Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রশ্নোত্তর (কৃষিকথা আষাঢ়-১৪২৪)

আকিব উদ্দিন শেখ, গ্রাম : গজেন্দ্রপুর, উপজেলা : ডুমুরিয়া, জেলা : খুলনা
প্রশ্ন : তরমুজের কাণ্ড ও পাতায় জাব পোকার আক্রমণ দেখা যায়, কীভাবে প্রতিকার করা যাবে?
 

উত্তর : তরমুজের জাব পোকা দেখতে খুবই ক্ষুদ্র। এদের পাখাসহ বা পাখাহীন উভয় অবস্থায় দেখা যায়। এটি ফসলের বাড়বাড়তির যে কোনো পর্যায়ে আক্রমণ করতে পারে। এ পোকা গাছের কচি কা-, ডগা ও পাতার রস শুষে খায়। ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। জাব পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য আধাভাঙা নিমবীজের নির্যাস (৫০ গ্রাম  এক লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভেজানোর পর মিশ্রণটি ছাঁকতে হবে) আক্রান্ত গাছে ১০ দিন পরপর ৩ বার ¯েপ্র করতে হবে। লেডি বার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ পোকা ও কীড়া এবং সিরফিড ফ্লাই নামক বন্ধু পোকাগুলোর কীড়া জাব পোকা খেয়ে প্রাকৃতিকভাবে এ পোকা দমন করে। তাই প্রকৃতিতে এসব পোকা সংরক্ষণ করতে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে এ পোকা দমনের জন্য সুমিথিয়ন অথবা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ২ মিলি-লিটার মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
 

মো. নজিবুর রহমান, গ্রাম : খলিশাখালী, উপজেলা :  কালিয়া, জেলা : নড়াইল
প্রশ্ন : পানের পাতায় কালো মাছি পোকার আক্রমণ হয়েছে। এর প্রতিকার কী?
উত্তর : কালো মাছি পোকার আক্রমণের ফলে পান গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়। মাছির সংখ্যা বেশি হলে কচি পাতা কুঁকড়ে, ছোট হয়ে যায়। পাতার নিচ দিকে পোকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এ পোকার আক্রমণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে  পানের বরজ ও এর আশপাশের জায়গা সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পানে আক্রমণ দেখা দিলে পোকাসহ আক্রান্ত পাতা তুলে পোকা মেরে ফেলতে হবে। বরজ পরিষ্কার রাখতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে এদের দমনের জন্য মারশাল ২০ ইসি ১ মিলি-লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। তবে  স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই পান খাওয়া বা বিক্রি করা যাবে না।

 

মো. সবুজ হোসেন, গ্রাম : হেমরাজপুর, উপজেলা : সুজানগর, জেলা : পাবনা
প্রশ্ন : পেয়ারায় সাদা মাছি পোকার আক্রমণ হয়েছে। কীভাবে দমন করব?  
উত্তর : সাদা মাছি পোকার আক্রমণ হলে পেয়ারা গাছের পাতায় অনেক সাদা বা হলদেটে দাগ পড়ে। সাধারণত শীতকালে এদের আক্রমণে পাতায় সাদা সাদা তুলার মতো দাগ  দেখা যায়। এরা পাতার রস শুষে নেয় বলে গাছ দুর্বল হয়ে যায়। রস শুষে নেয়ার সময় পাতায় মধু সদৃশ বিষ্ঠা ত্যাগ করে এবং এর ওপর শুটিমোল্ড নামক ছত্রাক জন্মে। এর ফলে পাতার খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। এ পোকার আক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। সাদা আঠাযুক্ত বোর্ড স্থাপন করে বা আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে  আক্রমণ কমানো যায়। ভালো ফল পেতে প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম সাবানের গুঁড়া গুলে নিয়ে পাতার নিচে সপ্তাহে ২-৩ বার ভালো করে স্প্রে করতে হবে। আক্রমণ খুব বেশি হলে ২ মিলি রগর-রক্সিয়ন ৪০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে  ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে করতে হবে।

 

মো. মোখলেসুর রহমান, গ্রাম : পীরহাটি, উপজেলা : ধুনট, জেলা : বগুড়া
প্রশ্ন : ঢেঁড়সের পাতায় হলুদ ও সবুজ ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায় এবং পাতার শিরাগুলো স্বচ্ছ ও হলুদ হয়ে যায়। এর প্রতিকার কী?
উত্তর : এটি ঢেঁড়সের ভাইরাসজনিত খুব ক্ষতিকর রোগ। ভাইরাসের আক্রমণে এ রোগ হলে গাছের বাড়-বাড়তি ব্যাহত হয়। সাদা মাছি বা হোয়াইট ফ্লাই এ রোগের প্রধান বাহক। এটি অসুস্থ গাছ থেকে ভাইরাস নিয়ে সুস্থ গাছে ছড়িয়ে দেয়। ফলে জমির অধিকাংশ গাছে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। একবার কোনো গাছে ভাইরাসের আক্রমণ ঘটলে সে গাছ আর সুস্থ করে তোলা যায় না। কাজেই প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা এ রোগের জন্য জরুরি। সব সময় রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ শোধন করার জন্য ভিটাভেক্স ৩ গ্রাম-১ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। ভাইরাস প্রতিরোধী জাত যেমন বারি  ঢেঁড়স-১ ব্যবহার করতে হবে। জমিতে সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। জমি যেন আগাছামুক্ত থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।  এ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত গাছ তুলে নিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। আর বাহক পোকা সাদা মাছি দমনের জন্য অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যায়। এ পোকা ধ্বংস করার জন্য সবিক্রন-ম্যালাথিওন ২০ মিলি.-১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। তবে কীটনাশক স্প্রে করার ১৫ দিনের মধ্যে সেই ঢেঁড়স যেন  খাওয়া বা বিক্রি করা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

 

মর্জিনা বেগম, গ্রাম : তাম্বুল খানা, উপাজেলা : ফরিদপুর, জেলা : ফরিদপুর
প্রশ্ন : আমার ২০টি দেশি মুরগি আছে। সব মুরগি ঝিমায়। এদের প্রচুর কাশি হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে পরামর্শ চাই।
উত্তর : আপনার মুরগির ইনফেকশাস করাইজা হয়েছে। আপনি টাইলোভেট পাউডার অথবা মাইক্রোনিড পাউডার প্রতি ২.৫ গ্রাম হিসেবে ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৪-৫ দিন খাওয়াবেন। আপনি একটি এইচ ভেট বোলাস অথবা ফাস্ট ভেট বোলাস প্রতি অর্ধেক পরিমাণ নিয়ে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিনে ২ বার করে ৪ দিন খাওয়াবেন।

 

সজল হাওলাদার, গ্রাম : মুন্সির তালুক, উপজেলা :  উজিরপুর, জেলা : বরিশাল
প্রশ্ন : আমার বাছুরের বয়স ১ মাস। এর ওজন ২০-৩০ কেজি। বাছুরের পায়খানার সাথে কৃমি পড়ছে। আমি এ ব্যাপারে পরামর্শ চাই।
উত্তর : আপনি আপনার বাছুরকে নিউট্রেক্স সিরাপ ৩০ মিলি অথবা এলমেক্স ভেট বোলাস অর্ধেক পরিমাণে খাওয়াবেন। ১৪ দিন পর আবার সমপরিমাণ খাওয়াবেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সুষম খাবার, আবাসন এসব ভালোভাবে দেখে শুনে রাখতে হবে। আর যে কোনো প্রয়োজনের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে কাজ করলে লাভ বেশি হবে খরচ কম হবে।

 

মো. সিহাব অধিকারী, গ্রাম : ফুলবাড়ী, উপজেলা : গোবিন্দগঞ্জ, জেলা : গাইবান্ধা
প্রশ্ন : কাতলা মাছের ফুলকার  ওপর বাদামি গুটি দেখা যাচ্ছে ও ফুলকা পচে যাচ্ছে , কিছু মাছ মারাও যাচ্ছে, কী করব?
উত্তর : এ রোগের নাম মিক্সোবলিয়াসিস। মিক্সোবলাস প্রজাতির এক ধরনের এককোষী প্রাণী রুই জাতীয় মাছের বিশেষ করে কাতলা মাছের ফুলকার ওপর সাদা বা বাদামি গুটি তৈরি করে। এতে করে ওই গুটির প্রভাবে ফুলকায় ঘা দেখা যায় ও ফুলকা খসে পড়ে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাঘাত ঘটার কারণে মাছ অস্থিরভাবে ঘোরাফেরা করে ও শেষ রাতের দিকে ব্যাপক মড়ক দেখা যায়। অদ্যাবদি এ রোগের কোনো চিকিৎসা সরাসরি আবিষ্কৃত হয়নি। তারপরও শতক প্রতি ১ কেজি হারে চুন দিলে পানির অ¤¬ত্ব দূর হয়ে পরজীবীগুলো অদৃশ্য হয়ে যায় ও মাছ নিষ্কৃতি লাভ করে।

 

দেলোয়ার হোসেন, গ্রাম : চরপারা, উপজেলা : নান্দাইল, জেলা : ময়মনসিংহ
প্রশ্ন : মাছ পেট ফুলে মারা যাচ্ছে, কী করব?
উত্তর : অ্যারোমনাডস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া এ রোগের কারণ। এ রোগে মাছের দেহের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে পানি সঞ্চালনের মাধ্যমে মাছের পেট ফুলে উঠে। ফলে  মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে ও পানির ওপর ভেসে থাকে, ফলে অচিরেই মাছ মারা যায়। আক্রান্ত মাছকে ২০০ মিলিগ্রাম ক্লোরামফেনিকল পাউডার  এক কেজি খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

 

সুপ্রিয় পাঠক বৃহত্তর কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কল সেন্টার এর ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটি ব্যতিত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে।
 

তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৬ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।

 

কৃষিবিদ ঊর্মি আহসান*
*উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (এলআর) সংযুক্ত, কৃষি তথ্য সার্ভিস,খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫