Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

নিয়মিত বিভাগ-১৪২৪ (প্রশ্নোত্তর )

ইসহাক মোল্লা, গ্রাম : আন্ধার কোটা, উপজেলা : চৌগাছা, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : আমগাছের মুকুল আসার সময় হপার পোকার আক্রমণ হলে কিভাবে পরিচর্যা করব?

উত্তর : হপার বা শোষক পোকা আমের একটি বড় শত্রু। এ পোকা কচি পাতা ও মুকুল থেকে রস চুষে খায়। পূর্ণবয়স্ক ও নিম্ফ (বাচ্চা) দুই অবস্থাতেই এটি আক্রমণ করে থাকে। আক্রান্ত  মুকুল  শুকিয়ে বাদামি হয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে। এ পোকা এক ধরনের আঠালো  মধুরস নির্গত করে। এর ফলে পাতায় শুটি মোল্ড ছত্রাক আক্রমণ করে এবং পাতা কালো হয়ে যায়। পোকার আক্রমণ হলে ফল ধরে না বা ধরলেও গুটি থেকে রস শুষে নেয়ায় তা ঝরে পড়ে। এ রোগ প্রতিরোধের জন্য আম বাগান সবসময় পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত গাছ খুব ঘন হলে কিছু ডালপালা ছেটে দিতে হবে। পরিষ্কার পানি স্প্রে করে দিলে আক্রমণ কিছুটা কমানো যায়। আক্রান্ত গাছে নিম্বিসিডিন ০.৫ মিলি/লিটার হারে  স্প্রে করতে হবে বা মুকুল আসার  আগে আগে একবার, মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে ২য় বার এবং ফল গুটি হলে সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড/সিমবুশ) ১ মিলি/লিটার হারে স্প্রে করতে হবে। ফল সংগ্রহের পরে মরা ডালপালা ছেটে দিতে হবে।
হাসান আলী, গ্রাম : ঝান্জিরা, উপজেলা : দিনাজপুর সদর, জেলা : দিনাজপুর
প্রশ্ন : আলুর পাতায় পানি ভেজা দাগ দেখা দেয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে জমির প্রায় সব গাছ আক্রান্ত হয়ে মরে গিয়েছে। এ রোগ থেকে বাঁচার উপায় কি?

উত্তর : জমিতে আলুর মড়ক বা নাবি ধসা (লেট ব্লাইট) রোগ দেখা দিয়েছে। এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ হলে প্রথমে পাতা, ডগা ও কাণ্ডের ছোট ভেজা দাগ পড়ে। পরবর্তীতে দাগ বড় হয়ে সব পাতা ডগা ও কাণ্ডের কিছু অংশে ছড়িয়ে পড়ে। কুয়াশাচ্ছন্ন ও মেঘলা আবহাওয়ায় রোগ দ্রুত ছড়ায়। ২-৩ দিনের মধ্যে জমির সব ফসল আক্রান্ত হয়ে গাছ ঝলসে যায়। আক্রান্ত ক্ষেতে পোড়া পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। ভোরের দিকে আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক চোখে পড়ে। এ রোগ থেকে বাঁচার জন্য রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত জমিতে সেচ যথাসম্ভব বন্ধ করে দিতে হবে। আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করা বা একই জমিতে বারবার আলু চাষ করা যাবে না। জমিতে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। রোগ প্রতিরোধক হিসেবে ডাইথেন এম-৪৫/মেলোডি ডুও/হেম্যানকোজেব ০.২% হারে ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে সিকিউর (২ গ্রাম/লিটার)/মেলোডি ডুও ২ গ্রাম+সিকিউর ১ গ্রাম (প্রতি লিটার পানিতে)/মেলোডি ডুও ২ গ্রাম+ডাইথেন এম-৪৫ ২ গ্রাম (প্রতি লিটার পানিতে) ছত্রাকনাশক ৭ দিন পর পর পাতার ওপরে ও নিচে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
আনিসুল হক, গ্রাম : গোঠাইল, উপাজেলা : ইসলামপুর, জেলা : জামালপুর
প্রশ্ন : আমার গাভীর ওলান শক্ত হয়ে গিয়েছে, গাভীটির কয়েক দিন আগে বাচ্চা হয়েছে। এখন দুধ হয় না। আমি কী করতে পারি?

উত্তর : আপনার গাভীর ওলানে আলাদা নেকড়া দিয়ে প্রথমে পরিষ্কার করে অন্য নেকড়া দিয়ে সকাল বিকাল তাপ দেবেন। প্রতিদিন একটি করে এমকক্স ভেট (২.৫ গ্রাম) ভায়াল মাংসে ইনজেকশন দেবেন। এভাবে ৫ দিনে ৫টি ভায়াল ইনজেকশন দেবেন। এর সাথে রানের মাংসে প্রতিদিন ১০ মিলি কিরে ডেলারজেন ইনজেকশন তিন দিন দেবেন।
মানিরুল ইসলাম, গ্রাম : বনগাঁও, উপজেলা : বিরল, জেলা : দিনাজপুর
প্রশ্ন : আমার গরুর একটি বাছুর হয়েছে। এটা শুধু মাটি খায়। পায়খানা মাটির মতো হয়ে গিয়েছে। আমি এখন কী করতে পারি?

উত্তর : বাছুরের ফসফরাসের অভাব হয়েছে তাই মাটি খাচ্ছে। বাছুরকে প্রতিদিন দিনে দুইবার করে ২০ মিলিলিটার সিপি ভেট সিরাপ খাওয়াবেন। তাছাড়া প্রতি ১০০ কেজি খাদ্যের সাথে ২.৫ গ্রাম ডিসিপি প্লাস পাউডার মিশিয়ে খাওয়াবেন। বাছুরের আবাসন, সুষম খাদ্য এসবের ওপর নিয়মিত ও পরিমিত নজর দিতে হবে।  
মো. ইয়াজুল ইসলাম, গ্রাম : বাগজান, উপজেলা : পাঁচবিবি, জেলা : জয়পুরহাট
প্রশ্ন : মাছের মাথা মোটা ও লেজ চিকন হয়ে যাচ্ছে, কি করব?

উত্তর : হ্যাচারি বা যে কোনো উৎস থেকে অপরিপক্ব বা পুষ্টিহীন বা খারাপ মানের পোনা আনলে এ সমস্যা হতে পারে। তাই পোনা সংগ্রহের আগে পোনার গুণগত মান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বিশ্বস্ত কোনো হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। নিয়মিতভাবে পুষ্টিকর খাবার যেমন সরিষার খৈল, গমের ভুসি, শুঁটকির গুঁড়া, ভিটামিন মিশ্রিত করে অথবা পিলেট বা রেডি ফিড মাছের খাদ্য হিসেবে দিতে হবে। মাছের দেহের ওজনের ৩-৫% হারে খাদ্য দিতে হবে।
শিউলি বেগম, গ্রাম : আগমাড়াই, উপজেলা : রাজবাড়ী, জেলা : রাজবাড়ী
প্রশ্ন : মাছ চাষের জন্য কীভাবে পুকুর প্রস্তুত করব?

উত্তর : পুকুর শুকিয়ে তলদেশের পচা কাদা অপসারণ এবং তলদেশ সমান করতে হবে। পাড় উঁচু করে বাঁধতে হবে। পুকুরের পাড়সহ তলায় চুন ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে প্রতি শতকে ১ কেজি হারে। পুকুরের তলদেশ চাষ দিয়ে আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। পানি প্রবেশপথ ও জরুরি পানি নির্গমন পথ করতে হবে এবং তাতে স্ক্রিন বা বানা (বাঁশের পাটা ও নাইলনের জাল দিয়ে তৈরি) দিতে হবে। চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পরে প্রয়োজনমতো পানি প্রবেশ করিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে গোবর ৫ কেজি, ইউরিয়া ১০০-১৫০ টিএসপি ৫০-৭৫ গ্রাম এবং এমওপি ২০ গ্রাম দিতে হবে।
মো. খাইরুল ইসলাম, গ্রাম : মুষ্টিগড়, উপজেলা : সিংড়া, জেলা : নাটোর
প্রশ্ন : শিম ফসলের সার ব্যবস্থাপনা স¤পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : শিম ডাল জাতীয় শস্য বলে এতে সারের পরিমাণ বিশেষ করে নাইট্রোজেন সারের পরিমাণ কম লাগে। শিম চাষে হেক্টর প্রতি ১০ টন গোবর, ২৫ কেজি ইউরিয়া, ৯০ কেজি টিএসপি, ৬০ কেজি এমওপি, ৫ কেজি জিপসাম ও ৫ কেজি বোরিক এসিড প্রয়োজন হয়। শেষ চাষের সময় গোবর সার, জিপসাম ও বোরিক এসিড সবটুকু ছিটিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। এ সার গুলো চাষ দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সারের অর্ধেক এবং টিএসপি সারের সবটুকু বীজ বপন বা চারা রোপণের ৪-৫ দিন আগে একত্রে ছিটিয়ে প্রয়োগ করে মাদার মাটির সাথে (১০ সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত) কোদাল দিয়ে হালকাভাবে কুপিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি সার বপন/রোপণের ৩০ দিন পর মাদায় উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
মো. হাসান, গ্রাম : কালাইয়া, উপজেলা : বাউফল, জেলা : পটুয়াখালী
প্রশ্ন : কাঁঠালের মুচির গায়ে দাগ হয়ে তা ঝরে পড়ে। এর প্রতিকার কি?

উত্তর : এটি কাঁঠালের মুচি পচা রোগ। এক রকম ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। প্রথমে কচি ফলের গায়ে বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে আক্রান্ত ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে।  এ রোগের প্রতিকারে মুচি ধরার আগে ও পরে ১০ দিন পর পর ২/৩ বার ব্যাভিস্টিন/ইন্ডোফিল এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে অথবা ইন্ডোফিল এম-৪৫/রিডোমিল এম জেড-৭৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছে ফুল আসার পর থেকে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ৩ বার স্প্রে করতে হবে। গাছের পরিত্যক্ত অংশে এ রোগের জীবাণু বেঁচে খাকে বলে গাছের নিচে ঝরে পড়া পাতা, পুষ্প মঞ্জুরি, আক্রান্ত  মুচি ও ফল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ফল বেশি ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে এবং গাছ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
সুপ্রিয় পাঠক বৃহত্তর কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে যে  কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কল সেন্টার এর ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির ব্যতিত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে। তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৬ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।

কৃষিবিদ ঊর্মি আহসান*
*উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (এলআর) সংযুক্ত কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫