Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

যখন কৃষকরা অংশীদার : কেনিয়া সফরের অভিজ্ঞতা

যখন যাত্রীবাহী বিমানটি নাইরোবির কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করলে তখন  ১৩ জন বাংলাদেশী যাত্রী যাদের মধ্যে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পরিকল্পনা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন বোধগম্য কারণেই তাদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হয়েছে। তারা পূর্ব আফ্রিকার এ দেশটিতে সপ্তাহব্যাপী অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে এসেছেন জানতে কিভাবে কৃষক সংগঠন ও কেনিয়ার সরকার জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যূথবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।
যৌথভাবে নির্ণিত কাক্সিক্ষত উন্নয়ন
শুধু একই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অতীত অভিজ্ঞতা ছাড়া কেনিয়া ও বাংলাদেশ কি ভূমি গঠনে (ভূ-দৃশ্য), কি সংস্কৃতিতে, কি ভাষায় এবং ইতিহাস ঐতিহ্যে সুস্পষ্টভাবে আলাদা। তবুও দুই দেশই উন্নয়ন তালিকায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিকে রেখেছে এবং উভয় দেশই স্বাধীনতার পর কৃষিতে বিরাট অগ্রগতি ঘটিয়েছে। কেনিয়ার খাদ্য ও কৃষি খাত এখন বিকাশমান, যা চা, কফি, ফল, সবজি ও ফুলের বদৌলতে অর্থনীতিতে প্রায় ৫০ ভাগ অবদান রেখে চলেছে। পক্ষান্তরে কেনিয়ার আয়তনের এক-চতুর্থাংশের সমান ভূখণ্ডে ঘনবদ্ধ হয়ে থাকা চারগুণ বেশি জনসংখ্যা নিয়েও বাংলাদেশের ১৬০ মিলিয়ন মানুষের গ্রাসাচ্ছাদনে ধানের উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি করেছে।
বিনিয়োগ দক্ষতা শক্তিশালীকরণ
অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরটি ছিল গ্লোবাল এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি প্রোগ্রাম (জিএএফএসপি) বা বিশ্ব কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থায়নে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) কর্তৃক বাস্তবায়িত ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (আইএপিপি) কারিগরি সহায়তা অঙ্গের দক্ষতা উন্নয়নের অংশবিশেষ। এফএওর কারিগরি সহায়তা অঙ্গের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয়ের আরও ফলপ্রসূ বিনিয়োগ দক্ষতা বৃদ্ধি।
নিম্ন ও মধ্যআয়ের দেশগুলোতে কৃষকরা নিজেরাই হচ্ছেন প্রধান বেসরকারি বিনিয়োগকারী। অবশ্য বাংলাদেশে পারিবারিক খামার খুবই ছোট যে কোনোরূপ কৃষক সংগঠনে সংঘবদ্ধ হয়ে শক্তি সঞ্চয় ব্যতিরেকে তাদের পক্ষে বাজারে, ঋণ সুবিধায় বা অধিকতর বাণিজ্যিক উৎপাদনে অংশগ্রহণ করতে যে জ্ঞানের প্রয়োজন তাতে প্রবেশাধিকার অত্যন্ত ক্ষীণ। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের কৃষক সংগঠন এখনও অনেক দুর্বল; বাংলাদেশী সহকর্মীরা তাদের কেনিয়ার সহকর্মীদের কাছ থেকে আরও জানতে আগ্রহী ছিল।
কৃষি ব্যবসায় কৃষক সংগঠন
কেনিয়ার কৃষক সমবায়ের দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য/ইতিহাস আছে যার শুরু স্বাধীনতার পূর্বে সেই ১৯৪০ সালে। শক্তিশালী ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা, সদস্যদের ব্যবসায়িক পরামর্শ, লটে বা একসঙ্গে কেনাবেচার সুযোগ সৃষ্টি এবং চাহিদার সঙ্গে খাপখাইয়ে চলার মতো প্রায়োগিক কৌশলসহ একটি সুসংগঠিত এবং পেশাদার স্বত্তা হিসেবে আবির্ভূত হতে কেনিয়ার কৃষক সংগঠনকে কয়েক দশক জুড়ে অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি মূল্য সংযোজন ধারার কুশীলব (private value chain actor) কৃষকের স্বার্থ এবং অধিকারও সমবায় সমিতি সংরক্ষণ করে।
কেনিয়ায় সফরকালীন বাংলাদেশী সহকর্মীরা কফি, চা, কলা এবং বিভিন্ন মূল্য সংযোজন ধারায় কাজ করে এমন কতগুলো সক্রিয় সমবায় সমিতি পরিদর্শন করে- উদ্দেশ্য ছিল সমবায়গুলো কিভাবে কাজ করে, পণ্যগুলো একত্র করে,  বাজার খুঁজে নেয়, ভালো দামের জন্য লড়াই করে, মূল্য সংযোজন করে, মানসম্পন্ন উপকরণ সরবরাহ করে ইত্যাদি। এছাড়া কেনিয়ার কৃষকদের ব্যবসামুখী বাংলাদেশ দলের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
‘কৃষক সংগঠনের উদ্যোক্তাসুলভ মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে’- বললেন সফরে অংশগ্রহণকারী একজন। তিনি আরও বললেন, কৃষক সংগঠনের স্থায়িত্বের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।
সরকারের সঙ্গে অংশীদারি
সফরকারী বাংলাদেশ দল জানতে পেরেছে কিভাবে কেনিয়ার কৃষকগণ কাউন্টি থেকে জাতীয় পর্যায়ে সংঘবদ্ধ হয়েছে ফলে এখন তাদের কথা সবাই শুনছে, সম্মান  করছে এবং তারা যথেষ্ট শক্তিশালী, তারা লাখ লাখ কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে সহায়তা করছে যা ছিল সরকার ও কৃষক সংগঠনের যৌথ অংশগ্রহণে স্থিরকৃত লক্ষ্য। তারা কৃষক সংগঠনের সঙ্গে সংসদসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের নিবিড় মিথস্ক্রিয়ায় অভিভূত। অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরকালে কেনিয়ার সংসদ সদস্যরা এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, কেনিয়ার কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে কেনিয়ার কৃষক সংগঠন হচ্ছে সরকারের প্রকৃত মিত্র যেখানে  সরকার ও কৃষক সংগঠন সমস্বার্থে হাত ধরাধরি করে কেনিয়ার কৃষি খাতের অগ্রগতিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের একজন অংশগ্রহণকারী বললেন, বাংলাদেশ থেকে কেনিয়ার তফাৎটা হলো কেনিয়ায় সরকার ও কৃষক সংগঠনের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্কের কারণে নীতির সঠিক বাস্তবায়নে সরকার সক্ষম হতে পেরেছে। তিনি বলেন, এ জায়গাটায় আমাদের কাজ করা উচিত এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার উজ্জীবিত মন্ত্রের আলোকে বলা যায় সফরের শিক্ষাটা ছিল দ্বিমুখী কারণ কেনিয়ার সহকর্মীরা বাংলাদেশের উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে খুব আগ্রহী ছিল।
দেশে ফিরে কৃষক সংগঠন শক্তিশালীকরণ
বাংলাদেশ সফরকারী দলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুইজন এফএওর সহকর্মী ছিলেন যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন কৃষক সংগঠন গড়ে তোলার জন্য এবং ছিল দুইজন কৃষক সংগঠনের নেতা যারা উদীয়মান কৃষক সংগঠনগেুলোকে সহায়তা দিতে গত বছর একটি জাতীয় মঞ্চ গঠন করেছেন।
সপ্তাহ শেষে সফরকারী দল বাংলাদেশে কৃষক সংগঠন গড়ে তুলতে কিভাবে অনুকূল পরিবেশ  তৈরি করা যায় সে সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা করেছেন। একজন অংশগ্রহণকারী বললেন, এর জন্য প্রয়োজন সুশাসন, হিসাব-সংরক্ষণ, মানব ও সাংগঠনিক উন্নয়ন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও ক্রয়ের ওপর দক্ষতার স্ফুরণ।
অন্য আরেকজন বললেন, ‘আমাদের দেশে প্রয়োজন নীতি ও বিধিবিধানের কাঠামো তৈরি করা। একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সংগঠন নিশ্চিত করতে সম্প্রসারণ পদ্ধতি অবশ্যই হতে হবে গ্রুপকে লক্ষ্য করে ব্যক্তিকে নয়। কেনিয়ার জাতীয় কৃষক ফেডারেশন সংক্ষেপে KENAFF এ শিক্ষা সফরটি সংগঠিত করতে সহায়তা দিয়েছে। ক্ষুদ্র দল থেকে শুরু করে সমবায় এবং সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের সবার জন্য দরজা খুলে দিয়ে তারা অবিস্মরণীয় কাজ করে চলেছেন। কেনাফ (KENAFF) প্রমাণ করেছে পারিবারিক খামারিদের সঙ্গে রাজধানীর সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সংযোগের মধ্যে আসলে নিহিত আছে সবার মঙ্গল।

বেনোয়া ভিলেরিত্তে (অনুবাদ : মাহমুদ হোসেন)*
* ন্যাশনাল টিম লিডার, আইএপিপি-টিএ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা