Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রশ্নোত্তর (আশ্বিন ১৪২৫)

ঝর্ণা বেগম, গ্রাম: ভাণ্ডারদহ, উপজেলা: পাটগ্রাম, জেলা: লালমনিরহাট
প্রশ্ন: লেবুর গাছে ভেতরে  আলো ঢুকে না এবং গাছগুলোও বেশ দুর্বল। ভালো লেবু ধরে না। কি করলে লেবু গাছে ভালো ফলন পাব?  

উত্তর:  লেবু গাছের অঙ্গ ছাঁটাই বা প্রুনিং এর পাশাপাশি সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে আপনি উপকার পাবেন। এক্ষেত্রে গাছের ভেতরের দিকে যেসব ডালপালা সূর্যের আলো পায় না সেসব দুর্বল ডালপালাগুলো মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ছাঁটাই করে দিতে হবে। এ সময় লেবু গাছের প্রুনিং করার জন্য ভালো সময়। কিন্তু যে কথাটি মনে রাখতে হবে সেটি হলো লেবু গাছের ডালপালা ছাঁটাই করার সাথে সাথে বর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে যাতে করে ছত্রাক আক্রমণ না করতে পারে। আর গাছের গোড়ার দিকে জলশোষক বা ওয়াটার সাকারগুলো বের হলেই কেটে দিতে হবে। লেবু গাছের বয়সভেদে সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স ১-২ বছর হলে পচা গোবর ১৫ কেজি, ইউরিয়া সার ২০০ গ্রাম, টিএসপি সার ২০০ গ্রাম ও এমওপি সার ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। লেবু গাছের বয়স ৩-৫ বছর হলে পচা গোবর ২০ কেজি, ইউরিয়া সার ৪০০ গ্রাম, টিএসপি সার ৩০০ গ্রাম ও এমওপি সার ৩০০ গ্রাম প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু  লেবু গাছের বয়স ৬ বছর বা তদূর্ধ্ব হলে পচা গোবর ২৫ কেজি, ইউরিয়া সার ৫০০ গ্রাম, টিএসপি সার ৪০০ গ্রাম ও এমওপি সার ৪০০ গ্রাম সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।  


সিরাজ খন্দকার, গ্রাম: চকগৌরী, উপজেলা: পতœীতলা, জেলা: নওগাঁ
প্রশ্ন: পেঁপে গাছে এক ধরনের পোকার আক্রমণে পাতা ও ফলে সাদা পাউডারের মতো আবরণ পড়ছে। পাতা ও ফল কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। এমনকি পেঁপে গাছও মারা যাচ্ছে। এ অবস্থায় কি করণীয়?

উত্তর: সাম্প্রতিক সময়ে পেঁপে গাছে এ ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এ সমস্যাটি মিলিবাগ নামক পোকার কারণে হচ্ছে। এ পোকাটি মারাত্মক। সে কারণে মিলিবাগ পোকার আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত পাতা ও কা- সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। কিংবা পুরাতন টুথ ব্রাশ দিয়ে আঁচড়িয়ে পোকা মাটিতে ফেলে মেরে ফেলতে হয়। তবে এগুলো গুটিকয়েক পেঁপে গাছের ক্ষেত্রে করা সম্ভব। কিন্তু পেঁপে বাগানের ক্ষেত্রে ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক ০.২৫ মিলি প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।   


মো. জয়নুল ইসলাম, গ্রাম: চকউদয় নারায়ন, উপজেলা: মান্দা, জেলা: নওগাঁ
প্রশ্ন:  গ্লাডিওলাস ফুলের গোড়া পচে যাওয়া রোধ করবো কিভাবে?

উত্তর: গ্লাডিওলাস ফুলের গোড়া পচা রোধে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয় সেগুলো হলো- রোগমুক্ত গ্লাডিওলাস বীজকন্দ সংগ্রহ করা; বীজকন্দ তোলার সময় আঘাতজনিত ক্ষত যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নেয়া এবং সুষম সার প্রয়োগ করা। কিন্তু যদি গ্লাডিওলাস ফুলের বাগানে গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে সে সময়ে কার্বেন্ডাজিম অথবা কার্বোক্সিন ও থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটিতে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। তাহলে গ্লাডিওলাস ফুলের গোড়া পচা রোগ রোধ করা সম্ভব হবে।


সাহেব আলী, গ্রাম: বিষ্ণুগ্রাম,  উপজেলা: পাইকগাছা, জেলা: খুলনা
প্রশ্ন: আখের ডগার মাজরা পোকা দমনের জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, জানাবেন।

উত্তর: আখের ডগার মাজরা পোকা দমন বেশ কয়েকটি উপায়ে করা যায় সেগুলো হচ্ছে-হাত দিয়ে ডগার মাজরা পোকার মথ ও হাত বা হাসুয়ার সাহায্যে সামান্য পাতাসহ ডিমের গাদা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা। এছাড়া ডগার মাজরা পোকা আক্রান্ত গাছ গোড়ার কাছ থেকে কেটে পোকাসহ ধ্বংস করে ফেলা। আর এ কাজটি করা হয় জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত। কীটনাশক প্রয়োগ করেও ক্ষতিকর এ পোকা দমন করা যায়। সেক্ষেত্রে আখের সারির উভয় পাশে অগভীর নালা কেটে নালার মধ্যে কার্বোফুরান গ্রুপের দানাদার কীটনাশক হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি মার্চ ও মে মাসে নালায় ছিটিয়ে প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তাহলেই আখের ডগার মাজরা পোকা দমন করা সম্ভব হবে।


আশরাফুল কবীর, গ্রাম: বালাগ্রাম  উপজেলা: জলঢাকা, জেলা: নীলফামারী
প্রশ্ন: তুলা গাছের বলে এক ধরনের বাদামি ও কালচে দাগ দেখা যায় এবং তুলার বলগুলো ভেতর থেকে পচে শুকিয়ে যায়। এমনকি তুলার বলগুলো বিকৃত হয়ে যায়। এ সমস্যা রোধে কি করতে হবে?

উত্তর: তুলা গাছের এ সমস্যাটি অ্যানথ্রাকনোজ রোগের কারণে হয়ে থাকে। এ রোগ প্রতিরোধে তুলা গাছের মরাপাতা ও পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে। এছাড়া কার্বেন্ডাজিম অথবা কার্বোক্সিন ও থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। জমি তৈরির সময় সুষম সার প্রয়োগ করাও দরকার। কারণ মাটিতে পটাশিয়ামের অভাব দেখা দিলে এ রোগ হতে পারে। সেজন্য জমিতে পরিমিত পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে গাছের পাতা ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে উল্লিখিত ছত্রাকনাশক তুলা গাছে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে। তবেই আপনি সুফল পাবেন।  


শওকত হোসেন, গ্রাম: ফলিয়ামারী, উপজেলা: ময়মনসিংহ সদর, জেলা: ময়মনসিংহ
প্রশ্ন: নারকেল গাছের নারকেলের ভেতর শাঁস হয় না। কি করলে এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে?  

উত্তর: নারকেলের এ সমস্যাটিকে বন্ধ্যা বা চিটা নারকেল বলে। এ সমস্যা হলে নারকেলের ফলের বাইরে খোসা ও খোল স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠে কিন্তু ভেতরে শাঁস থাকে না। আবার কখনও কখনও শুধু পানি থাকে কিন্তু শাঁস থাকে না। আবার কখনও আংশিক শাঁস থাকে কিন্তু পানি থাকে না। এ ধরনের সমস্যা প্রতিকারে গাছ প্রতি বরিক এসিড ৫০ গ্রাম ও এমোনিয়াম মলিবডেট গাছে প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়। এছাড়া নারকেল গাছের বয়স অনুযায়ী সুষম সার প্রয়োগ করাও ভীষণ জরুরি। এভাবে নারকেল গাছের পরিচর্যা করলে এ সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।   

 
রওশন আলম, গ্রাম: পিরোজপুর, উপজেলা: মেহেরপুর সদর, জেলা: মেহেরপুর
প্রশ্ন: সিলভার কার্প মাছে পেটফুলা রোগ হয়েছে। এ রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানাবেন।

উত্তর: সিলভার কার্প মাছে পেটফুলা রোগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে থাকে। সাধারণত শীতের প্রাক্কালে ও শীতকালে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। এ রোগের লক্ষণগুলো হলো- রোগাক্রান্ত মাছের পেট ও আঁইশের নিচে পানি জমে। মাছের পেট ফুলে বেলুনের মতো আকার ধারণ করে, চামড়ায় ঘা হয় ও অন্ত্র ফুলে যায়। এছাড়া আঁইশ আলগা হয়ে যায়। এ সমস্যা প্রতিকারে প্রতি কেজি খাবারে ২৫০ মি. গ্রাম রেনাভেট মিশিয়ে ৪-৭ খাওয়াতে হবে। তবেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাছাড়া এ সমস্যা প্রতিরোধের জন্য সুষম খাদ্য প্রয়োগ, জৈব সার কম দেয়া এবং প্রতি শতকে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যাবে।

 
আরশেদ খান, গ্রাম: লখাইডাঙ্গা, উপজেলা: মনিরামপুর, জেলা: যশোর
প্রশ্ন: রুই মাছে সাদা দাগ রোগ হয়েছে। কি করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব?

উত্তর: এ রোগে মাছের পাখনা, কানকো ও দেহের উপর সাদা দাগ দেখা যায়। মাছের ক্ষুধামন্দা এবং দেহের স্বাভাবিক পিচ্ছিলতা লোপ পেয়ে খসখসে হয়ে যায়। ইকথায়োপথেরিয়াস প্রজাতি এ রোগের কারণ। এ রোগ প্রতিকারে ১ পিপিএম তুঁতে পানিতে গোসল দেয়া কিংবা শতকরা ২.৫ ভাগ লবণ পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য রাখা যতক্ষণ পর্যন্ত মাছ লাফিয়ে না পড়ে। এছাড়া এ ধরনের রোগ যাতে না হয় সেজন্য শামুকজাতীয় প্রাণী পুকুর থেকে সড়িয়ে ফেলা। শতকরা ২.৫ ভাগ লবণ পানিতে ৫-৭ মিনিট গোসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পোনা মজুদ করতে হয়। তাছাড়া রোদে শুকনা জাল পুকুরে ব্যবহার করাও দরকার। আরেকটি বিষয় অনুসরণীয় সেটি হলো মাছের স্বাভাবিক সংখ্যা বজায় রেখে অতিরিক্ত মাছ সরিয়ে নেয়া।


শেফালী খাতুন, গ্রাম: সারানপুর, উপজেলা:  গোদাগাড়ী, জেলা: রাজশাহী
প্রশ্ন: গরুর গা খসখসে এবং ঘা হচ্ছে। এ অবস্থায় কি করণীয়?

উত্তর: ইনজেকশন ভারমিক প্রতি ২৫ কেজি গুরুর দেহের ওজনের জন্য ১ সিসি ১ বার চামড়ার নিচে পুশ করতে হবে। যদি সমস্যাটি বেশি হয় তবে ৭ দিন পর বুস্টার ডোজ আবারও ১ বার দিতে হবে। এছাড়া ইনজেকশন অ্যাসটাভেট ১০০ কেজি গরুর দেহের ওজনের জন্য ৫সিসি. করে দৈনিক ১ বার ৩ থেকে ৫ দিন মাংসে পুশ করতে হবে এবং ইনজেকশন অ্যামক্সিভেট ১ ভায়েল করে রোজ ১ বার ৩ দিন মাংসে পুশ করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনার গরুর সমস্যা দূর হয়ে যাবে।


হাবিবুর রহমান, গ্রাম: করোলিয়া, উপজেলা: তেরখাঁদা, জেলা: খুলনা
প্রশ্ন: গাভী হিটে আসছে না। এ অবস্থায় কি করণীয়?

উত্তর: এ রোগ হরমোনের ভারসাম্য হলে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ভিটা এভিই (১০০ সিসি) ১০০ কেজি ওজনের জন্য ২০ মিলি করে প্রতি সপ্তাহে ১ বার করে ১ মাস খাওয়ানোর পাশাপাশি কৃমির ট্যাবলেটও দিতে হবে। তাছাড়া ফার্টাজাইল ইনজেকশন ৫ মিলি প্রতি গাভীর মাংসপেশিতে দিলে গাভী ১৭ দিন পরপরই গরম হবে।


কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে  কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে। তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।

 

কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন
উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, মোবা : ০১৭১১১১৬০৩২, ঃ
taufiquedae25@gmail.com