Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাটির প্রাণ কেঁচোসার বা ভার্মিকম্পোস্ট

উদ্ভিদ ও প্রাণিজ বিভিন্ন প্রকার জৈববস্তুকে কিছু বিশেষ প্রজাতির কেঁচোর সাহায্যে কম সময়ে জমিতে প্রয়োগের উপযোগী উন্নত মানের জৈবসারে রূপান্তর করাকে ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচোসার বলে। ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচোসার নিয়ে কাজ করেছে বহু দিন থেকেই বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা।
আমাদের দেশের বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্মিকম্পোস্ট সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা চলছে এবং উন্নত মানের ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করতে ইউড্রিলাস ইউজেনি এবং আইসেনিয়া ফিটিডা-কে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে আবার ইউড্রিলাস ফিটিডার ব্যবহার বেশি। ইউড্রিলাস ইউজেনি কেঁচোর সহনশীলতা বেশি। বিভিন্ন জৈব কীটনাশক যেমন- নিম খোল, মহুয়া খোল, গ্লাইরিসিডিয়া, ইউপাটোরিয়ামের প্রতি অনেক বেশি সহনশীলতা দেখায়। বিভিন্ন ধরনের মাটির সাথেই কেঁচোর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয় তাই স্থানীয় মাটিতে সে স্থানের কেঁচোর সাহায্যেই জৈবসার তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাইরে থেকে কেঁচো নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। বড় গর্ত, ট্যাংক বা কংক্রিটের বৃত্তাকার পাত্র-রিং অথবা যে কোনো বড় পাত্রে কেঁচোর প্রজনন ঘটিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করা যায়।
পুষ্টিমান
ভার্মিকম্পোস্ট সারে গাছের অত্যাবশ্যকীয় ১৬টি খাদ্য উপাদানের ১০টিই বিদ্যমান। গবেষণায় দেখা গেছে, আদর্শ ভার্মিকম্পোস্টে জৈব পদার্থ ২৮.৩২ ভাগ, নাইট্রোজেন ১.৫৭ ভাগ, ফসফরাস ১.২৬ ভাগ, পটাসিয়াম ২.৬০ ভাগ, ক্যালসিয়াম ২ ভাগ, ম্যাগনেসিয়াম ০.৬৬ ভাগ, সালফার ০.৭৪ ভাগ, বোরন ০.০৬ ভাগ, আয়রন ৯৭৫ পিপিএম, ম্যাঙ্গানিজ ৭১২ পিপিএম, জিঙ্ক ৪০০ পিপিএম এবং কপার ২০ পিপিএম রয়েছে।
কেঁচোসার বা ভার্মিকম্পোস্টের গুরুত্ব
বিজ্ঞানী চালর্স ডারউইন সর্বপ্রথম কেঁচোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সবাইকে অবগত করান। তিনি বলেন কেঁচো ভূমির অন্ত্র এবং পৃথিবীর বুকে উর্বর মাটি তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে, যার ওপর ফসল উৎপাদন করি। এ অতি সাধারণ, ক্ষুদ্র প্রাণীটি পচনশীল জৈবপদার্থ থেকে সোনা ফলাতে পারে, কেঁচোসার বা ভার্মিকম্পোস্টে রূপান্তরিত করে। আহার পর্বের পর যে পাচ্য পদার্থ মলরূপে নির্গমন হয় তাকে কাস্ট বলে। এ কাস্টের ভেতর জীবাণু সংখ্যা এবং তার কার্যকলাপ বাড়ার কারণে মাটির উর্বরতা বাড়ে। দেখা গেছে, পারিপার্শ্বিক মাটির তুলনায় কাস্টের মধ্যে জীবাণু সংখ্যা প্রায় হাজার গুণ বেশি। এ কাস্টের ওপরে বিভিন্ন প্রকার উৎসেচক উৎপাদনকারী ব্যাক্টেরিয়া জীবাণু বেশি থাকায় মাটির উর্বরতাও বাড়ে। কাস্টের কারণে মাটি থেকে গাছে ৬ শতাংশ নাইট্রোজেন এবং ১৫-৩০ শতাংশ ফসফরাস যোগ হতে দেখা গেছে। এছাড়াও অন্যান্য উদ্ভিদ খাদ্য উপাদান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম গাছ বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে। কেঁচোর উপস্থিতিতে জৈবপদার্থের কার্বন ও নাইট্রোজেন অনুপাত প্রায় ২০:১ এর কাছাকাছি হয়। এ অনুপাতে গাছ সহজেই কম্পোস্ট থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
কেঁচোর বৈশিষ্ট্য
কেঁচোর সার তৈরি করতে নির্দিষ্ট প্রজাতির কেঁচো বেছে নেয়ার জন্য তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে নেয়া আবশ্যক। শীত ও গ্রীষ্ম উভয় আবহাওয়াতে বেঁচে থাকার ক্ষমতা; সব রকম জৈববস্তু থেকে খাবার গ্রহণ করার সামর্থ্য; কেঁচো যেন রাক্ষুসে প্রকৃতির হয়, অর্থাৎ প্রচুর আহার করার ক্ষমতা থাকতে হবে; অন্যান্য প্রজাতির কেঁচোর সাথে মিলেমিশে বাস করা; জৈব দ্রব্য পাওয়ার সাথে সাথে বা অল্প সময়ের মধ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠা এবং সেখান থেকে খাবার সংগ্রহ করা; রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা এবং প্রতিকূল অবস্থানে নিজেদেরকে মানিয়ে নেয়া; দ্রুততার সাথে বংশবিস্তার করা এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঘটানো।
স্থানীয় কেঁচো সংগ্রহের উপায়
এমন মাটি শনাক্ত করতে হবে যেখানে কেঁচো দৃশ্যমান। ৫০০ গ্রাম গুড় এবং ৫০০ গ্রাম তাজা গোবর ২ লিটার পানিতে দ্রবীভূত করে ১ মিটার দ্ধ ১ মিটার এলাকায় মাটির উপরিতলে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। খড়ের ডেলা এবং পুরনো চটের থলি দিয়ে জায়গাটা ঢেকে দিতে হবে। ২০ থেকে ৩০ দিন ক্রমাগত পানি ছিটিয়ে যেতে হবে। এ জায়গাতেই একসাথে বহু কেঁচোর বাচ্চা জন্ম হবে যাদের সহজেই সংগ্রহ এবং ব্যবহার করা যাবে। এমনকি পচা কলার গাছের খোল থেকেও স্থানীয় লাল কেঁচো সংগ্রহ করা যায়।
গর্ত বানানো ও সার তৈরি করা
প্রয়োজনানুযায়ী গর্ত তৈরি করে নেয়া যেতে পারে বাড়ির উঠোনে অথবা বাগানে বা মাঠে। একটি অথবা দুটি গর্ত করা যেতে পারে বা ইঁট ও চুন-সুরকি দিয়ে যে কোনো মাপের ট্যাংক, পানি যাওয়ার জায়গাসহ তৈরি করে নেয়া যেতে পারে। ২ মিটার দ্ধ ১ মিটার দ্ধ ০.৭৫ মিটার হচ্ছে এ কাজের জন্য আদর্শ। জৈব ও কৃষির র্জ্যরে ওপর নির্ভর করবে গর্তের মাপ। কেঁচোগুলো পিঁপড়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য গর্তের মাঝ-বরাবর অস্থায়ী প্রাচীরে পানি জমিয়ে রাখা যায়। চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত গর্ত-ট্যাংক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ জৈবসারের প্রকোষ্ঠ থেকে প্রক্রিয়াকরণের আগের বর্জ্য প্রকোষ্ঠে কেঁচোদের যাতায়াতের সুবিধা করার জন্যই চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত গর্ত বা ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়।
উপকরণ
প্রাণীর মল-গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, ছাগল-ভেড়ার মল। এগুলোর মধ্যে গোবর উৎকৃষ্ট; মুরগির বিষ্ঠায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফেট থাকে যা পরিমাণে বেশি হলে কেঁচোর ক্ষতি হতে পারে। তাই খড়, মাটি বা গোবরের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভালো। কৃষি বর্জ্য-ফসল কাটার পর পড়ে থাকা ফসলের দেহাংশ যেমন- ধান ও গমের খড়, মুগ, কলাই, সরিষার গমের খোসা, তুষ, কা-, ভুসি, সবজির খোসা, লতাপাতা, আখের ছোবড়া; গোবর গ্যাসের পড় থাকা তলানি বা স্লারি; শহরের আবর্জনা এবং শিল্পজাত বর্জ্য যেমন- খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা বর্জ্য। যেসব বস্তু ব্যবহার করা উচিত নয়, তাহলো-পেঁয়াজের খোসা, শুকনোপাতা, মরিচ, মসলা এবং অম্ল বা এসিড সৃষ্টিকারী বর্জ্য টমেটো, তেঁতুল, লেবু, কাঁচা বা রান্না করা মাছ মাংসের অবশিষ্টাংশ। এছাড়া অজৈব পদার্থ পাথর, ইটের টুকরা, বালি, পলিথিন।
স্থান নির্বাচন ও প্রস্তুত প্রণালি
সার তৈরি করতে প্রথমে ছায়াযুক্ত উঁচু জায়গা বাছতে হবে, যেখানে সরাসরি সূর্যালোক পড়বে না এবং বাতাস চলাচল করে। ওপরে একটি ছাউনি দিতে হবে। মাটিরপাত্র, কাঠেরবাক্স, সিমেন্টের রিং বা পাত্র, পাকা চৌবাচ্চা বা মাটির ওপরের কেঁচোসার প্রস্তুত করা যায়। লম্বা ও চওড়া যাই হোক না কেন উচ্চতা ৩০.৪৮ সে.মি.-৩.৮১ সে.মি. (১-১.৫ ফুট) হতে হবে। পাত্রের তলদেশে ছিদ্র থাকতে হবে যাতে কোনোভাবেই পাত্রের মধ্যে পানি না জমে। প্রথমে চৌবাচ্চা বা পাত্রের তলদেশে ৩ ইঞ্চি বা ৭.৫ সেন্টিমিটার ইঁটের টুকরা, পাথরের কুচি দিতে হবে। তার ওপরে ২.৫৪ সে.মি. (১ ইঞ্চি) বালির আস্তরন দেয়া হয় যাতে পানি জমতে না পারে। বালির ওপর গোটা খড় বা সহজে পচবে এরকম জৈব বস্তু বিছিয়ে বিছানার মতো তৈরি করতে হয়। এরপর আংশিক পচা জৈবদ্রব্য (খাবার) ছায়াতে ছড়িয়ে ঠা-া করে বিছানার ওপর বিছিয়ে দিতে হবে। খাবারে পানির পরিমাণ কম থাকলে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে যেন ৫০-৬০ শতাংশ পানি থাকে। খাবারের ওপরে প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচো গড়ে কেজি প্রতি ১০টি করে ছেড়ে দিতে হবে। কেঁচোগুলো অল্প কিছুক্ষণ স্থির থাকার পর এক মিনিটের মধ্যেই খাবারের ভেতরে চলে যাবে। এরপর ভেজা চটের বস্তা দিয়ে জৈব দ্রব্য পুরোপুরি ঢেকে দেয়া উচিত। বস্তার পরিবর্তে নারিকেল পাতা দিয়েও ঢাকা যেতে পারে। মাঝে মাঝে হালকা পানির ছিটা দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি যেন না দেয়া হয়। এভাবে ২ মাস রেখে দেয়ার পর কম্পোস্ট সার তৈরি হয়ে যাবে। জৈববস্তুর ওপরের স্তরে কালচে বাদামি রঙের, চায়ের মতো দানা ছড়িয়ে থাকতে দেখলে ধরে নেয়া হয় সার তৈরি হয়ে গেছে। এ সময়ে কোনো রকম দুর্গন্ধ থাকে না। কম্পোস্ট তৈরি করার পাত্রে খাবার দেয়ার আগে জৈববস্তু, গোবর, মাটি ও খামারজাত সার নির্দিষ্ট অনুপাত (৬:৩:০.৫:০.৫) অর্থাৎ জৈব আবর্জনা ৬ ভাগ, কাঁচা গোবর ৩ ভাগ, মাটি ১/২ ভাগ এবং খামার জাত সার ১/২ ভাগ, মিশিয়ে আংশিক পচনের জন্য স্তূপাকারে ১৫-২০ দিন রেখে দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর ওই মিশ্রিত পদার্থকে কেঁচোর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে একটি ১ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ৩ সেন্টিমিটার গভীর আয়তনের গর্তের জন্য ৪০ কিলোগ্রাম খাবারের প্রয়োজন হয়। এ রকম একটি গর্তে এক হাজার কেঁচো প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রথম দিকে কম্পোস্ট হতে সময় বেশি লাগে (৬০-৭০ দিন)। পরে মাত্র ৪০ দিনেই সম্পন্ন হয়। কারণ ব্যাক্টেরিয়া ও কেঁচো উভয়েরই সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। তথ্য অনুসারে ১ কেজি বা ১০০০টি কেঁচো, ৬০-৭০ দিনে ১০ কেজি কাস্ট বা কম্পোস্ট তৈরি করতে পারে। এক কেজি কেঁচো দিনে খাবার হিসেবে ৫ কেজি সবুজসার খেতে পারে। তার জন্য ৪০-৫০ শতাংশ আর্দ্রতা বজায় রাখা আবশ্যক। প্রায় ৮০০-১০০০ কেঁচোর ওজন হয় ১ কেজি। এই পরিমাণ কেঁচো সপ্তাহে ২০০০-৫০০০টি ডিম বা গুটি দেয়। পূর্ণাঙ্গ কেঁচোর জন্ম হয় ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে। অভিজ্ঞতায় দেখা যায় ১ কেজি কাঁচা গোবর থেকে প্রায় ৫০০ গ্রাম কম্পোস্ট পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য কৃষিজ বর্জ্যে ক্ষেত্রে কেজি কাঁচামাল হতে ২৫০ গ্রাম কেঁচো সার পাওয়া যায়।
সার প্রস্তুতকরণ
যখন পদার্থগুলো সামান্য ঝুরঝুরে হয়ে যাবে এবং সারের রঙ গাঢ় বাদামি হয়ে যাবে তখনই সার প্রস্তুত সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। দানাদার, কালো, হালকা এবং বোদযুক্ত হবে;
৬০-৯০ দিনের মধ্যেই সার প্রস্তুত সম্পন্ন হবে। ওপরের বেডে কেঁচোর উপস্থিতিতেই তা বোঝা যাবে;
সার থেকে কেঁচোগুলোকে আলাদা করার জন্য বেড খালি করার ২-৩ দিন আগে পানি দেয়া বন্ধ করতে হবে। এর ফলে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ কেঁচো নিচে চলে যাবে;
ঝাঁঝরি বা চালুনি দিয়েও কেঁচোদের আলাদা করা যায়। কেঁচো এবং সামান্য পুরু পদার্থ যা ঝাঁঝরির ওপরে থেকে যাবে তাকে আবার গর্তে ফেলে দিতে হবে যেখানে পুনরায় পদ্ধতিটি শুরু হবে। সারের গন্ধ মাটির মতো। যে কোনো খারাপ গন্ধ এটাই প্রমাণ করে পচন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি এবং ব্যাক্টিরিয়ার কার্য-ক্রিয়া চালু আছে। ছাতা ধরা বা বাসিগন্ধের মানে নাইট্রোজেন বেরিয়ে যাচ্ছে। যদি এমন ঘটে তাহলে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে এবং আরও বেশি করে তন্তু জাতীয় পদার্থ যোগ করতে হবে এবং শুকনা রাখতে হবে। এরপরে ব্যবহারের উপযোগী সারকে ছেঁকে নিয়ে প্যাকেট করতে হবে;
দুই বা চার প্রকোষ্ঠযুক্ত ব্যবস্থায় প্রথম প্রকোষ্ঠে পানি দেয়া বন্ধ করে দিতে হবে যাতে কেঁচোগুলো নিজে থেকেই এক প্রকোষ্ঠ থেকে অন্য প্রকোষ্ঠে চলে যায় যেখানে উপযুক্ত পরিবেশ নিয়মিতভাবে রক্ষা করা হয় এবং ফসল উৎপাদনও নিয়মিত হতে থাকে।
সতর্কতা
পিঁপড়া, উঁইপোকা, তেলাপোকা, গোবরাপোকা, চিকা, মুরগি ও বিভিন্ন পাখি কেঁচোর শত্রু। এগুলো কোনো কীটনাশক দিয়ে মারা যাবে না। তবে হাউসের চারদিকে কীটনাশক দেয়া যাবে। ব্যবহৃত গোবরের সঙ্গে ছাই, বালু, ভাঙা কাঁচ এসব রাখা যাবে না। মুরগি ও পাখির আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য হাউসের ওপর ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে। কেঁচোকে জীবিত ও সক্রিয় রাখতে হাউসে বেশি পানি দেয়া যাবে না। চালনি দিয়ে চালার সময় হাউসে নির্দিষ্ট জাত ছাড়া অন্য জাতের কেঁচো থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। ট্যাংক-প্রকোষ্ঠ-রিংয়ের উচ্চতা কোনোক্রমেই আড়াই ফিটের অধিক করা যাবে না। উচ্চতা বেশি হলে অক্সিজেনের অভাবে কেঁচো নিচে যেতে চাবে না এবং খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দিবে।
আয়-ব্যয় হিসাব
মূলত রিং পদ্ধতিতে কেঁচোকম্পোস্ট সার উৎপাদন করে থাকেন। প্রতিটি রিংয়ের উচ্চতা ৩০.৪৮ সে.মি. (১২ ইঞ্চি) এবং ব্যাস ৭৬.২ সে.মি. (৩০ ইঞ্চি)। প্রতিটি রিংয়ে ৬০-৭০ কেজি গোবরে আধা কেজি কেঁচো দেয়া হয়। আবার অনেক সময় একটি রিংয়ের ওপর আরেকটি রিং বসিয়ে দেয়া হয়। এতে গোবর ও কেঁচো দ্বিগুণ হারে লাগে। প্রতি রিংয়ে রিং বাবদ ২০০ টাকা, গোবর বাবদ ১২০ টাকা এবং কেঁচো বাবদ ২৫০ টাকা খরচ হয়। স্থাপনের ২৫-৩০ দিনের মাথায় বিক্রয়ের উপযোগী কেঁচো সার তৈরি হয়। প্রতিটি রিং হতে ৩০-৩৫ কোজি সার পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ফলে এক মাসে একটি রিং হতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং প্রায় আধা কেজি কেঁচো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এভাবে ১৭টি রিং থেকে মাসে সাড়ে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা এবং বছর ঘুরে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। ২৫ শতক আলুর জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি প্রতি শতকে ৩ কেজি হারে কেঁচো সার ব্যবহার করতে হয়। এক শতক জমিতে তিনি ১২০ কেজি ফলন হয়। প্রতিবেশী কৃষকেরা ফলন পায় ১০০ কেজির কাছাকাছি। শুধু তাই নয় তার জমিতে রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব কম হয়। কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের জন্য বিভিন্ন স্থানে কৃষি তথ্য সার্ভিস নির্মিত ভার্মিকস্পোস্টের ওপর সিনেমা শো আয়োজন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পশ্চিম ধনতলা কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের অনেক মহিলা সদস্যসহ গ্রামের অনেকেই এখন কেঁচোকম্পোস্ট সার উৎপাদন করছে। কেঁচোসার উৎপাদন-বিক্রয় করে গ্রামের বেকার যুবক-যুবতিদের সহজেই স্বনির্ভর আয়ের সংস্থান করতে পারেন।
কেঁচোসার বা ভার্মিকম্পোস্টের ব্যবহারের মাত্রা ও ফলনে প্রভাব
ভার্মিকম্পোস্ট সব প্রকার ফসলে যে কোনো সময়ে ব্যবহার করা যায়। সবজি এবং কৃষি জমিতে ৩-৪ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টরে ও ফল গাছে গাছ প্রতি ৫-১০ কেজি হারে ব্যবহার করা হয়। ফুল বাগানের ক্ষেত্রে ব্যবহারের পরিমাণ ৫০০ থেকে সাড়ে ৭০০ কেজি এক হেক্টর জমিতে। মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কেঁচো সার ব্যবহারে মাঠ ফসলে ফলন শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবজিতে ফলন বৃদ্ধিসহ গুণগতমান ও স্বাদ বাড়ে। এমনকি ফল না ধরা অনেক পুরনো ফল গাছে নতুন করে ফল ধরাসহ ফলদ বৃক্ষে দুইগুণ অবধি ফলন বেড়েছে। জমির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা বজায় রাখার জন্য জৈব সার ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন এ ব্যাপারে। তাই ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন ও তার ব্যবহার এক মূল্যবান ভূমিকা পালন করতে চলেছে আগামী দিনগুলোতে।

কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম*

*আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক অফিস, রংপুর; মোবাইল-০১৭১৯৫৪৭১৭৯ sayemdae@yahoo.com