। গাছ আকারে খাটো হয় কেননা এ রোগে গাছের বাড়বাড়তি বন্ধ হয়ে যায়। ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কমে যায় কারণ আলুর আকার যেমন ছোট হয় তেমনি আলুর সংখ্যাও অনেক কম হয়। এ  রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য আলুর রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। এক লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার এজেড্রিন/নোভাক্রন/ মেনেড্রিন অথবা ১ মিলিলিটার ডাইমেক্রন মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর জমিতে স্প্রে করতে হবে। আক্রান্ত গাছ আলুসহ তুলে ফেলতে হবে।

 

সেলিম রেজা, গ্রাম- মমিরা, উপজেলা- গাংনী, জেলা-মেহেরপুর
প্রশ্ন : মসুর গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়, গাছের গোড়ায় পচন দেখা যায়। কী করলে এ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে?

উত্তর : এটি মসুরের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। চারা ও বয়স্ক অবস্থায় এ রোগের আক্রমণ হয়।  পাতা আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে গাছ ঢলে পড়ে এবং শুকিয়ে যায়। মাটি যদি ভেজা থাকে তাহলে গাছের গোড়ায় সাদা  তুলার মতো বস্তু ও সরিষার দানার মতো গুটি দেখা যায়। এ রোগের দমনের জন্য ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে কারণ রোগের জীবাণু এ অংশ বা মাটিতে বেঁচে থাকে এবং পরের বছর ফসলে আক্রমণ করে। আক্রমণ বেশি হলে রোভরাল ২ গ্রাম-লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে মাটিসহ গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করা যাবে না। বপনের আগে প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম প্রভ্যাক্স বা কার্বেন্ডাজিম মিশিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। ভেজা স্যাঁতসে্যঁতে মাটিতে এ রোগ বেশি হয় বলে জমিতে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মাটিতে জৈবসারের ব্যবহার বাড়িয়ে দিতে হবে। ফসল তোলার পর জমিতে কয়েকবার অন্য ফসল চাষ করে আবার মসুর চাষ করলে রোগ আক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়। জমি চাষ দিয়ে কিছুদিন ফেলে রাখতে পারলে ভালো।

 

শাসুল আলম, গ্রাম- বলনামপুর, উপজেলা- হরিণাকুণ্ডু, জেলা-ঝিনাইদহ
প্রশ্ন : আমার মুরগির পাতলা পায়খানা হয়েছে, পায়খানার দেখতে সবুজ। মুরগিগুলো কিছু খায় না, শুধু ঝিমায়। কী ওষুধ ব্যবহার করব ?
উত্তর : মুরগির যে রোগটি হয়েছে তাকে ফাউল কলেরা বলে। এর চিকিৎসা হিসেবে মুরগিগুলোকে প্রতি দুই লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার হিসেবে সিপ্রোসিন ভেট-এনফ্লক্স ভেট সল্যুশন মিশিয়ে ৩ দিন খাওয়াতে হবে। এর সাথে প্রতি ২ লিটার পানিতে ১ গ্রাম হিসেবে রেনালাইট-ইলেকট্রোমিন পাউডার তিন দিন খাওয়াতে হবে। এ রোগ থেকে বাঁচার জন্য মুরগিকে নিয়মিত টিকা দিতে হবে। কলেরার টিকা মুরগির ৫০ দিন বয়সে প্রথম ডোজ এবং ১১৫ দিন বয়সে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়।

 

সুরুজ আলী, গ্রাম- খয়েরবাড়ি শ্যামপুর, উপজেলা- পীরগঞ্জ, জেলা- রংপুর
প্রশ্ন : আমি আমার গরুকে মোটাতাজা করতে চাই, কীভাবে করতে পারি?

উত্তর: গরুকে  প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য একটি করে এন্ডেক্স-এলটি ভেট বোলাস খাওয়াতে হবে। এর তিন দিন পর  থেকে ১৫ মিলিলিটার করে তিন সপ্তাহে তিনটি মেটাফস/কেটোফস ইনজেকশন এবং সাথে ১০ মিলিলিটার করে এমাইনোভিট/ভি  প্লেক্স  ইনজেকশন দিতে হবে। গরুকে প্রতিদিন দানাদার খাবার, ইউরিয়া মিশ্রিত খড় ও কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। ইউরিয়া মিশ্রিত খড় তৈরির জন্য  ১০ কেজি খড় ছোট ছোট করে কেটে পলিথিনের ওপর বিছাতে হবে। এরপর ১০ লিটার পানির সাথে ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে তা খড়ের সাথে ভালোভাবে মিশ্রিত করে সে খড় পলিথিন দিয়ে বেঁধে প্লাস্টিকের ড্রামে অথবা বাঁশের ডোল অথবা মাটির গর্তে বায়ুশূন্য অবস্থায় ৭ দিন রেখে দিতে হবে। ৭ দিন পর থেকে এটা গরুকে খাওয়াতে হবে। গরুর ওজন ৫০-৯৯   কেজি হলে  ইউরিয়া মিশ্রিত খড়, কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাবার খাওয়াতে হবে যথাক্রমে ২ কেজি, ৪-৫ কেজি ও ২.৫-৩ কেজি। ১০০-১৫০ কেজি ওজনের গরুর জন্য এ পরিমাণ যথাক্রমে  ৩ কেজি, ৭ কেজি ও ৩-৩.৫ কেজি। আর ১৫০-২০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য এ পরিমাণ যথাক্রমে  ৪ কেজি, ৮-১০ কেজি ও ৪-৪.৫ কেজি।

 

মো. আবু হানিফ, গ্রাম- বসুখালী, উপজেলা- আশাশুনি, জেলা-সাতক্ষীরা
প্রশ্ন :  মাছের শরীরে ক্ষত দেখা দিয়েছে, পুকুরে মাছ মারা যাচ্ছে ও পানির ওপরে ভেসে উঠছে কী করব?

উত্তর: শীতের মৌসুমে পুকুরে পানির তাপমাত্রা কম থাকার কারণে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে মাছের শরীরে বিভিন্ন রকম ঘা ও  ক্ষত দেখা দেয়।  সংক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ক্ষত স্থান থেকে পুঁজ বের হয় ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। মাছের ক্ষত রোগ হলে পুকুরে চুন ও লবণ প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি শতাংশ পুকুরে আধা কেজি  করে চুন ও লবণ প্রয়োগ করার ৭ দিন পর আবারো একইভাবে  আধা কেজি  করে চুন ও লবণ প্রয়োগ করতে হবে। আক্রমণের পরিমাণ বেশি হলে শতাংশপ্রতি  ১৫ গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এবং ১ কেজি করে চুন ও লবণ প্রয়োগ করলে ফল পাওয়া যায়। প্রতিকারের আরেকটি উপায় হলো ঘাযুক্ত মাছগুলো পুকুর থেকে তুলে ২০ লিটার পাত্রে পানি নিয়ে তাতে ২০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে পানিতে মাছগুলোকে ৫ মিনিট রাখতে হবে। অন্য একটি পাত্রে একই পরিমাণ পানি নিয়ে ৫ গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশিয়ে ৫ মিনিটের জন্য মাছগুলোকে রাখতে হবে তারপর পুকুরে ছাড়তে হবে। এসবের পাশাপাশি  প্রতি কেজি খাবারে ২টি টেট্রাসাইক্লিন অথবা টেরামাইসিন ট্যাবলেট মিশিয়ে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে। শরীরে ঘা এর পরিমাণ বেশি হলে মাছ উঠিয়ে নিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। এ রোগ প্রতিরোধের জন্য শীতের শুরুতে প্রতি শতাংশে ৩-৪টি করে চালতা ছেঁচে পুকুরে ছড়িয়ে দিতে হবে। শীতকালে পুকুরে যেন পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরকে বন্যামুক্ত রাখতে হবে। পুকুরে ২-৩ মাস পরপর চুন প্রয়োগ করা ভালো।

 

মো. বেলাল, গ্রাম- ভোলাহাট, উপজেলা- ভোলাহাট, জেলা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রশ্ন : মাছ অবিরত পানিতে সাঁতার কাটছে, মাঝে মধ্যে লাফালাফি করছে, পুকুরের কিনারায় যে ডালপালা আছে সেগুলোর সাথে শরীর ঘষছে, মাছের আঁশ ঝড়ে যাচ্ছে  মাছগুলো তুলে আনার পর গোলাকার দাগ বা ছোট আকারের ক্ষত দেখা যাচ্ছে। কী করব?

উত্তর : মাছের শরীর উকুন দ্বারা সংক্রমিত হলে এমন হয়। রোগের নাম ফিশ আরগুলোসিস। মাছের ক্ষেত্রে সাধারণত রুই এবং অন্যান্য কার্প মাছ এ পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয়। এটা খালি চোখে দেখা যায়। উকুন মাছের পিঠে ও পাখনায় থাকে। এ রোগ হলে  ৩-৫ ফুট গভীরতার পুকুরে শতক প্রতি ২-৩ মিলিলিটার সুমিথিয়ন অথবা ম্যালাথিয়ন ৭ দিন পরপর ৩ বার প্রয়োগ করতে হবে কারণ উকুন মারা গেলেও ডিম বেঁচে থাকতে পারে। পুকুর থেকে সংক্রমিত মাছ অপসারণ করতে হবে। একরপ্রতি ১০০ কেজি  হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে জৈবসারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে আক্রান্ত মাছগুলোকে পটাশ দ্রবণে (২০গ্রাম/লিটার) ২০-৩০ সেকেন্ড ডুবিয়ে পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে। এ রোগ প্রতিরোধ করার জন্য পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়ার সাথে সাথে পুকুরে পানি যাতে দূষিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুকুরে কখনই হাঁস মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করা যাবে না।
সুপ্রিয় পাঠক বৃহত্তর কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কল সেন্টারের ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির ব্যতীত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে।

 

তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৬ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।

কৃষিবিদ ঊর্মি আহসান*
*উপজেলা কৃষি অফিসার (এলআর), সংযুক্ত কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫