বিনাধান-৮ : পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ৯০-৯৫ সেন্টিমিটার এবং হেলে পড়ে না। জীবনকাল ১৩৫-১৪০ দিন। আলোক অসংবেদনশীল বোরো ধানের জাত। কুশি অবস্থা থেকে পরিপক্বতা পর্যন্ত ৮-১০ ডিএস/মিটার এবং চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল। ডিগপাতা খাড়া এবং লম্বা। পরিপক্ব অবস্থা পর্যন্ত পাতা এবং কাণ্ড সবুজ থাকে। ধান উজ্জ্বল, শক্ত এবং চাল মাঝারি মোটা। বিনাধান-১০ স্বাভাবিক অবস্থায় বীজতলায় বীজ ফেলা থেকে ফসল পাকা অবধি ১৩০-১৩৫ দিন পরে কাটা যায়। দেশের লবণাক্ত ও অলবণাক্ত উভয় এলাকায় এ জাতটি চাষের উপযোগী। তবে অলবণাক্ত এলাকায় ফলন কিছুটা বেশি পাওয়া যায়।
এ জাতের বীজ নভেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহ হতে শুরু করে ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজতলায় ফেলার উপযুক্ত সময়। জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী রোপা আমন জাতের মতোই ভারী, পুষ্ট ও রোগবালাই মুক্ত বীজ বাছাই করে বপনের আগে বীজ শোধন করা ভালো। পাঁচ শতাংশ (২০০ বর্গমিটার) পরিমাণ বীজতলায় ১০ কেজি বীজ ফেলা যায়। নভেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহ হতে শুরু করে ডিসেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজতলা তৈরি করে ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করলে ভালো ফসল পাওয়া যায়।
চারার বয়স ও রোপণ পদ্ধতি : ডিসেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ হতে ৩য় সপ্তাহ পর্যন্ত ৩৫-৪০ দিনের চারা লাইন করে রোপণ করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। ২/৩টি সুস্থ সবল চারা একত্রে এক গুছিতে রোপণ করতে হবে। সারি হতে সারির দূরত্ব ২০ সেমি. এবং সারিতে গুছির দূরত্ব ১৫ সেমি. থাকা ভালো।
সার প্রয়োগ প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া ২১০-২৩০, টিএসপি ১১০-১২০ এমওপি ৬০-৮০ জিপসাম ১৮-২০ দস্তা ১.৫-২.০ কেজি।
রোপণের জন্য জমি তৈরির শেষ চাষের আগে সম্পূর্ণ টিএসপি, এমপি, জিপসাম এবং দস্তা জমিতে সমভাবে ছিটিয়ে চাষের মাধ্যমে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের অর্ধেক পরিমাণ চারা রোপণের ৭-৮ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক ৩০-৩৫ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে অথবা এক তৃতীয়াংশ চারা রোপণের ৭-৮ দিন পর, এক তৃতীয়াংশ চারা রোপণের ১৮-২০ দিন পর এবং শেষ তৃতীয়াংশ চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর জমির উর্বরতার ওপর নির্ভর করে প্রয়োগ করতে হবে। অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি জিপসাম ৫০ কেজি (একর প্রতি ২০ কেজি) এবং দস্তা সার ৪ কেজি (একর প্রতি ১.৬ কেজি) হারে দেয়া যেতে পারে। ইউরিয়া সার প্রয়োগের ২/১ দিন আগে জমির অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে আগাছা দমন করতে হবে। জমির উর্বরতা ও ফসলের অবস্থায় ওপর নির্ভর করে ইউরিয়া সার প্রয়োগ মাত্রার তারতম্য করা যেতে পারে।
এ জাতের ধানের পরিচর্যা অন্যান্য উফশী জাতের মতোই। এর জীবনকাল কম বিধায় চারা রোপণের পর আগাছা দেখা দিলে দ্রুত নিড়ানি যন্ত্র বা হাতের সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার ও মাটি নরম করতে হবে। ধান পাকার ১০-১২ দিন আগে জমির পানি শুকিয়ে ফেলা ভালো। রোগ বালাই ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ দেখা দিলে নিকটস্থ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার উপদেশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে প্রচলিত তরল বা দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া খোল ঝলসানো, ব্যাক্টেরিয়াল লিফব্লাইট বা পাতা ঝলসানো ও অন্যান্য রোগ দেখা দিলে উপযুক্ত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। খোল ঝলসানো, কা- পচা রোগ দেখা দিলে বেনলেট, হোমাই, বেভিস্টিন বা টপসিন মিথাইল মাত্রা অনুযায়ী প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বিনাধান-১০
পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ১০০-১১০ সেন্টিমিটার এবং হেলে পড়ে না। জীনবকাল ১২৫-১৩০ দিন। উচ্চফলনশীল ও আলোক অসংবেদনশীল বোরো ধানের জাত। কুশি অবস্থা থেকে পরিপক্বতা পর্যন্ত ১০-১২ ডিএস/মিটার এবং চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল। ডিগপাতা খাড়া এবং লম্বা। পরিপক্ব অবস্থা পর্যন্ত পাতা এবং কা- সবুজ থাকে। ধান উজ্জ্বল, শক্ত এবং চাল লম্বা ও মাঝারি। দেশের লবণাক্ত ও অলবণাক্ত উভয় এলাকায় এ জাতটি চাষের উপযোগী। তবে অলবণাক্ত এলাকায় ফলন কিছুটা বেশি পাওয়া যায়।
এ জাতের বীজ নভেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহ হতে শুরু করে ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজতলায় ফেলার উপযুক্ত সময়।
চাষাবাদ পদ্ধতি : জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী বোরো জাতের মতোই।
বীজ বাছাই ও শোধন : ভারী, পুষ্ট ও রোগবালাই মুক্ত বীজ বাছাই করতে হয় এবং বপনের আগে বীজ শোধন করা ভালো।
বীজতলা তৈরি : পাঁচ শতাংশ (২০০ বর্গমিটার পরিমাণ বীজতলায় ১০ কেজি বীজ ফেলা যায়। জুন মাসের শেষ সপ্তাহ হতে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ (আষাঢ়ের ২য় সপ্তাহ হতে শেষ সপ্তাহ) পর্যন্ত বীজতলা তৈরি করে ২০-২৫ দিনের চারা রোপণ করলে ভালো ফসল পাওয়া যায়। তবে জুলাইয়ের শেষ (শ্রাবণের দ্বিতীয়) সপ্তাহ পর্যন্তও বীজতলা করা যায়।
চারার বয়স ও রোপণ পদ্ধতি : ডিসেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ হতে ৩য় সপ্তাহ পর্যন্ত ৩৫-৪০ দিনের চারা লাইন করে রোপণ করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। ২/৩টি সুস্থ সবল চারা একত্রে এক গুছিতে রোপণ করতে হবে। সারি হতে সারির দূরত্ব ২০ সেমি. এবং সারিতে গুছির দূরত্ব ১৫ সেমি. থাকা ভালো। সারের মাত্রা এবং প্রয়োগ পদ্ধতি বিনাধান ৮-এর মতোই।
এ জাতের ধানের পরিচর্যা অন্যান্য উফশী জাতের মতোই। এর জীবনকাল কম বিধায় চারা রোপণের পর আগাছা দেখা দিলে দ্রুত নিড়ানি যন্ত্র বা হাতের সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার ও মাটি নরম করতে হবে। ধান পাকার ১০-১২ দিন আগে জমির পানি শুকিয়ে ফেলা ভালো।
রোগ বালাই ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ দেখা দিলে নিকটস্থ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার উপদেশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে প্রচলিত তরল বা দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া খোলা ঝলসানো, ব্যাক্টেরিয়াল লিফব্লাইট বা পাতা ঝলসানো ও অন্যান্য রোগ দেখা দিলে উপযুক্ত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। খোল ঝলসানো, কা- পচা রোগ দেখা দিলে বেনলেট, হোমাই, বেভিস্টিন বা টপসিন মিথাইল মাত্রা অনুযায়ী প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বিনাধান-১৮
এটি উচ্চফলনশীল বোরো ধানের জাত। উচ্চফলনশীল বোরো ধানের জাত ব্রি ধান-২৯ এর চেয়ে ১২-১৫ আগে পাকে অথচ ব্রি ধান-২৯ এর সমান ফলন দেয়। গাছ শক্ত বলে হেলে পড়ে না । পাতা গাঢ় সবুজ, লম্বা ও চওড়া। ডিগ পাতা খাড়া। জীবনকাল-বোরো মৌসুমে ১৪৫-১৫০ দিন । যথোপযুক্ত পরিচর্যায় বোরো মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৭.৫-৮.০ টন ফলন দেয়। রান্নার পর ভাত ঝরঝরে হয় এবং দীর্ঘক্ষণ রাখলে নষ্ট হয় না। জাতটি বিভিন্ন রোগ যথা- পাতা পোড়া, খোল পচা ও কা- পচা ইত্যাদি রোগ তুলনামূলকভাবে বেশি প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া এ জাতটির প্রায় সব ধরনের পোকার আক্রমণ, বিশেষ করে বাদামি গাছ ফড়িং, গলমাছি ও পামরি পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। বিনাধান-১৮ বোরো মৌসুমের জন্য আনুমোদিত হলেও জাতটি আউশ মৌসুমে চাষ করা যায়। লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের প্রায় সব মধ্যম উঁচু ও মধ্যম নিচু জমিতে বিশেষ করে বৃহত্তম রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, টাঙ্গাইল, যশোর, ঢাকা এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলে জাতটির অধিক ফলন পাওয়া যায়।
প্রতি হেক্টর জমি চাষের জন্য ২৫-৩০ কেজি বা একর প্রতি ১০-১২ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। ভারী, পুষ্ট ও রোগবালাই মুক্ত বীজ বাছাই করতে হয় এবং বপনের আগে বীজ শোধন করা ভালো। বোরো মৌসুমে অঞ্চল ভেদে ২০ কার্তিক থেকে ৫ অগ্রহায়ণ পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ (২০০ বর্গমিটার) পরিমাণ বীজতলায় ১০ কেজি বীজ ফেলা যায়। বোরো মৌসুমে ৩৫-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে ৫০ দিনের চারা রোপণ করলেও তেমন ক্ষতি হয় না। বেশি বয়সের চারা লাগালে ফলন কমে যায়, তাই বোরো মৌসুমের জন্য ৬ সপ্তাহের বেশি বয়সের চারা রোপণ করা কোনো অবস্থাতেই উচিত নয়। বীজতলায় চারা করার পর লাইন করে চারা রোপণ করলে ফলন বেশি হয়। রোপণের সময় জমিতে ছিপছিপে পানি থাকলেই চলে। প্রতি গুছিতে একটি করে সতেজ চারা রোপণ করাই যথেষ্ট। প্রয়োজনে ২-৩টি সুস্থ-সবল চারা একত্রে এক গুছিতে রোপণ করা যেতে পারে। সারি থেকে সারির দূরত ২০-২৫ সেন্টিমিটার এবং সারিতে গুছির দূরত্ব ১৫-২০ সেন্টিমিটার থাকা ভালো। চারা রোপণের ৭-১০ দিনের মধ্যে কোনো চারা মারা গেলে সেখানে নতুন চারা রোপণ করতে হবে। বিনা অন্যান্য জাতের তুলনায় সামান্য বেশি সারের প্রয়োজন হয় এবং একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে হয়।
চারা রোপণের পর আগাছা দেখা দিলে দ্রুত নিড়ানি যন্ত্র বা হাতের সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার ও মাটি নরম করতে হবে। চারা রোপণের পর থেকে জমিতে ৫-৭ সেন্টিমিটার (২-৩ ইঞ্চি) পানি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ধান গাছে যখন কাইচথোড় আসা শুরু করে তখন পানির পরিমাণ কিছুটা বাড়ানো উচিত। ধান পাকার ১০-১২ দিন আগে জমির পানি শুকিয়ে ফেলা ভালো।
রোগ ও পোকামাকড় দমন : রোগবালাই ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ দেখা দিলে নিকটস্থ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার উপদেশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা নিলে প্রচলিত তরল বা দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া খোলা ঝলসানো, ব্যাক্টেরিয়াল লিফব্লাইট বা পাতা ঝলসানো ও অন্যান্য রোগ দেখা দিলে উপযুক্ত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। খোল ঝলসানো, কাণ্ড পচা রোগ দেখা দিলে বেনলেট, হোমাই, বেভিস্টিন বা টপসিন মিথাইল মাত্রা অনুযায়ী প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ফসল কাটা, মাড়াই ও সংরক্ষণ : শীষে ধান পেকে গেলেই ফসল কাটতে হবে। অধিক পাকা অবস্থায় ফসল কাটলে অনেক ধান ঝরে পড়ে, শীষ ভেঙে যায়। শিষের শতকরা ৮০ ভাগ ধানের চাল শক্ত ও স্বচ্ছ হলে ধান ঠিক মতো পেকেছে বলে বিবেচিত হবে। মাড়াই করার পর ধান অন্তত ৪-৫ দিন রোদে ভালোভাবে শুকানোর পর ঝেড়ে গোলাজাত করতে হবে।
বিনাধান-১১ : আমন মৌসুমের জন্য অনুমোদিত হলেও জাতটি প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়।
দেশের আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে রোপা আমন মৌসুমে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত জলমগ্ন হলেও প্রচলিত আমন জাতের তুলনায় বেশি ফলন প্রদান করে। এছাড়া জাতটি স্বল্পমেয়াদি বিধায় এ জাতটি কর্তন করে পরবর্তী রবি ফসল সঠিক সময়ে চাষ করা যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় এর জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন এবং জলমগ্ন অবস্থায় ২০-২৫ দিন ডুবে থাকলে জীবনকাল ১২০-১২৫ দিন। যথোপযুক্ত পরিচর্যায় জলমগ্ন অবস্থায় প্রতি হেক্টরে ৪.০-৪.৫ টন (একরে ৪০-৫০ মণ) এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ৫.০-৫.৫ টন (একরে ৫০-৬০ মণ) ফলন দেয়।
বিশেষ গুণ : ধান চাষ বৃদ্ধির সাথে সাথে তেল ও ডাল জাতীয় শস্যের জমি কমে যাচ্ছে। ফলে এ দুইটি শস্যের মোট উৎপাদন কমে গেছে। বিনাধান-১১ উচ্চফলনশীল এবং এর জীবনকাল তুলনামূলকভাবে অনেক কম বলে এ জাতটি চাষ করে সঠিক সময়ে তেল ও ডাল ফসল চাষ করা সম্ভব হবে। এছাড়া গম ও আলুর চাষও ভালোভাবে করা যায়। ফলে এসব ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের প্রায় সব রোপা আমন অঞ্চল বিশেষ করে আকস্মিক বন্যা প্রবণ এলাকা যেখানে বন্যার পানি এসে ২০-২৫ দিনের মধ্যেই পানি নেমে যায়।
বপনের সময় : জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে জুলাই মাসের ২য় সপ্তাহের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপণের উপযুক্ত সময়।
চারার বয়স ও রোপণ পদ্ধতি : জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ হতে আগস্টের শেষ সপ্তাহ অর্থাৎ শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে শুরু করে ভাদ্র মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ২০-২৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বেশি বয়সের চারা লাগালে ফলন কমে যায়, তাই ৪ সপ্তাহের বেশি বয়সের চারা রোপণ করা কোনো অবস্থাতেই উচিত নয়। বীজতলায় চারা করার পর লাইন করে চারা রোপণ করলে ফলন বেশি হয়। ২-৩টি সুস্থ-সবল চারা একত্রে এক গুছিতে রোপণ করতে হবে। সারি হতে সারির দূরত্ব ২০ সেমি. এবং সারিতে গুছির দূরত্ব ১৫ সেমি. থাকা ভালো। এ জাতে বিনা ৮-এর তুলনায় কিছু কম সার দিতে হয়।
বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের আকস্মিক বন্যায় জমি ডুবে গেলে সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি ভিন্নতর হবে। সেক্ষেত্রে জমি তৈরির সময় যে পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে তাহলো-ইউরিয়া ৯০-২০০ কেজি, টিএসপি ১৩০-১৪০ কেজি, এমওপি ৩০-৪০, জিপসাম ৩০-৪০ এবং দস্তা ০৯-১১ কেজি দিতে হবে।
যদি ধান গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে বন্যা হয় তাহলে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ১০ দিন পরে প্রথম কিস্তিতে হেক্টরপ্রতি ৪৫ কেজি (একরে ১৮ কেজি) ইউরিয়া সার এবং হেক্টরপ্রতি ২৩ কেজি (একরে ৯ কেজি) এমওপি (পটাশ) সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তিতে ২০-২৫ দিন পর হেক্টরপ্রতি ৪৫ কেজি (একরে ১৮ কেজি) ইউরিয়া দ্বিতীয়বার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। তবে জমির উর্বরতার অনুযায়ী ইউরিয়া সারের মাত্রা কম-বেশি হতে পারে।
বিনাধান-১১ চাষে সতর্কতা : ২০-২৫ দিন জলমগ্ন থাকার পর বন্যার পানি জমি থেকে সরে যাওয়ার পরে গাছের শিকড় পচে কালো রঙ ধারণ করবে। এ অবস্থায় কমপক্ষে ৭ দিন জমিতে নামা যাবে না। ৭ দিন পর যখন নতুন চারা/কুশি গজাবে তখন জমিতে সার প্রয়োগসহ অন্যান্য পরিচর্যা করা যাবে। জমি থেকে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর গাছের পাতায় পলি কিংবা বালি জমতে পারে। ফলে পাতার স্টোমাটা বন্ধ হয়ে পাতা জ্বলে সাদা হয়ে যেতে পারে। তাই বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পরিষ্কার পানি স্প্রে মেশিনের সাহায্যে গাছের পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার ১০-২০ দিন পর জলজ আগাছাসহ অন্যান্য আগাছা এবং ধানের পচা পাতা পরিষ্কার করে দিতে হবে। যে সব এলাকায় বন্যার পানি এসে ২০-২৫ দিনের মধ্যে পানি নেমে যায় এবং ক্ষেতে কোনো পানি জমে থাকে না এমন জমিতে বিনাধান-১১ চাষ করা যাবে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর জমিতে ১০-২৪ সেমি. (৪-১২ ইঞ্চি) পানি থাকা স্বাভাবিক। তবে দীর্ঘদিন ৩৫-৪০ সেন্টিমিটার (১৪-১৬ ইঞ্চি) এর বেশি পানি থাকে, এমন জমিতে এ জাতটি চাষ করা যাবে না।
ড. মির্জা মোফাজাজল ইসলাম*
*মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ, বিনা, ময়মনসিংহ, +৮৮০১৭১৬২৮০৭২০, mirza_islam@yahoo.com